সোফিয়ারা একদিন বিশ্ব দখলে নেবে?1 min read
ঢাকা মাতিয়ে রেখেছিলেন রোবটমানবী সোফিয়া। তার হাসিতে হেসেছেন প্রধানমন্ত্রী, বিষ্ময় ছিল কোটি মানুষের যারা সরাসরি দেখেছেন সেই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায়। এই সোফিয়া এখনও পরিপূর্ব একটি রোবট মানবী নয়, কেবল তার অর্ধেক শরীর এসেছিল ঢাকায়। বিশ্বের কোথাও কোথায় তার কোমের নিচ থেকে, পা পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় দেখা গেলেও, ঢাকায় এসেছিল কেবল কোমর থেকে ন্যাড়া মাথা পর্যন্ত। এতটুকুই দিয়েই পুরো বিশ্বের বিষ্ময় সৃষ্টি করেছে পুরো পৃথিবীর মানুষকে।মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তাদের মত দেখতে একটি যন্ত্র মানবকে দেখবে বলে।এখনও হাটতে পারে না সোফিয়া, কেবল যেখানে তাকে বসিয়ে রাখা হয়, সেখানে বসেই কথা বলে।কিন্তু এই সোফিয়া নিশ্চই খুব শীঘ্রই হাটতে পারবে, যেমনি করে অনন্য রোবট হাটে।হাটতে হাটতে একদিন কি এই সোফিয়ারা বিশ্বটিকে নিয়ন্ত্রন করবে? মানুষকেও নিয়ন্ত্রন করতে পারে?
এই আলোচনা এবং ভয় দুটোই এখনকার বিশ্বে তুমুল আলোচনার বিষয়।এটা শুরু হয়েছে বিশেষভাবে সোফিয়ার আবির্ভাবের পর। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল থেকেই যখন সোফিয়ার প্রার্থমিক বিশ্ব দেখা শুরু হয়েছে তখন থেকেই। এখন তো সোফিয়া রীতিমত একটি দেশের নাগরিক। এই সোফিয়ার চোখ দুটিতে ক্যামেরা লাগানো আছে, যা দিয়ে সে মানুষকে দেখতে পারে।তাদের অঙ্গভঙ্গি, হাসি কান্না দেখতে পারে, এবং সেটা দিয়ে তার শরীরে যে, আর্টিফিশয়াল ইন্টেলিজেন্স (মানুষ সৃষ্ট বুদ্ধিমত্তা) লাগানো আছে, সেটার নিরিখে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। বলে নেই, ইন্টেলিজেন্স দুই প্রকার, একটি হলো ন্যাচারাল ইন্টেলিজেন্স বা প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা যা মানুষের আছে।আর অন্যটি হলো, মেশিন ইন্টেলিজেন্স, বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
হংকং ভিত্তিক রোবট কোম্পানী হানসেন রোবটিক এটির উদ্ভাবন করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেভিড হ্যানসেন এটার উদ্ভাবক। ডেভিড হ্যানসেনকে ধরা হয় রোবট বিপ্লবী। কেননা, সে প্রচলিত ধারায় রোবট না বানিয়ে, মানুষের আকৃতি দিয়ে, মানুষের মত ইন্দ্রিয় জ্ঞান সম্পন্ন রোবট তৈরী করার কাজে নেমেছে, যা নিয়ে আপত্তি আচ্ছে বিশ্বের অনন্য বোধ্ধাদের।
এলন মক্স, একজন টেক উদ্ভাবক। তিনি বর্তমান বিশ্বে মোটর শিল্পের বিষ্ময় তেসলা গাড়ির উদ্ভাবক এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। তিনি বেশ কিছুদিন আগে বলেছেন, আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেক সর্তক থাকতে হবে। কেননা, তারা আমাদের ভবিষ্যতে দখলে নিতে পারে।
অন্য একজন জীবন্ত কিংবদন্তী বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও প্রায় সমরুপ ধারণা পোষন করেন।বলেন, এখনই হয়তো নয়, কিন্তু পরে কোন এক সময় এরা মানুষকে টেক্কা দিতে পারে।সেটা মানব সভ্যতার শেষ সময় হবে বলে সতর্ক করে দিয়ে হকিং জানিয়েছিলেন, যে মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নয়ন একটা সময়ের প্রেক্ষিতে গঠিত হয়েছে, পরিপূর্নতা পেয়েছে। কিন্তু আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স যদি মানুষের সময়ের ব্যবধানকে সুপারসিড করে অর্থাৎ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেটা হবে মারাত্বক একটি আঘাত।
এ নিয়ে অনন্য তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। কোন কোন পদার্থবিদ একেবারে সময় বেধে দিয়েছেন, যে ২০১৯ সালেই এসব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মানুষকে চ্যালেন্জ করে বসবে। বিগ থিংক’ নামক একটি ধারনায় বিশ্বের এসব জটিল রহস্যেপূর্ন বিষয় বিশ্লেষন করেন জাপানী বংশোদ্ভুত এক পদার্থবিজ্ঞানী মাইশিও কাকু। তিনি বলছেন ‘অনেকেই বিশ্বাস করে, একটি এসব রোবট তাদের ঘুম ভেঙে জেগে উঠবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। এটা কতটা বাস্তব হবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে, তবে অনেক খানি যে তারা সে পথে এগিয়ে গেছে সেটা নি:সন্দেহে বলা যায়। কাকু বলছেন, এখনকার রোবট গুলি বুদ্ধিমত্তায় পোকা মাকড়ের চেয়ে বুদ্ধি রাখে।আরো ২০-২৫ বছর পরের রোবট গুলি হয়তো কুকুর বিড়ালের চেয়ে কিছুটা বেশী বুদ্ধিমত্তার হতে পারে। তবে এই শতাব্দীর শেষের দিকে, এসব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বানরের চেয়েও বেশি বুদ্ধী দেখাতে পারে। তখন-ই হবে বড় বিপদ’।
অবস্য, কোন কোন যুক্তিবিদ যুক্তি দেখান যে, সেই দিন এরি মধ্যে এসে গেছে। এখনই মানুষ এসব রোবট দ্বারা কম বেশি নিয়ন্ত্রিত। টাকা তোলার এটিএম মেশিন একটি রোবটিক নিয়ন্ত্রন।ফেসবুকের একাউন্ড অথবা ছবি ট্যাক করার সময় সে মুখের অয়য়ব দেখে ধরে নিতে পারে ছবির মানুষটি কে হতে পারে। এটা একটা রোবটিক নিয়ন্ত্রন। তারা বলতে চান, যে এরি মধ্যে বিশ্বের অনেক খানি নিয়ন্ত্রন করছে রোবট গুলি।এখন সেটি একদমই প্রাথমিক পযায়। সেটুকে আপত্তি নেই, তবে আপত্তি বাধতে পারে যদি এসব সোফিয়ারা একসময় সত্যিই মানুষকে নিয়ন্ত্রন করতে উদ্যত হয়। ঠিক, হলিউডের টার্মিনেটার, অথবা ম্যাট্রিক্স অথবা ট্রান্সফরমার সিনেমার মত করে। সেই দিন কি আসন্ন?
রোবট বিদ্রোহী এসব কথা শুনে হাসেন আর বলেন, পরিবর্তনকে মেনে নিতেই হবে। তারা অবস্য একদমই বিশ্বাস করেন না যে রোবট একদিন ঘুম ভেঙে বলবে, হে মানুষ, তুমি বিদায় হও।কেননা, রোবট এর কলকাঠি তো মানুষের হাতেই। কে জানে, সেই নিয়ন্ত্রন কতদিন হাতে থাকবে। গল্পের ডা জেকিল এবং মিস্টার হাইড এর কথা তো আমরা সবাই জানি। নিজের বিকল্প একটি ঘাতকরুপ তৈরী করতেন ডা জেকিল নিজের প্রয়োজনে। একসময় সেই ঘাতক হাইড-ই চড়ে বসে তার উদ্ভাবক ডা জেকিলের ঘাড়ে। তেমন কিছু হবে কি কোন দিন? সেই বিতর্ক আর ভয় এক সাথেই চলছে এখনকার বিশ্বজুড়ে। সেখানে সোফিয়ার আগমন, নি:সন্দেহে ভয় ঢুকিয়েছে অনেকের মনে।
anik kumar
This is Amazing.