বিশ্ব

শেষ জটিলতার আগে মার্কিন নির্বাচন 1 min read

নভেম্বর ৪, ২০২০ 3 min read

author:

শেষ জটিলতার আগে মার্কিন নির্বাচন 1 min read

Reading Time: 3 minutes

কার ঘরে কোন রাজ্য?

সবশেষ অবস্থা অনুযায়ী মার্কিন নির্বাচনে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প রয়েছেন প্রায় সমান্তরাল অবস্থানে। রিপাবলিকানদের হয়ে ট্রাম্প এরইমাঝে জয় তুলে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু রাজ্যে। ওহাইও আর টেক্সাসে জয় তুলে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বড় এক বাজিমাত করেছেন সেটা বলাই বাহুল্য। ওহাইও জেতা মানেই হোয়াইট হাউজে পা রাখা- এটা এক রীতিতে পরিণত হয়েছে বিগত ৫ দশকে। এবারেও ওহাইওতে বড় জয় অর্জন করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৮ ইলেকটোরাল কলেজের এই আসনে ৩ কোটি ৬৬ হাজার ২৭১ ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওহাইওতে প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। প্রায় একই অবস্থা টেক্সাসেও। ৫২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট নিয়ে এবারো টেক্সাস গিয়েছে রিপাবলিকানদের ঘরে। টেক্সাসের ৩৮ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট শুরুতেই ট্রাম্পকে দিয়েছিল বাড়তি আত্মবিশ্বাস।

সবচেয়ে বেশি ইলেকটরাল কলেজ ভোট রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াতে। ডেমোক্র্যাটদের দুর্গ খ্যাত এই রাজ্যে নিজের বিজয় বুঝে পেয়েছেন জো বাইডেন। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা ৫৫ টি। এখানে বলতে গেলে হেসেখেলেই নিজের বিজয় নিয়ে এসেছেন জো বাইডেন। ৭ কোটি ৫৮ লাখ ১ হাজার ৮১৩ ভোটের মাধ্যমে আরো একবার ক্যালিফোর্নিয়া নিজেদের কাছে রেখে ডেমোক্র্যাটরা। ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাপাশি নিউ মেক্সিকো, ওয়াশিংটন, অরিজন, কলোরাডো থেকেও জয় নিয়ে ফিরেছেন জো বাইডেন। ৬ টি ইলেকটোরাল কলেজের নেভাদা রাজ্যেও এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। তবে বাইডেনের বড় চমক ছিল অ্যারিজোনা বিজয়। দীর্ঘ ৫ দশক পর এবারই প্রথম অ্যারিজোনার ১১ টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট হারিয়েছে রিপাবলিকান শিবির। ট্রাম্পের কপালে যেটা ছিল প্রথম চিন্তার ভাজ।

বাইডেনের অগ্রযাত্রা আর ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন

তীব্র এই লড়াইতে এখন পর্যন্ত বলতে গেলে পুরোটা সময়ই এগিয়ে ছিলেন জো বাইডেন। বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টা থেকে ফলাফল আসতে শুরু করে। প্রথম ফলাফলে নিউ হ্যাম্পশায়ারে জয় তুলে নেন বাইডেন। শুরু থেকে কিছুটা সমান তালে এগিয়ে গেলেও একপর্যায়ে বেশ অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলেন বাইডেন। সেসময় ধারণা করা হচ্ছিল প্রায় হেসে খেলেই বিজয় নিয়ে আসতে পারবেন বাইডেন। একপর্যায়ে প্রতিদ্বন্দী ট্রাম্পের ১৩২ ইলেকটোরাল ভোটের বিপরীতে ২০৫ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছিলেন জো বাইডেন। তবে সেখান থেকে দারুণ ভাবে ঘুরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নর্থ ডাকোটা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা জয়গুলো দুই প্রার্থীকে নিয়ে এসেছে অনেকটাই সমান্তরালে। আর এখন শেষ পর্যন্ত ভাগ্য নির্ধারণী রাজ্যের ভূমিকায় এসে দাঁড়িয়েছে চারটি রাজ্য। পেনসেলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা আর মিশিগান। এর সাথে ঝুলে আছে উইনকনসিন আর নেভাদার ফলাফল।

সব মিলিয়ে এই লেখার আগ পর্যন্ত বিবিসি এবং সিএনএন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২৩৮টি ইলোকটরাল কলেজের ভোট পেয়েছেন জো বাইডেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েছে ২১৩ টি ভোট।

ভাগ্য নির্ধারণী চার রাজ্য

এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চার রাজ্যের সবখানেই এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও উইসকিনসন রাজ্যেও এগিয়ে ছিলেন তিনি। তবে শেষ সময়ে পালটা আঘাত হেনেছেন বাইডেন। দশমিক ০৩ শতাংশ এগিয়ে আছেন তিনি। তবে এগিয়ে থাকলেও স্বস্তি মিলছে না ট্রাম্পের। সিএনএন জানিয়েছে এখন পর্যন্ত পেনসেলভানিয়াতে ভালভাবেই ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে বাইডেনের। একই সম্ভাবনা আছে মিশিগানেও। তবে মিশিগানের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল। মিশিগান থেকে এখন পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ কেন্দ্রের ফলাফল এসেছে। যার মাঝে ৫২ দশমিক ১ শতাংশে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট নিয়ে তার ঠিক পিছনেই নিঃশ্বাস ফেলছেন জো বাইডেন। প্রায় একই অবস্থা পেনসেলভানিয়াতেও। এই রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ সংখ্যা ২০ টি। এখানে ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৪ শতাংশ ভোটের ফলাফল এসেছে রাজ্যটি থেকে। সবচেয়ে বড় বিষয় পেনসেলভানিয়াতে অবস্থিত ফিলাডেলফিয়া ও পিটসবার্গের মত গুরুত্বপূর্ণ দুই অঞ্চলেও নিজেদের অবস্থান সংহত করতে পেরেছেন ডেমোক্র্যাট মনোনীত জো বাইডেন।

৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে জর্জিয়াতেও এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু জর্জিয়ার প্রায় ৯৪ শতাংশ কেন্দ্রের ফলাফল হাতে এসে পড়ায় এ নিয়ে কিছুটা নির্ভার থাকতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকরা। কিন্তু জর্জিয়ায় হেরে গিয়েও যদি পেনসেলভানিয়া আর নর্থ ক্যারোলিনায় বাইডেন জিতে আসতে পারেন তাহলে সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে।

তুরুপের তাস পেনসেলভানিয়া

পেনসেলভানিয়া বর্তমান নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের একটি হতে চলেছে। বলতে গেলে এই রাজ্যেই আপাতত চোখ সারা বিশ্বের। এখানে জয় মানেই অনেকটা এগিয়ে যাবেন বাইডেন। আর ট্রাম্প জয় পেলে সেটা হবে দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের শুরু। বলে রাখা ভাল, ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে মাত্র ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে এই রাজ্যে পরাজিত করেছিলেন ট্রাম্প। এর আগের ৬টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেনসেলভানিয়া ছিল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। তবে শেষ নির্বাচনে হিলারি নিজেদের অধিকার হারান। আর সেটিই এখন ভাগ্য নির্ধারণের বড় অংশ হয়ে পড়েছে।

গত রবিবার ফিলাডেলফিয়াতে নির্বাচনী বক্তব্যে বাইডেন বলেছিলেন, “আমার বক্তব্য একেবারেই পরিষ্কার। এই নির্বাচনে পেনসেলভানিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য।” প্রায় একই সুরে ২৬ অক্টোবর অ্যালেনটাউনের নির্বাচনী সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, “কোনভাবে আমরা যদি পেনসেনভানিয়া অঙ্গরাজ্যে জয় আনতে পারি, আমরা পুরো নির্বাচনেই জয়ী হয়ে ফিরব।”

শেষ মুহুর্তে আরেকটি রাজ্য নতুন করে আশা দেখাচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেষ রাতের হিসেবে উইনকনসিনে প্রথমবারের মত এগিয়ে গিয়েছেন জো বাইডেন। বিশেষ করে উইনকনসিনের মিলওয়াকি কাউন্টিতে ডেমোক্র্যাটদের বিশাল ভক্ত সমর্থকরাই পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এখান থেকে পাওয়া ১০ টি ইলেকটোরাল কলেজ পুরো উত্তরাঞ্চলেই বাইডেনের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে। একইভাবে ভাগ্য নির্ধারণে এগিয়ে আছে নেভাদা। নেভাদায় শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল বাইডেনের। সম্ভাব্য বিজয়ীও তাকেই ধরা হচ্ছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিশিগান, নেভাদা আর উইনকনসিনের ফলাফল সবার আগে আসার কথা রয়েছে। নেভাদা আর উইনকনসিনে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এই দুটিতে ইলেকটোরাল ভোট মোট ১৬ টি। আর মিশিগানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। সেখানেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ১৬ টি। এই ধারা বজায় থাকলে বাইডেন পাবেন ২৪০ ভোট আর ট্রাম্পের ভোট গিয়ে দাঁড়াবে ২২৯ এ।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *