বিশ্বের সর্বোচ্চ গতির পাঁচটি ট্রেন1 min read
Reading Time: 3 minutesদ্রুত, আরামদায়ক, নিরাপদ ও কোলাহল মুক্তভাবে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের অন্যতম প্রধান পছন্দ ট্রেন। এছাড়া কোন দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের মাধ্যমে এক শহর থেকে অন্য শহরে পৌঁছাতে চাইলেও ট্রেনের বিকল্প নেই। আধুনিক যুগে ক্রমাগত দ্রুত গতির যানবাহন আবিষ্কার হচ্ছে। সময়ের দাবি মেনে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু দ্রুত গতিসম্পন্ন ট্রেনও। এই লেখায় বিশ্বের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন ৫টি ট্রেন সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।
তালগো ৩৫০, স্পেন; ২১৭ মাইল/ঘন্টা
বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত গতি সম্পন্ন ট্রেন তালগো ৩৫০ পরিচালনা করে থাকে স্টেট-রান(State-Run) রেলওয়ে কোম্পানি এবং এই ট্রেনটির গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৩৫০কিলোমিটার। বাতাসের চাপ ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে এই ট্রেনটি চালু করা হয়। স্পেনের স্থানীয় ভাষায় এটিকে পাতো(Pato) নামে ডাকা হয়; পাতোয়ের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে হাঁস। কারণ ট্রেনটির সম্মুখভাগের আকৃতি অনেকটাই হাঁসের ঠোঁটের মতো। তালগো ৩৫০ ট্রেনটি মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মধ্যবর্তী পথে চলাচল করে থাকে। ট্রেনটি ক্লাব, ব্রিস্টো, ফার্স্ট ও কোচ এই ৪টি শ্রেণীতে বিভক্ত এবং প্রতিটি বগিতেই সকল যাত্রীদের জন্য ভিডিও অডিও ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুব্যবস্থা রয়েছে।
সিমেন্স ভেলারো ই/এভিএস-১০৩, স্পেন; গতিবেগ-২১৭.৪ মাইল/ঘন্টা
সিমেন্স ভেলারো ই/এভিএস–১০৩ হচ্ছে জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সিমেন্স কর্তৃক তৈরিকৃত ভেলারো- ই হাই- স্পিড ট্রেনের স্প্যানিশ ভার্সন। এটি বিশ্বের চতুর্থ দ্রুত গতি সম্পন্ন ট্রেন, যার গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। আর পরীক্ষামূলক চলাচলের সময় এই ট্রেনের গতি ছিল ঘন্টায় প্রায় ৪০২ কিলোমিটার। স্পেনের জাতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০০১ সালে এই ট্রেন তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং ২০০৭ সালে দ্রুতগতির এই ট্রেন সেবা দেয়া শুরু করে। এই ট্রেনে যাত্রীরা মাত্র ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময়েই বার্সেলোনা থেকে মাদ্রিদ পৌঁছাতে পারে। ৮টি বগি বিশিষ্ট এই ট্রেনটিতে রয়েছে ৪০৪টি সিট।
এজিভি ইটালো, ইতালি; গতিবেগ- ২২৩.৬ মাইল/ঘন্টা
এজিভি ইটালো হচ্ছে ইউরোপের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন এবং বিশ্বের তৃতীয় গতি সম্পন্ন ট্রেন; যা ঘন্টায় প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। তবে ২০০৭ সালে যখন পরীক্ষামূলকভাবে এই ট্রেন চালু করা হয় তখন এটির গতি ছিল প্রায় ৫৭২ কিলোমিটার। ফ্রান্সের ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি এলস্টোন কর্তৃক তৈরিকৃত এই ট্রেনটি ২০০৭ সাল থেকে রোম ও নেপলস শহরের মধ্যবর্তী পথে যাত্রীদের দ্রুতগতিতে চলাচলের সেবা দিয়ে চলছে। ১১টি বগি বিশিষ্ট এজিভি ইটালো ট্রেনগুলো ৩টি শ্রেণীতে বিভক্ত; ক্লাব, প্রাইমা ও স্মার্ট। প্রতিটি শ্রেণীর যাত্রীরাই চামড়ার সিটে বসার, লাইভ টেলিভিশন দেখার এবং ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা উপভোগ করে থাকে। এছাড়া এটি খুবই পরিবেশ বান্ধব একটি ট্রেন।
হারমোনি সিআরএইচ ৩৮০এ, চীন; গতিবেগ-২৩৬.১২ মাইল/ঘন্টা
হারমোনি সিআরএইচ ৩৮০ ট্রেনটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গতির ট্রেন; যার গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার। তবে চীনের রেল কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে যখন ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে তখন এটি ৩৮৬.১ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম ছিল। প্রাথমিকভাবে সাংহাই থেকে নানজিং পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে সাংহাই থেকে বেইজিং পর্যন্ত চলাচল করে। ৪৯৪ সিট বিশিষ্ট ট্রেনটি সম্পূর্ণভাবে ঝাঁকুনিমুক্ত। এছাড়াও রিডিং ল্যাম্প, পাওয়ার সকেট সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।
সাংহাই ম্যাগলেভ, চীন; গতিবেগ- ২৬৭.৮ মাইল/ঘন্টা
চীনের সাংহাই ম্যাগনেটিভ লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ ট্রেনটি হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন ট্রেন; যা ৪৩১ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। ২০০৪ সালে চালু হওয়া এই ট্রেনটি সাংহাই ম্যাগলেভ রেলওয়ে কোম্পানি পরিচালনা করে থাকে। অন্যান্য ট্রেনের সঙ্গে এই ট্রেনের মূল পার্থক্য হচ্ছে এই ট্রেনের কোনো চাকা নেই। যখন ট্রেনটি চলাচল করে তখন রেল লাইনের সঙ্গে সংযোগ থাকে না বরং উড়ে বা ভেসে যায়। শক্তিশালী চুম্বক রেললাইন এবং ট্রেনের মাঝে শক্তিশালী এক বিশেষ প্রকারের বিদ্যুৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি হয়, যা ট্রেনকে ভাসিয়ে রাখে এবং দ্রুত গতিতে উড়ে যেতে সাহায্য করে। ৫৭৪ সিট বিশিষ্ট এই ট্রেনটি শুধুমাত্র সাংহাইয়ের লং-ইয়াং মেট্রো স্টেশন থেকে সাংহাই পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মধ্যবর্তী ৩০ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করে। এই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৭ মিনিট। এই দ্রুতগতির ট্রেনের সাধারণ টিকিটের মূল্য ৮ ডলার আর আপনি যদি ভিআইপি টিকিট ক্রয় করতে চান তবে আপনাকে পরিশোধ করতে হবে ১৬ ডলার ।