নিশ্চিত ফেসে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প!1 min read
Reading Time: 3 minutesযুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত ফেসে যাচ্ছেন বলে এখন অনেকটাই বলা হচ্ছে। কেননা, তার নিয়োগকৃত সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল ফ্লিন, ২রা ডিসেম্বর এফবিআইএর কাছে তথ্যগোপন ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য দোষী সব্যস্থ হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ফ্লিন কে তদন্ত থেকে বাচাতে চাপ দিয়েছিলেন, সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কমিকে। সেটা না করায় তিনি তাকে জোরপূর্বক চাকুরীচ্যুত করেছিলেন। একাধিকবার জেনারেল ফ্লিনকে ভাল মানুষ হিসেবে বর্ননা করেছিলেন ট্রাম্প। এখন, ফ্লিনকে আইনের আওতায় নেয়ার মধ্য দিয়ে, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ। এর আগে ট্রাম্পের সাবেক ক্যাম্পেইন ম্যানেজর পল ম্যানাফট এফবিআইএ কে মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য দোষী সব্যস্থ হয়েছেন, তাকেও আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে।জেনারেল ফ্লিন ট্রাম্প প্রসাশনের দ্বিত্বীয় ব্যাক্তি হিসেবে দোষী সব্যস্থ হয়েছেন। বিশ্লেষনগুলো বলছে, সম্ভবত এর পরের কোপ টাই পড়তে যাচ্ছে ট্রাম্পের ঘাড়ে। যেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
যুক্তরাষ্ট্র আর্মির থ্রি স্টার জেনারেল খ্যাত মাইকেল ফ্লিন এর অন্য কোন অপরাধের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র এই মিথ্যা বলার অপরাধে ৫ বছর সাজা হবে। এর আগে যখন এফবিআই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল, এসই তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে দেশের স্বার্থে তাকে অব্যহতি বা তাকে ইনডেমিনিটি দেয়া র জন্য ট্রাম্পের কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছিলেন জেনারলে ফ্লিন। এই জেনারেল সেই জেনারেল, যিনি ডেমোক্রাট প্রার্থী হিলারী ক্লিনটনকে ‘জেলে আটকাও, জেলে আটকাও’ স্লোগানের রব তুলেছিলেন। এই জেনারেল সেই জেনারেল যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পর মুসলিম বিদ্বেষকে বিশেষ ভাবে সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রাখতেন, বলেছেন, ইসলাম একটি ক্যান্সার। এই জেনারেল সেই জেনারেল, ৩০ বছর ধরে সামরিক বিভাগে কাজ করেছেন, ইন্টেলিজেন্স বিভাগে কাজ করেছেন। জেনারেল ফ্লিন যুক্তরাষ্ট্রে সব নিরাপত্তা দপ্তর এর প্রধান হয়েও, মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রের সবচে বড় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এখন, এসব নিয়েই গরম আলোচনা।
জেনারেল ফ্লিন এর এই দোষী সব্যস্থ হওয়াতে কেন, পরোক্ষ ভাবে ট্রাম্পের দোষী সব্যস্থ হওয়ার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে সেটা প্রসঙ্গে বলি এখন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এফবিআইএর তদন্ত চলছে, সংস্থাটির সাবেক একজন পরিচালক রবার্ট মুলারের নেতৃত্বে। এটি এমন একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন যেখানে ঘোষনা দিয়েই রাষ্ট্রের আইনমন্ত্রী জেফ সেসনস বলেছিলেন, আমি এই তদন্ত প্রকিয়ায় কোন সংশ্লিষ্টতা রাখবো না। কেননা, তার বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে, তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে কোন পর্যায়ের যোগাযোগ করেছিলেন সেটা বের করতে। এই রবাট মুলারের আগে, যিনি এফবিআই এর প্রধান ছিলেন, জেমস কমি, তাকে ট্রাম্প বরখাস্ত করেছিলেন। জেমস কমি, আগে থেকেই জেনারেল ফ্লিন সহ ট্রাম্পের নির্বাচনী দপ্তরের কারো সাথে রাশিয়ার যোগাযোগ ছিল কিনা, সেটা তদন্ত করছিলেন। ধারনা করা হয়, সেই তদন্ত প্রক্রিয়া থামাতেই কমিকে বরখাস্ত করেছিলেন ট্রাম্প। কেননা, জেমস কমি বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে জেনারেল ফ্লিনকে তদন্ত থেকে অব্যহতি দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, যেটা তিনি মানতে চাননি। সেই বরখাস্তের পেছনে, একটি চলমান বিচারকাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা , ট্রাম্প, সেটা প্রমানের জন্যেও তদন্ত চলছে। সব মিলিয়ে, তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্থ করার উদ্যোগ প্রমানিত হলে, ট্রাম্প অভিসংশনের গ্রাসে পড়বেন।কিন্তু এখন যেই ধোয়া উড়ছে ফ্লিন এর দোষী সব্যস্থ হওয়ার মধ্যদিয়ে, সেটি আরো ভয়াবহ।
কেননা, এখন জেনারেল ফ্লিন যদি সাক্ষ্য দেন যে, হ্যা, তিনি ট্রাম্প অথবা তার জামাই জারেদ কুশনারের দ্বারা নির্দেশিত হয়েই রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, তাহলে ফেসে যাবেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বয়ং। যেই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই তুলে আসছেন ডেমোক্রাটরা। তবে ট্রাম্প বরাবরই সেটা অস্বীকার করেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার সহযোগীতা নিয়ে, নির্বাচিত হয়েছেন এটা তিনি মানতেই চান না। এবং তার টিমের কারো সাথে রাশিয়ার যোগাযোগ ছিল সেটাও তিনি অস্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাম্পের টিমের সবাই সেটা অস্বীকার করেছে এর আগে। সেই অস্বীকারের মধ্য থেকে প্রথমে দু জন, সাবেক ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পল ম্যানাফোর্ট এবং জন পাপাদোপলাস এর আগে এফবিআইকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধরা খেয়েছেন । এআর ধরা খেলেন, জেনারেল ফ্লিন স্বয়ং। এখন, বাকী থাকে ট্রাম্পের আইন মন্ত্রী জেফ সেসনস, জামাই জারেদ কুশনার, ছেলে ট্রাম্প জুনিয়ার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং নিজে।
এফবিআইএর কাছে মিথ্যা বলেছিলেন জেনারলে ফ্লিন’ এই তথ্য এফবিআইএর তরফে ফাস হওয়ার পর, ফ্লিন বলছেন, ‘আমি এ্তদিন ধরে আমার গায়ে একটি মিথ্যার চাদর নিয়ে ঘুরেছি, একটা অপবাদ নিয়ে ঘুরেছি।এখন আমি আমার পরিবারের সম্মতি নিয়েই দেশের জন্য কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আগে যদি তিনি মিথ্যাই বলে থাকেন, এবং এখন দেশের জন্য কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে কি সেই কথা? ‘ট্রাম্পের নির্দের্শেই রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম আমি’-এমন কথা সে সাক্ষ্য দিলেই খেলা অনেক খানিই শেষ। সে কারনেই বলা হচ্ছে, তদন্ত জালে সব অভিযুক্তরা একে একে বন্দী, এখন শেষ খেলা হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে নিয়েই।
ট্রাম্পের দ্বারা চা্কুরীচ্যুত সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কমি, এই ঘটনার পর তার নিরাবতা ভেঙে একটি টুইট করেছেন। ‘এভাবেই ন্যায় বিচার স্রোতধারা নদীর মতই সত্যেরর দিকে ইগড়াতে থাকে, এটাকে আটকে রাখা যায় না’ ।
এখন দেখার বিষয়, কোথায় গিয়ে গড়ায় সত্য নদীর জল।