বাংলাদেশ

যুবলীগের “ক্যাসিনো” ঝড়ের পর যুব মহিলা লীগের পাপিয়া ঝড়1 min read

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ 3 min read

author:

যুবলীগের “ক্যাসিনো” ঝড়ের পর যুব মহিলা লীগের পাপিয়া ঝড়1 min read

Reading Time: 3 minutes

রাজনীতির মাঠে বিএনপি অনুপস্থিত দীর্ঘদিন। প্রতিপক্ষ না থাকায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের আমলনামা খুলে বসেন। তিনি “লাগাম ছাড়া” হয়ে যাওয়া নেতাদের লাগাম টেনে ধরতে চালান ক্যাসিনো অভিযান। সংবাদমাধ্যম মারফত উঠে আসে যুবলীগ নেতা “ক্যাসিনো সম্রাট” ইসমাইল হোসেন চৌধুরী, খালেদ হোসেন ভুঁইয়া, জিকে শামীমের সকল কুকীর্তি। এছাড়া আরও কিছু ছোট নামের পাশাপাশি রাশেদ খান মেননের মতো বর্ষীয়ান নেতার নামও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হয়।

বাংলাদেশে “আইন সবার জন্য সমান” নয়। এদেশে টাকা ও ক্ষমতাভেদে মানুষের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের আইনের প্রয়োগ ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশ প্রশাসনের থেকে কিছু বাড়তি খাতির যত্ন পাবেন এটিই “গণতান্ত্রিক” বাংলাদেশে অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে সম্রাটদের গ্রেপ্তার করা তো দূরের কথা, তাদের নাম মুখে আনার সাহস আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেখাতো কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

নিজ দলের নেতা-কর্মীদের কুকীর্তি গোপন না করে জনগণের সামনে তুলে ধরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে দেশবাসীর কাছে ধন্যবাদ পেতেই পারেন। এই সম্রাটদের কল্যাণেই দেশের মানুষ এখন  জানে যে রাজনীতির আড়ালে অবৈধ টাকার কি রকম ছড়াছড়ি চলে।

এতদিন পর আবার ক্যাসিনো পর্ব আপনাদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার কারণ যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। গত শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। বিমানবন্দরে পাপিয়ার সাথে আরও গ্রেপ্তার হন পাপিয়ার স্বামী নরসিংদীর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী এবং তাদের দুজন সহযোগী। তাদের গ্রেপ্তারের পর ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পাপিয়ার বরাদ্দ নেয়া কক্ষ এবং বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে র‍্যাব।

গ্রেপ্তারের পরদিন রোববার বিকালে র‍্যাব একটি সংবাদ সম্মেলন করে পাপিয়ার কর্মকান্ড তুলে ধরে। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সব জায়গায় শুরু হয় পাপিয়াকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

পাপিয়া ও তার সাথে গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিনজন সম্পর্কে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল সংবাদ  সম্মেলনে বলেন, “এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে আসামিরা পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে বলে জানা যায়।”

র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাপিয়া ও তার স্বামী ঢাকার ইন্দিরা রোডে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লটের মালিক। এছাড়া তেজগাঁয়ের ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামের একটি গাড়ির দোকানে প্রায় এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীর ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশনস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে তাদের।

পাপিয়ার আয়ের অন্যতম উৎস ছিল জোর করে মেয়েদের দিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে দেহ ব্যবসা করানো। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত পাপিয়ার ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালানোর স্থান হিসেবে উঠে আসেন গুলশানের ফাইভ স্টার হোটেল ওয়েস্টিনের নাম।

২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত  হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়া ভাড়া বাবদ পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। এছাড়া মদের জন্য খরচ করেছেন ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওয়েস্টিনের  ১৯ তলার বার মাঝে মধ্যেই পুরোটা বুক নিতেন পাপিয়া। প্রতিদিন তার মদের বিল আসতো আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।

মঙ্গলবার অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার তিনটি পৃথক মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীর ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আদালতে পাপীয়ার পক্ষের এক আইনজীবি হতাশার সাথে অন্য আরেক আইনজীবিকে বলেন, “পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ছাত্রলীগের নেতা, এলাকায় নির্বাচন করতে চাওয়ায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই নাটক সাজিয়েছে।”

যদিও ইতিমধ্যেই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাপিয়ার বিষয়ে জানতেন। তিনিই পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করতে এবং তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো নেতা অপকর্ম করলে তাঁকে গ্রেপ্তারের নজির নেই এ কথাও উপস্থিত সবাইকে মনে করিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। কাদের মিথ্যা বলেছেন জোর গলায় এ দাবি হয়তো কেউ করতে পারবেন না। তবে কাদের পক্ষান্তরে এটি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এদেশে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করে পার পাওয়া যায়।

দেশবাসী, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের অপর্কমের চিত্র জানতে অপেক্ষা করুন প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত।

লেখক- হাসান উজ জামান

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *