বাংলাদেশ

‘নয়ন বন্ড’- মেড ইন বাংলাদেশ1 min read

জুন ৩০, ২০১৯ 2 min read

author:

‘নয়ন বন্ড’- মেড ইন বাংলাদেশ1 min read

Reading Time: 2 minutes

ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের উপন্যাসের দুঃসাহসী-নির্ভীক নায়ক জেমস বন্ডকে ছাপিয়ে সম্প্রতি দৃশ্যপটে  হাজির বঙ্গদেশী “নয়ন বন্ড”। বঙ্গদেশীয় বন্ডের পুরো নাম সাব্বির আহমেদ নয়ন। গত ২৬ জুন বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে এই নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী রিফাত ফরাজী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে। কেউ একজন সেই ঘটনাটি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলে মুহূর্তেই সেটি ছড়িয়ে পরে কোটি কোটি মানুষের কাছে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট পাঠকরা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রিফাত শরীফের সাথে নয়নের ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। দুমাস আগে রিফাত শরীফ ও আয়েশা সিদ্দিকার বিয়ে হয়। নয়ন রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে অনেক আগে থেকেই উত্ত্যক্ত করতো। আয়শার বিয়ের পর নয়ন ফেসবুকে তাকে নিয়ে নানা রকম আপত্তিকর পোস্ট দেয়। রিফাত শরীফ এর প্রতিবাদ করায় নয়ন তার দলবল নিয়ে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

দিনে দুপুরে মানুষ খুন করার মতো দুঃসাহস বঙ্গদেশী “নয়ন বন্ড” কোথা থেকে পেল এটি বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় প্রশ্ন বটে। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসছে নয়ন বন্ডের অতীতের সব কুকর্মের চিত্র। নয়নের কুকর্মের সাথে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার চিত্রটিও নগ্নভাবে উঠে আসছে বললে হয়ত খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে না।

ঘটনার পর পুলিশ বলছে মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও মারামারির অভিযোগে বরগুনা থানায় অন্তত ১০ টি মামলা রয়েছে নয়নের নামে। ২০১৭ সালে নিজের বাড়ি থেকে ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল ও রামদাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল নয়ন। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ পুলিশ কখনোই নয়নের প্রতি কঠোর ছিল না। এমনকি কয়েক মাস আগে নয়ন বন্ড আয়েশা সিদ্দিকার স্বামী নিহত রিফাত শরীফকে পুলিশের সাহায্যে মাদকের মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছিল বলে জানা গেছে। সেই মামলায় রিফাতকে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।

রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নেয়া আরেক সন্ত্রাসী রিফাত ফরাজীর কুকর্মের ইতিহাসও অনেক লম্বা। তার বিরুদ্ধে লোকজনকে মারধর করে অর্থ, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। এর আগে তরিকুল নামের এক ছেলেকে কুপিয়ে জখম করেছিল রিফাত ফরাজী। প্রভাবশালীদের সঙ্গে আত্মীয়তার জোরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা রিফাত ফরাজী পুলিশের এক এসআইয়ের বাসায় গিয়ে ভাঙচুর করার দুঃসাহস পর্যন্ত দেখিয়েছিল।

এদিকে স্থানীয় সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে নয়ন বন্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও আজকের নয়। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল খোদ ছাত্রলীগের নেতারা মাদক ব্যবসায়ী নয়ন বন্ডকে বর্তমান সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র সুনাম দেবনাথের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে।

গত নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক  সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন। দেলোয়ার হোসেনও বলছেন, নয়ন বন্ড সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে আওয়ামী লীগের নেতা সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই পরিচয়েই নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে।

কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করে সুনাম দেবনাথ বলেছেন,  ‘আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রিফাত হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। নয়ন কখনো আমাদের গ্রুপে ছিল না। রিফাত হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোক। আমার রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস করতে তাঁরা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের খেলা এখানেই শেষ নয়। নয়ন বন্ডের অন্যতম সহযোগী ও রিফাত শরীফ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। এলাকাবাসী ও প্রতিপক্ষ দলের অভিযোগ তারা দেলোয়ারের অনুসারী। কিন্তু দেলোয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,  ‘আমার আত্মীয় হলেও দুই বছর ধরে ওদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ওরা প্রতিদ্বন্দ্বী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর অনুসারী।”

নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীরা আসলে কার পক্ষে কাজ করতো সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছের লোক হিসেবে এলাকার মানুষের মাঝে তাদের একটা আলাদা দাপট ছিল সেটি বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কে না জানে মাদক ও ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজের দাপট ধরে রাখতে দরকার পরে নয়ন বন্ডের মতো সন্ত্রাসীদের।

লেখক- হাসান উজ জামান 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *