বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার আদ্যোপান্ত   1 min read

জুলাই ২১, ২০১৯ 6 min read

author:

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার আদ্যোপান্ত   1 min read

Reading Time: 6 minutes

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন পদ্ধতি বরাবরই ছিল দোদুল্যমান। যদিও আমেরিকাকে অভিবাসী জাতি হিসেবেই বিশ্ব চেনে। তবে বর্তমানে অভিবাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। তারা কাকে অনুমতি দিবে আর কাকে দিবে না তা নিয়ে পরিষ্কার করে কোন কিছু জানাতে নারাজ।

সহস্র বছর পূর্বে ইউরোপিয়ানরা জাহাজের সাহায্যে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকায় প্রথমবারের মতো অভিবাসী হয়। এই উত্তর আমেরিকাই পরবর্তীতে হয় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের পূর্বপুরুষেরা ছিল ল্যাটিন আমেরিকার। ‘দ্য লাস্ট আইচ এজ’ এর সময়ে অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ২০,০০০ বছর আগে তারা এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় এসেছিল।

ষোড়শ শতাব্দীর দিকে ইউরোপিয়ান অভিবাসীরা পূর্ব সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। এদের মধ্যে ফ্লোরিডায় স্প্যানিশরা, নিউ ইংল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ায় ব্রিটিশরা, নিউইয়র্কে ডাচরা এবং ডেলাওয়ারে সুইডিশরা আশ্রয় নেয়। কেউ কেউ আবার ধর্মীয় স্বাধীনতা পাবার জন্যে এ অঞ্চলে এসেছিল। অনেকেই অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য বসবাস করতে আসে। তখন হাজার হাজার আফ্রিকানকে ক্রীতদাস বানানোর জন্য নবগঠিত আমেরিকায় জোর করে ধরে আনা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম থেকে অদ্যাবধি কীভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়া ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে তাই আজ আলোচনা করা হবে।

শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের নাগরিকত্ব প্রদান

১৭৭৬: থমাস পেইন তাঁর ‘কমন সেন্স’ বইতে আমেরিকার স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন ধারণা দিয়েছেন। অধিকাংশ নব্য আমেরিকান নিজেদেরকে ব্রটিশ বলে পরিচয় দিত। কিন্তু পেইন তাঁর বইতে তাদেরকে আমেরিকান বলেই সম্বোধন করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইউরোপ বা ইংল্যান্ড আমেরিকার আদিদেশ হতে পারে না। বরং যারা নিগৃহীত, শান্তিপ্রিয় এবং ধার্মিক তারা স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল”।

১৭৯০: কারা হবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তা নিয়ে কংগ্রেস ১৭৯০ সালের মার্চ মাসে একটি আইন পাস করে। রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অধিকার আইন, ১৭৯০ অনুসারে যেকোন শেতাঙ্গ ব্যক্তি যারা যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে বাস করছে এবং যাদের চরিত্র ভালো, তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। নাগরিকত্ব ছাড়া কোন অশেতাঙ্গ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পাবে না। এমনকি ভোট দেওয়া এবং আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

১৭৯০ সালের আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে আদম শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। শুমারিতে দেখা যায় ৩.৯ মিলিয়ন লোকসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা জাতিগতভাবে ইংরেজ। যদিও প্রতি পাঁচজন লোকের মধ্যে একজন ছিল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত।

আইরিশ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া

১৮১৫: ১৮১২ সালের যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটেনের পুনরায় মিত্রতা স্থাপিত হয়। সাথে সাথে পশ্চিম ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর অভিবাসী আসতে থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চিত্রটাও পাল্টাতে থাকে। এটা গৃহযুদ্ধের আগ পর্যন্ত চলমান ছিল।

১৮২০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাস করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ক্যাথলিক ছিল। প্রায় পাঁচ মিলিয়ন জার্মান অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে আসে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বসবাস করা শুরু করে।

১৮১৯: অনেক অভিবাসী আটলান্টিক মহাসাগরের মতো অকূল পাথার পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে অসুস্থ হয়ে পরতো। আবার কেউ কেউ এই বৈরী অবস্থা পার হয়ে আসার আগেই মারা যেত। যারা পৌঁছাতে পেরেছিল তাদের বেশিরভাগ অভিবাসীই বন্দরনগরীগুলোতে আবাসস্থল তৈরি করতে শুরু করে। বন্দরনগরীগুলোর মধ্যে নিউইয়র্ক, বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া, চার্লেস্টন প্রভৃতি নগরীর প্রতি অভিবাসীদের আকর্ষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এরই ধারাবাহিকতায় বন্দরে নির্বিঘ্নে যাত্রীবাহী জাহাজ পৌঁছানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘জাহাজ আইন, ১৮১৯’ পাস করে। এ আইন অনুযায়ী জাহাজের ক্যাপ্টেনকে যাত্রীদের সমস্ত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতে হত।  এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কতজন অভিবাসী যোগ হলো তার হিসেব রাখতে সুবিধা হত।

১৮৪৯: জার্মান ও আইরিশ অভিবাসীরা ১৮৪৯ সালে অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘নো-নাথিং পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করে। তাদের অধিকাংশই ছিল কৃষ্ণাঙ্গ।

১৮৭৫: গৃহযুদ্ধের পরপরই কোন কোন রাজ্য নিজেদের মতো করে অভিবাসন আইন পাস করে। এর ফলে গোটা দেশে ইমিগ্রেশন পদ্ধতি নিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই ১৮৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নির্দিষ্ট ইমিগ্রেশন আইন পাস ও তা কার্যকর করার আদেশ দেয়।

চীন বর্জন আইন

১৮৮০: আমেরিকায় দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন ও নগরায়ন বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় অভিবাসন বিস্ফোরণ ঘটে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে থাকে। ১৮৮০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে প্রায় ২০ মিলিয়ন বা তার বেশি অভিবাসী আমেরিকায় আগমন করে। বেশিরভাগ অভিবাসী আসে দক্ষিণ, পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ থেকে, যেখানে প্রায় ৪ মিলিয়ন ইটালিয়ান এবং ২ মিলিয়ন জিউস। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতে থাকত আর বিভিন্ন কারখানায় কাজ করত।

১৮৮২: আমেরিকায় চীনাদের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করতে ‘চীনা বহিষ্কার আইন,১৮৮২’ পাস হয়। ১৮৫০ দশকের শুরুতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে আসে। তারা সোনার খনি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, রেলওয়ে, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করত। আইন পাস হওয়ার পর কর্মক্ষেত্রে চীনা বিরোধী প্রভাব বাড়তে থাকে। শেতাঙ্গ শ্রমিকেরা চীনাদের কম পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য মালিককে উসকানি দিত। যদিও তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.০০২ শতাংশ ছিল চীনা অভিবাসী।

১৮৯১: অভিবাসন আইন, ১৮৯১’ এ আরও পরিবর্তন আনা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, যারা পূর্বে অভিবাসন আইন ভঙ্গ করেছে কিংবা যারা কোন অপরাধ কর্মের সঙ্গে যুক্ত তারা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হতে পারবে না। এছাড়াও যারা কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য প্রবেশ করতে পারবে না। এই আইনের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় অভিবাসন অফিস নির্মাণ করা হয় যেখানে বিভিন্ন বন্দরে আসা অভিবাসীদের সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ করা হতো।

এলিস দ্বীপের অবমুক্তি:

১৮৯২: যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অভিবাসন স্টেশন হলো এলিস দ্বীপ। এ দ্বীপের মাধ্যমে অভিবাসীরা নিউইয়র্কে প্রবেশ করত। প্রথম অভিবাসী ছিলেন অ্যানি মুর নামের একজন তরুণ। তিনি আয়ারল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। ১৮৯২ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে ১২ মিলিয়নেরও বেশি অভিবাসী এলিস দ্বীপ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।                                                                              

১৯০৭: ১৯০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ আসে। শুধুমাত্র এলিস দ্বীপ হয়ে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানিদের নিয়ে সংকট দেখা দেয়। তাদেরকেও চীনা শ্রমিকদের মতো শেতাঙ্গরা কম মজুরি দিত। ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে একটা চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী জাপান নির্দিষ্ট পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি আমেরিকায় পাঠাবে, বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ততকালীন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সান ফ্রান্সিসকোতে শেতাঙ্গ ও জাপানিজ ছাত্রছাত্রীদের একসাথে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেবেন।

১৯১০: নিউইয়র্কের তিন চতুর্থাংশ জনসংখ্যা মিলে গঠন করে প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান জনগোষ্ঠী।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নতুন করে বাঁধার সৃষ্টি

১৯১৭: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশাতঙ্ক হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আমেরিকার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় তারা লিখিত প্রমাণ ছাড়া আর কোন অভিবাসী নেবে না। একইসাথে এশিয়ার অধিকাংশ দেশ থেকে অভিবাসী নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯২৪: ‘ইমিগ্রেশন আইন, ১৯২৪’ একটি সম্পূর্ণ নতুন নিয়ম তৈরি করে। এ আইনটি অনেকটা কোটা পদ্ধতির মতো। ১৮৯০ সালের আদমশুমারীর সময় যেসব জাতির লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল তাদের মধ্য থেকে প্রতি বছর ২ শতাংশ করে অভিবাসী নেওয়া হবে। এতে করে একটা সমস্যা দেখা দেয়। এ আইন অনুসারে উত্তর ও পশ্চিম ইউরোপের মাত্র তিনটি দেশ— গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড এবং জার্মান থেকেই ৭০ শতাংশ অভিবাসী ভিসা পায়। আর দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে অল্প সংখ্যক লোক ভিসা পেলেও এশিয়া এবং তার পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন, ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো থেকে কেউ কোন ভিসা পেত না।

১৯২৪ সালের অভিবাসন আইনের ফলে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সুযোগ পায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসী মেক্সিকান এবং কানাডিয়ান সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করত। এদেরকে ঠেকানোর জন্য ‘ইউএস বর্ডার পেট্রোল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর বেশিরভাগই চীন এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশের নাগরিক। তাদেরকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন দেওয়া হয় না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মেক্সিকানদের দিয়ে শ্রমিক স্বল্পতা পূরণ

১৯৪২: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শ্রমিক স্বল্পতা পূরণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো মিলে ‘ব্রাসেরো কর্মসূচী’ গ্রহণ করে। এর ফলে মেক্সিকো থেকে কৃষিকাজে দক্ষ এমন বেশকিছু শ্রমিক অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। এ কর্মসূচী ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

১৯৪৮: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো শরণার্থী ও পুনর্বাসন আইন পাস করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপিয়ানদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা বানানো।

১৯৫২: ‘ম্যাককারান-ওয়াল্টার আইন, ১৯৫২’ পাস করার মাধ্যমে এশিয়ান অভিবাসীদের বৈধ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ এর পর থেকে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে এশিয়ানরাও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সুযোগ পাবে।

১৯৫৬-১৯৫৭: সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে হাঙ্গেরির স্নায়ুযুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রায় ৩৮,০০০ হাঙ্গেরিয়ান শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় দেয়। এরাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রিফিউজি। এ স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় তিন মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান করে।

১৯৬০-১৯৬২: ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ কিউবা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৪,০০০ শিশু-কিশোর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিল। এদেরকে দিয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু কাস্ত্রো-বাহিনীর হাতে এরা পরাজিত হয়।

কোটা পদ্ধতির অবসায়ন

১৯৬৫:  ১৯২০ এর দশকে অভিবাসন ব্যবস্থায় যে কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল তা ১৯৬৫ সালে এসে বাতিল করা হয়। কোটা পদ্ধতির বদলে পরিবারের একত্রীকরণ এবং দক্ষ জনশক্তি আনয়নের উপর জোর দেওয়া হয়। ততকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন নতুন এ আইন পাস করেন এবং পুরনো সিস্টেমকে “আন-আমেরিকান” বলে আখ্যা দেন।

পরবর্তী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া প্রভৃতি থেকে প্রায় চারগুণ যুদ্ধ-পীড়িত লোক যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। এছাড়াও পরিবার একত্রীকরণ পদ্ধতিতে আমেরিকায় অসংখ্য অভিবাসী পৌঁছায়।

১৯৮০: ১৯৮০ সালের এপ্রিল-অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রায় ১২৫,০০০ কিউবান শরণার্থী ফ্লোরিডা উপকূলে পৌঁছায়। তারা সকলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ফ্লোরিডায় গিয়েছিল।

অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ

১৯৮৬: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ‘সিম্পসন-ম্যাজলী আইন’ পাস করার মাধ্যমে প্রায় তিন মিলিয়ন অবৈধ বাসিন্দাকে বৈধ ঘোষণা করেন।

২০০১: যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সিনেটর ডিক ডারবিন এবং অরিন হ্যাচ একটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের লঘু অভিবাসীদের নিয়ে। তারা এর নাম দেন ‘Development, Relief and Education of Alien Minors (DREAM)’। এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাইনর অভিবাসীরা তাদের উপযুক্ত বৈধতা পেত। কিন্তু বিলটি পাস হয় নি।

২০১২: যুক্তরাষ্ট্রের ততকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অভিবাসীদের নিয়ে একটি বিলে সই করেন। যারা ছেলেবেলায় পিতামাতার সাথে কিংবা একাকি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল তাদেরকে এ বিল কিছুটা সুবিধা এনে দিয়েছিল। কিন্তু নাগরিকত্ব প্রদান করে নি।

২০১৭: যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনের ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে। তাঁর সোজাসাপ্টা নীতি— “ভিনদেশী সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হবে এবং আমেরিকাকে সন্ত্রাসবাদ থেকে রক্ষা করতে হবে।” এ উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বিশ্বের মুসলিম-প্রধান ছয়টি দেশকে (চাদ, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন ও সোমালিয়া) যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও অভিবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। সেই সাথে উত্তর কোরিয়া এবং ভেনেজুয়েলাতেও একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ দুটি নিষেধাজ্ঞার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছিল।

২০১৮: গতবছরের এপ্রিল মাসে চাদের উপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বাকি সাতটি দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে।

লেখক- নিশাত সুলতানা                                                                                                                                                                        

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *