বিশ্ব

ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির কারণ1 min read

মে ৩১, ২০১৯ 3 min read

author:

ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির কারণ1 min read

Reading Time: 3 minutes

বর্তমান সময়ে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি বিশ্ব গণমাধ্যমে একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। প্রচুর খনিজ তেল সম্পন্ন এই দেশটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আগ্রাসনের কবলে। একটা দেশে যে দুইজন প্রেসিডেন্ট থাকতে পারে সেটা ভেনেজুয়েলাকে না দেখলে হয়ত কেউ বিশ্বাস করতেন না। ভেনেজুয়েলার অন্যতম ও বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হুগো যখন ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন তখন থেকে নিকোলাস মাদুরো নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় রয়েছেন।  কিন্তু ২০১৮ তে হুট করেই দেশের পুরো অবস্থা রাতারাতি বদলে যায়। দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল এবং সেই অবস্থায় ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাদুরো পুনরায় নির্বাচিত হলে প্রচণ্ড রকম বিক্ষোভের জন্ম নেয়। বিক্ষোভের আকার এতটাই প্রকট হয়ে উঠে যে রীতিমতো দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।    

অপরদিকে গত ২৩ জানুয়ারি সংসদ স্পিকার জুয়ান গুইদো নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন। দুই “প্রেসিডেন্টের” রাজনৈতিক দ্বৈরথ থেকেই দেশটির অবস্থা খুবই সংকটময় পরিস্থিতিতে চলে আসে। এই দ্বৈরথের একটি পক্ষ হল মাদুরোর দল “ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টি অব ভেনেজুয়েলা” এবং অপরদিকে অন্যপক্ষ হল জুয়ান গুইদোর দল  “ডেমোক্রেটিক ইউনিটি রাউন্ডটেনিল”। তবে প্রধান এই দুই দলের মধ্যে চরম সংকট ও বিক্ষোভের মধ্যেও সেখানে আরও কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। দেশের অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতি আদতে ঠিক তখনই সৃষ্টি হয় যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র জুয়ান গুইদোকে ভেনিজুয়েলার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, হল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন সহ প্রায় ৫০ টি দেশ জুয়ান গুইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে রাশিয়া, কিউবা ও চীনসহ বেশ কিছু দেশ মাদুরোর পাশে থাকার ঘোষণা দেয়। 

আগত সময়ে ভেনেজুয়েলায় ঠিক কি হতে যাচ্ছে সেটা এই মুহূর্তে বলে দেয়াটা বেশ মুশকিল। তবে বিগত বেশ কয়েক বছরের ইতিহাস দেখলেই এর কারণ কিছুটা ধারণা করা যায়। প্রেসিডেন্ট হুগো’র শাসনামল থেকেই ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভেনিজুয়েলার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম হয়ে উঠছিল। কেননা হুগো’র রাজনৈতিক চেতনা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ পরিপন্থী ছিল। হুগোর রাজনৈতিক মতাবলিকে শ্যাভিজম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এই শ্যাভিজম অনেকটাই সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা ও রাজনৈতিক বিন্যাস থেকে গড়ে ওঠা। হুগো তার নিজের এই মতাদর্শকে ল্যাতিন আমেরিকাতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করছিলেন দেশের খনিজ তেল সম্পদ। একদম অল্প দামে বিভিন্ন অঞ্চলে তেল সরবরাহ করে হুগো তার প্রভাব বৃদ্ধি করছিলেন ধীরে ধীরে। বর্তমান সময়ে মাদুরোও ঠিক একই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে একইভাবে তার রাজনৈতিক সম্পর্ক ও প্রভাব টিকিয়ে রাখার অক্ষুণ্ণ চেষ্টায় আছেন। কিন্তু ভেনেজুয়েলার এসবই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। তাই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্যই ভেনেজুয়েলাতে জুয়ান গুইদোকে তাদের বন্ধু হিসেবে সমর্থন দেয়। তার মাধ্যমেই আরেকটি সরকার গঠন করে ল্যাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক প্রভাব অনেকটাই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।          

এত ঘটনা এত কাণ্ড! এর পেছনে মূল কারণ কি? অনেকেই হয়ত জানেন প্রচুর পরিমাণ খনিজ তেল নিয়ে কোন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতা করতে পারেনি। ভেনেজুয়েলাও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। ভেনিজুয়েলার প্রচুর পরিমাণ খনিজ তেলের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ছিল অনেক দিন ধরেই। মূলত এই তেল সম্পদকে নিজেদের মত করে ব্যবহার করতেই ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। প্রেসিডেন্ট হুগোর শাসনের সময় পর্যন্ত ভেনিজুয়েলা একটি ধনী দেশের নাম ছিল কিন্তু হুগোর মৃত্যু, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৬ সাল থেকেই সেখানের মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করে এবং দেশটি সম্মুখীন হয় অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে। বর্তমানে দেশটির অবস্থা এতই খারাপ যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যও ঠিকমতো পাওয়া যায় না সেখানে। বিশ্ব গণমাধ্যম ভেনিজুয়েলার বর্তমান এই পরিস্থিতিকে তুলনা করছে ১৯২৩ সালের জার্মানির এবং ২০০০ সালের জিম্বাবুয়ের তৎকালীন অবস্থার সঙ্গে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে পরিলক্ষিত করা যায় যে, ভেনিজুয়েলার অনেক মানুষই বর্তমানে সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। এমনকি যুবতী মেয়েরা তাদের লম্বা চুল পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে জীবন যাপনের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে বর্তমানে মাদুরো তার বামপন্থীনীতি  শ্যাভিজম দিয়ে জনগণের কোন উন্নতি সাধন করতে পারছেন না বরং দেশের পরিস্থিতি দিন দিন আরো সংকটময় অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

গুঞ্জন উঠেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ত ভেনেজুয়েলাকে বর্তমান সংকটময় অবস্থা থেকে তুলে আনার জন্য অচিরেই সেখানে সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছেন। তবে ঠিক কবে থেকে এটা শুরু হবে এবং কীভাবেই বা এই অভিযান শুরু হবে সে সম্পর্কে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ট্রাম্প এমনিতেই প্রচুর ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছেন তবে এর মধ্যেও যদি যে কোন সময় ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আগ্রাসনের নির্দেশ দিয়ে দেন তাতে করে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই।

হুগো শ্যাভেজের শাসনামলে ভেনেজুয়েলাকে এই রকম সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি, এতে করে বলা যায় যে নিঃসন্দেহে মাদুরো তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট হুগোর মত হয়ে উঠতে পারেননি। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে তিনি যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।   

লেখক- ইকবাল মাহমুদ 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *