ইতিহাস

নারী দিবস শুরু হয়েছিল যেভাবে1 min read

মার্চ ৮, ২০২০ 2 min read

author:

নারী দিবস শুরু হয়েছিল যেভাবে1 min read

Reading Time: 2 minutes

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সঠিক ইতিহাস নিয়ে নানা সময় নানা কথা শোনা যায়। তবে সাধারণ যে তথ্যটি আমরা প্রায়ই দেখে থাকি, সেটা হল নিউ ইয়র্ক শহরের নারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের নির্মমভাবে দমন করার প্রতিবাদ স্বরূপ সেই ঘটনার ৫০তম বার্ষিকীতে ১৯০৭ সালে নারী দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এই তথ্যে বেশ কিছু ফাঁক রয়ে যায়, কেননা অনেকের মতে ১৮৫৭ সালে নারী গার্মেন্টস কর্মীদের সাথে যেমন কোন ধরনের নির্দয় ঘটনা ঘটেনি ঠিক তেমনই তার ৫০তম বার্ষিকীও উদযাপন করা হয়নি। ১৯৮০ সালের দিকে করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছিল যে মূলত ১৯৫০ এর দশকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সমাজতান্ত্রিক শিকড় থেকে আলাদা করার জন্য একটি প্রয়াস হিসেবে এই কল্পকাহিনীটির উদ্ভব হয়েছিল। 

ঐতিহাসিক টেম্মা কাপলানের মতে সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়েছিল নিউ ইয়র্ক সিটিতে, ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ। তৎকালীন আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্যগণ এবং আয়োজকরা চেয়েছিলেন যে এই দিনটি রবিবার হোক, যাতে করে বিভিন্ন শ্রমজীবী মহিলারা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন।

একটি নারী দিবস থাকা উচিৎ, এমন ধারণা ইউরোপেও সবার মধ্যে প্রচলিত হতে থাকল। ১৯১১ সালের ১৯ই মার্চ সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত ১৯৪৮ সালে ঠিক একই দিনে সংঘটিত হওয়া বিপ্লবের স্মরণেই এই দিনটি নারী দিবস হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল। আর অবাক করা বিষয় হল, সেই সমাবেশে বিশ্বব্যাপী প্রায় দশ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন।  

পরবর্তীতে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে, সমাজ সংস্কারের বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই বন্ধ হয়ে যায়। তবে নারী দিবস সংক্রান্ত বিষয়টি থেমে থাকেনি। 

১৯১৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি নাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি হয়। রাশিয়ান নারীবাদী আলেকজান্দ্রা কলোন্টাইয়ের নেতৃত্বে একটি বিশাল বিক্ষোভ শুরু হয়। রাশিয়ান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ঘটনাটি মার্চের ৮ তারিখে ঘটেছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে এই ঘটনা থেকেই সিজার নিকোলাস দুই এর পতন এবং রাশিয়ান বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। সিজারের পতনের পর অস্থায়ী সরকার নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।  

এই ঘটনাটিকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যই রাশিয়ান কমিউনিস্ট দলের প্রতিষ্ঠাতা লেলিন নারী দিবসকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে চিন এবং স্পেনের কমিউনিস্টরা এই দিবস পালন করা শুরু করেন। এভাবে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নারী দিবস কেবলমাত্র কমিউনিস্ট দেশগুলোতে পালন হত। 

১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ইউনাইটেড ন্যাশনের জেনারেল এসেম্বলিতে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে এই দিবসটিকে প্রায় একশটিরও বেশি দেশে উদযাপন শুরু করা হয় এবং প্রায় ২৫টির মত দেশে এই দিনটিকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে বেশিরভাগ উদযাপনই এই দিবসটির মূল রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে সরে যায়। উদাহরণস্বরূপ আর্জেন্টিনার কথাই বলা যায়, এই দেশে নারী দিবসকে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভাবে রূপান্তর করে নেয়। কেননা এই দিবসে আর্জেন্টিনাতে সকল পুরুষরা তাদের প্রিয় নারীকে ফুল এবং বিভিন্ন উপহার দেয়। এমনকি চীন দেশটিও এই দিবসের সাথে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকার পরেও বর্তমানে নারী দিবসকে তারাও বাণিজ্যিকভাবে রূপান্তর করে নেয়৷ চায়নাতে এই দিনে বিভিন্ন বিউটি ইভেন্ট বিশেষ করে ফ্যাশন শো’র আয়োজন করা হয়। 

এছাড়া যেহেতু নারী দিবসের সাথে কমিউনিজম এবং সমাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে, তাই আমেরিকার মত ক্যাপিটালিস্ট একটি দেশ নারী দিবসের রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ না করে বরং একে একটি উৎসব মুখর দিন হিসেবে গ্রহণ করে। 

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *