বিশ্ব

নারীদের জন্য বিপদজনক ৫ টি দেশ1 min read

জানুয়ারি ৭, ২০২০ 4 min read

author:

নারীদের জন্য বিপদজনক ৫ টি দেশ1 min read

Reading Time: 4 minutes

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ছাত্রীকে ধর্ষণ”৷ টিভি হোক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, দিনভর শুধু এই শিরোনামটি পর্দায় ভেসে উঠছে। আর নিশ্চয় অনেকের অবচেতন মনে একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছে, “এই সমাজে নারীরা কি আসলে নিরাপদ “!

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি নারীরা ধর্ষণের শিকার হয় এমন ৫টি দেশের পরিসংখ্যান আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

ভারত

ভারত

২০১২ সালে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার নির্ভয়ার কথা মনে আছে তো? এই ঘটনাটি শুধু ভারতকে নয় পুরো বিশ্বকে করেছিলো স্তম্ভিত। ভারতে নৃশংসতার তালিকায় সাম্প্রতিক কালে যোগ হয়েছে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদে পশু ডাক্তারকে গণ ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারার ঘটনা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটি যৌন সহিংসতা ও হয়রানি, যৌন দাসত্ব, নারী পাচারের সমীক্ষা অনুসারে বর্তমানে নারীদের জন্য  বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভারত সরকারের সর্বশেষ সমীক্ষা  অনুযায়ী ২০১৭ সালে দেশটিতে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৫৮টি । দেশটিতে গড়ে প্রতিদিন ৯২টি মামলা দায়ের হলেও বাস্তবে ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি ধারণা করা হয়। ধর্ষণের শিকার বহু নারী লোকলজ্জা, ঘুষ, স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকিসহ নানা কারণে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করা থেকে বিরত থাকে। এছাড়া আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে হাজার হাজার ধর্ষণ মামলা। ২০১৭ সালে আদালতে ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট মামলার সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৩০০। বছর শেষে যার সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ২৭ হাজার ৮০০।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তান

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তালেবানদের ঘাটি খ্যাত এই দেশটি। বিশেষজ্ঞদের মতে,  তালেবানদের উৎখাতের ১৭ বছর পার হয়ে গেলেও নারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি আফগানিস্তানে। বরং নারীদের প্রতি বৈষম্য, যৌন সহিংসতা আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করছে।

আফগানিস্তানে ধর্ষণের শিকার মহিলারা পুলিশের কাছে খুব কম অভিযোগ করে থাকেন। কারণ তারা যদি অভিযোগ করেন তবে তাদের সামাজিক ঝুকির সম্মুখীন হতে হয়। ধর্ষণের পর অনেক সময় তারা নিজের পরিবার দ্বারা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। ২০১২ সালে আফগানিস্তানে যৌন হেনস্থার অভিযোগে ২৪০টি ও ধর্ষণের অভিযোগে ১৬০ টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু বাস্তবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এর সংখ্যা আরো বেশি।

২০১৩ সালে আফগানিস্তানের এক ধর্ষিতার কথা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিলো। আপনি শুনে অবাক হবেন যে, কেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে সে অপরাধে সেই মহিলাকে জেলে প্রেরণ করা হয় এবং জেলে সেই নারী সন্তানের জন্ম দেয়। ২০১৩ সালে, পূর্ব গজনীতে এক ব্যক্তি এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলো। ফলস্বরূপ মহিলার আত্মীয়রা  নারী ও পুরুষ উভয়কে হত্যা করেছিলো।

সিরিয়া

সিরিয়া

সাত বছর গৃহযুদ্ধের পরে স্বাস্থ্যসেবা, যৌন সহিংসতা, দ্বন্দ্ব-সম্পর্কিত সহিংসতা, ঘরোয়া নির্যাতনের ক্ষেত্রে সিরিয়া নারীদের জন্য তৃতীয় বিপজ্জনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত।।

ইউএনএন তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী বিরোধী সম্প্রদায়কে শাস্তি দেওয়া স্বরূপ নারীদের উপর ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে।  প্রতিবেদনে আরো  বলা হয়েছে যে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা ব্যভিচারের মিথ্যে অভিযোগে পুরুষদের পাথর মারা, মেয়েদের বিয়েতে বাধ্য করা এবং সমকামী পুরুষদের উপর নির্যাতন চালানো সহ নারী ও মেয়েদের বিনা অপরাধে ফাঁসি দিয়েছে। প্রতিবেদনটি সিরিয়া যুদ্ধে নির্যাতিত, তাদের আত্মীয়, প্রত্যক্ষদর্শী, মেডিকেল কর্মীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরী করা হয়েছে৷

সোমালিয়া

সোমালিয়া

১৯৯১ সালে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে সোমালিয়ায় নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷  জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ২০১২ সালে সোমালিয়ায় আইডিপি (অভ্যন্তরীণ গৃহহীন  ব্যক্তি) জনবসতিগুলোতে কমপক্ষে ১৭০০ টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিলো সরকারী ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা। ধর্ষণের শিকার হওয়া এক -তৃতীয়াংশের বয়স ১৮ বছরের কম।

পাকিস্তান

২০৭ মিলিয়ন জনবসতির দেশ পাকিস্থানে শুধুমাত্র ২০১৮ সালে ৩,৮০০টির বেশি নারী ও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার প্রায় নারীর বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের ভেতরে।

কাইনাত সুমরু নামে একজন ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর চার দিন ধরে গণধর্ষণের শিকার হয়। মেয়েটি ধর্ষণের বিচার চেয়েছে বলে মেয়েটির ভাইকে হত্যা করা হয়। গ্রামের বয়স্করা তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর একটি প্রতিবেদন  অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রতি দুই ঘণ্টায় একটি ধর্ষণ ও  প্রতি ঘণ্টায় একটি গণধর্ষণ ঘটে এবং দেশটির ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ নারীকে কোনো না কোনো ধরনের গৃহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আইনজীবী এবং নারী অধিকার সংক্রান্ত সংগঠন ওমেন’স অ্যাকশন ফোরাম-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা আসমা জাহাঙ্গীর ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে নারী কারাবন্দিদের নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরী করেন। সে রিপোর্টে দেখা গেছে, কারাগারে থাকাকালীন ৭২ শতাংশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়৷

রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন সম্পর্কে করা একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, সেখানকার ৩০০ শিশুর মধ্যে ১৭ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয়।

চলুন, এবার নিজ দেশের ধর্ষণের চিত্র দেখে নেওয়া যাক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৯ সালে সারা দেশে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন নারী এবং আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন।  ২০১৮ ও ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন যথাক্রমে ৭৩২ এবং ৮১৮ জন নারী।

এছাড়া যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৮ জন নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন ৪ নারীসহ ১৭ জন।

লেখক- পূজা ধর 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *