বাংলাদেশ

আসছে ডেঙ্গু?1 min read

মার্চ ৬, ২০২০ 2 min read

author:

আসছে ডেঙ্গু?1 min read

Reading Time: 2 minutes

ডেংগু অসুখ হিসেবে খুব একটা নতুন না। ২০০ খৃষ্টাব্দে প্রাচীন “চাইনিজ মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া” তে ডেংগু জ্বরের কথা বলা আছে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ডেংগু মহামারীর হদিস পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।

বাংলাদেশেও ডেঙ্গু জ্বর নতুন  কিছু না। ১৯৬০-৭০ এর মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাতেও ব্যাপক আকারে এই জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। সেই সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার তেমন ব্যবস্থা ছিল না। তৎকালীন চিকিৎসকরা এটা যে ডেংগু তা বুঝতে পারেন নাই। তাঁরা এর নাম দেন ঢাকা ফিভার। ২০০০ সালে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পরার পর ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশে আলোচনার হয়।

_______

প্রথম ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত প্রতি ১০,০০০ লোকের মাঝে মাত্র ১ জনের রোগে নিরাময় অযোগ্য। কিন্তু দ্বিতীয় বার ডেংগু আক্রান্ত রোগীদের মাঝে প্রতি ১০০ জনের মাঝে ১ জনের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে ।

ডেংগুই একমাত্র ভাইরাস যেটাতে দ্বিতীয় বার আক্রান্তরা, প্রথমবারের চেয়েও বেশী মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। এটাকে বিজ্ঞান এর ভাষায় বলে Antibody-dependent enhancement।

ডেংগু ভাইরাসের চারটা সেরোটাইপ আছে। ডেনভি-১,২,৩,৪ ।

প্রথমবার আক্রান্ত হলে শরীর যে এন্টিবডি তৈরী করে সেটা সারা জীবন সেই ভাইরাস প্রতিরোধ করার শক্তি দিবে যেমন ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে।

একই প্রজাতির ডেংগু ভাইরাস যদি দ্বিতীয়বার আক্রমন করে, তবে আগের তৈরী এন্টিবডি শরীরকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু অন্য ‘প্রজাতির’ (serotype) ডেংগু ভাইরাস আক্রমণ করলে, এরা উল্টা ডেংগু ভাইরাসকে রেপ্লিকেশন এর মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার ফলে দ্বিতীয়বার ডেংগুতে আক্রান্ত ব্যাক্তির প্রথম বারের চেয়ে মৃত্যু ঝঁকি অনেক বেশি।

_____________

সরকারি হিসেবে গত বছর ডেংগুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। বেসরকারি হিসেবে এটা তিন লাখ ছাড়িয়ে যেতে পেরে। উপরের আলোচনায় এটা পরিস্কার যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডেংগুতে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই একথা বলাই যায় যে তিন লক্ষাধিক ব্যক্তি এই মুহূর্তে  মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন।

অতি সম্প্রতি গত বছর ফিল্ডে কাজ করেছেন..এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলার সুযোগ আমাদের হয়েছে। তাদের ভাষায় গত কয়েক বছরে রোগটির উপসর্গ এবং প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। যা বিগত বছর গুলোর অভিজ্ঞতার সাথে মিলে না। যা ডেংগু রোগে মৃত্যু ঝুঁকি কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত বছরের ডেংগু মহামারীর কিছু বৈশিষ্ট্য ছিলো-

  • নিহতদের বড় অংশ ছিলো শিশু
  • শক সিনড্রোমে মারা যাবার সংখ্যা ছিলো বেশি। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হচ্ছে রক্তক্ষরণ ও শরীরের পানিশূন্যতার কারণে রোগী অচেতন হয়ে পড়া
  • প্রথম বারের মতো ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার

___________

১৯৩০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১০০+ প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে। এর মাঝে কোন প্রজাতির মশা ভালো, কোনটা খারাপ। এগুলো নিয়ে কোন ডিটেইলস স্টাডি নাই। এগুলো নিয়ে স্টাডি করার কথা কীট তত্ত্ববিদদের। কিন্তু দেশে এই পেশার লোকদের সংকট আছে। এই বিষয়ে প্রথম আলোর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে-

“মশার প্রজননস্থল, ধরন, প্রজাতি, সংখ্যা, কোন ধরনের কীটনাশকে মশা মারা যায়, কোন ধরনের রোগের জীবাণু বহন করে, তা নিয়ে গবেষণা করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। কিন্তু দেশে কীটতত্ত্ববিদের সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ নেই। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও (আইইডিসিআর) একই অবস্থা। স্থানীয় পর্যায়ে মাত্র ২৩-২৪ জেলায় কীটতত্ত্ববিদ আছেন। তবে তাঁদের বড় অংশ টেকনিশিয়ান থেকে পদোন্নতি পেয়ে কীটতত্ত্ববিদ হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অনেকটাই ভাটা পড়েছে। অভিযোগ আছে, কীটতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও অনেকে কাজ পাচ্ছেন না।”

_________

করনো ভাইরাস দেশে আসবে কি না বা ইতিমধ্যে চলে আসছে কি না আমরা জানি না। কিন্তু এডিস মশা দেশেই আছে। ২০০৮ সাল থেকে মাস ভিত্তিক ডেংগু রোগীর হিসাব রাখা শুরু হয়।  ইংরেজি দৈনিক নিউএজ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০২০ সালের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি মাসে ডেংগু রোগীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে।  ২০১৯ সালের চেয়েও এটা অনেক বেশি। এটা অস্বাভাবিক, সাধারণত বছরের এই সময়ে এতো ডেংগু রোগী দেখা যায় না।

অতি সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একটা সার্ভে চালানো হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে। সার্ভে চালানো জায়গার ৯৫% জায়গায় তাঁরা এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন।

যদি একই সাথে করনো ভাইরাস এবং এডিস মশার আগমন ঘটে, তবে কি ঘটতে যাচ্ছে ২০২০ সালে?

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *