ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যত যৌন হয়রানির অভিযোগ1 min read
- ১৯৭০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ জন মহিলার অভিযোগ করেছেন যে তারা ট্রাম্পের যৌন হয়রানির শিকার।
- সর্বস্তরে বহুল আলোচিত #MeToo আন্দোলন এই অভিযোগে নতুন মাত্রা যোগ করে।
- অভিযোগকারীদের “মিথ্যাবাদী” অপবাদ দিয়ে ট্রাম্প তার উপর আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানি মার্কিনদের একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। হলিউড থেকে ক্যাপিটাল হিল বাদ যাচ্ছে না কিছুই। চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ট্রাম্পের উপর ১৯৭০ এর পর থেকে মোট ২৪ নারীর যৌন হয়রানির অভিযোগ।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে একটি ভিডিও ফুটেজ বের হওয়ার পর অনেকেই নিজে থেকে অভিযোগ জানায় যে, ট্রাম্প তাদের সাথেও এমন বাজে কাজ করেছেন। ২০০৫ সালের সেই ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা যায় যে, ট্রাম্প একজন নারীর গোপণাঙ্গে হাত বুলাচ্ছেন এবং নারীটি বিরক্ত হচ্ছেন। এই ভিডিও ফুটেজ বের হওয়ার আগেও বেশ কয়েকজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন। তবে ভিডিও ফুটেজ বের হওয়ার পর বাকিরাও সাহস করে অভিযোগ দায়ের করেই ফেলেছেন শেষমেশ।
ট্রাম্প অবশ্য তার বিরুদ্ধে এইসব যৌন হয়রানির অভিযোগ একদম উড়িয়ে দিছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক স্বার্থে মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছুই না। তিনি অভিযোগকারী ঐসব নারীকে মিথ্যাবাদী আখ্যাও দিয়েছেন। ট্রাম্প এবং তার আইনজীবী তো একজন মহিলার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে বলেছিলো যে, সে অতোটাও আকর্ষণীয় নয়। সুতরাং তার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী থাকাকালীন এক র্যালিতে তিনি বলেছিলেন, তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধার সৃষ্টি করতেই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং এটা জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই না। তিনি তখন আরও বলেছিলেন, নির্বাচনের পর এসব মিথ্যাবাদী মহিলাদের বিরুদ্ধে মামলা করব আমি।
পরবর্তীতে এক সাক্ষাতকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রচুর পরিমাণ টাকার বিনিময়ে এসব মহিলাদের ভাড়া করা হয়েছে আমার নামে ভুয়া অভিযোগ করার জন্য।
কিন্তু এতদিনেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার কথা রাখেননি। কথিত মিথ্যাবাদী মহিলাদের কারুর নামেই তিনি কোনো মামলা করেন নি। যদিও উলটো দুইজন নির্যাতিতা মহিলাই তার নামে মামলা ঠুকে দেন আদালতে।
হোয়াইট হাউজ বলছে, নির্বাচনের ফলাফলই প্রমাণ করে আমেরিকানরা এসব অভিযোগকে পাত্তাই দেয় নি। নির্বাচনে দেশের জনগণ ট্রাম্পকে যেভাবে সমর্থন করেছে এতেই প্রমাণিত হয় যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ভুয়া অভিযোগগুলো দেশের মানুষকে ভুল পথে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ট্রাম্পের বারবার অস্বীকার করা স্বত্বেও ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এক গণজরিপে ৫০% (৫৯% মহিলা এবং ৪১% পুরুষ ভোট ) মানুষ ভোট দেয় যে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠার পর ট্রাম্পের পদত্যাগ করা উচিত। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্রেট আইনজীবীও ট্রাম্পের পদত্যাগের দাবিতে বেশ সরব ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নির্যাতিতা নারীদের একজন হোলভে এনবিসি নিউজকে জানিয়েছিলেন, “আমরা কোনো প্রাইভেট সিটিজেন নই। আমেরিকানদের দেখা উচিত তারা যে মানুষটার হাতে গোটা দেশের দায়ভার তুলে দিয়েছে তার চরিত্র কেমন, নারীদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। আবার নতুন করে আমরা আন্দোলন শুরু করবো। পরিবেশ পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। তবুও আমরা আবার চেষ্টা করবো”।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকজন নারী সম্পর্কে যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন-
জেসিকা লীডস
অভিযোগঃ ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেসিকা বলেন ১৯৭০ সালের শেষের দিকে উড়োজাহাজে তার পাশের সিটেই বসেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প তার স্কার্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত বুলাচ্ছিলো। তারপর জেসিকা সিট ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসেছিলেন। জেসিকা আরও বলেন, ট্রাম্প আমাকে আমার জীবনে শোনা সবথেকে বিশ্রী একটা নাম ধরে ডেকেছিলো।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরের মতো এবারও অভিযোগ অস্বীকার করলেন এবং সাথে যোগ করলেন, এই নারী আমার পছন্দের সাথে যায় না। সুতরাং তার সাথে এরকম আচরণ করা অসম্ভব।
ইভানা ট্রাম্প
অভিযোগঃ ইভানা ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী। ট্রাম্পের তিন সন্তানের জননী ইভানার ১৯৯০ সালে করা তালাকনামার এজহারে উল্লেখ করেন, ১৯৮৯ সালে ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করেন। হঠাত একদিন বাড়িতে ফিরেই ট্রাম্প রাগান্বিত ভাবে ইভানার চুল ধরে টানাটানি শুরু করেন এবং বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ইভানা তখন অনেক ভয় পেয়ে যান এবং দৌড়ে গিয়ে নিজের মায়ের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াঃ ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন এই বিষয়টি নিয়ে ২০১৫ সালে একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, আপনি আপনার স্ত্রীকে ধর্ষণের দায়ে কি করে অভিযুক্ত হবেন ?
ট্রাম্প নিজেও ইভানার অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছেন সেই শুরু থেকেই।
ক্রিস্টিন এন্ডারসন
অভিযোগঃ ক্রিস্টিন এন্ডারসন একজন ফটোগ্রাফার ও সাবেক আমেরিকান মডেল। ক্রিস্টিন দাবী করেন, ১৯৯০ সালে নিউইয়র্কের একটি নাইট ক্লাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার স্কার্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে তার গোপানাঙ্গ স্পর্শ করে। ক্রিস্টিন আরও বলে, ২০ বছর আগের ঐ দিনটিতে আমি কল্পনাও করতে পারিনি আমার পাশে বসে থাকা ভদ্রলোকটি অনুমতি ছাড়াই আমার সাথে এমন কাজ করতে পারে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াঃ ট্রাম্প ক্রিস্টিনের এই অভিযোগটি দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, সস্তা পাবলিসিটি পাওয়ার জন্যই ক্রিস্টিন তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন।
জিল হার্থ
অভিযোগঃ জিল হার্থ একজন ব্যবসায়ী যিনি একটা সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে বিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হার্থ দাবী করেন, ১৯৯০ সালে মার-এ-লাগো নামক এক রিসোর্টে ডিনারের সময় ট্রাম্প তার দুই হাত দেয়ালে ঠেকে ধরেন, তার স্কার্ট টেনে উপরে তুলে ফেলেন এবং তাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন। হার্থ তখন কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে, রেস্ট রুমে যাওয়ার কথা বলে তার হাত থেকে সে যাত্রায় রেহাই পান।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াঃ জিল হার্থের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, হার্থ একজন মিথ্যাবাদী মহিলা, তার প্রত্যেকটা অভিযোগ মিথ্যা।
নাতাশা স্টয়নফ
অভিযোগঃ পিপল ম্যাগাজিনের সাংবাদিক নাতাশা অক্টোবর ২০১৬ সালে এক কলামে উল্লেখ করেন, তিনি মার-এ-লাগো রিসোর্টে ২০০৫ সালে ট্রাম্পের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। সেখানে তিনি ট্রাম্প-এর নতুন স্ত্রী মেলানিয়া এবং ট্রাম্পকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন করতে গিয়েছিলেন। মেলানিয়া ফটোশ্যুটের জন্য কাপড় বদলাতে গেলে ট্রাম্প নাতাশাকে রিসোর্টে একটি চমৎকার রুম দেখাবেন বলে রিসোর্টে অন্য একটি রুমে নিয়ে যান। তারপর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়াঃ নাতাশার এই অভিযোগটি অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি টুইট বার্তায় বলেছিলেন, ১২ বছর আগের সেই আর্টিকেলে তাহলে তিনি কেনো এই দুর্ঘটনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন? কারণ এই ঘটনাটি ঘটেইনি। তিনিও সস্তা পাবলিসিটির জন্য এরকম একটা নাটক তৈরি করে মিডিয়া এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যেকটা অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। হলিউড পাড়া থেকে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চারিত্রিক সার্টিফিকেট যাই হোক না কেনো তিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও বলিষ্ঠ প্রার্থী। তবে তার এই চারিত্রিক সার্টিফিকেট আসন্ন নির্বাচনে বেশ প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।