চীনের ডিটেনশন ক্যাম্পে উইঘুর মুসলিমদের ব্রেইনওয়াশ!1 min read
চীন সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া বেশ কিছু গোপন নথিপত্রের মাধ্যমে জিনজিয়াং এ অবস্থিত একটি ডিটেনশন ক্যাম্প সম্পর্কে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে, যা গোটা বিশ্বে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। সেই গোপন নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে লাখো উইঘুর মুসলিমকে সেই ক্যাম্পে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং কৌশলে টেরোরিজম বিরোধী প্রচেষ্টার নামে তাদের ব্রেইনওয়াশ করা হচ্ছে।
ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এর আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিয়াইজে ফাঁস হয়ে যাওয়া এই গোপন নথিপত্রগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে বন্দী মুসলমানদের প্রতিটি পদক্ষেপ এখানে কড়া নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। বন্দী মুসলমানরা কখন কি করবে, তাদের চুল কেমন হবে থেকে শুরু করে তারা কখন ঘুমাবে পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে কড়া নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া বাইরের পৃথিবীর সাথে এসব বন্দীদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি রানডাল স্ক্রিভার, চলতি বছরের মে মাসে একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, “এক মিলিয়ন থেকে তিন মিলিয়ন নাগরিক এইসব ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী আছে। এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে এখানে প্রায় ৪৬৫টি বন্দী শিবির রয়েছে!
বিজনেস ইনসাইডারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাঁস হয়ে যাওয়া এইসব তথ্য অনুযায়ী এইসব বন্দীশালায় প্রায় ১০ লক্ষ মুসলমানকে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি বন্দীদের কোন রূপ বিচার বিবেচনা ছাড়াই এখানে বন্দী থাকতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা জানেই না, কেন তাদের আটক করা হয়েছে এবং তাদের ভাগ্যে কি ঘটতে চলেছে! আটককৃত মুসলমানদের প্রায় বেশীরভাগই উইঘুর সম্প্রদায়ের অধিবাসী।
এমন একটি ঘটনায় সারা বিশ্ব যেখানে নড়েচড়ে বসেছে সেখানে চীন সরকারের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে। তাদের দাবী, এগুলো মূলত তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্যই এবং এখানে কেউ বন্দী নেই, তাদের কেউ আটকেও রাখেনি। তাদের চলাফেরায় রয়েছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। তবে ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিপত্রের মাধ্যমে সেইসব বন্দীশালার কিছু মর্মান্তিক এবং অমানবিক দিক প্রকাশ পেয়েছে। কেননা সরকার হতে নির্দেশনা এসেছিল কীভাবে চালাতে হবে এই বন্দীশালা। সেই নির্দেশনার সংক্ষিপ্ত আকার নিম্নরূপ:
- পালানোর সুযোগ যাতে না পায় সেজন্য থাকতে হবে কড়া নজরদারি।
- শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শাস্তি বাড়াতে হবে।
- বন্দীদের কেউ যদি কোন রূপ বিশৃঙ্খলা অথবা কোন নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
- তাদের স্বীকারোক্তি নাও এবং তারা যাতে অনুতপ্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- বন্দীদের সবাইকে মান্দারিন ভাষা শিখাতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
- পুরোপুরি বদলে যাওয়ার জন্য তাদেরকে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
- পুরো বন্দীশালার মধ্যে সিসি ক্যামেরা দিয়ে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। কোথাও যাতে সিসি টিভির আওতার বাইরে না থাকে।
ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিপত্র অনুযায়ী উইঘুরের এইসব বন্দীদেরকে বাইরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। একজন সাবেক বন্দী ইয়ো জানের বক্তব্যেও উঠে এসেছিলে এই ধরনের কিছু ভয়ংকর নির্যাতনের ইতিহাস। তিনি বলেছিলেন, “এক রাতে তাকে হুট করেই তাকে উঠিয়ে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। সেখানে তাকে উলঙ্গ করে পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখা হয়েছিল, সেখানে উইঘুর মুসলমানদের কেউ মানুষ বলে মনে করে না। সেই বন্দীশালা থেকে কখনো বের হতে পারব এমনটা কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি”
এদিকে লন্ডনে বসবাসরত চীনা রাষ্ট্রদূতের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি সরাসরি প্রশ্ন উত্তর পর্বের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তিনি হংকং এ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বন্দী শিবির নিয়ে যে বর্ণনাগুলো উঠে এসেছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বানোয়াট। এগুলো আসলে মোটেও কোন বন্দী শিবির নয় বরং শিক্ষাকেন্দ্র!”
সেই বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, যে সকল নথিপত্রের কথা উঠে এসেছে সেগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট। এছাড়া তিনি এইসব খবর বিশ্বাস করতে বিশ্ববাসীকে নিষেধ করেছেন।
কিন্তু অপরদিকে, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এর আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসিআইজে এর বক্তব্য এবং দলিলগুলোতে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা! এ সম্পর্কে আইসিআইজে এর সাংবাদিকরা বলেন, এই সব নথিপত্র মোটেও ভুয়া নয়। এইসব নথিপত্রগুলো হল চীন সরকার কীভাবে লাখো মানুষকে বন্দী করে মগজ ধোলাই করছে সেগুলোরই প্রমাণ!