বিশ্ব

কে এই কাসেম সোলাইমানি?1 min read

জানুয়ারি ৩, ২০২০ 3 min read

author:

কে এই কাসেম সোলাইমানি?1 min read

Reading Time: 3 minutes

মাঝে মাঝে কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট বলতে যেমন পৃথিবী সাকিব আল হাসানকে বোঝে, গ্রামীণ ব্যাংক বলতে যেমন ডক্টর ইউনূস বোঝে, স্যার ফজলে হাসান আবেদ যেমন ব্র্যাকের সমার্থক ঠিক সেভাবেই জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে বিবেচনা করা হয় ইরানি সমর শক্তির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে। সমকালীন সেরা সমবিদদের মাঝে সেরাদের তালিকায় প্রথম তিন জনের মাঝে নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিতে পারেন এই জেনারেল। একই  সাথে তিনি ছিলেন সিআইএ এবং মোসাদের হিট লিস্টে। দেশের জনগন ভালোবেসে তাঁকে ডাকতো হাজি কাসেম নামে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনীর এক বিমান হামলায় আজ নিহত হয়েছেন এই জেনারেল। কতোটুকু প্রভাব ছিলো তার? এই ঘটনার গুরুত্বই বা কত টুকু?

কে এই হাজি কাসেম?

মূলতো ইরাক ও সিরিয়ায় “ছায়া যুদ্ধ” পরিচালনায় অসামান্য পারদর্শীতা প্রদর্শনের পরেই আলোচনায় আসেন হাজি কাসেম। পতনের দ্বার প্রান্তে থাকা সিরিয়ার আসাদ সরকারকে রক্ষা, আইএস- কে পরাজিত করা, ইরাকে মার্কিন স্বার্থে ক্রমাগত আঘাত, ইয়েমেনে সৌদি সেনাদের বিরুদ্ধে হুতি গেরিলাদের সমর্থন প্রদান কোথায় ছিলো না হাজি কাসেমের উপস্থিতি? পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসম্য বদলে দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন হাজি কাসিম।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার সোলাইমানি। তবে অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা ছিল দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে। রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস্ ফোর্স’ তাঁর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় । ২১-২২ বছর হলো বাহিনীটি গড়ে তুলছেন তিনি। অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশান ইউনিট’ বলা যায় একে; যার প্রধান কর্মক্ষেত্র এখন ইরানের বাইরে।

ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের সময় তিনি সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় তাঁর কার্যক্রমের জন্য তিনি জাতীয় বীরে পরিণত হন। সোলাইমানি কুদস ফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন ১৯৯৮ সালে। তখন অবশ্য তিনই যথেষ্ট লো-প্রফাইল বজায় রাখতেন। মিডিয়ার অতিরিক্ত মনোযোগ এড়িয়ে গেছেন খুব সাবধানতার সাথে। এই সময়ের মাঝে তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার আসাদ আর ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপ গুলোর সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার দিকে মনোযোগ দেন।

ছায়া যুদ্ধ

হাজি কাসেমের অধীনের কুদস ফোর্সের আকার এবং অপারেশনের কার্য পরিধি বাড়তে থাকে। বিশ্ব ব্যাপী সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রম, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ঘটনা প্রবাহে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে আল-কুদস।

সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করেন শুধুমাত্র আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে। তাই ইরানিরাও ‘কুদস্ ফোর্স’-এর সংখ্যা ও সামর্থ্য নিয়ে তেমন ধারণা রাখেন না । এই ‘ফোর্স’-এর সঙ্গে কাজ করছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ‘ফাতেমিয়ুন’ আর ‘জাইনাবিয়ুন’ নামের মিলিশিয়া গ্রুপ এবং ইয়েমেনের হুতিরা।

২০০৫ সালে ইরাকে সরকার প্রতিষ্টিত হবার পরেই কাসেম ইরাকের দিকে মনোযোগ দেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করেন বদর নামের একটা শিয়া রাজনৈতিক এবং প্যারা মিলিটারি সংগঠনকে। যারা ইরাকে ইরানের প্রক্সি হিসেবে কাজ করতো । ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা করে নেয় এই  গোষ্ঠী এর সদস্যরা। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাসার আল আসাদ এর পক্ষে এই বাহিনীকেই প্রেরণ করেন কাসিম। ইসলামিক স্টেটস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইরাকি সেনা বাহিনীর সাথে কাঁধে কাধ রেখে লড়াই করে কাসেমের আরেক প্রক্সি -হাসিদ আল শাবি।

সোলাইমানিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইসরায়েলের মাথাব্যথাই বেশি। ইরানের এই জেনারেলকে তারা প্রকাশ্যেই ‘এক নম্বর শত্রু’ বলে। ইসরায়েল মনে করছে লেবানন, সিরিয়া, গাজা থেকে সোলাইমানির অদৃশ্য সৈনিকেরা ক্রমে তাদের ঘিরে ফেলছে।

হত্যাচেষ্টা

তবে সোলাইমানিকে হত্যার চেষ্টা কিন্তু এই প্রথম নয়! এর আগেও বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয় তাঁকে। ২০০৬ সালে এক বিমান দূর্ঘটনায় এবং ২০১২ সালে এক বোমা হামলায় সোলাইমানি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিলো। যদিও তা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ২০১৫ সালে আবারো চেষ্টা করা হয় সোলাইমানিকে হত্যার। তিনি এসময় সিরিয়ার যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাঁকে হত্যার জন্য আল-কুদসের ঘাটিতে টানা বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল।

‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ২০১৮ সালের নভেম্বরে এমন রিপোর্টও করেছে যে, সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার অন্তত এক বছর আগে একই খুনে দল ইসরায়েলের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে সোলাইমানিকে নিয়ে অনুরূপ কিছু পরিকল্পনা করছিল। এ কাজের বাজেট ছিল দুই বিলিয়ন ডলার।

নিহত হাজি কাসিম! সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

শুরুতেই যেমনটা বলছিলাম, এক বিমান হামলায় বাগদাদে নিহত হয়েছেন হাজি কাসিম। এর প্রতিক্রিয়া কি হবে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে এই আক্রমন যে ছায়া যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করবে তা স্পষ্ট ! ইরান কি তাদের সেরা জেনারেল কে হারিয়ে ডিফেন্সিভ পজিশনে চলে যাবে? নাকি আরো বড় আঘাত হানবে?

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব সম্ভবত নির্বাচনী প্রচারণার নতুন রসদ পেয়ে গেলেন। আর এই মুহূর্তে মধ্য প্রাচ্যে পুরো যুদ্ধ লাগলে সবচেয়ে বেশি লাভ ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই।

কারণ- আমেরিকানরা যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট পরিবর্তনে ভোট দেয় না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *