Site icon Bangla Info Tube

করোনা সংকটে যত জানা অজানা 

করোনাভাইরাস সংকটে যা যা জানতে হবে; @Getty Image

Reading Time: 4 minutes

পুরো বিশ্ব কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস কোভিড-১৯ এরই মাঝে আটকে দিয়েছে বিশ্বের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সব পথ। করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ সব মাধ্যমে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। কোন তথ্য ছেড়ে কোন তথ্য সঠিক তা নিয়েও চলছে দ্বন্দ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (WHO) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রাথমিক সব প্রশ্নের উত্তর তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়ার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত। তেমনই কিছু প্রশ্ন দেখা যাক এক নজরে।

করোনা ভাইরাস কি?

করোনাভাইরাস ভাইরাস গোত্রের একটি সদস্য যা প্রাণি এবং মানব দেহে অসুস্থতার বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। এটি বেশ বড় একটি প্রজাতি। এই ভাইরাস সাধারণ কাশি বা সর্দি থেকে ফুসফুসের সংক্রমণ পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম। এর আগে এই প্রজাতির মার্স এবং সার্স ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমত হয়েছিল। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কোভিড-১৯ প্রজাতি মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয়েছে।

কোভিড-১৯ কি?

করোনাভাইরাসের সবশেষ আবিষ্কৃত প্রজাতি কোভিড-১৯। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল নতুন এই ভাইরাসটি।

আরও পড়ুন- করোনা ঠেকাতে করণীয়

কোভিড-১৯ সংক্রমণের লক্ষণ কি কি?

কোভিড-১৯ সংক্রমণে লক্ষণ শুরুর দিনগুলোতে একেবারেই সাধারণ সর্দি জ্বরের মতই। জ্বর, ক্লান্তি এবং শুকনো কাশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর মাঝে গিটে ব্যথা এবং নাকে পানি ঝড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। প্রথম দিকে সাধারণত এই সমস্যা খুবই হালকা থাকে এবং পরে তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কোন প্রকার চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে থাকেন। প্রতি ৬ জনের মাঝে ১ জন খুবই গুরুতর অসুস্থ হয়ে থাকেন এবং চরম শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। বর্তমানে এই রোগের আরো দুটি উপসর্গ ধরা পড়েছে- ঘ্রান না পাওয়া এবং স্বাদহীনতা।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক মানুষদের মাঝে যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের মাঝে এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা যায়। তবে দিনে দিনে পরিস্থিতি বেশ জটিল হচ্ছে। তাই কারো মাঝে রোগের সাধারণ উপসর্গের সবকটা একত্রে দেখা গেলে তাকে খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেয়া দরকার।

কোভিড-১৯ কিভাবে সংক্রমিত হয়?

এটি একটি ছোঁয়াচে ভাইরাস। এর সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো এই ভাইরাসের বাহক হাঁচি কাশির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এই ভাইরাস যেকোন পৃষ্ঠে আটকে থাকতে পারে। সুস্থ ব্যক্তি সেই জিনিস স্পর্শ করতেই ভাইরাসটি তার শরীরে লেগে যাবে। এরপর তিনি কোনক্রমে যদি নিজের নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করেন তবে সেই ভাইরাস তার শরীরে প্রবেশ করবে। এ কারনেই অসুস্থ ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরে অবস্থান করা দরকার।

আরও পড়ুন- করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যত ভ্রান্ত ধারণা

এই ভাইরাস কি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে?

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা দাবি করলেও বাতাসে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে নিশ্চিত করতে পারে নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি হাত থেকে হাতেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়।

কোন লক্ষণ নেই এমন কারো থেকে কি কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে?

সাধারণত কোন ব্যক্তির হাঁচি কাশি থেকেই এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। যার মাঝে কোন লক্ষণ নেই তার কাছ থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ মাত্রা বেশ কমই বলা চলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোভিড ১৯ সংক্রমণ লক্ষণ একেবারেই মৃদু আকারে দেখা যায়। বিশেষ করে রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাই বাঞ্ছনীয়।

কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে এবং অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয় কি?

এক কথায় এর উত্তর হলো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও নিজ নিজ এলাকার গণমাধ্যম ও সরকারের নেয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করা।

এরইমাঝে বিশ্বের ১৭০ টির বেশি দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং অনেক দেশেই তা মহামারীর পর্যায়ে রয়েছে। চীন এই মুহুর্তে এটি থামাতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু ইতালি, স্পেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে এটি বেশ ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে।

নিয়মিতভাবে তাই হাত পরিষ্কার করুন। হতে পারে তা স্যানিটাইজার বা কোনপ্রকার হ্যান্ডরাব দিয়ে। কিংবা কোন রকমের সাবান দিয়ে। কারণ যেকোন প্রকার জীবানুনাশক বা সাবান এই ভাইরাসকে ধ্বংস করতে বেশ কার্যকরী।

সবসময় ভিড় পরিহার করুন। যে কারো হাঁচি কাশি থেকে দূরে থাকলেই আপনার মাঝে এই রোগের সংক্রমন হার অনেকটা কমে আসবে।

নাক, চোখ বা মুখ স্পর্শ করবেন না। কারণ মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রবেশের সবচেয়ে সহজ পথ এই তিনটিই। আপনার হাতে যদি কোনভাবে এই ভাইরাস থেকেই যায়, এই তিনপথেই সেটি প্রবেশ করবে সবচেয়ে সহজে। তাই নাক মুখ বা চোখে হাত দেবার আগে হাত ধুয়ে নিন।

হাঁচি কাশি দেবার সময় হাত না দিয়ে কনুই দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন। কিংবা টিস্যু ব্যবহার করুন। এবং সেই টিস্যু অবশ্যই সাথে সাথে নষ্ট করে ফেলবেন যেন কোনভাবেই সংক্রমণ না ছড়ায়।

যদি আপনার মাঝে কোন উপসর্গ দেখা যায়, বাড়িতে থাকুন। এতে করে আপনার কাছ থেকে আর কেউ সংক্রমত হবেনা।

আরও পড়ুন- করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কেন বিশ্বাসযোগ্য নয়

কোভিড-১৯ সংক্রমণে কোন অ্যান্টিবায়োটিক কি কার্যকর?

না। অ্যান্টি বায়োটিক কখনই ভাইরাসের বিপক্ষে কাজ করে না। এটি কেবল মাত্র সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার জন্যে কার্যকরী। কোভিড-১৯ একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ তাই এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কোনভাবেই কার্যকরী না। এটি এসময় ব্যবহার করাও উচিত নয়।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কোন ওষুধ বা প্রতিকার কি আছে?

পশ্চিমা বিশ্বে বিভিন্ন সময়ে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু ওষুধে ফল পাওয়া গিয়েছে দাবি করা হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ওষুধ পাওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই এখনই কোন প্রকার ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করছেনা। তবে এ বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত আছে।

কোন ভ্যাকসিন, ওষুধ বা নির্দিষ্ট চিকিৎসা কি আছে?

এখন পর্যন্ত না। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। কেউ যদি গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে তাকে হাসপাতালে নেয়া উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের নেয়া যত্নেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। সম্ভাব্য ভ্যাকসিন এবং ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে।

কোভিড-১৯ এর সুপ্তাবস্থা কতদিন?

সুপ্তাবস্থা বলতে বোঝায় ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর থেকে কোন রকম লক্ষণ প্রকাশের আগে পর্যন্ত সময়টিকে। সাধারণত এটি ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। তবে সচরাচর তা ৫ দিনের মাঝেই প্রকাশ পায়।

ভাইরাসটি কতদিন টিকে থাকতে পারে?

কোভিড-১৯ কতদিন পর্যন্ত কোন পৃষ্ঠে টিকে থাকতে পারে সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোন ধারণা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তবে করোনা প্রজাতির বাকি ভাইরাসের চরিত্র অনুযায়ী ধারণা করা হয় এটি কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম।

কি কি বর্জনীয় এই সময়ে?

মহামারী ছড়িয়ে পড়ার এই সময়ে আপনার বেশ কিছু কাজ বর্জন করা উচিত। যেমন

ধূমপান
মদ্যপান
যেকোন প্রকার ভীড়ের মাঝে থাকা
কোনপ্রকার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন

লেখক- ঐশ্বর্য মীম

আরও পড়ুন- একটি মৃত্যু জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের

আরও পড়ুন- ভয়াবহ কোন সংক্রামক ভাইরাস সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছিলেন বিল গেটস

আরও পড়ুন- ঘরবন্দি দিনও কাটুক আনন্দে

আরও পড়ুন- চীন যেভাবে করোনাভাইরাস জয়ের পথে

আরও পড়ুন- চীন থেকে কেন নতুন সব ভাইরাস ছড়ায়

আরও পড়ুন- সিনেমায় ভাইরাস

Exit mobile version