Site icon Bangla Info Tube

করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কেন বিশ্বাসযোগ্য নয়  

করোনাভাইরাস উহানের কোন ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পরেনি; Photo Source: sciencenews.org

Reading Time: 6 minutes

সারাবিশ্বই এখন আক্রান্ত করোনাভাইরাস আতঙ্কে। দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন বড় বড় শহর সম্পূর্ণ লক ডাউন করে ফেলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ে আশার বাণী যতটা আসছে তার চেয়ে ঢের বেশি আসছে হতাশার বাণী। এত হতাশা আর নেতিবাচক খবরের মাঝে নতুন এক গুঞ্জন শুরু হয়েছে মরণঘাতী এই ভাইরাসটিকে নিয়ে।

বিশ্বখ্যাত ফক্সনিউজ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শুরু হয় এই গুঞ্জন। যা বিশ্বব্যাপী বর্তমান অবস্থা এবং বৈশ্বিক রাজনীতির হালচালের ক্ষেত্রে বেশ বড় বিতর্ক উসকে দিতে পারে।

পুরো গুঞ্জনের ভাষ্য দুইরকম হলেও এর সারমর্ম একটিই। করোনা ভাইরাস সাধারণ কোন ভাইরাস নয়। এটি একটি জৈব অস্ত্র যার উৎপত্তি চীনের উহান প্রদেশের একটি লেভেল ফোর গবেষণাগারে। লেভেল ফোর সাধারণত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত যেকোন জীব গবেষণাগার নির্দেশ করে।

ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন বলছে করোনাভাইরাস মানুষেরই হাতে একটি জীবাণু অস্ত্র হিসেবে গড়ে উঠছিল। চীনের উহানে অবস্থিত দেশটির একমাত্র লেভেল ফোর গবেষণাগারে এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল।

অপর পক্ষে আরেকটি গুঞ্জন অনুযায়ী, প্রাণীদেহ থেকে সংগ্রহ করা এই ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা চলাকালে গবেষণাগার থেকেই এই ভাইরাস প্রকৃতিতে কারগরি ত্রুটির কারণে ছড়িয়ে পড়ে অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

উহান ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি বা উহানের ভাইরাস গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামে বাস্তবিক অর্থেই একটি গবেষণাগার চীনে রয়েছে এবং কাকতালীয়ভাবে এই লেভেল ফোর গবেষণাগার করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান রাজ্যে অবস্থিত। যা কিনা চলমান দুটি বিতর্ককে বেশ জোরালোভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। করোনা ভাইরাস এবং এর বিস্তৃতি গবেষকদের কাছে এক রহস্যময় বিষয় হলেও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা এরইমাঝে নিশ্চিত করেছে এটি একেবারেই নতুন একটি ভাইরাস এবং প্রাকৃতিক পরিবেশেই এর জন্ম হয়েছে। গবেষকদের একটি বড় অংশ ল্যানসেট নিউজকে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের জন্ম একেবারেই বন্য পরিবেশে।

কিন্তু ভাইরাসটির বিকাশ এবং চীনের একমাত্র লেভেল ফোর গবেষণাগার একই শহরে হবার কারণে গুঞ্জন বেশ ভাল্ভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

বিস্তারিত জানবার আগে আমাদের লক্ষ্য করা দরকার এই ব্যাপারে আসলে কারা কারা মতামত দিয়েছেন।

মূলত মতামত প্রদানকারী বেশিরভাগই মার্কিন রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব রাশ লিয়ামবাগ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,

“এটি সম্ভবত একটি চায়না ভিত্তিক গবেষণা যা ধীরে ধীরে জীবাণুঅস্ত্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।“ তিনি আরো যোগ করেন, “সমস্ত সুপারপাওয়ার জাতিই জীবাণু অস্ত্রে সজ্জিত।“ 

রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এরইমাঝে বেশ কবার কংগ্রেস এবং ফক্স নিউজে প্রচার করেছেন যে এই ভাইরাসটি সম্ভবত কোন ল্যাব থেকেই এসেছে।

এছাড়া হোয়াইট হাউজের সাবেক কূটনীতিক স্টিভ ব্যানন ফক্স নিউজেরই সাক্ষাতে টম কটনকে সমর্থন করে জোর গলায় দাবী করেন চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে লুকোছাপা করে চলেছে। তিনি বলেন,

“গণমাধ্যম এবং বামপন্থীরা বারবার বলছে তিনি (টম কটন) কেবল ষড়যন্ত্রমূলক কথা বলছেন। কিন্তু তিনি যা বলছেন তা কেবল চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং প্রেসিডেন্ট শি (জিংপিং)- কে এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে মুখ খুলতে হবে।“ 

চীনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর কট্টর সমালোচক স্টিভেন মশার, নিউইয়র্ক পোস্টে এক কলামে এমন কিছু তথ্য প্রমাণ হাজির করেন যা প্রমাণ করে চীনের বিভিন্ন ল্যাবে প্রাণঘাতী প্যাথোজেন নিয়ে গবেষণা চলছে। তার এই লেখা চলমান গুঞ্জনকে আরো বেশি ইন্ধন জোগাচ্ছে।

কেবল যে মার্কিন মুল্লুকেই এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে তা নয়, বরং খোদ চীনেই এমন তথ্যের সাথে সমর্থন দিচ্ছেন অনেকে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি নিজেদের পত্রিকায় দাবী করে, করোনা ভাইরাস চীনেরই একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে এসব তথ্য সাধারণ জনগণকে এই ক্রান্তিলগ্নে বেশ বিভ্রান্ত করছে বলে অনেকেই এটি মানতে নারাজ। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, চাইনিজ গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর খবরে অ্যালাবামার অধিকাংশ বাসিন্দা করোনা সংক্রমণে নিজেদের বেঁচে থাকার সাহস এবং বিশ্বাসের সবটাই হারিয়ে ফেলেছেন।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইমারজিং ইনফেকশাস ডিজিস ল্যাবের সহকারী পরিচালক এবং মেডিসিন ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ের অধ্যাপক গ্যারাল্ড কুশ্চ ভক্স নিউজকে জানান,

“মানুষের তৈরি ভাইরাস কেন্দ্রিক বিতর্কিত তত্ত্বের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আমরা এইচআইভি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখেছি – ভাইরাসটি আমেরিকায় তৈরি এবং আফ্রিকার যা ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু এধরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার ফলাফল বেশ ভয়ানক।“

এবার দেখা যাক, কেন আপনি করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক বিতর্ক একপাশে সরিয়ে রাখবেন।

  • এই ভাইরাসের জন্ম বাদুড়ের শরীরে যা হয়তো সরাসরি কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে মানবদেহে এসেছে। 

চায়না সরকার ডিসেম্বরে নতুন এক ভাইরাস সংক্রমনের খবর নিশ্চিত করার সাথেসাথেই এর জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষকদের মাঝে কাজ শুরু হয়ে যায়। জানুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যায়ে তারা এর জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানান।

তার ঠিক পরপরই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, এই ভাইরাসটি বাদুড়ের শরীরে প্রাপ্ত ভাইরাসের একেবারেই কাছাকাছি। টেক্সাসে লেভেল ফোর বায়োসেফটি ল্যাব গ্যালভেস্টন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির প্রধান জিম লেডাক ভক্স নিউজকে জানান,

“আপনি যদি জিনোম সিকোয়েন্সের দিকে তাকান তবে লক্ষ্য করবেন এটি বাদুড়ের শরীরে প্রাপ্ত ভাইরাসের সাথে প্রায় ৯৬ শতাংশ মিল রয়েছে। এখানে একটি মধ্যবর্তী পোষক জীবের কথা বলা হয়, কিন্তু সেটা মোটেই সত্য নয়।“ 

চায়নার সরকারী কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন প্রথম বেশ কিছু ঘটনা একটি বাজারের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেখানে সামুদ্রিক প্রাণি এবং অন্যান্য প্রাণি বিক্রির ঘটনা ঘটেছে (বর্তমানে বাজারটি বন্ধ করা হয়েছে)। পরবর্তীতে বাজারটিই সন্দেহের কেন্দ্র হয়ে পড়ে যেখান থেকে আসলে ভাইরাসটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে।

জিনগত যাবতীয় প্রমাণ এবং মহামারীর তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডেসিনের গবেষণা অনুযায়ী, “বাদুড়ের শরীর থেকে আসা ভাইরাস অন্য কোন প্রাণী শরীরে সংক্রমিত অবস্থায় চীনের বাজারে বিক্রয় হয়।“

ব্রাসেলসের জিনোম বিশেষজ্ঞ টানজা স্টাডলারের মতে চীনে এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ২০১৯ সালের নভেম্বরের মাসের শুরুর দিকে কোন এক সময়ে প্রথম সংক্রমিত হয়।

“নভেম্বরের শুরুতেই বাজার থেকে প্রথম মানব শরীরে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার যে সম্ভাব্যতা তা এখনো বিশ্বাসযোগ্য একটি বিষয়।“

এমনটিই নিজের বিবৃতিতে জানিয়েছেন স্টাডলার-

“আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটি বেশ আগেই মানুষের শরীরে আশ্রয় নিয়েছে।“ 

জিম লেডাক নিজেও এই তথ্যটিকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেন। তিনি বলেন,

“বাজারের সাথে ভাইরাসের যে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়েছে তা বেশ বাস্তবিক। এবং সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় আমরা যা দেখেছিলাম তার সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ।“

তিনি আরো যোগ করেন-

“এটা বেশ বিশ্বাসযোগ্য যে, ভাইরাসটি প্রকৃতিতে ছিল আর কোন পোষ্কদেহে আশ্রয় গ্রহণ করে। আর সবশেষ এটি মানুষের মাঝে নিজের বিস্তার ঘটিয়েছে।“ 

বর্তমানে গবেষকদের যা খুঁজে দেখতে হচ্ছে তা হলো, কিভাবে এই ভাইরাস মানবদেহে আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। সম্ভবত কোন একজন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাণী সরাসরি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন নয়তো ওই আক্রান্ত প্রাণির প্রস্রাব বা মলের মাধ্যমে এই ভাইরাস মানব দেশে এসেছে। কলম্বিয়ার মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ভিনসেন্ট রাকানিয়েলোর মতে,

“আমরা জানি এই ভাইরাসের উৎস ছিল বাদুড়। যেটা জানিনা, তা হলো এই বাদুড় এবং মানুষের মাঝামাঝি আর কোন প্রাণী ছিল কিনা।“ তিনি আরো বলেন, “এটি বাদুড় থেকে মানুষের মাঝে সরাসরিও সংক্রমিত হতে পারে।“ 

  • করোনা ভাইরাস অপেক্ষাকৃত নতুন একটি ভাইরাস এবং এটি কোনভাবেই মানুষের মাধ্যমে বিকশিত হবার যোগ্য না

রাকানিয়েলো তার সাথে আরো দুজন বিশেষজ্ঞদের সাথে অপ্রকাশিত এক গবেষণায় (গবেষণাটি খুব দ্রুতই প্রকাশিত হতে পারে) উল্লেখ করেন, করোনা ভাইরাস কোনোভাবেই গবেষণাগারে তৈরি করা হয়নি কিংবা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হয়নি।

সার্স-কোভ-২ (SARS-Cov-2) ভাইরাস গবেষণার সাথে যুক্ত কজন অণুজীব বিজ্ঞানীর সম্মিলিত একটি গবেষণা যা ভাইরোলজিকাল ডট কমে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়, সেখানে দুই উপায়ে প্রাণী থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের কাছে যা জুনোটিক (Zoonotic Transfer) ট্রান্সফার নামেই বেশি পরিচিত। তাদের লেখা অনুযায়ী,

১। জুনোটিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে কোন প্রাণীর থেকে মানবদেহে সংক্রমন হতে পারে

২। সরাসরি মানবদেহেই এই সংক্রমণ ঘটতে পারে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রাকৃতিকভাবেই এই অদ্ভুত জিনোম সিকোয়েন্স বাদুড় কিংবা কোন প্রাণীর দেহে তৈরি হয়েছে বা মানুষের শরীরে আসার পর তৈরি হয়েছে।“ রাকানিয়েলোর মতে, “মানুষ কখনোই এমন কিছু কল্পনা করতে পারেনা।“

তারচেয়ে বড় কথা, তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে কোন গবেষণাগারেই এমন ভাইরাস নিয়ে কোনরকম কাজ করা হচ্ছেনা। সবশেষ যে খবর পাওয়া যায় তা অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ইউনান প্রদেশে একটি বাদুড়ের গুহায় করোনার সদৃশ ভাইরাস পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, ইউনান প্রদেশ উহান থেকে প্রায় ১০০০ মাইল দূরে অবস্থিত।

  • জীবানু অস্ত্র হিসেবে করোনা ভাইরাস খুব একটা ফলপ্রসূ নয়

আরও কিছু বিশেষজ্ঞ মত জড়ো করলে নিশ্চিত হওয়া যায়, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সে অর্থে জীবাণুঅস্ত্র হতেই পারে না। এর সবচেয়ে বড় কারণ, কোভিড-১৯ অন্যান্য সব সম্ভাব্য প্যাথোজেনের তুলনায় কোনভাবেই প্রাণঘাতী নয়।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের কুশ্চ বলেন,

“এটা জীবাণু অস্ত্র করতে হলে, মানে আপনি যদি সত্যিই তাই চান, এরচেয়ে ভয়াবহ কোন কিছু নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন।“ 

ধরা যাক, ইবোলা বা পশ্চিম আফ্রিকার লাসা ভাইরাস অনেক বেশি ভয়ানক যা উহানের মত লেভেল ফোরের গবেষণাগারে গবেষণার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। ক্রাইমান-কঙ্গো হেমোরোজিক ফিভারে মৃত্যুর হার যেখানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ, সেখানে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার সামগ্রিকভাবে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এমনকি ইতালির বুকেও মৃত্যহার ১০ এর নিচে।

  • উহান ল্যাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নিউইয়র্ক পোস্টে নিজের কলামে মশার লিখেছিলেন,

“আমাদের কোনভাবেই উহানে অবস্থিত গবেষণাগারের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করা উচিত হবেনা।“ তিনি বলেন, “ভয়ানক সব প্যাথোজেন সংরক্ষণে চীন ব্যাপক সমস্যার মাঝে আছে। তেমনই মনে হচ্ছে সবসময়ই। তাই নয় কি?”

ভক্স নিউজ এ প্রসঙ্গে গ্যালভেস্টান গবেষণাগারের প্রধান লেডাককে প্রশ্ন করেছিল, চীনের কোন ল্যাব সম্পর্কে তার কোন প্রকার ধারণা আছে কিনা। জানা যায়, তিনি এবং তার সহকর্মীরা প্রায় ৬ বছরের বেশি সময় উহানের সেই গবেষণাগারে কাজ করেছিলেন। তারচেয়ে বড় কথা গবেষণাগারে কাজ করার পাশাপাশি মূলত তিনিই পুরো জায়গার নির্মাণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি জানান,

“আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, উহানের গবেষণাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন ল্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মত একই।“

তার সাথে একই মত ব্যক্ত করেন কুশ্চ,

“আমার মনে হয়না নিরাপত্তা বা সক্ষমতার দিক বিবেচনায় এই ল্যাবটি যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবগুলো থেকে কোনভাবে পিছিয়ে আছে। যদিও কোনকিছুই শতভাগ নিশ্চিত নয়, তবু এটি যথেষ্ট ভাল।“ 

আর স্বয়ং উহান ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে,

“এসব গুজবের ফলে আমদের যেসকল গবেষক সামনে থেকে গবেষণা করতে চান তাদের মনোবলে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেইসাথে এই মহামারী নিয়ে চলা জরুরী গবেষণা কাজেও ব্যাপক বিঘ্ন ঘটিয়েছে।“

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র বিশ্বই নিজস্ব গবেষকদের মাধ্যমে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিকার ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আপাতত চীন কিংবা সারা বিশ্বের গবেষকদের উপর ভরসা করা কিংবা ব্যক্তিগত সচেতনতার বাইরে খুব কম কিছুই করার আছে সাধারণের পক্ষে। সে পর্যন্ত ব্যক্তিগত সতর্কতাই কেবল পারে এই মহামারী থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে।

লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ

Exit mobile version