Site icon Bangla Info Tube

একটি মৃত্যু জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের টোলারবাগে একজনের মৃত্যু; Photo Source: Kin cheung/ Reuters

Reading Time: 3 minutes

সময় যত গড়াচ্ছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে জনমনে আতঙ্কের পারদও হুহু করে বাড়ছে। আজ ২২ মার্চ রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা জানিয়েছেন, দেশে নতুন করে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে আক্রান্ত্রের সংখ্যা ২৭। আক্রান্তদের মাঝে ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, আর মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।

এতদিন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে দেশবাসী আইইডিসিআরের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে ছিল। কিন্তু রাজধানীর টোলারবাগে এক ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ জনসাধারণকে আইইডিসিআরের প্রেস ব্রিফিংয়ের ওপর বিশেষ আস্থা রাখতে দিচ্ছে না। তারা নিজেদের মতো করে হিসেব কষা শুরু করেছেন।

টোলারবাগে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং আক্রান্তের বাড়ি কোয়ারিন্টিন করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদ ২১ মার্চ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বিষয়ে আইইডিসিআর কিংবা সরকারের উপর মহল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানোয় সব কিছু অস্পষ্ট থেকে যায়। এরপর ২২ মার্চ করোনাভাইরাসে ইন্তেকাল করা ব্যক্তির এক সন্তান “পিতার মৃত্যু এবং সন্তানের ব্যর্থতা” শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। ফেসবুকে মূহুর্তেই ছড়িয়ে পরা সেই পোস্টটি সকল অস্পষ্টতা দূর করে কিন্তু সেই সাথে সচেতন দেশবাসীর মনে জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্নের।

সেই পোস্ট থেকে জানা যায় করোনায় আক্রান্ত রোগী ১৬ মার্চ প্রথম অসুস্থ বোধ করেন। এক ডাক্তারের পরামর্শে আক্রান্তের স্বজনরা করোনাভাইরাস টেস্টের জন্য সেদিন রাতেই আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি বিদেশ ফেরত নন এবং বিদেশ ফেরত কারো সংস্পর্শে আসেননি এই অজুহাতে আইইডিসিআর করোনাভাইরাসের জন্য টেস্ট করাতে অস্বীকৃতি জানায়। পরিবারের পক্ষে থেকে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল যে অসুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত মসজিদে যান এবং সেখান থেকে এই ভাইরাস আসতে পারে কিনা। কিন্তু আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়, এই ভাইরাস বাংলাদেশের কমিউনিটিতে মাস লেভেলে এখনো সংক্রমিত হয়নি। তাই চিন্তার কিছু নেই, এটা সাধারণ শ্বাস কষ্টের সমস্যা।

এরমাঝে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেলে বেশকয়েক হাসপাতাল ঘুরে ১৭ মার্চ রোগীকে ডেলটা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগীর পরিবার থেকে ক্রমাগত অনুরোধের প্রেক্ষিতে ১৯ মার্চ বিকালে আইইডিসিআর টেস্ট করাতে রাজি হয় এবং সেদিন রাতে টেস্ট করে পরের দিন ২০ মার্চ দুপুরে জানায় যে রিপোর্ট পজেটিভ।  এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ২১ মার্চ ভোররাত ৩ টায় ইন্তেকাল করেন।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস কমিউনিটি সংক্রমণের পথে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এই ভাইরাসের বাহক এখন কেবল বিদেশ ফেরত প্রবাসী নন। বরং স্থানীয়ভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে কিংবা ছড়িয়ে পড়ছে। টোলারবাগে আক্রান্ত ব্যক্তিটি বিদেশ ফেরত নন, এমনকি পরিবারের জানামতে উনি বিদেশ ফেরত কারো সাথে মেশেননি। তাহলে উনি আক্রান্ত হলেন কার মাধ্যমে? যেই ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন সেই ব্যক্তিটি কি এখনো ভাইরাস শরীরে বহন করে বাজার-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন?

আর এখন পর্যন্ত যারা ভাইরাস টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন, তাদের সংস্পর্শে আসা সকল ব্যক্তিদের কি চিহ্নিত করা হয়েছে? তাদের কি টেস্টের আওতায় আনা হয়েছে? এমন আরও হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর যাদের কাছে তারা এখন মুনিঋষির মতো নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছেন। আর উত্তর না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই সবার মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

এই লেখা যখন লিখছি তখন দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, টোলারবাগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ আরেকজন মারা গেছেন। মৃতের পরিবার ধারণা করছে তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই ব্যক্তিটিও করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা তা শীঘ্রই জানা যাবে।

করোনাভাইরাস মানেই মৃত্যু নয়। ২২ মার্চ অব্দি আক্রান্ত ৩ লাখ ১৮ হাজার ২৫৪ জনের মাঝে ৯৬ হাজার ০১০ জন সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো এই ভাইরাস ভয়াবহ রকম ছোঁয়াচে। একবার যদি গণসংক্রমণের মুখে কোন দেশ পড়ে তাহলে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কতটা কঠিন হতে পারে ইউরোপের দিকে তাকালে তা আঁচ করা কঠিন কিছু নয়।

এছাড়া এই ভাইরাস কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ না করেই মানবদেশে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যেসব এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে সেসব এলাকা পুরোপুরি বন্ধ করা উচিৎ এবং আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছে এমন সবারই টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করা উচিৎ। পর্যাপ্ত সংখ্যক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এখনও যে টেস্টের আওতায় আসেনি টোলারবাগের ঘটনাই তার প্রমাণ। তাই বর্তমানে যারা ভাইরাস নিয়ে ঘুরছে তাদের চলাচল কঠোরভাবে হলেও বন্ধ করতে হবে।

তবে সরকারের অনেক মন্ত্রী নানা সময়ে বলেছেন “প্রয়োজন” হলে কোন এলাকা বন্ধ করা হবে। এখন কতজন আক্রান্ত হলে কোন এলাকা লক ডাউন করার “প্রয়োজন” হবে এর উত্তর মন্ত্রীরাই দিতে পারবেন।

লেখক- হাসান উজ জামান 

Exit mobile version