৫জি নেটওয়ার্ক নিয়ে আমেরিকা-চীনের শীতল যুদ্ধ1 min read
Reading Time: 3 minutesবিগত ৮ বছরে ইন্টারনেট গতি কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। তারবিহীন ইন্টারনেট সেবার মান আরো উন্নত করার জন্য দুর্দান্ত গতি ও চমৎকার সেবা নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে ৫জি। এই আনন্দের সাথে আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন এই ৫জি সেবাটি কি? ইতোপূর্বে আসা ৩জি এবং ৪জি থেকে আদতেই কি এটা একদমই আলাদা—নাকি নতুন মোড়কে পুরোনো পণ্য?
৫জি কি?
“জি” বর্ণটিকে আমরা অনেকেই গিগাহার্জ এর সাথে সম্পৃক্ত করে থাকি, তবে জেনে রাখা ভালো যে জি শব্দটি দিয়ে মূলত জেনারেশন বুঝায় অর্থাৎ বাজারে আসছে ৫ম জেনারেশন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক। ইতোপূর্বে যেখানে ৪জি কানেকশনের মাধ্যমে সর্বচ্চ ২০ মেগাবাইট পর্যন্ত ডাউনলোডের গতি ব্যবহার করা যেত সেখানে এখন ধারনা করা হচ্ছে ৫জি নেটওয়ার্ক দিয়ে ৫০০ থেকে ১৫০০ মেগাবাইট পর্যন্ত ইন্টারনেট গতি সেবা গ্রহণ করা সম্ভব। বুঝতেই পারছেন একটা ৫ থেকে ৬ গিগাবাইটের মুভি ডাউনলোড করতে আপনার সর্বচ্চ লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মত। এছাড়া একটি টাওয়ারের মাধ্যমে এই প্রযুক্তিতে আরো অনেক বেশি গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবী করছেন।
৫জি আসলে নেটওয়ার্ক কি আগের থেকেও ভালো হবে?
হ্যাঁ! এমনটাই হওয়া উচিৎ। হুয়াওয়ে কোম্পানির চিফ টেকনোলোজি অফিসারের মতে একটা সাধারণ ৫জি নেটওয়ার্ক টাওয়ার এর ক্ষমতা বাড়বে ৪জি টাওয়ারের চেয়ে একশ গুন বেশি। আর তাই আগের মত একটা টাওয়ারের কাভারেজ এলাকার মধ্যে বেশি অপারেটর হওয়ার কারণে নেটওয়ার্ক এর গতি কমে আসবে, এমনটা ভবিষ্যতে আর হতে যাচ্ছে না। যদিও কোন কোন এলাকা ৫জি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে টেলিকম কোম্পানির উপর আর নতুন টাওয়ারগুলো যেহেতু একটু খরচা বহুল হবে তাই তাৎক্ষনিক ভাবেই সকল এলাকা ৫জি এর আওতাভুক্ত হয়ে যাবে এটা বলাটা একটু মুশকিল। তবে বেলা শেষে ৫জি’র আওতায় তো সবাই আসবেই, আর সে সুসময়টার জন্যই আমাদের থাকবে অদম্য আগ্রহ নিয়ে প্রতীক্ষা।
আমেরিকা-চীনের টেকনোলোজি যুদ্ধ এবং ৫জি নেটওয়ার্ক
কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি চীনের সবচাইতে বহুল জনপ্রিয় টেকনোলোজি কোম্পানি হুয়াওয়ের উপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যার ফলে আমেরিকা থেকে হুয়াওয়ে আর কোন কারিগরি সহায়তা এবং গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ কিনতে পারবে না। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমেরিকার সমকক্ষ হিসেবে নিজের অবস্থান পোক্ত করে ফেলেছে চীন। ৫জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতেও এগিয়ে আছি চীন। তাই চীনের সাথে প্রযুক্তিগত ভারসাম্য রক্ষার জন্যই মনে হয় যেন আমেরিকা এই ধরনের কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
এই প্রযুক্তির যুদ্ধে ৫জি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে?
- ১জি প্রযুক্তিতে আমরা তারবিহীন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলাম।
- ২জি প্রযুক্তি এলো আমাদের মেসেজিং করার সুবিধা নিয়ে।
- ৩জি প্রযুক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিল এবং মেসেজিং এর ক্ষেত্রে আমাদের আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
- আমরা বর্তমানে বাস করছি ৪জি অর্থাৎ চতুর্থ জেনারেশন প্রযুক্তির মধ্যে। এই ৪জি নেটওয়ার্ক দিয়ে আমরা অনলাইনে বাফারিং মুক্ত ভিডিও দেখা, অবিচ্ছেদ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং জিপিএস সেবা গ্রহণ করছি অবিরাম। এছাড়া ৪জি নেটওয়ার্কের কারণেই উবার, পাঠাও এর মত জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন হল।
- নতুন শক্তিশালী ৫জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং এর ব্যবসায়িক সফলতায় কে এগিয়ে থাকবে—আমেরিকা নাকি চীন—এই জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিজেদের নাম প্রথমে রাখার জন্যই যেন হুয়াওয়ের উপরে আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞা জারি!
হুওয়ায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা
সকল ধরনের গুজবের সত্যতা সম্পর্কে নাকচ করে দিয়ে আমেরিকা হুয়াওয়েকে ব্যান করে দেয়ার পেছনে কিছু শক্ত যুক্তি স্থাপন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে চীন থেকে ক্রয় করা সকল ধরনে হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা আমেরিকার জন্য নিরাপদ নয়, কেননা এর মাধ্যমে নিজেদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যেতে পারে চীনের হাতে। এর মানে হল হুয়াওয়ে যে শুধুমাত্র আমেরিকাতে ব্যবসা করতে পারবে না তা নয় বরং আমেরিকার কোন কোম্পানিও এখন থেকে আর হুয়াওয়ে থেকে হার্ডওয়্যার ক্রয় করতে পারছে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও একটি ভুল ধারনা
যদি অনেকেই মনে করে থাকে যে শুধুমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পই এই সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী তবে এটা সম্পূর্ণ ভুল। আবার একই সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার পতনের আশায় বসে থেকেও তেমন কোন লাভ হতে যাচ্ছে না, কেননা এই টেকনোলোজি ওয়ারে এগিয়ে থাকতে হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়েই চাইবে চীনকে দমিয়ে রাখতে। কেননা এতদিন স্যামসাং এবং অ্যাপল এর পণ্যর মধ্যে কে সেরা সেটা নিয়ে চলত আলোচনা। অথচ মাত্র অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই অ্যাপলকে পেছনে ফেলে এখন হুয়াওয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে আর এভাবে চলতে থাকলে হুয়াওয়ে যে ব্যবসার দিক থেকে আমেরিকা ও তাদের বন্ধু সুলভ দেশগুলোর প্রযুক্তিকে পেছনে ফেলে শিখরে চলে যাবে এটা হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুব অনুমেয় হয়ে উঠেছিল।
আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে আগে থেকেই একটা শীতল সম্পর্ক বিরাজমান থাকলেও সেটা এর আগে কখনই এতটা প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেনি। তবে বিগত কয়েক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো থেকে চীনেরও হয়ত অনেক কিছু শেখার আছে। এটা ভাবাও ভুল হবে যে চীন চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এবং তাদের পতন আবশ্যম্ভাবী। এই সাময়িক অসুবিধা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য চীন হয়ত ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু করেছে এবং অচিরেই এই অবস্থা কাটিয়ে উঠবে তারা।