বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

শকুন্তলা দেবী: মানব কম্পিউটারের বর্ণাঢ্য জীবন1 min read

আগস্ট ১৬, ২০২০ 6 min read

author:

শকুন্তলা দেবী: মানব কম্পিউটারের বর্ণাঢ্য জীবন1 min read

Reading Time: 6 minutes

640503928

পুরো লেখা পড়ার আগে এই বর্গমূলটা বের করুন তো।  একটাই শর্ত, ক্যালকুলেটর, মোবাইল বা কম্পিউটারের সাহায্য নেয়া চলবে না।

ভাবছেন, লেখার শুরুতেই একি ঝামেলারে বাবা! আচ্ছা, পাশে রাখুন এই বিদঘুটে প্রশ্ন।

ছোটবেলায় কমিকসে একটা লাইন প্রায়ই চোখে পড়তো। ‘চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর।‘ আর সেই মগজের গুণে দুঁদে, দুর্ধর্ষ সব গুণ্ডাদের ধরাশায়ী করতেন চাচাজী। বাস্তবে চাচার অস্তিত্ব না থাকলেও কম্পিউটারের মতো ব্রেইন কিন্তু ঠিকই আছে।

কে সেই বিস্ময়? স্টিফেন হকিং,আইনস্টাইন, রামানুজন নাকি অ্যালান টুরিং? না, এদের কারো কথা বলছি না।

বলছি, এক বিস্ময়কর কিংবদন্তি শকুন্তলা দেবীর গল্প। মুখে মুখেই যিনি মুহূর্তে কষে ফেলতেন কঠিনতম গণিত। লেখার শুরুতে যেই সমস্যাটা দেখছেন তার উত্তর 862। সমাধানে তাঁর কত সময় লেগেছে জানেন? মাত্র দুই সেকেন্ড!

শূন্য থেকে যাত্রা

ব্রিটিশ রাজের রাজত্ব চলছিল তখন গোটা ভূ-ভারতে। এর মধ্যেই ১৯২৯ সালের ৪ নভেম্বর ব্যাঙ্গালোরের কর্ণাটকে জন্মগ্রহণ করেন ভবিষ্যতের ম্যাথ জিনিয়াস শকুন্তলা। ব্রাহ্মণ পরিবারে দারিদ্র্যতা ছিল প্রাত্যহিক আসবাবের মতোই সহজ।

বাবা কাজ করতেন সার্কাসের দলে। তাই শকুন্তলাদের শৈশব কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। সার্কাসের দলের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে ভারতের গ্রামে-বন্দরে।

যুবতী বয়সে ম্যাথ জিনিয়াস; Photo: Indian Express

শকুন্তলার বয়স যখন মোটে তিন, তখনই বাবা আবিষ্কার করেন তাঁর প্রতিভা। অলস বিকেলে সার্কাসের তাঁবুর পাশেই মেয়েকে তাসের কসরত শেখাচ্ছিলেন একদিন। কয়েক দান পরেই টের পেলেন কন্যা একের পর এক খেলায় তাঁকে অনায়াসে হারিয়ে দিচ্ছে। এ কী করে সম্ভব!

অল্প বাদেই বুঝলেন, তিন বছরের পুঁচকে ঠিকই সব তাস মুখস্ত করে ফেলেছে । বিন্যাস-সমাবেশের ছকে ফেলে জিতে যাচ্ছে সব দান।

পাঁচের কোঠায় পা দিতেই বেরিয়ে আসে আরও গুপ্ত মেধা। যেকোনো হিসেবই তুড়িতেই বেরিয়ে আসতো তাঁর মুখে। তিনের বর্গমূল করতে সময় লাগতো সেকেন্ড দুয়েক। তুখোড় এই প্রতিভার গুণেই শকুন্তলা জয় করতে থাকে মানুষের মন।

মঞ্চে গণিত নিয়ে মজাদার আর চিত্তাকর্ষক একের পর খেলা দেখিয়ে নামডাক হয়ে যায় অল্প দিনেই। লোকমুখে সুনাম ছড়ালে মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পড়ে ছয় বছর বয়সে আর আট বছরে আন্না মালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্ষুদে তনয়ার প্রতিভায় হতবিহবল গণিতবিদেরা মেনে নেয় এ-ই ‘গণিতের বিস্ময় কন্যা।‘

১৯৪৪ সালে বাবার সাথে লন্ডনে পাড়ি জমান ‘ক্যালকুলেটর’। নিয়মিত ম্যাথম্যাটিকাল শো করতে থাকেন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা মঞ্চে। সংখ্যার মায়াজালে এমনভাবে আটকে গেলেন; আট ভাইবোনের সংসারে পরে আর ফেরা হয়নি। গৃহিণী মা এতে ভড়কে গিয়েছিলেন খুব। তাই আর কোন সন্তানকেই গণিতের পথে হাঁটতে দেননি।

বিশ্বজয়ের বিস্ময়

রামানুজন ,আর্যভট্টের দেশের কন্যা শকুন্তলা। গণিতের সাথে সখ্যতা যেন তাঁর নিঃশ্বাসের সাথেই মিশে আছে। চলুন তাঁর বিস্ময়কর কিছু নমুনা জেনে নিই।

তিনের বর্গমূল: পাঁচ বছর বয়স থেকেই তিনের বর্গমূল গড়গড়িয়ে বলতে পারতেন তিনি। শত শত সংখ্যার বর্গমূল বের করতে কয়েক সেকেন্ড লাগতো তাঁর। ১৯৮৮ সালে সাইকোলজিস্ট আর্থার জেনসেন ৯৫৪৪৩৯৯৩ সংখ্যাটির তিন বর্গমূল বা কিউব রুট বের করতে বলেন। মাত্র দুই সেকেন্ডেই উত্তর দেন ৪৫৭। এরপর ২০৪৩৩৬৪৬৯ এবং ২৩৭৩৯২৭৭০৪ এরও তিন বর্গমূল কষতে দেয়া হয় তাঁকে। এগুলোর উত্তর যথাক্রমে ৫৮৯ আসে ৫ সেকেন্ডে এবং ১৩৩৪ আসে মাত্র দশ সেকেন্ডে।

 উচ্চতর বর্গমূল: সাত বর্গমূল শুনলেই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই আমরা। ওদিকে শকুন্তলা দেবীর কাছে সেটা ‘বায় হাত কা খেল’। ৪৫৫৭৬২৫৩১৮৩৬৫৬২৬৯৫৯৩০৬৬৬০৩২৭৩৪৩৭৫ এর সাত বর্গমূল ৪৬২৯৫ কষে ফেলেন মাত্র ৪০ সেকেন্ডে।

বড় সংখ্যার গুণ: ১৩ অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার সাথে সম অঙ্কের সংখ্যার গুণফল বের করতে তিনি সময় নিতেন ২৮ সেকেন্ড।

ক্যালেন্ডার হিসাব: গত দুহাজার বছরের ক্যালেন্ডার যেন নখদর্পণে ছিল এই অতুল প্রতিভাশালীর। যেকোনো সালের যেকোনো দিনের নাম বললে সাথে সাথেই সেদিনের সমস্ত খবরাখবর জানিয়ে দিতেন তিনি। যেমন- ১৯২০ সালের ৩১ জুলাই বললেই বিনা কাল ক্ষেপণেই জানাতেন দিনটি ছিল শনিবার। আর এতে সময় লাগতো ১ সেকেন্ড!

নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিজেই; Photo: The Wall

বিরতিহীন জয়রথ

১৯৫০ সালের মধ্যেই ইউরোপ জয় করে ফেলেছিলেন এই ভারতীয়া। সেবছরের ৫ অক্টোবর ঘটে মজার এক ঘটনা। বিবিসির খ্যাতনামা সাংবাদিক লেজলি মিশেলের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে।

অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে সব ঠিকই চলছিল। ঝামেলা বাঁধে এক বড় সংখ্যার বর্গমূল নিয়ে। কম্পিউটার তড়িঘড়ি একটা উত্তর জানালেও শকুন্তলা দাবি করেন প্রশ্নেই গলদ আছে। মিশেল প্রথমে না মানলেও পরবর্তীতে গণিতবেত্তাদের পরামর্শে ফের পরীক্ষা করতেই চমকে যান।

এই ঘটনাই শকুন্তলা দেবীকে রাতারাতি ‘হিউম্যান কম্পিউটার’ হিসেবে পরিচিত করে ফেলে। তবে এই নামে সন্তুষ্ট ছিলেন না এই বিস্ময়। তাঁর মতে, মানুষের হাতেই কম্পিউটার তৈরি হয়েছে, মানুষের সৃজনশীলতার সামনে এই যন্ত্র নস্যি। যন্ত্র আর মানুষ কখনোই সমান নয়, মানুষের পরিধি অসীম।

১৯৫২ সালে ঘটে আরেক চমকপ্রদ কান্ড। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ডালাসে ২০১ অঙ্কের একটি সংখ্যা দেয়া হয় তাঁকে। সংখ্যাটির ২৩ বর্গমূল করাই হলো চ্যালেঞ্জ। পুরো প্রশ্ন বোর্ডে তুলতেই লেগে যায় ৪ মিনিট।

পিনপতন নিস্তব্ধ ঘর। নিঃশ্বাস চেপে সকলেই অপেক্ষা করছেন, উৎকণ্ঠার তোড়ে কারো গলা অব্দি শুকোনো। ৫০ সেকেন্ড পরেই ঝলমলে মুখে সঠিক উত্তর দিলেন শকুন্তলা। ওদিকে সুপার কম্পিউটার UNIVAC এর গোটা হিসাবে সময় লেগেছিল এক মিনিট!

নিজের লেখা বই হাতে শকুন্তলা দেবী; Photo: The Statesman

গিনেজ বুকের সম্মান

‘তুমি গণিতের জিনিয়াস। পৃথিবী জয় করতেই হবে তোমাকে।‘ ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরও সদয় প্রশ্রয় ছিল এই বিস্ময় কন্যার প্রতি। তারই নিদর্শন মেলে গিনেজে।

১৯৮০ সালের ১৮ জুন; গিনেজ বুকের রেকর্ডে তো অবশ্যই, গণিতের ইতিহাসেও এক জ্বলজ্বলে অধ্যায়। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির মিলনায়তনে প্রায় দুহাজার লোকের ভিড়। সকলেই এসেছে ইতিহাসের সাক্ষী হতে। এর মাঝেও কারো কারো মনে উঁকি দিচ্ছে সন্দেহের বলিরেখা।

ব্ল্যাক বোর্ডে খসখস শব্দে লেখা হলো দুটি সংখ্যা। ১৩ অঙ্কের দুই সংখ্যা গুণ করবার চ্যালেঞ্জ।  ৭,৬৮৬,৩৬৯,৭৭৪,৮৭০ * ২,৪৬৫,০৯৯,৭৪৫,৭৭৯। এক পলক দেখলেন মাত্র শকুন্তলা দেবী। ২৮ সেকেন্ডের মাথায় উত্তর শোনা গেলো তাঁর কণ্ঠে ১৮,৯৪৭,৬৬৮,১৭৭,৯৯৫,৪২৬,৪৬২,৭৭৩,৭৩০। মিলিয়ে দেখুন।‘

ম্যাথ প্রডিজির আত্মবিশ্বাসে কখনোই ঘাটতি ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই নির্ভুল উত্তর বাতলেছেন তিনি। করতালিতে ফেটে পড়লো গোটা ঘর। ‘দ্য বুলেটিন’ পত্রিকা পরদিনই প্রকাশ করলো ‘হিউম্যান কম্পিউটারে’র অনন্য রেকর্ডের কথা।

১৯৮২ সালের গিনেজ বুক অফ রেকর্ডসে তোলা হয় এই অনন্য কীর্তির আখ্যান।

শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে ছুটে বেড়িয়েছেন স্কুলকলেজে; Photo: Express ArchiveR K Sharma

গবেষণায় রোমাঞ্চ

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না পেলেও গোটা পৃথিবী থেকে শিখেছেন অনেক কিছু। মিশেছেন হাজার হাজার জ্ঞানী, গুণী, মহৎপ্রাণের সাথে।

তবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করলেও তাঁর পরম সুখ সবসময় নিহিত ছিল সংখ্যাতেই। যেকোনো সংখ্যা দেখলেই একে নানানভাবে সংজ্ঞায়িত করতেন তিনি। এ অভ্যাস ছিল তাঁর সহজাত। এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তিন বছর বয়সেই অংকের প্রেমে পড়ি। অঙ্ক কষা আর সঠিক উত্তর বাতলে দেয়াতেই আমি পরমানন্দ খুঁজে পেতাম। অন্য বাচ্চারা যেখানে খেলনার জন্য বায়না করতো, সেখানে সংখ্যারাই ছিল আমার খেলার সাথী।‘

শকুন্তলা দেবীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বারকেলি-ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির অধ্যাপক আর্থার জেসনের পরীক্ষা। দিস্তা সমেত একের পর এক কাঠখোট্টা গণিত দিয়েও শকুন্তলাকে থামাতে পারেননি জেসন। শেষমেশ স্বীকার করেন, এই নারীর মস্তিষ্কের গতি অসম্ভব ক্ষিপ্র।

১৯৮৮ সালে গবেষণা করেন তিনি। ফলশ্রুতিতে, ১৯৯০ সালে ‘ইনটেলিজেন্স’ জার্নালে তিনি লেখেন,  ‘৬১,৬২৯,৮৭৫ এর ৩ বর্গমূল এবং ১৭০,৮৫৯,৩৭৫ এর ৭ বর্গমূল করতে দেওয়া হয়েছিল শকুন্তলা দেবীকে। আমি যতক্ষণ নোটবুকে সংখ্যাগুলো তুলেছিলাম, তার অনেক আগেই সঠিক উত্তর দিয়ে ফেলেন শকুন্তলা দেবী। তাঁর মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে কঠিন। তবে তাঁর এই প্রতিভা একশ মিলিয়নে একটা মেলে।‘

গবেষণা যে একেবারেই বেকার ছিল তা নয়। জেসনের মতে শকুন্তলার এই মেধার পেছনে শৈশবের অভিজ্ঞতা অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে। সংখ্যাকে আমরা যেরূপে দেখি, দেবীর বেলায় তা একেবারে পৃথক রূপ নেয়। সংখ্যা দেখলেই তাঁর ভেতর কিছু তাৎক্ষনিক মানসিক রূপান্তর ঘটে।

জাদুকরদের নাকি কৌশল প্রকাশ করতে নেই। সেদিকে ভীষণ উদার শকুন্তলা। তাঁর ‘Figuring: The Joy of Mathematics’ বইয়ে তিনি গুণ-ভাগের সহজ কিছু পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালাতেও তিনি অকপটে শিখাতেন গণিতের নানা কৌশল।

অগ্রণী এক নারী

প্রণয়ের বিয়েই হয়েছিল কলকাতার বাঙালি বাবু পরিতোষ বন্দোপাধ্যায়ের সাথে। ১৯৬০ সালের মধ্যভাগে প্রতিভাবান আইএএস (IAS) কর্মকর্তার সাথে সাত পাকে বাঁধা পড়লেও কখনো পদবী গ্রহণ করেননি। বাঙালি বধূর নিয়মেই বেশ কবছর কেটেছিল দাম্পত্যের। সত্তরে কোলে আসে অনুপমা বন্দোপাধ্যায়। তবে সুখের সুর কেটে যায় পরিতোষের যৌন পরিচয় বেরিয়ে আসার পর। সমকামী ছিল সে।

ষাটের দশকে সমকামিতাকে স্বাভাবিক ভাবার কোন পথই ছিল না। বিকৃত মানসিকতা, প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ বলে মানতো লোকে। ১৯৭৯ সালে বিচ্ছেদ হলেও পরিতোষকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছেন শকুন্তলা দেবী। অধিকার আদায়ে সমকামীদের টানাপোড়েন ও অসহায়ত্ব নিয়ে লিখেছেন ‘The World of Homosexuals’, যা ভারতীয় সমকামীদের নিয়ে লেখা প্রথম বই।

স্বামী পরিতোষ ব্যানার্জির সাথে; Photo: Times of India

বিস্মিতা গুপ্তা-স্মিথের প্রমাণ্যচিত্র ‘For Straights Only’ তে এ প্রসঙ্গে জানান, ‘আমার স্বামীর এই পরিচয় জানার পর দুনিয়াটা একদম বদলে গিয়েছিল আমাদের। দুর্বিষহ সময় কেটেছে তখন। সমাজে যদি বিষয়টা স্বাভাবিক চর্চা হিসেবে নেয়া হতো তবে আমি বা সে কেউই এই পরিস্থিতির শিকার হতাম না।‘

ইন্দিরা গান্ধীর বিপক্ষে নির্বাচনেও লড়েছেন ১৯৮০ সালের লোকসভায়। তেলেঙ্গানা ও সাউথ বোম্বের তিন লক্ষ ভোটের বিপরীতে মাত্র ৬৫১৪ টি ভোট পেয়েছিলেন তখন।

প্রয়াণেও নেই ক্ষয়

গণিতসহ অন্য বিষয়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – Figuring the Joy of Numbers (১৯৭৭), Puzzles to Puzzle You(১৯৭৯), Book of Numbers Shakuntala Devi (২০০৬),  Astrology for You (২০০৫), In the Wonderland of Numbers (২০০৫), Awaken the genius in your child (১৯৯৯), Super Memory(২০১২), Perfect Murder প্রভৃতি ।

জ্যোতিষশাস্ত্রে পসার ঘটিয়েছিলেন। তাঁর মতে, বিজ্ঞানের মতো গণিত আর নিজস্ব জ্ঞানের সমন্বয়ই হলো জ্যোতিষশাস্ত্র।

পুরস্কারের ঝুলি একেবারে ফাঁকা নয়। ১৯৬৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ফিলিপাইন তাঁকে ‘বিশিষ্ট নারী’র সম্মানে ভূষিত করে। ওয়াশিংটন ডিসির ‘রামানুজন ম্যাথম্যাটিকাল জিনিয়াস এ্যাওয়ার্ড’ পান ১৯৮৮ সালে।

২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল ব্যাঙ্গালুরুতে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যুকে বরণ করে নেন এই অনন্য মেধাবী। সেসময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। এছাড়া বেশ কবছর যাবত হৃদপিণ্ড ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।

গণিত শুধুমাত্র যোগবিয়োগ, গুণভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা একটা ধারণা, একটা যুক্তি। আমার মতে, জগতের একমাত্র সত্য গণিত।

গণিতের মানসকন্যা ছিলেন শকুন্তলা। জীবনের হিসেবে গড়মিল হলেও অঙ্কে ভুল হয়নি কোনদিন। দলছুট যাত্রী হলেও বেঁচেছেন মাথা উঁচু করে, দাঁড়িয়েছেন মানবিকতার স্বার্থে। তাই শেষদিন পর্যন্ত সেবা করেছেন গণিতের, সন্ধান করেছেন সত্যের।

লেখক- সারাহ তামান্না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *