রাইট ব্রাদার্স : যে দুই ভাইয়ের হাত ধরে আজকের উড়োজাহাজ 1 min read
Reading Time: 3 minutesউড়োজাহাজের আবিষ্কারক কে বা কারা ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই যাদের নাম আসে তারা হলেন উইলবার রাইট ও অরভিল রাইট। সহোদর এই দুই ভাই রাইট ব্রাদার্স নামেই বেশি পরিচিত। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের নেপথ্যে অনেকেই গবেষণা ও কাজ করেছেন, তবে সর্বপ্রথম শক্তিসম্পন্ন, স্থায়ী এবং নিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন রাইট ব্রাদার্স। আমেরিকান এই আবিষ্কারকদের প্রাথমিক জীবন কেমন ছিল এবং কীভাবে এই উড়োজাহাজ আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন সেই গল্পই আমরা জানবো এই লেখাটিতে।
প্রাথমিক জীবন
উইলবার রাইট আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের মিলভিলেতে ১৮৬৭ সালের ১৬ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। আর তার ছোট ভাই অরভিল রাইট ওহাইও রাজ্যের ডেটনে ১৮৭১ সালের ১৯ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন মোটে পাঁচ ভাই-বোন। তাদের পিতা মিল্টন রাইট ছিলেন একজন খিষ্টান ধর্মযাজক। এই দুই ভাই বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও আবিষ্কারমনস্ক মানুষ ছিলেন।
উইলবার রাইট তার স্কুলে অত্যন্ত উজ্জ্বল, মেধাবী ও পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। হাই স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় তার আর ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। উইলবার আইস স্কেটিং খেলায় পারদর্শী ছিলেন; এই খেলারই এক প্রতিযোগিতায় তিনি বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এদিকে তার মা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে মাকে দেখাশোনা করার প্রয়োজনে তাকে বাড়িতেই অবস্থান করতে হয়। তিনি বাসাতে থেকেই তাদের পারিবারিক লাইব্রেরীতে প্রচুর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন আর তার পড়ালেখার সঙ্গী ছিল অরভিল রাইটও।
উড়োজাহাজ আবিষ্কার
চাহিদার প্রয়োজনে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়লেও রাইট ব্রাদার্সের মধ্যে উড়োজাহাজ তৈরীর নেশা সুপ্ত অবস্থায় সব সময়ই ছিল। তারা সর্বদাই অ্যারোনেটিক সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা পত্র ও আর্টিকেল সংগ্রহ করতো এবং পড়ে জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করতো। সেই সময় অনেকেই উড়োজাহাজ তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিল; তবে রাইট ব্রাদার্স বিশেষভাবে জার্মান বিজ্ঞানী অটো লিলিয়ানথালের গবেষণাপত্রগুলো বেশি অনুসরণ করতেন। ১৮৯৬ সালে অটো লিলিয়েনথাল হঠাৎ গ্লাইডার ক্র্যাশে মৃত্যুবরণ করলে রাইট ব্রাদার্স সিদ্ধান্ত নেন তারা নিজেরাই উড়োজাহাজ তৈরীর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণা চালিয়ে যাবেন।
তারা প্রথমে পাখির উড়াকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এই পর্যবেক্ষণ থেকে উড়োজাহাজ তৈরীর মূল রসদ সংগ্রহ করেন। বারবার ব্যর্থ হয়েও তারা নিরলসভাবে গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। তারা দুইজন একে একে গ্লাইডার, এলিভেটর, উড়োজাহাজে ব্যবহার উপযোগী ইঞ্জিন আবিষ্কার করে ফেলেন। অবশেষে ১৯০৩ সালের ১৭ই ডিসেম্বর; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার কিটিহক নামক স্থানের ডেভিল পাহাড়ে রাইট ব্রাদার্স তাদের এতদিনের স্বপ্ন ও কর্মের সফলতার ফলস্বরূপ শক্তি-সম্পন্ন, নিয়ন্ত্রিত, বাতাসের চেয়ে ভারী ও ইঞ্জিন চালিত উড়োজাহাজ আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হন। উইলবার তাদের উড়োজাহাজটি ৫৯ সেকেন্ড উড্ডয়ন করাতে পেরেছিলেন, যা ৮৫২ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করেছিল; আর এটি সত্যিই ছিল এক অসাধারণ অর্জন। তারপর বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আজকের এই অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ এসেছে।
খ্যাতি ও অন্তর্ধান
সফলভাবে উড়োজাহাজ উড্ডয়নের পরপরেই রাইট ব্রাদার্সদের সুনাম ও সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা তাদের গবেষণার কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। উড়োজাহাজের আরো উন্নীত করার জন্য উইলবার রাইট ফ্রান্সের একটি কোম্পানির সঙ্গে এবং অরভিল রাইট আমেরিকার সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। তারা দুই জনই একের পর এক সফলভাবে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করতে সক্ষম হতে থাকেন এবং তাদের সুনাম ও সুখ্যাতি আরো দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে।
১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে উইলবার রাইট মৃত্যুবরণ করেন। রাইট ব্রাদার্স উভয়ই ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। উইলবার রাইট বলতেন, “একই সঙ্গে একজন স্ত্রী ও একটি এরোপ্লেন রাখার মত সময় আমাদের কারোরই ছিল না।” উইলবার রাইটের মৃত্যুর পরেও অরভিল রাইট বিমানের উন্নয়নে কাজ করে যেতে থাকেন; তিনি রাইট অ্যারোনটিক্যাল ল্যাবরেটরিও স্থাপন করেছিলেন। অবশেষে ১৯৪৮ সালে অরভিল রাইটও ইহকাল ত্যাগ করেন।