বিনোদন

বলিউডের পর্দা কাঁপানো গ্যাংস্টাররা1 min read

জুন ২০, ২০১৯ 4 min read

author:

বলিউডের পর্দা কাঁপানো গ্যাংস্টাররা1 min read

Reading Time: 4 minutes

ভারতীয় উপমহাদেশে গ্যাংস্টারদের দৌরাত্ম্য আজকের নয়। তবে আরেকটু ছোট পরিসরে যদি বলি, বলিউডের সাথে গ্যাংস্টার জগতের সম্পর্ক সবচেয়ে আলোচিত এবং লোভনীয়ও। সঞ্জয় দত্ত, রাম গোপাল ভার্মা, অর্জুন রামপাল, প্রীতি জিনতা, অনিল কাপুর প্রমুখের সাথে শোনা গেছে অন্ধকার জগতের যোগসাজশের গুজব; সত্যতাও মিলেছে অনেকবার। যেই জগতের সাথে সিনেমা জগতের এত প্রেম, তার নিবেদনে কোন ছবি হবেনা, ভাবাই সার।গডফাদার’, ‘নার্কোসঘরানা যাদের প্রিয় তারা তো বটেই বলিউডি মশলাদার ছবির দর্শকরাও এখন ফিরছেন এইসব অন্ধকার জগত নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর দিকে। তেমনই ছবির কথা জানাচ্ছি আজকের লেখায়।

গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর-১ ও গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর-২(২০১২)

বলিউডে গ্যাংস্টার ছবি মানেই রাম গোপাল ভার্মা। তবে রামুর পর গ্যাংস্টার ঘরানায় সবচেয়ে সফল নির্মাতাটি হলেন অনুরাগ কাশ্যপ। রাম গোপাল ভার্মার সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা, বলিউডে নিজস্ব ধারা সৃষ্টির ইচ্ছে সব মিলিয়েই অনেকটাই এগিয়ে অনুরাগ। মূলত সব ধরণের দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই ২০১২ সালে দুই ভাগে নির্মিত ছবিগ্যাংস অফ ওয়াসিপুর পুরো বলিউডের মাথাই ঘুরিয়ে দেয়। ভণিতাহীন একেবারে রগরগে চিত্রায়নে কয়লা মাফিয়াদের জীবন, রাজ্যপাট চালনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ণ গল্প মুহূর্তেই লুফে নেয় দর্শকসমালোচকেরা।

মনোজ বাজপেয়ী, রিচা চাড্ডা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, রাজকুমার রাও, তিগমানশু ঢুলিয়া, হুমা কুরেশি, রিমা সেন, জিসান কাদরি, পংকজ ত্রিপাঠি, পিয়ুশ মিশরাঅনুরাগ একেবারে সুঅভিনেতাদের দিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর এই দুই কিস্তির ট্র্যাজেডিনামা। জিসান কাদরির সাথে হাত মিলিয়ে ঝাড়খণ্ডের ওয়াসিপুর এলাকার মাফিয়া দ্বন্দ্বের সত্য ঘটনা পর্দায় এনেছেন অনুরাগ। তবে ছবির ব্যতিক্রমী দিক ছিল স্টাইল এবং রং মিশালি চিত্রায়ন। সাথে ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক এবং ফোক গানের মিশ্রণও পোক্ত করেছে ছবিটিকে। সেরা অভিনেতা, সেরা অডিওগ্রাফির জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি দেশে বিদেশে নানান পুরস্কার জেতে অনুরাগের এই নির্মাণ।

সরদার খান চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী এবং ফয়জাল খান চরিত্রে নওয়াজুদ্দিন-উভয়ই পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন; Photo source: Cinestaan

শুটআউট এট লোখান্ডওয়ালা(২০০৭)

১৯৯১ সালে ভারতের লোখান্ডওয়ালা কমপ্লেক্সে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া নির্মাণ করেন  ‘শুটআউট এট লোখান্ডওয়ালা’(২০০৭)

মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের সাবেক সহযোগী ছিল মায়া দোলাস। মায়ার দলের সাথে মুম্বাই পুলিশের শুটিং এনকাউন্টারের পূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে এই ছবিতে। এতে মায়া চরিত্রে দেখা গেছে বিবেক ওবেরয়কে, মায়ার মায়ের চরিত্রে ছিলেন অমৃতা সিং, এছাড়াও পুলিশ কমিশনার শমশের খানের চরিত্রে সঞ্জয় দত্ত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন সুনীল শেঠি, তুষার কাপুর, রোহিত রয়, অমিতাভ বচ্চন, আরবাজ খান। বক্স অফিসের পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও ঝুলিতে ভরে এই ছবি।

মায়া দোলাসের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য আইফায় সেরা নেতিবাচক অভিনেতার পুরস্কার পান বিবেক ওবেরয়; Photo source: Daily Motion

সত্য (১৯৯৮)

মুম্বাই তথা গোটা আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে মোটামুটি পিএইচডি করে ফেলা রাম গোপাল ভার্মার গ্যাংস্টার ট্রিলজির প্রথম ছবি এটি। জোরদার গল্প, নিখুঁত অভিনয় এবং রামুর পরিচালনার কারুকাজে ছবির প্রত্যেক ফ্রেমেই নতুন কিছু না কিছু আবিষ্কার করেছে দর্শক। মুম্বাই শহরে ভাগ্য বদলের আশায় আসা এক যুবক সত্যকে নিয়েই এগোয় গল্প। ক্রমে অপরাধ জগত তার ঘাত প্রতিঘাতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সে।

নাম চরিত্রে সাউথের জে ডি চক্রবর্তী অনন্য অভিনয় করলেও ভিকু মাহাত্রে চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী কেড়ে নেন লাইমলাইট। যার ফলে সেবার সহঅভিনেতার জাতীয় পুরস্কার ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার (সমালোচক) পুরস্কার আসে তাঁর শেল্ফে। ফিল্মফেয়ারে সমালোচকদের চোখে সেরার পুরস্কারও পায় বলিউডের এই ক্লাসিক গ্যাংস্টার মুভি। অল্প সময় স্ক্রিনে থাকলেও পরেশ রাওয়ালের চরিত্রও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  মাত্র কোটির বিনিয়োগে ২০ কোটি রুপি ঘরে তোলে সৌরভ শুকলাঅনুরাগ কাশ্যপের কাহিনীতে নির্মিত এই মাস্টারপিস।

ঊর্মিলার নিখাদ সৌন্দর্য আর জে ডি চক্রবর্তীর সাথে রসায়ন ছিল ছবির আরেক আকর্ষণ; Photo source: Medium

কোম্পানি(২০০২)

বলিউডি গ্যাংস্টার ঘরানাকে নিজ হাতে গড়ে পিটে তৈরি করেছেন রাম গোপাল ভার্মাএকথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাঁর ট্রিলজির দ্বিতীয় কিস্তির ছবিকোম্পানি ছবিতে মুম্বাই অপরাধজগতের ধারাউপধারা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এর ব্যবহারের গল্প উঠে এসেছে সেলুলয়েডের ফিতায়। মোহনলাল, অজয় দেবগন, বিবেক ওবেরয়, অন্তরা মালি, মনীষা কৈরালা প্রমুখ অভিনীত এই ছবি মাত্র ৭০ মিলিয়ন বাজেটে নির্মিত হলেও আয় করে ২৫০ মিলিয়ন রুপি

মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের এককালের সহকারী হানিফের বয়ান থেকেই মূলত এই ছবির অনুপ্রেরণা পান রাম গোপাল। মানিক চরিত্রে অজয়ের চাইতে মনোজ বাজপেয়ীকেই পছন্দ ছিল তাঁর। কিন্তু অজয় যে নিরাশ করেন নি, উল্টে পর্দায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন সেটা পরে ঠিকই স্বীকার করেছেন পরিচালক। ফিল্মেফেয়ারেও ৬টি পুরস্কার পায় এই ছবি।  আশা ভোসলের কণ্ঠেখাল্লাসগানটির কথা অনেকেই ভুলতে পারবেন না, বিশেষত নাইটক্লাবে গানের দৃশ্যায়ন এবং ইশা কোপিকারের তীব্র নাটকীয় এক্সপ্রেশন ছিল ছবির অন্যতম আকর্ষণ।

রামুর গ্যাংস্টার ট্রিলজির তৃতীয় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিডি’ (২০০৫); যা এই ঘরানায় আরেক মাইলফলক স্থাপন করে।

২০০২ সালের অন্যতম সর্বাধিক জনপ্রিয় গান ছিল ‘কোম্পানি’র ‘খাল্লাস’; Photo source: IMDb

ড্যাডি(২০১৭)

বলিউডে গ্যাংস্টার ছবির মধ্যে বায়োপিক খুব কমই। ২০১৭ সালে সাবেক গ্যাংস্টার এবং এমএলএ অরুণ গৌলির উত্থান এবং পরিণতি নিয়ে তৈরি হয়েছেড্যাডিচলচ্চিত্রটি। ছবিতে অরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন রামপাল, দাউদ ইব্রাহিমের অনুরূপ চরিত্র মাক্সুদ ভাই হিসেবে দেখা গেছে ফারহান আক্তারকে। সত্তরে ভারতের টেক্সটাইল মিলগুলোর আকস্মিক ছাটাই, সেই থেকে অরুণের অপরাধে অভ্যস্ততা, বাইকালা কোম্পানির উত্থান, দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানির সাথে প্রথমে সখ্যতা এবং পরবর্তীতে সংঘাতের চিত্রের পাশাপাশি অরুণের রাজনৈতিক জীবনও উঠে এসেছে রূপালি পর্দায়।

অসীম আহলুওয়ালিয়া পরিচালিত ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।সম্ভবত রাজনৈতিক সমালোচনা এবং অপেক্ষাকৃত কম প্রচারণাই ছবির এহেন পরিণতির জন্য দায়ী। তবে অর্জুনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আলোচিত হয় বেশ। 

বলিউডের সাথে অন্ধকার জগতের আঁতাত আছে সে বেশ নিঃসন্দেহেই বলা যায়। টিসিরিজের প্রতিষ্ঠাতা প্রযোজক গুলশান কুমারের হত্যাসহ অনেক ঘটনাতেই জড়িত এই আন্ডারওয়ার্ল্ড। তাই বারবার বলিউডের পর্দায় উঠে এসেছে এই জগতের কড়চা।বাস্তব’, ‘অগ্নিপথ’, ‘শুটআউট এট ওয়াডালা’, ‘ওয়ান্স আপন টাইম ইন মুম্বাই’, ‘আব তাক ছাপ্পান’, ‘ডন’, ‘মকবুল’, ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টারপ্রভৃতিই এর উদাহরণ।

লেখক- সারাহ তামান্না 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *