বিনোদন

প্রতিশ্রুতিশীল তিন 1 min read

সেপ্টেম্বর ২, ২০২০ 4 min read

author:

প্রতিশ্রুতিশীল তিন 1 min read

Reading Time: 4 minutes

নব্বইয়ের দশকে টেলিপাড়া মাত করে রেখেছিলেন আফজাল হোসেন, জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, টনি ডায়েস, খালেদ খান, তৌকির আহমেদ, শামস সুমন, মাহফুজ আহমেদ প্রমুখ। তাঁদেরই পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে বেশ খানিকটা সময় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন লিটু আনাম, শাহেদ শরীফ, চঞ্চল চৌধুরী, মীর সাব্বিরেরা।

এরপরের সময়টায় বাংলা নাটকে অদলবদল হয়েছে অনেক। সংলাপ ও গল্পনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে স্থুল আমোদ এবং পুনরাবৃত্তির জয়জয়কার চলেছে দীর্ঘদিন। সে সময়েই বাংলা নাটকে প্রতিভার সংকট নিয়েও কথা ওঠে। মোশারফ করীম, অপূর্ব, নিশো – প্রত্যেকে স্ব স্ব স্থান প্রতিষ্ঠা করলেও একঘেয়েমির দুর্নাম থেকে দূরে নন। মাঝে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছিলেন আরেফিন শুভ, জোভান, ইরফান সাজ্জাদেরা। সেই মরুভূমিতে অমৃত নিয়েই যেন আবির্ভূত হয়েছে একঝাক তরুণ।

বর্তমানের ব্যস্ত ও মেধাবী অভিনেতার তালিকায় প্রথম তিনজন হলেন অ্যালেন শুভ্র, ইয়াশ রোহান ও মনোজ কুমার।

অ্যালেন শুভ্র গোমেজ

সূচনাটা ‘প্রাচ্যনাট্যে’র হাত ধরেই। নটরডেম কলেজে পড়ার সময় ‘সার্কাস’ এর মঞ্চায়ন দেখতে গিয়েছিলেন। শো শেষ হতেই মনে হলো অভিনয়ের সাথে সংসার করাটা মন্দ হবে না। তাই ছয় মাসের কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলেন সেখানেই। কোর্স শেষে পাকাপাকি আসনও মিলে গেলো দলে।

মঞ্চের নিবেদিত এই অভিনেতার টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে অমিতাভ রেজার ‘ইচ্ছে হলো’র মাধ্যমে। প্রথম দর্শনেই দর্শক আপন করে নেয় অ্যালেনকে। ক্ষণিকের ভেতরেই নিজেকে সময়ের ব্যস্ততম অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করে ফেলেন।

সেই থেকে শুরু। মঞ্চের উত্তুঙ্গ তরুণ টিভি সেটের বাসিন্দা হয়ে গেলেন, একে একে করে ফেললেন দেড়শর উপরে টিভি নাটক। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে এক্সট্রা আর্টিস্ট’, ‘থার্ড জেনারেশন’, ‘ট্রিপটিন’,  ‘ভালবাসার ভূত ও ভবিষ্যত’, ‘হারুন মিয়ার খোয়াব’, ‘বিকেল বেলার পাখি’, আলাদিনের ফ্ল্যাটবাড়ি’, ‘টিউশনি’ , ‘আমার অপরাধ কী’, ‘পাসপোর্ট’, ‘হোটেল অ্যালবাট্রস’।

স্বাধীনচেতা, অন্তর্মুখী স্বভাবের শুভ্র নিজেকে একগুঁয়ে হিসেবেও দাবি করেন। কাজের সবচেয়ে বড় প্রেরণা জায়গা মঞ্চ। পর্যবেক্ষণ আর প্রবীণ অভিনেতাদের কাছ থেকে শেখাটাই তাঁর মূলমন্ত্র।

ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন। অনিমেষ আইচের  ‘ভয়ংকর সুন্দর’ (২০১৭), অমনিবাস চলচ্চিত্র  ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ (২০১৯) ও অমিতাভ রেজার ‘রিকশা গার্ল’- প্রতিটিতেই নিজের স্বভাবজাত মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছেন।

প্রচুর বই আর ভিনদেশি ছবিতেই বুঁদ থাকেন অধিকাংশ সময়ে। রোল মডেল হিসেবে কাউকে অনুসরণ করেন না। বরং নিজের আগ্রহে নিত্যনতুন আবিষ্কারের মনোযোগ ১৯৮৮ সালের ১৫ জুন জন্ম নেয়া শুভ্রর।

মনোজ কুমার প্রামাণিক

কোমল হাসির দ্যুতি সাথে প্রমত্ত নাটকীয়তার অনুষঙ্গ; মনোজ কুমার প্রামাণিককে এক লহমায় দেখলে বড্ড সাদাসিধেই মনে হয়। বাস্তবিকেই তাই। পাশের বাড়ির ছেলের মতোই সরল সমীকরণে বাঁধা তাঁর জীবন।

শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়ি নওগাঁয়। ক্লাস সিক্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অব্দি কাটে রাজশাহীতে। পারিবারিক আবহেই ছিল অভিনয়ের সৌরভ, বাবা, মা, দাদা, নানা, চাচা সকলেই ছিলেন শখের যাত্রা শিল্পী।

সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা থেকে পড়েছেন পরিবারের অমতেই। বর্তমানে ময়মনসিংহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন।

২০০৮ সাল থেকে অমিতাভ রেজার সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যামেরার পেছনে সময় দিতেন। ২০১০ সালে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগমন ঘটে ছোট পর্দায়। এর সাথে রাজশাহীর থিয়েটার বিভাগেও কাজ চলছিল পুরোদমে।

পরবর্তীতে ‘পিশাচ’ নাটক দিয়ে প্রথম অভিষেক ঘটে। গ্রামীণ, ক্লোজ আপের বিজ্ঞাপন সূত্রেই চোখে পড়েন নির্মাতাদের। এরপর চলেতে থাকে টানা কাজ। ‘চুপকথা’, ‘প্রথম প্রেম’, ‘মন জুড়ে তুমি’, ‘উড়ো মেঘের বসন্ত’, ‘সত্যায়িত ভালোবাসা’, ‘অবুঝ প্রজাপতি’, ‘মন মন্দিরে’, ‘আজ নিঝুমের বিয়ে’, ‘কথা হবে তো?’, ‘অবক্ষয়’, ‘আজ আমার পালা’, ‘শহরে নতুন গান’, ‘স্বপ্ন ও ভালোবাসার গল্প’, ’হয়তো তোমারই জন্য’,’ ফুল ফোটানোর খেলা’, ‘খঞ্জনপুর’, ’জোড়া ফুল ও ভ্রমরার গল্প’, ‘একটি ল্যান্ডফোনের গল্প’- অভিনীত প্রতিটি নাটকেই নন্দিত হয়েছেন।

না চাইলেও রোমান্টিক কিংবা শহুরে যুবকের চরিত্রেই বেশি পাওয়া যায় মনোজকে। কিন্তু গৎবাঁধা অক্ষরে নিজেকে বেঁধে ফেলতে অরুচি তাঁর। তাইতো কখনো ‘পাঠাও রাইডার’, কখনো বা ‘ বিকৃতমনা ধর্ষক’ হিসেবে দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে। ভিন্ন মাত্রার, বিশেষত জটিল মনস্তত্বের চরিত্রগুলোই বেশি টানে তাঁকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা আর অভিনয়ের বাইরে বাড়তি সময় জোটে না অন্তর্মুখী মনোজের। একটু সময় পেলেই ছুটে যান বন্ধুদের আড্ডায়।

চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে চান মনোজ; Photo: The Daily Star

অভিনয়ের প্রতি প্রেমের কারণ খোকন কাম মনোজের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। ‘একমাত্র এই পেশাতেই আশেপাশের সব মানুষকে বোঝার পরিধিটা আছে, আরেকজনের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে বুঝতে পারি।’

বড় পর্দাতেও অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন গত বছর। মোকারম শুভর ‘ইতি তোমারই ঢাকা’(২০১৯), মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ (২০১৯)। মুক্তির অপেক্ষায় আছে নুরুল আলম আতিকের ‘মানুষের বাগান’,  ‘মিশন এক্সট্রিম’ এবং ‘অপারেশন সুন্দরবন’।

ইয়াশ রোহান

প্রেমিক পুরুষের যে চিরাচরিত রূপ গত কয়েক বছর টেলিভিশন পর্দায় আটকে ছিল তার বদল এসেছে। সেই বদলের অন্যতম যাত্রী ইয়াশ রোহান। প্রথাগত ছন্দে আবদ্ধ না থেকে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন গত দুই বছর।

নরেশ ভুঁইয়া- শিল্পী সরকার অপু দম্পতির পুত্রের ইচ্ছে ছিল নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে। ২০১৫ সালে ‘ডুব’ এবং ২০১৬ সালে ‘ লাল কাগজের টাকা’ নামের দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্সে অনার্স করেছেন এই সাবলীল অভিনেতা।

কাজ শেখার জন্যেই গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’এর প্রি-প্রোডাকশন দলে যোগ দিয়েছিলেন। আর তখনই প্রস্তাব পান অভিনয়ের।

নিজেকে ‘এক্সিডেন্টাল এক্টর’ মানেন ইয়াশ; Photo: Instagram

‘স্বপ্নজাল’এর সুবাদে চিত্রাঙ্গনে স্থায়ী ছাপ ফেললেও অভিনয়ে সাক্ষর করেছেন শৈশবেই। বাবার পরিচালনায় চার-পাঁচটি নাটকে অভিনয় করেছেন তখন। ২০১২ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘আমাদের বিজয়’ নাটকে ক্ষুদ্র চরিত্রে রুপায়ন করেন। কিন্তু ফুলটাইম অভিনেতা হবার কথা ভাবেননি । শেষে আশফাক উজ্জামান বিপুলের কোকা কোলার বিজ্ঞাপনই বদলে দেয় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।

‘আগন্তুক’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘শহর ছেড়ে পরানপুর’, ‘করোনাকাল’, ‘মশাল’, ‘রঙ বেরঙ’, ‘সুখ’, ‘বিবাহ বিভ্রাট’, ‘আমাদের সমাজ বিজ্ঞান’, ‘ড্রিম এন্ড লাভ’, ’খাম ভর্তি মন’, ‘পরীর সাথে বিয়ে’, ‘উপলব্ধি’, ‘চাকা’, ‘রোদের ভেতর রাত’ প্রভৃতি নাটক ও টেলিফিল্মে নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে ইয়াশকে।

পরিমনির পরে নুসরাত ইমরোজ তিশার বিপরীতে ‘মায়াবতী’ (২০১৯) এবং ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’য় স্পর্শিয়ার বিপরীতে চলচ্চিত্রে দেখা যায় তাঁকে। এছাড়াও বিদ্যা সিনহা মীমের সাথে ‘পরান’, ঐশীর সাথে ‘আদম’ রয়েছে মুক্তির প্রতীক্ষায়।

নাটক-সিনেমায় নিয়মিত হলেও তৃপ্তি পাননি এখনও। কারণ ফেলুদার তোপসে হওয়াই যে স্বপ্নজালের অপুর স্বপ্ন!

বরেণ্য অভিনেত্রী ফেরদৌসি মজুমদারের মতে ‘অভিনেতা যত ভালো হোক না কেন চিত্রনাট্য জম্পেশ না হলে তার আর কিছু করার থাকে না। আবার ভালো চিত্রনাট্যের রূপান্তরও নির্ভর করে একজন সমঝদার অভিনেতার উপর।‘ একপেশে, গতানুগতিকতা থেকে সরে এসে নিরীক্ষায় সময় দিচ্ছেন নবীনেরা। শিল্পের অস্থিরকালে একথাই ঢের আশা জাগায়।

লেখক- সারাহ তামান্না

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *