বিনোদন

 প্রতিকূলতা জয়ের গল্প যখন চলচ্চিত্রে 1 min read

এপ্রিল ৬, ২০২০ 7 min read

author:

 প্রতিকূলতা জয়ের গল্প যখন চলচ্চিত্রে 1 min read

Reading Time: 7 minutes

-‘আমাদের মৃত্যুর পর কী হবে? ‘

-‘ আমাদের ভালোবাসার মানুষগুলো অন্যরকম এক শূন্যতা অনুভব করবে।‘

কিয়ানু রিভসের সাদাসিধে এই উত্তরই গত বছর স্তব্ধ করে দিয়েছিল সারা বিশ্বের কোটি দর্শককে। ‘জন উইকে ৩’র প্রচারণায় স্টিফেন কোলবার্টের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কিয়ানু। আর সেখানেই এই প্রশ্নের অবতারণা।

ঠিক এক বছর আগে হয়তো এভাবে মৃত্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিল না পৃথিবী। সদর্পেই তখন মুরাকামির ‘মৃত্যু জীবনের বিপরীত নয়, অংশ মাত্র‘ উক্তিখানি বলে দেয়া যেতো। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। সারাবিশ্বে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত অদৃশ্য জুজু করোনার ছোবলে। মৃত্যুর মিছিল পেরিয়েছে অর্ধ লাখে।

নৈরাশ্য নয়, আশাবাদী হয়েই চলুন কোয়ারেন্টিনের এমন দিনে জেনে নেই প্রতিকূলেও বেঁচে থাকার কিছু সিনেমার সম্পর্কে।

Cast Away (কাস্ট অ্যাওয়ে)

ধরুন, সারা জীবনের উপার্জনের অর্থে বিশ্ব ভ্রমণে বের হলেন আপনি। মেঘের রাজ্য ফুঁড়ে উড়ছে বিমান, নিচে দিগ্বিজয়ী পৃথিবী। সবকিছু ঠিকঠাক ভেবে চোখ মুদে খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছেন হয়তো। কিন্তু এর মাঝেই টের পেলেন পুরো বিমানের সামনে নিকষ কালো ঝড়, যাত্রীদের সাহায্য করা তো দূর কি বাত, পাইলট মশাই নিজেই দিশেহারা। শেষমেশ ঝড়ের কবলে বিমান ভেঙে পড়লো, নিহত হলো সকল যাত্রী। সৌভাগ্যবশত আপনি টিকে গেলেন। রোদ্দুরের স্পর্শ পেতেই নিজেকে আবিষ্কার করলেন লোকালয় থেকে বিস্তর ব্যবধানের জনশূন্য এক দ্বীপে। তখন কী করবেন আপনি? খাবার, জলহীন এই স্থলভূমিতে কতদিন বেঁচে থাকবেন?

৭৩ তম অস্কারে সেরা অভিনেতা শাখায় মনোনয়ন পেয়েছিলেন টম হ্যাংকস; Photo: Screencraft

‘কাস্ট অ্যাওয়ে’র টম হ্যাংকস কিন্তু টানা চার বছর টিকেছিল প্রশান্ত মহাসাগরের এক জনমানবহীন দ্বীপে। ফেড এক্সের এক নামী কর্মকর্তা থেকে দিন- তারিখের হিসাব ছাড়া দ্বীপে টিকে থাকার সুতীব্র সংগ্রামের সফল চিত্রায়নই ২০০০ সালের এই ক্লাসিক সারভাইভাল চলচ্চিত্র।

৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী আয় করে নেয় ৪৩০ মিলিয়ন ডলার। মূল চরিত্র চাক নোল্যান্ডকে ফুটিয়ে তুলতে টম ২৩ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছিল। আবার দ্বীপে থাকাকালীন খাদ্যাভাবের কারণে সেই বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলাটাও ছিল আবশ্যক। এজন্য এক বছর বন্ধ থাকে এই ছবির শ্যুটিং।

অনেকের ধারণা, ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’ কোন সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। আদতে কিন্তু পুরোটাই স্ক্রিপ্টেড! এর কাহিনীকার উইলিয়াম ব্রয়েলস জুনিয়র গল্পটা ভেবেছিলেন ১৯৯২ সালেই। তখন একে অবশ্য কমেডি হিসেবেই উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন তিনি। টমের সাথে আলোচনা এগুতেই বদলে যায় গল্পের মতি গতি। ‘চাক অফ দ্য জাঙ্গল’ থেকে সরাসরি ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’তে পরিণত হয় রবার্ট জেমেকিস পরিচালিত ছবিটি।

ডন বুরগেসের সিনেমাটোগ্রাফি ও অ্যালান সিলভেস্ট্রির সুর আয়োজনই ছিল এর মূল সম্পদ। ১৪৩ মিনিটের এই ছবিতে হ্যাংকস ছাড়াও নিক সার্সি ও হেলেন হান্ট ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। তবে তাদের চাইতে স্ক্রিন টাইম বেশি পেয়েছে  একাকীত্বের সঙ্গী ‘উইলসন’ নামের ভলিবলটি। পরবর্তীতে ২০ ডলারের এই বলটি নিলামে বিক্রি হয় ১৮,৪০০ ডলারে।

I Am Legend (আই অ্যাম লিজেন্ড)

ভাইরাসের রাহু গ্রাসের ফলাফল ইতোমধ্যেই বিশ্ব চাক্ষুষ অনুধাবন করছে। প্রতিষেধক আবিষ্কার ব্যতীত বিকল্পও চোখে পড়ছে না। ঠিক এমন এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল উইল স্মিথের বিখ্যাত পোস্ট- অ্যাপোক্যালিপ্টিক চলচ্চিত্র ‘আই অ্যাম লিজেন্ডে’।

ভাইরাসের ভয়ংকর রূপ প্রতিফলিত হয়েছে ‘আই অ্যাম লিজেন্ডে’; Photo: Film retrospective

ভাইরাসের জিনোম বদলে ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবেই ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই গবেষণাই বুমেরাং হিসেবে আঘাত করে গোটা মানবজাতিকে। জৈবাস্ত্র রূপে নিমিষে শেষ করে দেয় ৫.৪ বিলিয়ন মানুষকে। বাকিদের পরিণত করে মাংসখেকো জোম্বিতে।

২০০৯ সালের পৃথিবী। ভাইরাসের প্রভাবে বিগত তিন বছরে শতকরা ৯৯.৮ ভাগ মানুষ হয় মৃত বা আক্রান্ত। এর মাঝেও সঙ্গহীন, মৃত শহরে টিকে আছে রবার্ট নেভিল (উইল স্মিথ) আর তার পোষা কুকুর সামান্থা। রুটিন বেঁধে প্রতিদিনই শহর ভ্রমণে বের হয় নেভিল, একলা সংসার গুছিয়ে নেয় আপন নিয়মে আর খুঁজে বেড়ায় প্রিয় বসুন্ধরার সুস্থ কোন মানব সদস্যকে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে এক সময় ভাইরোলজিস্টের পদে ছিল নেভিল। সেই জ্ঞানটুকু সম্বল করেই দিনের পর দিন প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা করে যাচ্ছিল। মানবতার প্রতি শেষ আশাটাকে জিইয়ে রাখতেই একদিন গবেষণাগারে নিয়ে আসে এক আক্রান্ত জোম্বিকে, প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে প্রায় সাফল্যও ধরা দিচ্ছিল। কিন্তু বৈরি পরিবেশে কি তা সম্ভব? না নেভিলকেও পরিণত হতে হবে মৃতদের খাদ্যে?

রিচার্ড ম্যাটেসনের ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ফ্রান্সিস লরেন্সের এই সাই-ফাই হরর ছবিটি। প্রাথমিকভাবে আমেরিকার লস এঞ্জেলেসে শুটিংয়ের থাকলেও পরবর্তীতে বিশ্ববাসীর কাছে নিউ ইয়র্কের সর্বব্যাপী আবেদনের কথা ভেবে বদল করা হয়।

উইল স্মিথের ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল এই ছবিটি অ্যায় করে নেয় ২৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১০১ মিনিটের পুরো ছবি জুড়েই আছে শ্বাসরুদ্ধকর সাসপেন্সের রোমহর্ষক উপস্থাপন।

The Martian ( দ্য মারশিয়ান)

পৃথিবীর বাইরের প্রতিকূল পরিবেশটা ঠিক কেমন? সেখানে একলা আস্ত একজন মানুষ কি স্বাভাবিক জীবন প্রণালি চালাতে পারে? না অল্পেই খুইয়ে বসে প্রাণ?

নাসার বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শেই নির্মিত হয়েছে ‘দ্য মারশিয়ান’এর মূল সেট; Photo: Gorton Community Center

মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও গতি প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করতেই ‘অ্যারেস ৩’ মহাকাশযানটি নেমেছিল লাল ভূমিতে। পরিকল্পনা মোতাবেক চলছিল সব; আচমকা ধূলিঝড়ই কাল হয়ে দাঁড়ালো সেই গবেষক দলের জন্য। তড়িঘড়ি গ্রহ ছাড়তে বাধ্য হয় তারা, পেছনে ফেলে আসে দলের অন্যতম সদস্য মার্ক ওয়াটনিকে (ম্যাট ডেমন)।

মানুষের বেঁচে থাকার বাসনা বরাবরই তীব্র। সেই তাড়নাতেই ঝড় পরবর্তী বিপদসংকুল মঙ্গলে মার্ক শুরু করে নতুন লড়াই। অপ্রতুল খাদ্য ও পানি, বৈরি জলবায়ুর বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীবন জিইয়ে রাখেন মহাকাশচারী । অন্যদিকে ক্রমাগত পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও চলতে থাকে তার।

অবশেষে কাদামাটির পৃথিবীতে ফেরে মার্ক। কিন্তু এর পেছনে উজ্জ্বল হয়ে থাকে ভিনগ্রহে সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও আবিষ্কারের ইতিহাস।

সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে, ভিন্ন আঙ্গিকের সারভাইভাল চলচ্চিত্র এই ‘দ্য মারশিয়ান’। হলিউড এই ক্ষেত্রেও দ্বারস্থ হয়েছে সাহিত্যের। অ্যান্ডি ওয়ারের একই নামের এক কল্পবিজ্ঞান থেকে এর চিত্রনাট্য লেখেন ড্রিউ গডার্ড। ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা অনন্য এই সাই-ফাইয়ের পরিচালনায় ছিলেন রিডলি স্কট।

ছবিটির মূল চিত্রধারণ করা হয়েছে জর্ডানের ওয়াদি রাম মরুভূমিতে। লাল বালির জন্য বিখ্যাত এই স্থান এর আগেও মঙ্গল ভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র ধারণে ব্যবহৃত হয়েছিল। ছবির জন্য টানা পাঁচ সপ্তাহ নিরলস শুটিং করেছিলেন মুখ্য অভিনেতা ম্যাট ডেমন। এছাড়াও জেসিকা চ্যাস্টেইন, ক্রিস্টেন উইগ, ডোনাল্ড গ্লোভার, জেফ ড্যানিয়েলস প্রমুখ রয়েছেন এতে।

The Revenant (দ্য রেভেনেন্ট)

‘দ্য রেভেনেন্ট’ এর কল্যাণেই লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ভাগ্যের শিকে অবশেষে ছিঁড়লো। এর আগে ‘টাইটানিক’, ‘ দ্য ওলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’, ‘দ্য এভিয়েটর’, ‘ব্লাড ডায়মন্ডে’ দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতা দেখালেও ভাগ্যদেবী মুখ তুলে তাকাননি লিওর দিকে। ২০১৫ সালের এই ছবিই অবশেষে একাডেমী অ্যাওয়ার্ডের জয়মাল্য তুলে দিয়েছিল তাঁকে।

মেথড অভিনয়ের পথে হেঁটেছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও; Photo: Encyclopedia Britannica

১৮২৩ সালে সংঘটিত এক সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এই ছবির কাহিনী। ১৯১৫ সালে এর মূল চরিত্র হিউ গ্লাসকে নিয়ে কবিতাও প্রকাশিত হয়। তবে ছবির মূল রসদ মেলে ২০০২ সালে প্রকাশিত মাইকেল পুনকের ‘দ্য রেভেনেন্ট’ উপন্যাসে।

মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এন্ড্রু হেনরি, ১৮২৩ সালে সদলবলে বর্তমান ডাকোটার জঙ্গলে ঘাঁটি বাধেন শিকারের সন্ধানে। নিছক আনন্দই ছিল এর উদ্দেশ্য। তবে সেই আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হয় অচিরেই। স্থানীয় আরিকারা গোত্রের আক্রমণে নিহত হয় দলের সিংহভাগ সদস্য। বাকিরা পালাতে সক্ষম হয় আরেক আদিবাসী হিউ গ্লাস (ডি ক্যাপ্রিও) এর সহায়তায়।

তবে এতেই শেষ রক্ষা হয়নি। তুষারস্নাত বনে ভালুকের আক্রমণে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়াতে হয় গ্লাসকে। দলের অধিকাংশ সদস্য নিরাপদ স্থানে ফিরলেও গ্লাসকে সঙ্গ দেয় ফিটজেরাল্ড, ব্রিজার আর পুত্র হক। ক্ষুদ্র এই দলেও স্বার্থের লড়াই ক্রমে জাঁকিয়ে বসে; ফিটজেরাল্ডের হাতে খুন হয় হক। আরিকারাদের আক্রমণের ভয়ে অসুস্থ গ্লাসকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয় ব্রিজার।

মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনেও দমে যায় না গ্লাস। পুত্র হত্যার প্রতিশোধে মরিয়া পিতা পাড়ি দেয় দীর্ঘ পর্বত, সম্মুখীন হয় মরণপণ লড়াইয়ের। জঙ্গলের হিংস্র জানোয়ার থেকে শুরু করে স্বার্থান্ধ শিকারি দলের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে সে। একসময় সে ফেরে হেনরির ঘাঁটিতে, খুঁজে বের করে খুনি ফিটজেরাল্ডকে।

ইমানুয়েল লুবেজকির প্রাকৃতিক সিনেমাটোগ্রাফিই এই অ্যাডভেঞ্চার ছবির প্রধান আকর্ষণ। অন্যদিকে মেক্সিকান চলচ্চিত্রকার আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতু বরাবরই জীবনমুখী কাজের জন্য সমাদৃত। তবে ছবির স্বার্থে লিওর শ্রম ছাড়িয়ে গিয়েছিল অন্যদের। শাকাহারী হওয়া সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় কাঁচা মাংস চিবিয়েছেন তিনি। দুখানা আদিবাসী ভাষাও রপ্ত করতে হয়েছে তাঁকে।

১৫৬ মিনিট দীর্ঘ ছবিটির প্রায় পুরো শুটিংই হয়েছে প্রাকৃতিক আলোতে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনা- তিন দেশের বিভিন্ন অংশে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে এই ছবির। লিও ছাড়াও টম হার্ডি, উইল পোলটার ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়।

Life of Pi (লাইফ অফ পাই)

‘মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে,

মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।‘

বিশ্বকবির কালিতে বারবার ধ্বনিত হয়েছে মানবজনমের প্রতি সুতীব্র মমতার কথা। সেই পথটাই যেন তাড়িত করেছে ‘লাইফ অফ পাই’ এর কিশোর পিসিন ওরফে পাই প্যাটেলকে। নইলে প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল বুকে ষণ্ডা মার্কা বাঘের সাথে বন্ধুত্ব পাতানো সম্ভব, বলুন! আবার সেই বাঘের সাথে গলা মিলিয়ে ২২৭ দিন ভেসে কাটানোটাও চাট্টিখানি কথা নয়।

ব্রিটিশ রাজত্বের কিছু পরেই ভারতের পন্ডিচেরিতে নিজ ঢঙে হোটেল কাম চিড়িয়াখানার প্রবর্তন করেন সন্তোষ প্যাটেল। দুই পুত্র- রবি ও পাই  আর স্ত্রী গীতাকে নিয়ে ঝামেলাহীন জীবনই চলছিল তাঁর। ১৯৭৭ সালে অর্থনৈতিক পট পরিবর্তনের সূত্রে সপরিবারে কানাডা থিতু হবার সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাঁকে।

চিড়িয়াখানার শিল্পাঞ্জি, জেব্রা, নেকড়ে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কাকাতুয়া সহ একরাশ প্রাণীকে সঙ্গী করে কিছুদিনের মাঝেই জাপানি জাহাজে ওঠে প্যাটেল পরিবার। কিন্তু মাঝ সমুদ্রের ঝড়ে ডুবে যায় গোটা জাহাজ। প্রবল ঝড় আর ধ্বংসের মাঝেও দৈবক্রমে বেঁচে যায় কিশোর পিসিন। লাইফ বোটের কল্যাণে মহাসমুদ্রে ভেসে থাকতে পারলেও এতে যোগ হয় অন্য এক ভীতি- রয়েল বেঙ্গল টাইগার রিচার্ড পার্কার।

এরপরের গল্পটা প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জীবনের জয়গানের, অক্লান্ত নিষ্ঠা আর পশু ও মানুষের মধ্যকার অতুলনীয় বন্ধুত্বের। খাদ্য সংকট, অনভিজ্ঞতার পরেও লোনা জলের দুনিয়ায় ২২৭ দিন টিকে থাকার অনন্য চলচ্চিত্রায়নই হলো ‘লাইফ অফ পাই’।

পাই প্যাতেলের বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য গল্প নিয়েই ‘লাইফ অফ পাই’; Photo: Encyclopedia Britannica

মোহনীয় দৃশ্যায়নের জন্য চলচ্চিত্রের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যাং লি পরিচালিত ছবিটি। ৮৫ তম অস্কার আসরে সর্বোচ্চ ১১ টি শাখায় মনোনীত হয় এটি , যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ সুরারোপ, শ্রেষ্ঠ ভিজুয়াল ইফেক্টস ও শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফির পুরস্কার জিতে নেয় ‘পাইয়ের দল’।

মধ্য সাগরের অসামান্য রূপ কিংবা মানুষখেকো দ্বীপের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে হলেও দেখতে পারেন ১২৭ মিনিট ব্যাপ্তির এই চলচ্চিত্রটি। ১২০ মিলিয়ন বাজেটের বিপরীতে সারা বিশ্বে ৬১০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে ক্লদিও মিরান্ডার মায়াচ্ছ্বন্ন সিনেমাটোগ্রাফির এই ছবি।

কানাডিয়ান সাহিত্যিক ইয়ান মার্টেল ‘লাইফ অফ পাই’ এর কল্যাণে ম্যান বুকার প্রাইজ অর্জন করেছিলেন ২০০২ সালে। তারই চিত্ররূপ ২০১৫ সালের অন্যতম দর্শক হৃদয়গ্রাহী এই ছবি। পাই প্যাটেলের কিশোর ও যুবক দুই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যথাক্রমে সুরাজ শর্মা ও ইরফান খান। মজার কথা হলো, এর আগে সুরাজের অভিনয় সংক্রান্ত কোন অভিজ্ঞতাই ছিল না ঝুলিতে।

জীবনের প্রতি তীব্র আকুতি থেকেই মানুষ চালিয়ে যায় সংগ্রাম। ২৫ লাখ বছর পূর্বে যেই জাতির পথচলা শুরু হয়েছিল সময়ের পরিক্রমায় তা এখন অনেকটাই পরিণত। তবুও প্রকৃতির অজানা শত্রুর  কাছে প্রায়শই পরাভূত হতে হয় সৃষ্টির সেরা জীবকে। সাময়িক প্রতিকূলতা জীবনকে মন্থর করে দিলেও ফের জয় হয় মানবতার, পুনর্জীবিত হয় সভ্যতা।

লেখক- সারাহ তামান্না 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *