জামাল খাসোগি হত্যার প্রহসনের বিচার1 min read
Reading Time: 2 minutes২০১৯- এর ডিসেম্বরের শেষ ভাগে সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটর পাঁচ জন ব্যক্তিকে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করেন। এরই সাথে আরও তিন জনকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ২৪ বছর কারাদন্ড দেয়া হয় বলে জানান তিনি। তবে দণ্ডিত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকে সৌদি কর্তৃপক্ষ। খাসোগি হত্যার এই মামলায় মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর বিচারকাজে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এবং খাসোগি যেদেশে হত্যার শিকার হন সেই তুরস্কের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও দুইজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিকে বিচারের আওতাধীন না রাখায় অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে এই বিচারকান্ড এবং অনেকেই একে উপহাসের বিচার বলে দাবী করেছেন। সালমানের অতি ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। একজন সৌদি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরি ও রাজকীয় আদালতের সাবেক ঊর্ধ্বতন গণমাধ্যম কর্মী সৌদ আল-কাহতানি। কিন্তু আদালত পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে তাদের এই হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। এটি উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র খাসোগি হত্যায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে এই কাহতানি সহ ১৭ সৌদি নাগরিকের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
আরও পড়ুন- জামাল খাসোগি– কি ঘটেছিল তাঁর ভাগ্যে?
সৌদির আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত নয়। কিন্তু এর আগে খাসোগির হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ আছে বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ। বিচারবহির্ভূত ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যাল্লামার্ড খাসোগি হত্যা নিয়ে তার ১০০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছিলেন যে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার অভিযোগে তদন্ত করা উচিত। সৌদি আরবের আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
এমন রায় প্রকাশের অ্যাগনেস ক্যাল্লামার্ড তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কিন্তু হত্যার পরিকল্পনাকারীরা (মাস্টারমাইন্ড) শুধু রেহাই-ই পাননি, তাঁদের স্পর্শ পর্যন্ত করা হয়নি।”
আরও পড়ুন- খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত: জাতিসংঘ
পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড!
তুর্কি পুলিশের বিভিন্ন সূত্র অনুসারে জানা যায়, ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসের মধ্যে ১৫ জনের একটি দল এই গুপ্তহত্যাটি চালায় এবং খাসোগির শরীরকে টুকরো টুকরো করে অনেকগুলো ভাগ করে দূতাবাস থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় যাতে কোন ধরনের প্রমাণ পাওয়া না যায়।
সৌদি আরব প্রথমে জামাল খাসোগি হত্যার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা বারবার অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপ এবং তুরস্কের কারণে এক সময় স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদেল আল জুবেইর জানান, ক্রাউন প্রিন্স সালমানের অজ্ঞাতে এক বিদ্রোহী অপারেশনে মারা গেছেন খাসোগি।
আরও পড়ুন- সৌদি যুবরাজের ক্ষমতা অপব্যবহারের নিদর্শন
২০১৮ সালের অক্টোবরে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আল-আসিরি এবং আল-কাহতানির সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অভিযোগ আসে। পরবর্তীতে সরকার থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আল কাহতানির বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলেও অপর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয় এবং আল-আসিরিকেও একই কারণে এই হত্যাকাণ্ড থেকে নিষ্পত্তি দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে এই রাঘব বোয়ালদের সাথে সৌদি যুবরাজের খুবই দহরম মহরম সম্পর্ক। আর তাই হয়ত এই প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ছাড়া পায় তারা এবং সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ব্যাপারেও কেউ উদ্যোগ নেয়ার সাহস করেনি।
এটা হয়ত বলাই বাহুল্য যে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সৌদি রাজ পরিবারের যে হাত রয়েছে সেটা পুরোই ওপেন সিক্রেট একটি বিষয়!
উল্লেখ্য যে বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপের কারণে ২০১৭ সালের দিকে দেশ থেকে বের হয়ে যেতে রীতিমত বাধ্য হয়েছিলেন জামাল খাসোগি। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্রে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মতামত দিয়ে লেখালেখি করতে থাকেন। এমনকি তিনি ইয়েমেন হামলার বিরুদ্ধেও নিয়েছিলেন কঠোর অবস্থান। এসবই তাকে সৌদি যুবরাজের চক্ষুশূলে পরিণত করেছিল।