বিশ্ব

সৌদি যুবরাজের ক্ষমতা অপব্যবহারের নিদর্শন  1 min read

জুন ২৮, ২০১৯ 3 min read

author:

সৌদি যুবরাজের ক্ষমতা অপব্যবহারের নিদর্শন  1 min read

Reading Time: 3 minutes

রাজনীতি হতে পারে নীতির, ক্ষমতার কিংবা আদর্শের। কিন্তু এসবের মধ্যে ক্ষমতার রাজনীতি যে কতটা পৈশাচিক, কতটা নিষ্ঠুর তা ইতিহাসের পাতায় একটু চোখ বুলালেই দেখা যায়। এখানে কোন আইন নেই, কোন শৃঙ্খলা নেই, নেই কোন জবাবদিহিতা। এ রাজনীতিতে ভাই ভাইকে হত্যা করে, পিতা পুত্রকে ত্যাগ করে, আবার কখনও বা নিজের সন্তান বাবার বুকে বন্দুক ঠেকায়। ক্ষমতার রাজনীতিতে ‘গনতন্ত্র’ বলে কোন শব্দ নেই। এখানে ক্ষমতা আসে উত্তরাধিকারসুত্রে কিংবা অন্দরমহলের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। ক্ষমতা দখলের এমনই এক নিয়ম বহুকাল থেকে চলছে সৌদি আরবে।

সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে কে না চেনে। পশ্চিমা দেশে যিনি এমবিএস নামে পরিচিত। তাঁর পূর্ববর্তী বাদশাহ ছিলেন ৫৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন নায়েফ। তাঁকে উত্তরাধিকারসূত্রে অপসারণ করিয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সী সালমান ক্ষমতায় বসে গোটা সৌদি আরবে একচ্ছত্র প্রভাব খাটানো শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাঁর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট। তাঁর মা ফাহদা বিনতে ফালাহ বিন সুলতান হলেন প্রিন্স সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের তৃতীয় স্ত্রী। রিয়াদের কিং ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০১৫ সালে উপ-যুবরাজের পদ পাওয়ার পর থেকেই তিনি ক্ষমতার খেলা দেখাতে শুরু করেন। ঐ বছরই তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

ক্ষমতায় এসেই তাঁর প্রথম পদক্ষেপ ছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশ ইরানের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো। এর জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পান। মার্কিন মদদে তিনি ইয়েমেনেও হামলা চালান। মোহাম্মদ বিন সালমান নিজের দেশের কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্কের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করেন। সৌদি রাজপরিবারেও আস্তে আস্তে তাঁর কর্তৃত্ব বাড়াতে থাকেন। ক্ষমতা গ্রাস করার পরপরই সালমান সৌদি রাজ পরিবারের শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেন। কমপক্ষে ১১ জন সৌদি প্রিন্সকে গ্রেফতার করে বিশেষ কারাগারে পাঠানো হয়। একই সাথে প্রায় ৪০ জন সৌদি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মরত বা সাবেক কর্মকর্তাকে আটক করেন তিনি। দেশটির শীর্ষ ধনী প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালকেও আটক হতে হয়। সালমান তার এসব কার্যক্রমকে দূর্নীতি বিরোধী অভিযান বলে আখ্যা দেন।

একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী সালমানের জন্য তাঁর পরিবারের যেকোন সদস্যকে নির্বাসিত করা অসম্ভব কিছু নয়। টেলিগ্রামের তথ্যমতে, সৌদি যুবরাজ নাকি তাঁর মাকেও আটকে রেখেছেন। যদিও যুবরাজ তা অস্বীকার করে বলেন, তিনি তাঁর ৮২ বছর বয়সী মাকে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু ওয়াশিংটন দূতাবাসে এমন কোন তথ্য মেলে নি। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রিন্স সালমানের মা বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদকে প্রভাবিত করতে পারেন এবং যুবরাজের পরিকল্পনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন মনে করে সালমান তাঁর মাকে লুকিয়ে রেখেছেন। আরও খবর পাওয়া গেছে বিন সালমান প্রাক্তন যুবরাজ বিন নায়েফকেও বন্দি করে রেখেছেন। যথারীতি এ খবরও সালমান অস্বীকার করেছেন। তবে নিউইয়র্ক টাইমস এর তথ্যমতে, বিন নায়েফকে জেদ্দার রাজপ্রাসাদে আটকে রাখা হয়েছে এবং সেখান থেকে তাঁকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি ক্ষমতায় আসার পর আইন শৃঙ্খলায় বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসেন। পুলিশকে তাদের ইচ্ছামত গ্রেফতার করার অধিকার প্রদান করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তিনি নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান এবং তাদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেন। বাইরে থেকে মনে হয়, বিন সালমান সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৌদি সমাজকে আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সৌদি সমাজ সাধারণত দুই ধরনের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এক. সৌদি রাজ পরিবার—দ্য হাউজ অব সৌদ; আর দুই. রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ যাদের পরিচালিত করেন অনেক আলেম ব্যক্তিবর্গ। হুজুরগণ সৌদ পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় দীক্ষা দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে রাজপরিবার তাঁদেরকে নিশ্চিন্তে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ভরসা প্রদান করে। সৌদি প্রিন্স নানাবিধ ইস্যুতে পশ্চিমের দেশ আমেরিকার সাথে তাল মিলিয়ে চলেন। তাই বর্তমানে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। আগে যে আলেম মুসুল্লিগণকে সৌদ পরিবার সম্মান প্রদর্শন করত, তাঁরা আজ গ্রেফতার হয়েছেন। কারণ বর্তমান প্রিন্স অগ্রগতির নামে যে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন আলেমগণ সেসবের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে দামী বাড়িটি কিনেন। বাড়িটির দাম ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সৌদি প্রিন্সের বিলাসিতার এমন হাজারো নজির রয়েছে। তিনি প্রায় অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ‘সালভাটর মান্ডি’ নামে একটি চিত্রকর্ম কিনেন।

সর্বশেষ সাংবাদিক জামাল কাসোগি হত্যা ঘটনায় সালমানের যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিচারবহির্ভূত ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস কায়ামার্ড খাসোগি হত্যা নিয়ে তার এক প্রতিবেদনে বলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার অভিযোগে তদন্ত করা উচিত।

লেখক- নিশাত সুলতানা 

আরও পড়ুন- খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ সালমান জড়িত: জাতিসংঘ

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *