মনপুরার স্বপ্নজালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম1 min read
Reading Time: 7 minutesশৈশবের কথা। আশি পাড়ি দেয়া নানীর ঘরের দেয়ালে টানানো ছিল ফ্রেমে বাধা সেলাইয়ের কাজ। নীল আর সবুজ সুতোর বুননে সাদা কাপড়ে নিটোল ভাষায় লেখা –
‘যে ভালোবাসে সে ব্যথা বোঝে।‘
বাঙালির আবহমান ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বরাবরই এমন ধারাতেই হয়ে এসেছে– নকশিকাঁথা, আলপনা কিংবা পল্লী কবির দোয়াতের ধারায়। সময়ের সাথে প্রকাশের মাধ্যম ভিন্ন হলেও বিয়োগের ব্যথায় পরিবর্তন কিন্তু আসেনি। তাই সেলুলয়েডের ফিতায় যখন সোনাই–পরীর আখ্যানের সাথে বাঙালির পরিচয় হলো তখন স্বভাবতই নিজেদের চিরন্তন প্রেম প্রকাশের ধারার সাথে মিল পেলো দর্শক।
২০০৯ সালে গোটা দেশের সর্বস্তরের দর্শককে হলে টেনে আনলেন একজন, গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ‘মনপুরা’র মধ্য দিয়ে বাঙালির সেই আস্বাদিত প্রেমের সুর যেন আবার নবোদ্যমে জেগে উঠলো।
লম্বা পথের পথিক
‘বাংলাদেশে আসলে একটা সিনেমা বানানোই অনেক সাহসের ব্যাপার।‘ নিজের সাহসের গল্প এভাবেই ঠাট্টার সুরে বলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। কিন্তু এই সাহসের শুরুটা কিন্তু নব্বই দশকের আগে থেকেই। মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার পর বন্ধুরা মিলে ‘সুবচন কাব্যদল’ তৈরি করেন জন্মস্থল ফেনীতেই। কলেজ পর্যন্ত ফেনীতেই ছিল আবাস। এর মধ্যে কবিতা পড়ার দল থেকে নাট্যদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘সুবচন’। এস এম সোলায়মানের ‘ইঙ্গিত’ নাটকে প্রথম অভিনয়ের সাথে পরিচয় ঘটে সেলিমের। নাটকের খাতিরে তো বটেই মনের তাগিদেও লেখালেখিতে হাত চলেছিল সমানতালে। কলেজে থাকাকালীন প্রচুর কবিতা–ছড়াও লিখতেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৭–৮৮ ব্যাচে মার্কেটিংয়ে ভর্তি হন। তখনই আসলে বড় আঙিনায় নাটকের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ মেলে। ১৯৯০ এর দিকে ‘ঠ্যারো‘ নামে প্রথম পথনাটক লেখেন বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটারের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনার নাট্যরূপের পর থেকেই পুরোদস্তুর নাট্যকার হিসেবে যাত্রা শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চেই একে একে নাট্যরূপ দেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই, নির্দেশনা দেন আহসান হাবিব টিটোর ক্বাহার এবং রবীন্দ্রনাথের রথের রশি’র। এর মাঝে জনপ্রিয়তা পায় স্বৈরাচারবিরোধী পথনাটক ‘কাকলাম’।
এদিকে নাট্যকার মাসুম রেজা ও সালাউদ্দিন লাভলু গিয়াসউদ্দিনকে নিয়ে কষছিলেন অন্য ছক। ১৯৯৩ সালে সেলিম ঢাকায় আসার পরপরই তিনজন মিলে শুরু করেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘স্ট্রাইক প্লাস’। এদিকে বিটিভির জন্যও লেখেন প্রথম নাটক। ‘দক্ষিণের ঘর’ সেসময়ে দারুণ তোলপাড় তুলেছিল। তবে নিয়মিত কাজ করছিলেন মঞ্চে, ‘দেশ’ নাটকের সাথে। পাশাপাশি বেতারেও সেলিম আল দীনের সাথে ‘সবুজ ছাতার ছায়া’ অনুষ্ঠানের জন্য লিখতে থাকেন তিনি। সেলিম আল দীনের সাথে কাজ করাটাই তাকে অনেকখানি পরিণত করেছে বলে মনে করেন তিনি। আল দীনের শব্দচয়ন, সংলাপ রচনা, নিজস্ব ভঙ্গিমা প্রভাবিত করেছে বলে স্বীকারও করেন। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ দেখবার পর নিজস্ব নাট্যভাষার প্রতি আরও মনযোগী হন তিনি।
জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল একুশে টিভিতেই তাঁর লেখা অধিকাংশ নাটক প্রচারিত হতো । ‘পৌনঃপুনিক’ নাটকের কাহিনীকার ছিলেন তিনি, এটি পরিচালনা করেন কাওসার চৌধুরী। এর কল্যাণেই তিনি রাতারাতি তারকা নাট্যকারে পরিণত হন। পরিচালক হিসেবে প্রথম নির্মাণ করেন দেশের প্রথম কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে নাটক ‘বিপ্রতীপ’।
২০০৩ সালে নতুন সেলিমের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ‘আধিয়ার’ চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনা করেন তিনি। সাইদুল আনাম টুটুল পরিচালিত এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
মন পোড়ানো ‘মনপুরা’
সাদা কালো জমানায় যেমন ‘জীবন থেকে নেয়া’র মতো তীব্র রাজনৈতিক ছবি তৈরি হতো তেমনি সরল প্রেমের ‘সুজন সখী’ও পেতো অকুণ্ঠ প্রশংসা। নব্বইয়ের শেষভাগেই পতন হতে থাকে বাংলা চলচ্চিত্রের। চিরায়ত বাংলার প্রেম তো মরীচিকা, সুস্থ গল্পেরই দেখা মিলতো না। এর মাঝে ভিন্ন পালের হাওয়া মেলেও কয়েকবার। কিন্তু সেই ময়মনসিংহ গীতিকার বাংলা, রুপাইয়ের শ্যামলিমা বা বেহুলা–লখিন্দরের গল্প একেবারেই যেন লাপাত্তা। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই যেন আগমন সেলিমের।
‘মনপুরা’ নির্মাণের কাজে হাতে দেন ২০০৭ সালে। কিন্তু এই গল্পের পত্তন হয়েছিল তারও বছর দশেক আগে। প্রথমে নাটক বানাবার পরিকল্পনা করেন সেলিম। স্ক্রিপ্ট সাজিয়ে আফসানা মিমিকে পরী চরিত্রের জন্য প্রস্তাবও দেন। মিমিই তখন এটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দানের জন্য অনুপ্রেরণা দেন। এরপর ২০০৩ সালে ভিন্ন অভিনেতাদের নিয়ে ‘মনপুরা’র কথা এগুলেও সেসময় তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
উপায়ন্তর না দেখে শেষপর্যন্ত স্বপ্নের ‘মনপুরা’ নির্মাণের জন্য নিজের সারাজীবনের সঞ্চয়, পারিবারিক অর্থ, হুমায়ূন ফরিদী, আফজাল হোসেন, মাসুম রেজার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কাজ শুরু করেন সেলিম। আর্থিক সংকটে পাশে এসে দাঁড়ান মাছরাঙা টেলিভিশনের কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু।
‘মনপুরা’ ছবির ভিত গড়ে উঠে নদী পাড়ে। তীরের মানুষ, কাদামাটির জীবিকার মাঝেও গানের আসর, প্রেমের স্ফুরণ, পবিত্র অভিসার আর নিখাদ প্রেমের চিত্রায়ন–এসবই ছিল ‘মনপুরা’র উপাদান। গ্রামের প্রভাবশালী গাজীর মানসিক অসুস্থ ছেলে আচমকা খুন করে বসে। সেই খুনের দায় মাথায় চেপে দ্বীপান্তরিত হয় একান্ত বাধ্যগত যুবক সোনাই। একাকী নির্বাসিত জীবনে সোনাইয়ের সঙ্গী হয় মিঠে রোদ্দুরের মতো মেয়ে পরী। হৃদয়ের লেনদেন যখন শেষ তখনই নেমে আসে বিচ্ছেদের ঘনঘটা। অসহায় দরিদ্র জেলে বাবার মুখ চেয়ে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে পরী মেনে নেয় সেই ছাড়াছাড়ি। কিন্তু প্রেমহীন জীবন থেকে বিদায় নেয় সে। তাই জেল থেকে মুক্তির পরেও অদৃশ্য দুঃখের বেড়াজালে আটকে যায় সোনাই।
‘নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে
ধরো বন্ধু, আমার কেহ নাই।
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই।‘
গানের সুর আর কথাই বলে দেয় পরী–সোনাইয়ের প্রেমের সঞ্জীবনী শক্তি ছিল বিপুল। তাই সেই সাদামাটা প্রেমই কাঁদিয়েছে কোটি দর্শককে। প্রথম ছবিতে মাত করলেও বিনয়ীই ছিলেন সেলিম। তাড়াহুড়ো তাঁর ধাতে নেই।
ছবি মুক্তির আগে থেকেই ‘মনপুরা’র গান লোকের মুখে জনপ্রিয়তা পায়। ‘ যাও পাখি বলো তারে’, ‘নিঠুয়া পাথারে’, ‘সোনাই হায় হায় রে’, ‘ আগে যদি জানতাম’, ‘সোনার ময়না পাখি’ সব গানই অকুণ্ঠ ভালোবাসা পায় সর্ব মহলে। চন্দনা মজুমদার, কৃষ্ণকলি আর ফজলুর রহমান বাবুর কণ্ঠের মোহময়তার সাথে পরিচয় ঘটে শ্রোতাদের।
প্রথমে ঢাকা ও রাজশাহীর সীমিত সংখ্যক হলে মুক্তি দেয়া হয় ছবিটি। তবে শীঘ্রই চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, ময়মনসিংহ,সিরাজগঞ্জ সহ সারা দেশের হলগুলোতেও জায়গা করে নেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকার ৪৫ বছরের ভেতর সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির নতুন রেকর্ড গড়ে ‘মনপুরা’। স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা সিনেমা হলে টানা ১০০ দিন চলে ছবিটি। এছাড়াও দেশের বাইরে সিডনি, নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, মন্ট্রিল, ব্রাসেলসহ বেশ কয়টি শহরে মুক্তি পায় ‘মনপুরা’।
সুপারহিটের তকমা নিয়ে তারকা বনে যান ছবির মূল পাত্র পাত্রী চঞ্চল চৌধুরী ও ফারহানা মিলি। এছাড়াও ফজলুর রহমান বাবু, দিলারা জামান, মামুনুর রশিদ, মনির খান শিমুল, শিরিন আলম প্রমুখের অভিনয় ছিল প্রাণবন্ত। ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় মনপুরা। এ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা হিসেবে মামুনুর রশিদ, শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পীর জন্য চন্দনা মজুমদার ও কৃষ্ণকলি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
ছবিতে জলের আধিক্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সোজা উত্তর, ‘পানিইতো সব। পলি আর বালি মিলে এই জনপদ তৈরি হয়েছে। জনপদের সমস্ত সভ্যতা, নগর, গঞ্জ, গ্রাম সবই কিন্তু নদীর পাড় কেন্দ্রিক, জল কেন্দ্রিক। আর এই জনপদ এবং এই জনপদের মানুষের গল্প নিয়ে যখন আমি সিনেমা করতে যাবো, তখনতো এগুলো আসবেই। অস্বীকার করার কিছু নাই। আমার গল্পের বড় অংশ জুড়ে তাই জলের একটা প্রভাব থাকে।‘
স্বপ্নজালের আবেশ
‘মনপুরা’র নয় বছর বাদে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’ মুক্তি পায়। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এত সফল চলচ্চিত্রের পর কেন তিনি বসেছিলেন? চাইলেই তো নিয়মিত ছবি বানাতে পারতেন। জবাবে মুচকি হেসে জবাব দেন সেলিম, ‘প্রযোজক পাওয়া যায়নি।‘ এর মাঝে ‘কাজল রেখা’ নিয়ে কিছুদূর এগিয়েছিলেন। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল সময়ে বিঘ্নিত হয় সেই কাজ। পরে প্রযোজকও পিছিয়ে যান। ময়মনসিংহ গীতিকার ‘কাজল রেখা’ অবলম্বনে এর স্ক্রিপ্ট লিখতে আড়াই বছর লেগেছিল সেলিমের।
‘স্বপ্নজালে’ও আছে কাকতালীয় এক যোগ। সোনাই–পরী ছিল ‘মনপুরা’র পাত্রপাত্রীর নাম। এদিকে ‘স্বপ্নজালে’র মূল অভিনেতা অভিনেত্রীর আসল নামও সোনাই (ইয়াশ রোহানের ডাকনাম) ও পরী।
বিয়োগান্তক প্রেমের গল্প হলেও শুধু তরুণ–তরুণীর প্রেম নয়, নব্বই দশকের সামাজিক সংঘাতে নিয়তির হাতে সঁপে দেয়া সময়েরও গল্প ‘স্বপ্নজাল’। সরল প্রেমের সমান্তরালে চলতে থাকে সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগুরুর চাপ, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, অন্যায় আর মানবিক টানাপোড়েন।
চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী দুই পরিবারের গল্প ‘স্বপ্নজাল’। শৈশবের প্রেমিক–প্রেমিকা অপু–শুভ্রার মিষ্টি প্রেম একসময় সমাজ, জটিলতার মুখোমুখি হয়; সাময়িক বিচ্ছেদ– তীব্র বেদনার পরেও বেঁচে থাকে প্রবল প্রেম। পিতৃহত্যার বিচারের পাশপাশি খড়কুটো আঁকড়ে সংসার টিকিয়ে রাখে শুভ্রা, স্বপ্নের জাল বোনে অপুর সাথে ঘর বাঁধার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও ব্যর্থতা মেনেই অন্য ঘরে বিয়ে করে শুভ্রা। আর অপু? পদ্মার জলে বিলিয়ে দেয় তরুণ জীবন।
২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ছবি জুড়ে গল্পের সাথে শূন্যতা আর সারল্যের মাখামাখি ছিল দেখবার মতো। বিশেষত বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা পরিমনির কাস্টিং চমকে দেয় অনেককেই। নিজেকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন পরী নিজেও। প্রথম দিকে শুটিং ছেড়ে আসার কথাও ভেবেছিলেন। সেলিমকে জানাবার পর পরীকে একদিন সময় দেন তিনি। পরদিন থেকে পরী আবিষ্কার করলেন, শুটিং দলের স্পটবয় থেকে পরিচালক সবাই তাকে শুভ্রা নামেই ডাকছে। ব্যস! এভাবেই লাস্যময়ী পরীমনি হয়ে উঠলেন স্নিগ্ধ শুভ্রা।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ‘স্বপ্নজাল’-এর শুটিং শুরু হয়। কাহিনীর প্রয়োজনে কলকাতায়ও কিছু অংশের দৃশ্যায়ন হয়েছে। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন পরীমনি ও নরেশ ভুঁইয়া– শিল্পী সরকার অপুর ছেলে ইয়াশ রোহান। বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স ও বেঙ্গল বার্তার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শাহানা সুমী, শহিদুল আলম সাচ্চু, শিল্পী সরকার অপু, ইরফান সেলিম, ফারহানা মিঠু, ইরেশ যাকের, মুনিয়া, শাহেদ আলী, আহসানুল হক মিনুসহ প্রমুখ।
‘মনপুরা’ ও ‘স্বপ্নজাল’ দুটি ছবির প্রধান চরিত্রই যেন ‘জল’। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের সভ্যতা সংস্কৃতিই কিন্তু জলকেন্দ্রিক। ‘স্বপ্নজালে’র বেলায় আমি চাইছিলাম কলকাতার শহুরেপনার পাশাপাশি জলবেষ্টিত একটি গ্রামীণ পরিবেশও। আমি চাঁদপুর দেখিয়েছি, এটা সিরাজগঞ্জও হতে পারতো।‘ প্রথম ছবির মতো ব্যবসাসফল না হলেও বিপুল করতালি কুড়িয়েছে ছবিটি। দর্শকদের অনুভূতিকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছেন পরিচালক, ‘সবাই সবার মতো করে দেখছে। সবার মতো করে ভাবছে। সবাই সবার মতো বিচার করছে। এতে আমার কিছু বলার নেই। বরং ছবিটি যে সবার কাছে প্রশংসা পাচ্ছে এতেই আমার ভালো লাগা।‘
পাপ পুণ্যের কাজ কতদূর?
অপি করিম একবার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার মতো পরিচালকদের তো উচিত আরও নিয়মিত হওয়া। হচ্ছেন না কেন?’ উত্তরে সেলিম অর্থ সংকটের কথা এড়িয়ে প্রতি বছর ছবি মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ‘স্বপ্নজাল’এর দুবছর বাদেই ‘পাপ পুণ্য’ নিয়ে প্রস্তুত এই গুণী নির্মাতা। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় এই ছবিতে অভিনয় করেছেন আফসানা মিমি, সিয়াম আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী, ফারজানা চুমকি ও সুমি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তির কথা চলছে এটির। নির্মাণের কাজ শেষ হলেও সম্পাদনার অল্প কিছু আঁচড় বাকি মাত্র। সেলিমের মতে, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের ৬৯ বছরের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।‘ আফসানা মিমিও আশাবাদী এই ব্যাপারে, ‘ অনেকদিন বাদে ছবিতে কাজ করছি। ভালো স্ক্রিপ্টের সাথে আমাদের সদিচ্ছার স্পষ্ট ছাপ দেখতে পারবেন দর্শকেরা।‘
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী গিয়াসউদ্দিন সেলিম। তবে এর জন্য পোক্ত একটা প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউট থাকাটাকেও জরুরি মানেন। আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশি সিনেমার হাল আগের চেয়ে অনেক উন্নত হবে বলে মনে করেন সময়ের এই তুখোড় নির্মাণশিল্পী।