কম্পিউটার ভাইরাস কি? যেভাবে কম্পিউটার ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবেন 1 min read
Reading Time: 3 minutesএকটি সময় ভাইরাস শব্দটি শুধুমাত্র জীববিজ্ঞান কিংবা মানব দেহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শব্দ হিসেবে আমরা ব্যবহার করতাম। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, যেমন: কম্পিউটার, স্মার্টফোন, পেনড্রাইভ ইত্যাদির সঙ্গে ভাইরাস শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। কম্পিউটার ভাইরাস শব্দটি প্রায় সবার কাছেই সুপরিচিত। আমরা হয়তো অনেকেই জানি, কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু এটি আসলে কী? কীভাবে ক্ষতি করে কিংবা ক্ষতি থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব; এইসব বিষয়ে আমরা অনেকেই কোন জ্ঞান রাখি না। আজকে চলুন কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নিই।
কম্পিউটার ভাইরাস কী?
ভাইরাস কয়েকটি শব্দের সংক্ষিপ্ত একটি রূপ। ভাইরাস(VIRUS) শব্দটির পূর্ণরূপ হলো– Vital Information Resources Under Seize। এই পূর্ণরূপের মধ্যেই ভাইরাস শব্দটির পরিচয় অনেকটাই লুকিয়ে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন কিছুকে বলা হবে ভাইরাস। আরও বিস্তারিতভাবে বললে বলা যেতে পারে যা কম্পিউটারের মধ্যে প্রবেশ করে কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও তথ্য মুছে ফেলতে পারে, ফাইল নষ্ট করতে পারে, ডিভাইসটিকে স্লো করে দিতে পারে, ডিভাইসের উপর থেকে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে পারে এবং মানবদেহের ভাইরাসের মতোই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সহজে গমন করতে পারে; এমন ধরনের প্রোগ্রামগুলোই কম্পিউটার ভাইরাস।
আবিষ্কারের ইতিহাস
সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুযায়ী, প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসের জন্ম ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর, ফ্রেড কোহেন যিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র ছিলেন, তিনিই প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক এক সেমিনারে প্রদর্শন করেন। এই সেমিনারে তিনি তার তৈরিকৃত প্রোগ্রাম একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটারে প্রবেশ করিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তার তৈরিকৃত প্রোগ্রামটি নিজে থেকেই নিজের অনুলিপি সৃষ্টি করতে পারতো ফলে এটিকে তার সুপারভাইজার লেন অ্যাডলেম্যান ভাইরাসের সঙ্গে তুলনা করেন এবং এটির নামকরণ করেন ভাইরাস হিসেবে। সেই থেকে কোহেনের উদ্ভাবিত প্রোগ্রামটির নাম কম্পিউটার ভাইরাস হয়ে যায়।
তবে অনেকেই মনে করেন, কম্পিউটার ভাইরাস আরো আগেই সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের মতে, রিচ স্ক্রেনটা নামক ১৫ বছরের যুবক তার বন্ধুদের সঙ্গে মজা করার জন্য ১৯৮২ সালে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে অ্যাপেল–টু কম্পিউটারকে সংক্রমিত করেছিল।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, ১৯৭০ সালে প্রথম ভাইরাস তৈরি করেছিলেন রবার্ট থমাস, যে ভাইরাসের নাম ছিল ক্রিপার; এটিও নিজে থেকে নিজেই অনুলিপি তৈরি করতে পারতো, তবে এটি পরীক্ষামূলক ছিল বলে মনে করা হয়।
ভাইরাসের ধরন
কম্পিউটার ভাইরাসের ধরণ অনেকটাই মানবদেহের ভাইরাসের মতই। মানুষের শরীরের ভাইরাস যেমন এক দেহ থেকে অন্য দেহে সংক্রমিত হয়, তেমনি কম্পিউটার ভাইরাসও এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংক্রমিত হয়। মানব শরীরের ভাইরাস আকারে ছোট ও ক্ষতিকর, তেমনি কম্পিউটার ভাইরাসও আকারে ছোট ও কম্পিউটারের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সময়ের পরিক্রমায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কার হচ্ছে। প্রকৃতি ও ক্ষতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস রয়েছে, যেমন: ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস, ম্যাক্রো ভাইরাস, রেসিডেন্ট ভাইরাস, ফ্যাট ভাইরাস, বুট ভাইরাস ইত্যাদি।
ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে সকল ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটারে একই লক্ষণ প্রকাশ পাবে না। তাহলে কীভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইসটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না?
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কম বেশি সব কম্পিউটারে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়; আপনি এসব লক্ষণ দেখে ধারণা করতে পারবেন আপনার ডিভাইসটি আসলেই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা। যেমন: সয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্লিকেশন চালু বা বন্ধ হওয়া, সিস্টেম এরর প্রদর্শন, ডিভাইসটি হঠাৎ হ্যাং হয়ে যাওয়া, অহেতুক কোনো নির্দেশনা স্ক্রিনে প্রদর্শন, প্রোগ্রাম লোড নিতে অধিক সময় নেওয়া, ইন্টারনেট গতি স্লো হয়ে যাওয়া, ডিভাইসের ফাইল এমনিতেই ডিলিট হয়ে যাওয়া, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়া, অপ্রয়োজনীয়ভাবে হঠাৎ করেই কম্পিউটার বুট করতে শুরু করা, অপ্রোজনীয় ও অজ্ঞাত সব ফাইল এমনিতেই ডিভাইসে চলে আসা ইত্যাদি। এসব লক্ষণগুলোর কোনোটি আপনার কম্পিউটারে প্রকাশ পেলে ধরে নেবেন আপনার কম্পিউটারটি বা ডিভাইসটি ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
কীভাবে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস মুক্ত রাখবেন
যদি কোনো কারণে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায় তবে তাৎক্ষণিক ডিভাইসটি ভাইরাস মুক্ত করে ফেলতে হবে। তবে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস মুক্ত রাখতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
১. আপনার কম্পিউটারে একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারেন। চেষ্টা করবেন পেইড প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে। তবে ফ্রিতেও বেশকিছু এন্টিভাইরাস পাওয়া যায়। ডিভাইসে এসব এন্টিভাইরাসের কোনো একটি থাকলে সাধারণত কখনোই ভাইরাস প্রবেশ করার সুযোগ পাবে না।
২. ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় এন্টিভাইরাস কাজ নাও করতে পারে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় যেন ভাইরাস ঢুকতে না পারে, সেজন্য ইন্টারনেট সিকিউরিটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
৩. উইন্ডোজ সবসময় আপডেট রাখার চেষ্টা করুন।
৪. অবিশ্বস্ত কোনো ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. কম্পিউটারে পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করুন। কখনোই ভাইরাসযুক্ত পেনড্রাইভ বা মেমোরি কম্পিউটারে প্রবেশ করাবেন না।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে আপনি আপনার কম্পিউটারকে খুব সহজেই ভাইরাস মুক্ত রাখতে পারবেন এবং খুবই নিরাপদে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন।