ইউটিউব থেকে আপনিও আয় করবেন যেভাবে1 min read
Reading Time: 3 minutesসময়ের পরিক্রমায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ইউটিউব হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম ও বেশ জনপ্রিয়। ইউটিউব হলো ভিডিও ভিত্তিক একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। বর্তমানে ইউটিউব শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং মানুষের অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই ইউটিউবকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ইউটিউব থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করতে চান, তবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করবো, যে ৮টি উপায়ে একজন ইউটিউবার সহজেই অর্থ আয় করতে সক্ষম হবে। চলুন তাহলে, ইউটিউব থেকে আয় করার বিভিন্ন পন্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
১. বিজ্ঞাপন প্রদর্শন
বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হচ্ছে ইউটিউব থেকে আয় করার অন্যতম সহজ ও জনপ্রিয় একটি পন্থা। আপনি আপনার ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে অর্থ আয় করতে পারবেন। এজন্য আপনার চ্যানেলটির ইউটিউব মনিটাইজেশন কিংবা গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রুভ করাতে হবে। আপনার চ্যানেলে ইউটিউব মনিটাইজেশন কিংবা গুগল এডসেন্স এপ্রুভ হলে, আপনার ভিডিওতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হবে। আর এতে যত ভিউ ও ক্লিক হবে, তত আপনার উপার্জন হতে থাকবে। নতুন ইউটিউবারদের অর্থ আয়ের জন্য এটি খুবই সহজ ও উত্তম উপায়।
২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্যের লিংক আপনার ভিডিও ডিসক্রিপশনে প্রদান করার মাধ্যমেও আয় করতে পারবেন। আপনার ভিডিও ডেসক্রিপশনে দেওয়া, এসব লিংকে প্রবেশ করে কোনো ভিজিটর এই পণ্য ক্রয় করলে আপনি সেখান থেকে কমিশন পেয়ে যাবেন। ইউটিউবার ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান মালিকদের মধ্যে সমঝোতাপূর্ণ এই ধরনের মার্কেটিংকে বলা হয়ে থাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
৩. স্পনসর্ড ভিডিও
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের উপর ভিডিও তৈরি করে, এই ভিডিওগুলো বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে থাকে। আর এইসব স্পনসর্ড ভিডিওগুলো ইউটিউবারেরা তাদের চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আয় করার সুযোগ পায়। সাধারণত জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো স্পনসর্ড ভিডিও প্রকাশের কাজগুলো পেয়ে থাকে। আপনি যদি ইউটিউবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে থাকেন, তবে খুব সহজেই এই সুযোগগুলো পাবেন। আর এতে আপনি প্রচুর অর্থ আয় করতে সক্ষম হবেন।
৪. সুপার চ্যাট
বর্তমান সময়ে ইউটিউবারেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লাইভ কিংবা ভিডিও স্ট্রিমিং করে থাকে। এই ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সময় অর্থের বিনিময়ে দর্শকেরা নিজের মন্তব্যটি সবার উপরে পিন করে রাখতে পারেন। বিভিন্ন রংয়ের মেসেজ লিখে কমেন্ট বক্সের উপরের দিকে নিজের মন্তব্যটি রাখা যায়। আর যত সময় ধরে দর্শক রাখতে চাইবে, তাকে তত অর্থ প্রদান করতে হবে। এদিকে এসব অর্থ ইউটিউবারের তহবিলে জমা হবে। এভাবে ইউটিউবারেরা সুপার চ্যাট কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমেও প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে।
৫. পণ্যের রিভিউ
আপনার ইউটিউব চ্যানেলের যদি বেশ মানসম্মত পর্যায়ের সাবস্ক্রাইবার থাকে, তবে আপনি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের পণ্যের রিভিউ করার সুযোগ পাবেন। আপনি কোনো একটি বিশেষ পণ্যের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনার মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করে, তা আপনার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করার মাধ্যমে বেশ ভালো মানের অর্থ আয় করতে পারবেন। অনেক কোম্পানিই তাদের পণ্যের রিভিউ করানোর জন্য ইউটিউবারদের খোঁজ করে থাকে। আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মালিকগণ তাদের পণ্য রিভিউয়ের জন্য ইউটিউবারদের বেশ সম্মানজনক অর্থ প্রদান করে থাকে।
৬. দক্ষতা শেয়ারিং
ইউটিউব ভিডিওতে নিজের বিভিন্ন দক্ষতা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেও ইউটিউবাররা আয় করে থাকে। ইউটিউবের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করানো যায়, আবার টিউটোরিয়াল তৈরি করার মাধ্যমেও অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। অনেকেই সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে বরং ঘরে বসে ইউটিউবের মাধ্যমে কোর্স করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে; ফলে এই ক্ষেত্রে ইউটিউবারদের অর্থ আয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, তবে আপনার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে, আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমেই খুব সহজেই ভালো মানের অর্থ আয় করতে পারেন।
৭. ক্রাউডফান্ডিং
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা তাদের স্টার্টআপ শুরু করার ক্ষেত্রে ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। একটি সময় ছিলো, যখন মূলধন সংগ্রহের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক ঋণ দাতা সংস্থার উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করা যায়। আর এই ক্রাউডফান্ডিং ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ইউটিউব। ইউটিউবারেরা ক্রাউডফান্ডিংয়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে। তাই আপনার যদি একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল থাকে, তবে আপনি খুব সহজেই ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
৮. ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা
নিজস্ব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ইউটিউব ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ইউটিউব ভিডিওয়ের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই, আপনার পণ্য সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের জানাতে পারবেন। অনেক ইউটিউবারই টি-শার্ট, শার্ট, ক্যাপ, ঘড়ি, রান্নার সামগ্রী, হুডি, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, নানান রকমের পোশাক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রির কার্যক্রম ইউটিউবের মাধ্যমে করে থাকে। এভাবে আপনিও ইউটিউবকে ব্যবহার করে, আপনার ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ইউটিউবের মাধ্যমে আপনি যত দ্রুত গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, ততটা দ্রুত হয়তো অন্য কোনো মাধ্যমে আপনার পৌঁছানো সম্ভব হয়ে উঠবে না।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রচুর ইউটিউবারেরা এসব উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইউটিউবারদের অর্থ আয়ের বিভিন্ন পন্থা ও উপায় তৈরি হচ্ছে। তাই আপনি যদি ইউটিউবের সঙ্গে লেগে থাকেন, তবে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জনের দুয়ার আপনার জন্য খুলে যাবে।
লেখক- আমিনুল ইসলাম
আরও পড়ুন- ফেসবুক থেকে আপনিও আয় করবেন যেভাবে
Hasib Khan
দারুন একটা আর্টিকেল লিখেছেন ভাই