মারভেলাস মারভেলের শেষ চমক1 min read
Reading Time: 5 minutesপিলপিল করে ছুটছে মানুষ। কে কার আগে যেতে পারে সে নিয়ে বিষম প্রতিযোগিতা। কারো জুতো ছিঁড়ে গেছে, কেউ পড়তে গিয়েও তাল সামলে ভো দৌড়। জান যাক, এন্ডগেমের টিকেট অভিযানে জেতা চাই ই চাই।
এমন দৃশ্যের অবতারণাই হয়েছিলো গত ২৬ এপ্রিল। মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের দশ বছর ধরে গড়ে তোলা প্রতিপত্তিময় সাম্রাজ্যের শেষ কিস্তি ‘Avengers: Endgame’ নিয়ে উন্মাদনার গল্পই তুলে ধরবো এই লেখায়।
উন্মাদনার দশ বছর
মারভেলের কমিকবুক নিয়ে উন্মাদনা গত শতক থেকেই। এর সুপারহিরো ও এন্টি হিরোদের অতিমানবীয় গল্প এবং দুর্দান্ত কমিক রূপের সমাদর বহুদিনের। স্ট্যান লি ও জ্যাক কারবির তুলির আঁচড়ে ১৯৬১ সাল থেকে গড়ে ওঠা ফ্যান্টাস্টিক ফোর, থর, স্পাইডার ম্যান, হাল্ক, এক্স-মেন সব মিলিয়েই শুরু হয় মারভেলের। কমিক বইয়ের পাশাপাশি টিভি সিরিজ, সিনেমাও নির্মিত হতে থাকে এসব চরিত্রকে কেন্দ্র করে।
তবে অ্যাভেঞ্জারস উন্মাদনা সৃষ্টি হয় যখন ২০০৮ সালে ‘আয়রন ম্যান’ পর্দায় আসে। রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের ক্যারিয়ার তখন পড়তির দিকে। মারভেলের এই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রুপায়নে তাকে বেছে নেয়ায় বেশ সমালোচনাও হয়েছিল তখন। কিন্তু সব আলোচনা প্রশংসায় বদলে যায় এর মুক্তির পরপরই। এরপর থেকে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিটি মুভি নিয়েই ক্রমে বাড়তে থাকে আগ্রহ।
আর সেই প্রত্যাশার পারদ ইনফিনিটিতে অর্থাৎ অসীমে তুলে ফেলে ‘অ্যাভেঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার’। তবে এর যবনিকা হতাশ করেনি দর্শকদের। ৩ ঘণ্টা ২ মিনিটের এই ‘অ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম’ এর শেষে দর্শক ছিল মন্ত্রমুগ্ধ, পিনপতন নিস্তব্ধতা ছিল আবেগীয় দৃশ্যে। আর কখনো আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, ব্ল্যাক উইডো, ব্ল্যাক প্যান্থার, হাল্ক, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, স্পাইডার ম্যান, হক আই, ক্যাপ্টেন মারভেল, স্টার লর্ড, স্কারলেট উইচকে দেখা যাবেনা একসাথে, পৃথিবীকে রক্ষা করতে একজোট হয়ে লড়বেনা অ্যাভেঞ্জাররা- এ সত্যিটা মেনে নিতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছে হলস্ক্রিনে এঁটে থাকা দর্শকদের।
তিনভাগের আখ্যান
যারা এখনও মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের জগতে প্রবেশ করেন নি কিন্তু ভাবছেন উন্মাদনায় যোগ দিতে দেখে ফেলবেন এন্ডগেম; তাদের জন্য ছোট্ট একটা সতর্কবার্তা। সিজি আই, অ্যাকশন দেখে মজা পেলেও গল্পের মূল আনন্দ থেকেই বঞ্চিত হবেন আপনি। সিনেমার ছোট ছোট কমিক রিলিফ বেশ দুর্বোধ্যও ঠেকবে তখন। তাই নোট করে দেখে ফেলুন লাইন আপের আগের মুভিগুলো। তিনভাগে ভাগ করা এই মুভিগুলো দেখতে পারেন এই ক্রমেঃ
ফেজ ১
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার (২০১১)
ক্যাপ্টেন মারভেল (২০১৯)
আয়রন ম্যান (২০০৮)
আয়রন ম্যান ২ (২০১০)
দ্য ইনক্রেডিবল হাল্ক(২০০৮)
থর (২০১১)
দ্য অ্যাভেঞ্জারস (২০১২)
ফেজ ২
আয়রন ম্যান ৩ (২০১৩)
থরঃ দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড (২০১৩)
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ দ্য উইন্টার সোলজার (২০১৪)
গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি (২০১৪)
গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ২ (২০১৭)
অ্যাভেঞ্জারসঃএজ অফ আল্ট্রন (২০১৫)
এন্ট-ম্যান (২০১৫)
ফেজ ৩
ডক্টর স্ট্রেঞ্জ (২০১৬)
ক্যাপ্টেন আমেরিকাঃ সিভিল ওয়ার (২০১৬)
ব্ল্যাক প্যান্থার (২০১৮)
স্পাইডার-ম্যানঃ হোমকামিং (২০১৭)
থরঃ র্যাগনারক (২০১৭)
এন্ট-ম্যান এন্ড দ্য ওয়াস্প (২০১৬)
অ্যাভেঞ্জারসঃদ্য ইনফিনিটি ওয়ার (২০১৮)
অ্যাভেঞ্জারসঃএন্ডগেম (২০১৯)
প্রথম ফেজ ছিল মূলত অ্যাভেঞ্জারদের প্রাথমিক পরিচয় পর্ব যার শেষ দেখা যায় ভিনগ্রহীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে লড়াইয়ে। ‘দ্য অ্যাভেঞ্জারস’ এই প্রথম থ্যানোসের চরিত্রের আভাস পাওয়া যায়। এরপরের ফেজ ছিল ইনফিনিটি স্টোন এবং কোয়ান্টাম রিম নিয়ে। আর শেষ ক্রমের ছবিগুলোর মূল লক্ষ্যই ছিল থ্যানোসের বিরুদ্ধে অ্যাভেঞ্জারদের সর্বশেষ প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
চরিত্রায়নে কে কত জনপ্রিয়?
মারভেলের প্রতিটি সুপারহিরোই কমবেশি জনপ্রিয়। তবে সব চাইতে আলোচিত হয়তো রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের ‘আয়রন ম্যান’। এছাড়াও থর চরিত্রে ক্রিস হেমসওর্থ, ক্যাপ্টেন আমেরিকা রূপে ক্রিস ইভানস, স্পাইডার-ম্যান চরিত্রে টম হল্যান্ড, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ রূপে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, ক্যাপ্টেন মারভেল রূপে ব্রি লারসন, নেবুলা রূপে ক্যারেন গিলিয়ান, ব্ল্যাক উইডো হিসেবে স্কারলেট জোহান্সেন, হক আই রূপে জেরেমি রেনার, হাল্ক চরিত্রে মার্ক র্যাফেলো, থ্যানোসের চরিত্রে জোশ ব্রলিন, গামোরা চরিত্রে জো সালদানা এবং লোকি চরিত্রে টম হিডেলস্টোন সহ আরও অনেকে আছেন এই ফ্র্যাঞ্চাইজি মুভিতে। তবে এবারের ছবিতেই শেষ দেখা গেছে মারভেলের স্রষ্টা স্ট্যান লির ক্যামিও।
কারো কাছে অ্যাসগার্ডের থরই সেরা, আবার কারো কাছে ৭০ বছর হিমায়িত অবস্থায় থাকা ক্যাপ্টেন আমেরিকাই সেরা। তবে গোটা বিশ্বজুড়ে যে এই সুপারহিরোদের নিয়ে উন্মাদনাটা শুধু পর্দায়ই নয় নেমে এসেছে নিত্য অনুষঙ্গেও সুপারহিরোদের আদলে খেলনা, পোশাক, আনুষঙ্গিক জিনিস সবকিছুতেই আছে তাদের আধিপত্য।
ইনফিনিটি রেকর্ড
আয়ের দিক দিয়ে ইতোমধ্যেই রেকর্ড ভাঙার খেলায় মেতে উঠেছে এন্ডগেম।ট্রেইলার মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ২৮৯ মিলিয়ন বার দেখা হয় সারা বিশ্বব্যাপী। যেখানে এর আগের রেকর্ডটি ছিল ‘এভেঞ্জারসঃ ইনফিনিটি ওয়ার’ এর ট্রেইলারের দখলে, ২৩০ মিলিয়ন বার দেখা হয় এটি প্রথম দিনে।
তবে আয়ের প্রশ্নে এটি টপকে যাচ্ছে অনেক দিনের রেকর্ড ধরে রাখা ‘এভেটার’ এর। এর মাঝেই ‘টাইটানিকে’র রেকর্ড ভেঙ্গে সামনে চলে গেছে এটি। জেমস ক্যামেরন (‘টাইটানিক’ পরিচালক) তাঁর টুইট বার্তায় তাই লিখেছেন,
‘ আসল টাইটানিক ডোবার কারণ ছিল বরফখন্ড। কিন্তু আমার টাইটানিক ডোবার কারণটা অন্য- অ্যাভেঞ্জারস।‘
এখন পর্যন্ত এন্ডগেম আয় করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সামনে থাকা ‘অ্যাভেটারে’র ২.৭৮ বিলিয়নের রেকর্ড টপকে যে শীঘ্রই শীর্ষে উঠে যাবে তা নিয়ে সংশয়টা কমই।
নির্মাতাদের কথা
ইনফিনিটি ওয়ারে এক তুড়িতেই গোটা বিশ্বের আধখানি হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়েছিল থ্যানোস। প্রত্যাশা আর উৎকণ্ঠা তাই গত বছর থেকেই তাড়া করছিল মারভেল ভক্তদের।
এবছর ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’ এর আগমন সেই প্রত্যাশায় ঘি ঠেলেছে আরও। তবে জ্যাক রুশো ও এন্থনি রুশো –পরিচালক ভাতৃদ্বয় সেই প্রতীক্ষার দারুণ পুরস্কারই দিয়েছেন দর্শকদের। ক্রিস্টোফার মার্কাস ও স্টিফেন ম্যাকফিলির চিত্রনাট্যে ,মারভেল স্টুডিওর প্রযোজনায় এর বিশ্বব্যাপি বিতরণের দায়িত্ব ছিল ‘ওয়াল্ট ডিজনি মোশন পিকচারসে’র।
কী আছে সামনের দিনগুলোতে?
মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের পরবর্তী সিনেমাগুলোয় আসছে বড় ধরণের পরিবর্তন। যেহেতু আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, ব্ল্যাক উইডো, ব্ল্যাক প্যান্থার, হাল্ক, ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, স্পাইডার ম্যান, হক আই, ক্যাপ্টেন মারভেল, স্টার লর্ড, স্কারলেট উইচকে আর একসাথে দেখা যাবেনা, তার মানে পরবর্তী ফেজে নতুন করে শুরু হতে যাচ্ছে আরেক মারভেল সাম্রাজ্যের। এর মধ্যেই টম হল্যান্ডের স্পাইডার ম্যানের দ্বিতীয় কিস্তির ট্রেইলার বের হয়েছে।
যারা এখনো এন্ডগেম দেখেন নি তাদের জন্য বড় রকমের স্পয়লার আছে ‘Spiderman: Far From Home’এর টিজারে। ২ জুলাই মুক্তি পেতে চলা এই ছবিতে কমিকের মিস্টেরিও বা কোয়েন্টিন বেক চরিত্রে জ্যাক গিলেনহালকেও দেখা যাবে।
মারভেলের পরবর্তী কিস্তিতে মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহগুলোয় লড়াইয়ের দিকেই থাকবে মূল লক্ষ্য। এই চতুর্থ ফেজের সম্ভাব্য সিনেমাগুলো হলো- ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ২, ব্ল্যাক প্যান্থার ২, ব্ল্যাক উইডো, দ্য এটারনালস, গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম ৩, শ্যাং চি।
এছাড়াও সামনের দিনে জনপ্রিয় এই মারভেল চরিত্রদের নিয়ে টিভি সিরিজেরও ঘোষণা দিয়েছে ডিজনি। Wandavision, The Falcon and The Winter Soldier, Marvels… What if? –এই সিরিজগুলোই পরবর্তী ছবিগুলোর দিক নির্ধারণ করে দেবে।
তাহলে আর দেরি কেন, আটঘাট বেঁধে প্রস্তুত হয়ে যান মারভেলের পরবর্তী ফেজের জন্য। আর ‘অ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম’ দেখা না হলে টিকেট কেটে দেখে ফেলুনএই রোমাঞ্চকর অভিযান। আর বাড়তি আগ্রহ থাকলে মারভেলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঘেঁটে আসতে পারেন যখন তখন। এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারি , একবার মারভেল ইউনিভার্সে প্রবেশ করলে ক্যাপ্টেন আমেরিকার মতো আপনিও বলবেন, ‘আই ক্যান ডু দিস অল ডে।‘