অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার গণনার ইতিহাস1 min read
Reading Time: 2 minutesলিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলতে সহজভাবে আমরা প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসটিতে একটি দিন বেশি যোগ হওয়াকে বুঝি। কিন্তু কেন লিপ ইয়ারের প্রয়োজন, কেন বাড়তি একটি দিনের হিসেব রাখা দরকারি সে ব্যাপারে কখনো চিন্তা করেছেন কি?
লিপ ইয়ার কেন প্রয়োজন
আদিম মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়েই দিক, ঋতু, সময় নির্ধারণ করতো। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে ফসল ফলানোর প্রয়োজনে ঋতুর হিসেব রাখাটা খুবই দরকারি হয়ে পড়েছিল। ঋতুর হিসেব ঠিক রাখার তাগিদ থেকে রোমানরা প্রথম ক্যালেন্ডার তৈরি করে। কিন্তু সে ক্যালেন্ডার তারা ইচ্ছা এবং প্রয়োজনমতো পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করতো। এতে বেশির ভাগ সময়ই ঋতুর হিসেব করতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো।
রোমান জেনারেল জুলিয়াস সিজার ৪৫ খ্রিষ্টপূর্বে বিখ্যাত গ্রিক জ্যোতির্বিদ সসেজেনেস অফ আলেকজেন্দ্রিয়াকে অনুরোধ করেন একটি নির্ভুল সৌর ভিত্তিক ক্যালেন্ডার তৈরি করতে। সসেজেনস সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী আবর্তনের সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে ৩৬৫ দিনের একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেন এবং তাতে প্রতি চার বছর পরপর একটি দিন বাড়তি যোগ করেন। বাড়তি দিন যোগ করার এই ধারনাটি লিপ ইয়ার নামে পরিচিতি পায়। জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে এই ক্যালেন্ডারের নাম রাখা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।
সূর্যের চারিদিকে একবার পুরোপুরিভাবে ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। কিন্তু জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে বছর হিসেব করা হয় ৩৬৫ দিনে। তাহলে বাড়তি ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের কি হবে?
বাড়তি এই সময়টুকুর হিসেব ঠিক রাখতেই দরকার পড়ে লিপ ইয়ারের। বাড়তি সময়টুকুকে ৬ ঘন্টা ধরে প্রতি চার বছর পরপর তাই ৬*৪= ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন বাড়তি যোগ করা হয়।
লিপ ইয়ারের ধারণা না থাকলে কিন্তু ঋতুর হিসেব ঠিক রাখা সম্ভব হতো না। প্রতি চার বছরে একদিন করে যদি বাদ দেয়া হতো তাহলে দেখা যেত যে, কোন এক সময় জানুয়ারি মাসে গরম পড়েছে, আর জুন-জুলাই মাসে ঠাণ্ডা।
আরও পড়ুন- এই মহাবিশ্ব ঠিক কতটুকু বড়?
লিপ ইয়ার কীভাবে গণনা করা হয়
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছর পরপর যেহেতু অধিবর্ষ আসে তাই চার দিয়ে নিঃশেষে বিভাজিত হয় এমন সব বছরকেই অধিবর্ষ ধরা হতো। কিন্তু এতে একটি ছোট ফাঁক ছিল। মনযোগী পাঠকরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ধরে ফেলেছেন্ ফাঁকটি।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৬ ঘণ্টা যোগ করা হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত অতিরিক্ত সময় তো আসলে ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড!!! আরও ভেঙ্গে বললে ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছর পরপর ২৩.২৫২ ঘন্টা যুক্ত না করে, যুক্ত করা হচ্ছে ২৪ ঘন্টা। অর্থাৎ প্রতি বছর অতিরিক্ত প্রায় ১১ মিনিট যুক্ত হচ্ছে !!! এই ১১ মিনিট কিন্তু ফেলনা কোন বিষয় নয়। কারণ এই অতিরক্ত ১১ মিনিট যোগ করার ফলে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি ৪০০ বছরে ৩টি অতিরিক্ত দিনের সৃষ্টি হয়। এভাবে যদি প্রতি ৪০০ বছরে ৩দিন করে এদিক ওদিক হয় তাহলেও কিন্তু এক সময় ঋতুর হিসেব ভেঙ্গে পড়বে।
এই সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসেন পোপ গ্রেগোরি। তিনি হিসেব করে দেখেন প্রতি ৪০০ বছরে ১০০টি নয়, ৯৭টি লিপ ইয়ার প্রয়োজন। কিন্তু ততদিনে প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেবে বাড়তি ১০ দিন যুক্ত হয়ে গেছে। গ্রেগোরি ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১০ দিন বাদ দিয়ে নতুন একটি ক্যালেন্ডার দাঁড়া করান, যা বর্তমানে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত্। এই নতুন ক্যালেন্ডারে গ্রেগোরি প্রতি ৪০০ বছরের অতিরিক্ত ৩ দিন বাদ দেয়ার চমৎকার একটি সূত্র বের করেন।
গ্রেগোরি ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয় এমন সব শতাব্দী বছরগুলোকে লিপ ইয়ার থেকে বাদ দেন। জটিল সমস্যার কি সহজ সমাধান !!! ব্যাপারটি পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে।
ধরুন ১৬০০, ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ এই শতাব্দী সালগুলো আগের জুলিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রতিটিই লিপ ইয়ার হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার হিসেবে লিপ ইয়ার হিসেবে গণ্য হবে কেবলমাত্র ১৬০০ সালটি। কারণ এটি ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। বাকি ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ বছরগুলো ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজিত নয়।
এই হিসেবে কিন্তু প্রতি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার আসে না। যেমন ২০৯৬ সালের পরের লিপ ইয়ারটি আসে ২১০৪ সালে। মাঝের ২১০০ সালটি লিপ ইয়ার নয়।