বাংলাদেশ বিশ্ব

তাই বলে সিরিয়া’ও রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে?1 min read

জানুয়ারি ৩১, ২০১৬ 3 min read

তাই বলে সিরিয়া’ও রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে?1 min read

Reading Time: 3 minutes

বিশেষ প্রতিনিধি।

১৬ নভেম্বর, জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। ওআইসির পক্ষে সৌদি আরব এই রেজুলেশন উত্থাপন করে। মানবাধিকার সংক্রান্ত তৃতীয় কমিটিতে সদস্য দেশসমূহের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে এই রেজুলেশন গৃহীত হয় । ১৩৫টি দেশ এই রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট দেয় ১০টি দেশ এবং ভোট প্রদানে বিরত থাকে ২৬টি দেশ। কোন কোন দেশ মিয়ানমারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন হচ্ছে না মনে করে এই জাতিসংঘ রেজুলেশন এ ‘না’ ভোট দিয়েছে সেটা একটু জানিয়ে দিচ্ছি।

কম্বোডিয়া, চীন ,লাও রিপাবলিক, মিয়ানমার, ফিলিপাইনস, রাশিয়া, বেলারুস, সিরিয়া, ভিয়েতনাম এবং জিম্বাবুয়ে। আর ভারত, জাপান, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভেনিজুয়েলা, তান্জানিয়া এরা সহ মোট ২৬ দেশ ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকে। এর মধ্যে ভারত এবং তার বলয়ের তিনটি দেশ নেপাল ও ভুটান বিরত থাকলেও মুসলিম দেশ হিসেবে তানজানিয়া কেন বিরত ছিল সেটা বোধগোম্য নয়। এবারে আসি একটু এক একটি করে বিশ্লেষনে।

সিরিয়া, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত রাষ্ট্র। সিরিয়ার শিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট বশির আল আসাদকে অপসারনে এক তরফা যুদ্ধ হয়েছে সেই দেশে, যার নেতৃত্ব দিয়েছে অনেকাংশেই যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন আইএস এর উথ্বান ঠেকাতে আপাতত মেনে নিয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বশির আল আসাদকে। তবে, মানব শিশুদের উপর রাশায়নিক গ্যাস ছাড়ার কারন দেখিয়ে কয়েক মাস আগে অতর্কিতে বিমান হামলা চালায় ট্রাম্প প্রসাশন। সেই হামলার আগে, বশির আল আসাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া, এবং এখনও সেই অবস্থান নিয়েই আছে। জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের এই ভুটাভুটিতে রাশিয়া বরাবর-ই মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি সেখানে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে এই কথাটিও মানতে নারাজ রাশিয়া। আর রাশিয়ার প্রতি আনুগত্যের সমর্থন দিতেই সিরিয়া একটি মুসলিম দেশ হয়েও ভোট দিলনা রোহিঙ্গাদের পক্ষে? একই অবস্থান বেলারুশ এর। একমাত্র রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রাখতে ,রাশিয়ার-ই্ পরামর্শে বাংলাদেশ বেলারুশ এর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে অনেকখানি। সেই বেলারুশ এখন বাংলাদেশের জন্য বিষফোড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের বিপক্ষেই থাকলো, কেবল রাশিয়া মনক্ষুন হবে এই কারনে!

চীন এর সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক ছাড়াও, মিয়ানমারের আছে ধর্মীয় সখ্যতা। তাই তারা সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম না ভোট দিয়েছে। ভোট প্রদানে বিরত ছিল সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডের মত দেশও, যারাও আসলে পরোক্ষ ভাবে রোহিঙ্গা শরনার্থীর ভার বইছে। তবে, দিন শেষে সবই আসলে, ধর্মীয় আনুগত্য আর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় মিয়ানমারের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের মিশন। সেই মিশনে, ভারত যেমন অনুপস্থিত, তেমনি এশিয়া বলয়ে চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপর, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল সবার থেকেই দুরত্বপূর্ন সম্পর্ক পেল বাংলাদেশ। সে কারনে, এই সমস্যা এখন রোহিঙ্গাদের যেমন একার, তেমনি দেশ হিসেবে ভোগান্তি কেবল জানি বাংলাদেশের-ই।

অবস্য, এসব নেতিবাচক দিকের বাইরে, বড় বিবেচ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা সহ সকল ইউরোপীয় এবং আরব বিশ্বের সকল মুসলিম দেশ এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একমত। তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের জন্য রায় দিয়েছে, যেটা ইতিবাচক।

রেজুলেশন ভোটে যাওয়ার আগে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখে সৌদি আরব। সৌদি আরবের বক্তব্যে সমর্থন করে রেজুলেশনের পক্ষে ভোট দানের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সোমালিয়া, মিশর ও বাংলাদেশ। ভোট গ্রহণের আগে ও পরে দেওয়া বক্তব্যে সকল সদস্য দেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত এই রেজুলেশন আগামী ডিসেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। এই রেজুলেশনে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন বিশেষ দূত নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। রেজুলেশনটিতে রাখাইন প্রদেশে অনতিবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, সকলের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে ২৫ শে আগস্ট থেকে রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ প্রদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটি গৃহীত এই রেজুলেশন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবাধিকারের পক্ষে বিশ্বসম্প্রদায়ের সমর্থনেরই প্রতিফলন। উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদ গত ০৬ নভেম্বর মিয়ানমার পরিস্থিতির উপর সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট গ্রহণ করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *