জেবিবিএ নির্বাচনী কার্যক্রমে আদালতের স্থগিতাদেশ জারি1 min read
Reading Time: 3 minutesবিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত শাহ নেওয়াজ প্যানেল
বিশেষ প্রতিনিধি
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সবচে বড় বনিক সংগঠন জ্যাকসান হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন-জেবিবিএ’র সভাপতি হিসেবে সামনে এসেছেন, ইন্সুরেন্স ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ। আর সাধারন সম্পাদক হিসেবে মাহবুবুর রহমান টুকুকে জয়ী ঘোষনা দেয়া হয়েছে। ৬ জানুয়ারী শনিবার সন্ধায় সমিতির তরফে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ, এই দুজন এবং তাদের পুরো প্যানেলকে জয়ী ঘোষনা করেন, কেননা তাদের প্রতিদ্বন্দী কেউ-ই মনোনয়ন পত্র জমা দেয়নি। হিসাব অনুযায়ী শাহনেওয়াজ-টুকু’র প্যানেল আগামি দুই বছরের জন্য এই সংগঠনকে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু, এই পুরো নির্বাচন এবং নির্বাচিত পরিষদকে বেআইনী এবং গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ বলে, এর বিরুদ্ধে একদিন আগে আদালতে মামলা হয়েছে । সেই মামলা আমলে নিয়ে আদালত, জেবিবিএর সকল কার্যক্রম বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে।
জেবিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম নিউইয়র্ক ষ্টেট সুপ্রীম কোর্টে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। গত ৫ জানুয়ারী শুক্রবার দায়েরকৃত এই মামলার প্রেক্ষিতে সকল নির্বাচনী কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করার রুল জারি করেছে ৮ জানুয়ারী। কিন্তু, তার ২ দিন আগে ৬ জানুয়ারী-ই নির্বাচনে বিপক্ষ প্রার্থী না থাকায় এক প্যানেলের ১৫ জনকেই বিজয়ী ঘোষনা করেছেন। এখন আদালতের এই স্থগিতাদশ এর কার্যকারীতা আছে বলে মনে করছে না নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুল লতিফ ভুইয়া’র মতামত জানাতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আদালত আদেশ দিয়েছে ৮ জানুয়ারী কিন্তু আমাদের সকল নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হয়েছে ২ দিন আগে ৬ জানুয়ারী। এখন আর নির্বাচনী কোন কার্যক্রম চালু নেই, তাই আদালতের এই স্থগিতাদেশ নিয়ে আমরা কি মতামত দেব বুঝতেছি না’। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনা হয়েছে, কিন্তু শফৎ অনুষ্টান কি নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে গেছে ৬ তারিখে,এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না।
তবে, মামলার বাদী জেবিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম (আবুল ফজল ইসলাম) অবস্য বলছেন, ‘আদালত জানে কে নির্বাচিত কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝায়। যখন কেউ নির্বাচিত হন, অথবা নির্বাচিত বলে ঘোষনা দেয়া হয়, শফৎ গ্রহনের আগ পর্যন্ত তিনি থাকে ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’। একমাত্র আনুষ্ঠানিক শফতের পর, নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হয়। সুতরাং নির্বাচিত ঘোষনা দেয়া হয়েছে তড়িঘড়ি করে, কিন্তু, সাধারণ সদস্যদের অংশগ্রহন ছাড়া শফৎ অনুষ্ঠান হয়না এবং সেটা হয়নিও।সেক্ষেত্রে যাদের নির্বাচিত ঘোষনা দেয়া হয়েছে তারা কোন রকম বাড়তি আচারণ করলেই সেটা আদালত অবমাননা হয়ে যাবে। আদালতে যখন বিষয়টি গড়িয়েছে তখন আদালতেই ফায়সালা হবে কে নির্বাচিত কিংবা আদৌ এই নির্বাচনের বৈধতা আছে কিনা। আমি আদালতের নির্দেশনা মেনে নেব যদি ফল কোন ভাবেই তাদের পক্ষে যায়’।
জেবিবিএ’র নির্বাচন কমিশন ঘোষিত মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন ১৫ সদস্যের কার্যকরী পরিষদের সকল পদে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ৬ জানুয়ারী শনিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় ইসি তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারীভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। জ্যাকসন হাইটসের নিউ মেজবান রেষ্টুরেন্টে ৬ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান নিবাচন কমিশনার পারভেজ কাজী নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন। এসময় নিবাচন কমিশনের সদস্য আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া, রেজা রশীদ ও মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নব নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুকু নির্বাচন কমিশন, সকল সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। এসময় তারা জেবিবিএর উন্নয়নে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ নিউইয়র্ক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।সংগঠনটি ভেঙে পড়া রোধে কোন পদক্ষেপ-ই কাজে আসেনি দুই গ্রুপ আর পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে। অবস্য, সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর, শাহ নেওয়াজ তার প্রতিক্রিয়া জানান, যারা নির্বাচনে আসেনি তাদেরকে আস্থায় নিতে তিনি এবং তার প্যানেল কাজ চালিয়ে যাবেন।
।নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে নব নির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন : সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ, সিনিয়র সহ সভাপতি মাকসুদুর রহমান, সহ সভাপতি মোল্লা এম এ মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম হাসান, কোষাধ্যক্ষ মো. মুনীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ভিক্টর লিয়াকত আলী, দপ্তর সম্পাদক শাহরিয়ার আতিক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ সম্পদক শেখ আলী, কার্যকরী সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল কায়ুম খান, খালেদ আক্তার, মো. মফিজুর রহমান এবং মো. এস হোসেন।।
জেবিবিএ’র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত ২৮ ডিসেম্বর পুর্ববর্তী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে উপদেষ্টা কমিটি এডহক কমিটিতে রূপান্তরিত হয়। অবশ্য বিদায়ী কমিটি তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কয়েকদিন পুর্বে উপদেষ্টা কমিটি বাতিল করে নতুন একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে এবং বিদায়ী কার্যকরী কমিটির মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে নেয়। গত ২৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহসীন ননীর নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিটি বিদায়ী কার্যকরী কমিটির উক্ত কর্মকান্ডকে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে উক্ত এডহক কমিটি সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। গত ৩ জানুয়ারী এডহক কমিটি নির্বাচন কশিনকে বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। নির্বাচন কমিশন ‘গঠনতন্ত্র মোতাবেক’ তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে এবং ৬ জানুয়ারী চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন।