বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আকায়েদ: সন্ত্রাসী না সহিংসতাকারী?1 min read

জানুয়ারি ৩১, ২০১৬ 3 min read

আকায়েদ: সন্ত্রাসী না সহিংসতাকারী?1 min read

Reading Time: 3 minutes

বিশেষ প্রতিনিধি,

নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনাল সংলগ্ন পাতাল পথে বোমা বিষ্ফোড়ন চেষ্টার সাথে অভিযুক্ত আকায়েদ উল্লাহ’র পরবর্তী শুনানী জানুয়ারীর ৩ তারিখ। এর মধ্যে হাসপাতালের বিছানায় তার সাথে বিচারকের কথাপকথোন হয়েছে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে।প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর তার জামিন দেয়া হয়নি, কোন আইনজীবি তার জামিন চাননিও। এখন তার বিরুদ্ধে যে বিচার কাজ চলছে, সেখানে তার সাজা কি হতে পারে সেটা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।

প্রাথমিক ভাবে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে এটি একটি পরিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্ত প্রতিবেদনে আকায়েদ উল্লাহকে কোথাও বাংলাদেশী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি এবং তার পরিবারের তথ্য দিয়ে তাদেরকে হেয় করা হয়নি। অনলাইনে আইএসআই’র প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে আকায়েদ সেল্ফ মোটিভেটেড হয়েছে, এটাই মূলত ফাইন্ডিং। আর এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আরও নজরদারিতে আনা জরুরি । এ ধরণের একজন সন্দেহভাজনের বাড়ি তল্লাশিতেও তারা যথাযথ আইন মেনে করেছে।

আকায়েদ এর বিরুদ্ধে ৫ ধরনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যেখানে প্রথমেই তাকে বলা হয়েছে, ভিনদেশী সন্ত্রাসী গোস্টী গুলোর সাথে সহযোগীতা করার অভিযোগ কথাটি আছে। দ্বিত্বীয় অভিযোগ, গন বিদ্ধংশ্বী অস্ত্রের ব্যবহার, তৃতীয়, পাবলিক প্লেস-এ বোমা বিষ্ফোড়ন, চতুর্থ অভিযোগে, সরকারী স্থাপনায় আগুন বা বিষ্ফোড়ন ঘটিয়ে ধংশ্ব সৃষ্টি করা, এবং পন্চম অভিযোগ আনা হয়েছে, ধংশ্বাত্বক দ্রবাদি ব্যবহার করে, সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করা।

নিউইয়র্ক যৌথ  টেরোরিজম টাস্ক ফোর্স (জেটিটিএফ) , হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের এজেন্ট জোসেফ ডি সারসিলো কর্তক, গত ১২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যেই প্রতিবেদনের কপি পৌছেছে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসের হাতে।  জোসেফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এর বিচারক ক্যাথেরিন এইচ পার্কার সহকারে যেই চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে, সেখানে কোথাও আকায়েদ কে, আর্ন্তজার্তিক সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ত এমন অভিযোগ আনা হয়নি। বরং, তার বিরুদ্ধে, সহিংসতা বা ক্রাইম অফ ভায়োলেন্স’ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর আকায়েদ এর বাসস্থান থেকে তল্লাশি চালিয়ে যে সকল দ্রবাদি জব্দ করা হয়েছে সেগুলির মধ্যে আছে ছুরি, ক্রিসমাস লাইটিং এর তার, অনেকগুলি স্ক্রু (বিষ্ফোড়িত বোমাটিতেও যার কিছু অংশ ব্যবহার করা হয়েছে) , একটি পার্সপোর্ট যেখানে লেখা আ্ছে ‘আমেরিকা তুমি ধ্বংশ হও’।

যদিও, প্রতিবেদন এর ১১ জি অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, আকায়েদ উল্লাহ ঘটনা ঘটানোর দিন, ১১ ডিসেম্বর সকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তার ফেসবুকে লেখে, ট্রাম্প তুমি তোমার দেশকে নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয়েছো। পরে তার সাথে জিঙ্গাসাবাদে সে ‘আই এস এর প্রতি অনুরক্ত’ কথাটি স্বীকার করেছে।

একই প্রতিবেদন এর ১১/এফ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, আকায়েদ ২০১৪ সাল থেকেই আইএস এর প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন, মূলত ইন্টারনেট এর একটি ভিডিও দেখে। যেখানে বলা হয়েছে, আইএস এ যারা স্বশরীরে যোগ দিতে পারছে না সেসব তরুন, নিজ দেশে কিভাবে কার্যকলাপ ঘটাতে পারে। একটি ভিডিও দেখে ১ বছর আগে, সে আইইডি বা বিষ্ফোড়ন ঘটনানোর প্রশিক্ষন নিতে থাকে সে নিজে নিজেই।

১১/জি অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে, আকায়েদ তার বাসা থেকে উদ্ধাকৃত মেটাল পাইপের একটি অংশে, তার নিজের তৈরী করা বিষ্ফোড়ক ভরেছিল।সাথে একটি ৯ ভোল্ট এরব্যাটারী আর ক্রিসমাস আলোকসজ্জার কাজে ব্যাবহৃত তার দিয়ে, বিষ্ফোড়ন ঘটাতে চেয়েছিল। সে একটি কর্মদিবসে এই বিষ্ফোড়ন ঘটাতে চেয়েছিল, কেননা, সে চেয়েছিল বেশি সংখ্যায় মানুষকে হতাহত করতে।

১১ ডিসেম্বর ম্যানহাটনের বাস টার্মিনালে বোমা হামলার চেষ্টা করেন আকায়েদ। বিস্ফোরণে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। এরপর সবাই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের বিছানা থেকেই আদালতে অংশ নেন তিনি। জেলা জজ ক্যাথরিন পার্কার তাকে তার অধিকার পড়ে শোনান। 
জবাবে মাথা নেড়ে আকায়েদ বুঝিয়ে দেন তিনি বুঝতে পেরেছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে তিনি জজকে দেখতে পারছেন কী না। তিনি জবাবে বলেন ‘হ্যা   আমি পাচ্ছি’।তবে কোনও শপথ নেননি আকায়েদ।

আদালত পাবলিক ডিফেন্ডার এমি গ্যালিশিওকে আকায়েদের অ্যাটর্নি নিয়োগ দেন। কারণ আকায়েদের অর্থনৈতিক সামর্থ নেই।
এদিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের মন্ত্রী কির্সেটন এম নিলসনের কাছে আকায়েদের তথ্য চেয়ে এক চিঠিতে অনুরোধ করেছেন সিনেটের জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলি।
গ্রাসলি বলেছেন, ‘কেউ লটারি জিতে কিংবা কারও আত্মীয়ের সুপারিশে আমরা বুঝতে পারি না সে কেমন। বিচার বিভাগ িএই কেসসহ সবগুলোই খতিয়ে দেখবে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চায় তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনবো আমরা।’ 
 

এফবিআই এর সহকারী পরিচালক উইলিয়াম সুইনি বলেন, আকায়েদ উল্লাহ বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। তার শরীরের সঙ্গে বাঁধা পাইপ বোমা দিয়েই বিস্ফোরণ ঘটাতে চায় সে।
তিনি বলেন, তার আগের সবার মতো আমাদের ধারণা সে নিজেও প্রযুক্তির মাধ্যমে সহিংস ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো। এমন ধারার আক্রমণগুলোর কোনও উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না যতক্ষণ সেটা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মেলানো না হয়। আমরা এজন্য স্থানীয়দের সহায়তা চাই।

আইএসের কথা বললেও সংগঠনটির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের প্রমাণ পায়নি পুলিশ। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আকায়েদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এই সন্ত্রাসীর মনোচিত্রটি নির্মাণের চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা একমত যে কাজটি একদমই আনাড়ির মতো হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *