‘ফ্রীল্যান্সিং বদলে দিতে পারে জীবন’1 min read
Reading Time: 5 minutesফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার নিয়ে লেখার কথা কখনও চিন্তা করি নি। যদিও নিজেও কোন না কোন ভাবে এর সাথে যুক্ত হয়ে গেছি অজান্তে! আমি ব্যক্তিগত ভাবে এগুলোর উপর অর্ধশতাধিক অনলাইন কোর্স করেছি শখের বসেই। আমার সামান্য জ্ঞান মাঝে মাঝে কারো কারো জন্য কাজে লাগে। কারণে অকারণে বাংলাদেশের কিছু ছোট বড় ফ্রীল্যান্সারের সাথে যোগাযোগ হয়। এই কিছু ফ্রীল্যান্সারের মাঝে সুজাত্য ন ক রে ক একজন। ময়মসিংহে মাস্টার্স পড়ছে। অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়াকালীন সময় থেকেই সে নিজে ফ্রীল্যান্সিং করছে এবং আরও কিছু বন্ধুদের ফ্রীল্যান্সার বানিয়েছে। নিজের পড়াশুনার খরচ নিয়ে জুটিয়ে নিচ্ছে এবং পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারছে।
সুজাত্য নকরেক একজন সফল ফ্রীল্যান্সার। সে মূলত ডাটা – এন্ট্রি করে। কিন্তু এস ই ও কোর্স করে ফেলেছে। কোর্স করে ফেলবে ওয়েব ডিজাইনিং এর উপরেও! এই সুজাত্য নকরেকই আমাকে বার বার অনুরোধ করেছে এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখার! তার অনুরোধেই বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে লিখলাম। আশা করি অনেকের জন্য একটা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার অনেকের জীবন বদলে দিয়েছে, আপনারটাও বদলে দিতে পারে! যেমন বদলে দিয়েছে সুজাত্য ন ক রে ক ও তার বন্ধুদের জীবন!
ফ্রীল্যান্সিং, ফ্রীল্যান্সিং করে কান ঝালাপালা শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু ফ্রীল্যান্সিং কি(?) তাই তো বলা হল না! তাই প্রথমেই জানা দরকার, ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার কি? যদি সহজ করে বলি, কম্পিউটারে নিজের কাজের দক্ষতাকে পুঁজি করে, অন্যের সেবা দিয়ে বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের নাম ফ্রীল্যান্সিং। এখানে সারা বিশ্বের মানুষ তাঁর সমস্যা সমাধানের জন্য আসেন, আর একজন ফ্রীল্যান্সার তাঁর কর্মদক্ষতা দিয়ে, ঐ সকল সমস্যাগুলোর সুন্দর সমাধান দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে ফ্রীল্যান্সার পান নগদ টাকা! ফ্রীল্যান্সিং কে আউট সোর্সিং-ও বলা হয়।
ফ্রিল্যান্সিং বা ইন্টারনেটে কাজ করে ঘরে বসেই টাকা উপার্জন করা যায়, এটি উন্নত বিশ্বের জন্য অনেক পুরোন একটি বিষয় হলেও অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন একটি বিষয়। অনেকেই এখনো বিষয়টি জানেন না। এমন কি অনেকেই এখনও বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়েই বদলে ফেলেছেন নিজের এবং অনেক মানুষের জীবন। আমাদের দেশেই হাজার হাজার ছাত্র – ছাত্রী, বেকার যুবক বুক সটান করে দাঁড়িয়েছেন, অব্যাহত রেখেছেন অর্থনৈতিক মুক্তির জয়যাত্রা।
ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়া সাফল্যের এক গল্পঃ
মধুপুরের এক যুবক গত বছরে কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন ফ্রীল্যান্সিং করে। ধরা যাক, তাঁর নাম দীপু! দুদক তাঁকে তলব করেছে, এবং জানতে চেয়েছে, সে এত টাকা কিভাবে আয় করেছে? ছেলেটি দুদক কে ভাল উত্তর দিতে পেরেছেন। এ খবর আমরা শুনেছি। মুগ্ধ না হয়ে উপায় কি? মধুপুরে বসে কোটি টাকা! তাও আবার ফ্রীল্যান্সিং করেই! ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা এখন যে আর কাল্পনিক গল্প নয় সেটি বলার আর সুযোগ কোথায়?
আরেক মেধাবী তরুণের গল্প জানি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে, চাকুরীতে না গিয়ে ফ্রীল্যান্সিং শুরু করেছিলেন তিনি। এখন নিজেই একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা। নকরেক-আইটি নামে একটি আইটি স্কুল খুলেছেন। আদিবাসী-বাঙালি সবাইকে সেখানে ফ্রীল্যান্সিং স্কিলস গড়ে তুলেন। তাঁর অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখন দেশে বিদেশে বেশ সফলতার সাথে ঘরে বসেই আয় করছেন।
FIVERR, ওডেস্ক, ইল্যান্স কিংবা ফ্রীল্যান্স ডট কম কাজ করতে চান?
Odesk.com, Elance.com, Freelancer.com, Upwork.com কিংবা Fiverr.com ডট কম কাজ করতে চান? এর উত্তর যদি ‘হ্যাঁ চাই’ হয় তবে নিচের লেখাগুলো কম পক্ষে ২ বার পড়ুন। আমি আগেই বলেছি বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছে। এ কাজ করার মধ্য দিয়ে তাঁরা যেমন নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করেছে, সাথে সাথে তাঁদের সাথে কাজ করা অনেকের জীবনে নিয়ে এসেছে সমৃদ্ধি! শুধু কি তাই? তাঁরা মনের অজান্তেই দেশ ও জাতিকেও এগিয়ে নিয়েছেন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে।
অনলাইনে যে বেশ কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েব সাইট বা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে তার মধ্যে FIVERR, ওডেস্ক, ইল্যান্স কিংবা ফ্রীল্যান্স ডট কম অন্যতম। তবে ওডেস্ক রয়েছে সবার উপরে। ওডেস্ক – এ প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাজার হাজার কাজ জমা পড়ছে। বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষ ফ্রিল্যান্সারগণ সে কাজগুলো করে দিয়েই নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে তুলছেন। তবে একটি কথা আগেই বলে রাখি, এই পেশায় দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। কোন কাজ কোন রকমে করে দেয়ার কোনই সুযোগ নেই এখানে। যিনি যত বেশী দক্ষ, তিনি তত বেশি আয় করবেন। বার বার কাজের মান খারাপ হলে বিদায় নিতে হবে এই পেশা থেকে। ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ থিওরীটা এখানে শতভাগ কার্যকর!
কি শিখবেন?
আপনি কি কাজ করবেন বা কোন বিষয়ে দক্ষ হবেন সেটি আপনার ব্যাপার। সব দক্ষতার বিপরীতেই কাজ আছে। তবে নির্ভর করে কোন ব্যক্তির কোন বিষয়ের উপর কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে তার উপর। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, কোন ব্যক্তি যদি শুধু টাইপিংয়ের কাজ জানেন, তবে তার উচিত হবে ডাটা-এন্ট্রির কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা।
১) ফ্রীল্যান্সিং এ সফলকাম হওয়ার জন্য ইংরেজী শেখার কোন বিকল্প নেই।
২) নিচের যে কোনটা বেছে নিন, যত বেশি জানবেন ততই আয়ের পরিমাণ বাড়বে,
ক) ডাটা এন্ট্রির জন্য-এম এস অফিস প্যাকেজ, ওয়েব রিসার্চ, আর্টিক্যাল রাইটিং, ইউটিউব সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান ইত্যাদি।
খ) গ্রাফিক্স ডিজাইন এর জন্য- ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, কোরেল ড্র, ইন-ডিজাইন শিখুন।
গ) ওয়েব ডিজাইনিং এর জন্য-ফটোশপ, HTML, CSS, Javascript, JQuery,
ঘ) ওয়েব ডেভেলপিং এর জন্য-HTML, CSS, Javascript, JQuery, Bootstraps, PHP
গ) কনটেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য – ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা (ব্যাসিক ও আ্যডভান্স) দুটোই জানা জরুরী।
ঙ) সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (এস ই ও) – SEO
চ) প্রোগ্রামিং – Java, C++, Phython, Ruby, Pearl and many more…
ছ) ভিডিও এডিটিং
জ) Professional Blogging – WordPress, Content Writing, Affiliate Marketing, Social Media Marketing
ঝ) Software Testing – Manual & Automation
কাজ কীভাবে শিখবেন, কোথা থেকে শিখবেন?
● Achick Jumang Productions (AJP)
● Cyber Solutions-71
● Nokrek-IT
এই ৩ আইটি প্রতিষ্ঠান – এগুলোর কোর্স onlin-e দিয়ে থাকে।
আমাদের কোর্সগুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
● এ ছাড়াও অনলাইনে যে কোন কাজই শিখতে পারেন বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে দেখেই। টিউটোরিয়াল খুঁজে পেতে গুগুলের অথবা ইউ টিউবের সহায়তা নিন।
● ভিডিও কোর্স দেখেও কাজ শিখে নিতে পারেন। এই কোর্সগুলো শেখার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সাইট যেমন লিন্ডা ডট কম, স্কিলফীড ডট কম ইত্যাদির ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে।
কোর্স গুলো পাওয়ার জন্য পেপাল অথবা যে কোন ক্রেডিট কার্ড দরকার! আপনার ক্রেডিট কার্ড নেই? কোন সমস্যা নেই! আপনি বিকাশে টাকা দিবেন আচিক জুমাং প্রোডাকশন্স কে, আর আচিক জুমাং কিনে দিবে আপনাকে যে কোন কোর্স! এ জন্য আচিক জুমাং আপনার কাছ থেকে মাত্র ৫ ডলার চার্জ করবে! শুধু বলুন কি কোর্স করতে চান? আচিক জুমাং আপনাকে দিতে পারে বিশ্বমানের যে কোন কোর্স!
কাজ শিখে গেলে কি করবেন?
কাজ শেখা শেষ? এবার কাজে নেমে পড়ুন! প্রথমেই যা করতে হবে, তা হল – আপনি যে কাজ জানেন সেগুলোর কিছু স্যাম্পল কাজ আগেই করে রাখুন । কারণ আপনি কোন কাজ করতে পারেন সেটি ক্রেতাকে শুধু মুখে বললেই তো আর কাজ পাওয়া যাবে না। বরং ঐ ধরনের কিছু কাজ আগে থেকে করে রেডি রাখুন এবং বায়ারকে দেখান। তবে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
কাজ পাওয়ার পূর্বশর্ত
ফ্রিল্যান্সিং এখন লক্ষ লক্ষ মানুষের মূল পেশা। কিন্তু এটাও সত্যি অনেকেই অল্প কিছুদিন কাজ পাওয়ার চেষ্টা করেই কাজ না পেয়ে হতাশায় ফ্রিল্যান্সিং ছেড়েই দিয়েছেন। তবে ধৈর্যের সাথে যারাই নিয়মিত চেষ্টা করে গেছেন, তাঁরা কাজও পেয়েছেন, সাফল্যও ধরা দিয়েছে তাঁদের হাতেই। আর এঁরাই সফল ফ্রিল্যান্সার।
সুতরাং, একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে এবং নিম্নে উল্লেখিত কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে
● আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সহজেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়া চলবে না। বার বার চেষ্টা করুন। কাজ না পেলে, ভেবে দেখুন আপনার কি ঘাটতি আছে? তা পূরণ করুন।
● যে ধরনের কাজ করতে চান সেগুলোর কিছু স্যাম্পল আগেই তৈরী করে পোর্টফোলিওতে রাখুন। খুব কাজে দিবে।
● আপনার দক্ষতাগুলো প্রকাশ পায় এমনভাবে সুন্দর একটি কাভার লেটার তৈরী করুন এবং তা কাজে লাগান।
● যে ধরনের কাজ করেন সেগুলোর ল্যাইটেস্ট ট্রেন্ডের সঙ্গে পরিচিত থাকুন। প্রয়োজনে বাড়তি কোর্স করে রাখুন। এগিয়ে থাকুন সব সময়।
কাজ না পাওয়ার কি কি কারণ?
১। অনেকেই প্রোফাইল ১০০% কমপ্লিট না করেই কাজের জন্য আবেদন করে বসেন। যা মোটেই উচিত না।
২। পোর্টফলিও বিহীন প্রোফাইল। যে কাজের জন্য বিড করবেন সে ধরনের একটি কাজ আগে থেকে পোর্টফলিওতে যুক্ত করলে অবশ্যই কাজ পাবেন। অন্যথায় কাজ হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
৩। স্কিল টেস্ট না দিয়ে কাজ আশা করা নেহায়েত বোকামী।
৪। কভার লেটার অবশ্যই প্রাসাঙ্গিক হয়া চাই। কভার লেটার দেখেই একজন গ্রাহক আকৃষ্ট হন এবং প্রোফাইল চেক করেন। কভার লেটার হবে পরিশীলিত, পরিমার্জিত এবং খুব সংক্ষেপ।
উপরের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে যে কেউ কাজ পাবেন এতে সন্দেহ নেই।
কাজ করলাম, টাকা পাব তো?
আগে কাজ করুন, টাকা অবশ্যই পাবেন। আমাদের দেশ থেকে এখন লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার ওডেস্ক, ইল্যান্স এবং ফ্রীল্যান্সার ডট কম এ কাজ করছেন। টাকাও পেয়ে যাচ্ছেন। লেখার শুরুতেই আমি মধুপুরের এক যুবকের কথা বলেছি। তাই টাকা পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপার নিয়ে দুঃচিন্তা না করলেও চলবে। তবে আপনাকে যেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে সেটি হচ্ছে ক্রেতার সন্তুষ্টি আদায়। সেটি করতে হবে কর্ম দক্ষতা দিয়েই। গ্রাহক বা ক্রেতা সন্তুষ্ট হলে ভাল রেটিং দিবেন, ভাল রেটিং দিলে আপনি আরও ভাল কাজ পাবেন। ভাল কাজ মানে ভাল টাকা।
শেষ কথা
কাজেই টাকা কীভাবে পাবেন সে চিন্তা না করে বরং কোন কাজ কীভাবে বাগিয়ে নিতে পারেন এবং বাগিয়ে নেওয়া কাজটি কীভাবে ভাল মত সম্পন্ন করবেন সেটি চিন্তা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আর বুদ্ধিমানদের জন্যই এই ফ্রীল্যান্সিং।
বাবুল ডি’ নকরেক
আইটি প্রশিক্ষক, AccentTech, USA.
লেখক, সাংবাদিক এবং ফ্র্যীল্যান্স কনসালট্যান্ট
Email: [email protected]