বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ :আলোচিত ১০ চরিত্র/ ঘটনা1 min read

মার্চ ১, ২০১৮ 9 min read

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ :আলোচিত ১০ চরিত্র/ ঘটনা1 min read

Reading Time: 9 minutes

২০১৭ সালের শেষ সংখ্যাটি যখন প্রকাশিত হচ্ছে তখন সব খানেই চলছে ২০১৮ সালকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। নতুন বছরে, নতুন একটি সম্ভাবনা আসবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য। সেই প্রত্যাশায় গত বছরের ঘটে যাওয়া কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে মনে রাখা বেশ জরুরী। অনেক ঘটনায় আলোড়ন তুলেছে, কিংবা ২০১৭ সালের আ্লোচনায় বিশেষ জায়গা তৈরী করেছে।

১. আকায়েদ কান্ড উল্লাহ: সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্রথমবার বাংলাদেশের নাম চাউর!

২০১৭ সালটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টায় গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আকায়েদ উল্লাহ’র কারণে। ডিসেম্বরের ১২ তারিখে সে, নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ব্যস্ততম বাস টার্মিনালে ব্যস্ত সকালে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর আহত অবস্থায় আটক হয়। পরে জানা জায়, আকায়েদ মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস এর মতাদর্শের অনুসারী হয়েই, আমেরিকার ক্ষতি সাধন করত চেয়েছিল। এমনকি প্রায় এক বছর আগে থেকে সে ইন্টারনেট থেকে বোমা তৈরীর প্রশিক্ষন নিচ্ছিলো।

যদিও মাত্র ৫ জন আহত হয়েছিল, কিন্তু এযাবৎ কালে সন্ত্রাসী তৎপরতায় আকায়েদ এর সংশ্লিষ্টতা মিলিয়ে মুল ধারার সব বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ’ নামটি বিশেষভাবে এসেছে। যার প্রেক্ষিতে লজ্জা, ক্ষোভ আর শঙ্কায় মুষড়ে পড়েছিল প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ বছর বয়সী আকায়েদ সাত বছর আগে ওই দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। প্রথমে ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন তিনি; পরে একটি ইলেকট্রিক কোম্পানিতে চাকরি নেন।
আকায়েদের বাড়ি চট্টগ্রামে এবং গত সেপ্টেম্বরে তিনি সর্বশেষ দেশে গিয়েছিলেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

ম্যানহাটনের এই হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস হামলাকারীর বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। আর নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় সব বাংলাদেশী মানুষ আর তাদের সংগঠন দেরী না করে, আকায়েদ এর কর্মকান্ডের প্রতি ঘৃনাপ্রকাশের সাথে সাথে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য কমিউনিটিতে সচেতনতা এবং দেশপ্রেমবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য মনোনিবেষ করতে উদ্যত হয়েছেন।

২. জাকির খান হত্যাকান্ড: কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় কর্মীর মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ

চলতি বছরের শুরু দিকে, ফেব্রুয়ারীর ২২ তারিখে ব্রঙ্কস এর ভাড়া বাসার মালিকের হাতে দিনে দুপুরে নির্মমভাবে খুন হন রিয়েলেটর জাকির খান। তার হত্যাকান্ডের পর, শোক আর ভেঙে পড়া কমিউনিটির মধ্যে আলাপ শুরু হয়, কেন খুন হলেন জাকির খান। পরে, প্রাথমিক তদন্ত আর হত্যাকারীর মুখের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে, দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ভাড়া পরিশোধ না করা, বাড়ী কিনে নেয়ার নামে টালবাহানা করা, বাড়ির মালিককে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হেনস্থা করা সহ নানা কারনে অতিষ্ট বাড়ীওয়ালা তাকে হত্যা করার পথ বেছে নেয়।

জাকির খান একটা সময়ে কমিউনিটির কাছে ছিলেন রিয়েল স্টেট বা আবাসন ব্যবসার প্রতীক। ব্রঙ্কসের ‘কনডো কিং’-এর খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। যিনি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতেন, সেই তাকেই আবাসন সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে প্রাণ দিতে হয়েছিল। নিহত জাকির খানের হত্যাকান্ড নিয়ে নিউইয়র্কের শীর্ষ স্থানীয় সবগুলো গনমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশ করে। ১২ বছরের সন্তানের সামনেই মৃত্যু হয়েছে বাবার-এটা জঘন্য একটি হত্যাকান্ড ছিল নিউইয়র্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে।

জাকির খানের হত্যার পর সুষ্ট তদন্ত আর বিচার চেয়ে কমিউনিটির শীর্ষ নেতা আর সংগঠনগুলো একাধিকবার সভা সেমিনার করেছে। তবে হত্যাকারী তার দোষ স্বীকার করা আর ঘটনার কারণ বর্ননা করার পর বাস্তবতার সাথে তার মিল খুজে পেয়ে, অপেক্ষাকৃত দূর্বল তদন্তপ্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।
জাকির খানের হত্যাকান্ডে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে শোক আর ক্ষোভ উভয় প্রতিয়মান হয়েছে। পরিচিত মুখ জাকির খানের হত্যাকান্ডের পেছনে যত কারণ ই থাকুক, শুধু মাত্র ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি বলে এমন বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না বলেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন অনেকেই। সদ্য হাস্যজ্জল, বিনয়ী, কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকান্ডে সামনের সারির মানুষ জাকির খানের মৃত্যুকে একটি অপুরনীয় ক্ষতি হিসেবেই বর্ণনা করেছেন অনেকেই।

৩. রিয়াজ তালুকদার : ডিপোর্টেশন স্থগিত চেয়ে আলোচনায়

নভেম্বর মাসে ১৭ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনার আদালতের কাগজপত্র দেখিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত রিয়াহ তালুকদার। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে এই দেশে বসবাস আর দুই সন্তানসহ ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীকে ফেলে রেখে বাধ্যতামূলক দেশে ফিরে যাওয়ার আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার সেই কান্না মূল ধারার সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়, বেদনা তৈরী হয় কমিউনিটির মধ্যেও। এর পর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইনজীবি আর কমিউনিটির সমর্থন নিয়ে প্রতিবাদ তৈরী হয়। যেদিন, তাকে ইমিগ্রেশন দপ্তরে পাসপোর্ট আর দেশে ফিরে যাওয়ার টিকেট সহ চুড়ান্ত শুনানীর জন্য ডাকা হয়, সেদিন নানা যুক্ততর্ক শেষে তার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় বাড়ানো হয় ৬ মাস। এখনও সেই অবস্থায় আছে যদিও, তবে রিয়াজ তালুকদার তার স্থায়ী আবাসনের অধিকার চেয়ে করা মামলাটি পূনরায় জীবিত করেছেন, আইনজীবিদের মাধ্যমে। এখন দেখার বিষয়, ইমিগ্রেশন দপ্তর তার সেই মামলার পক্ষে রায় দেয় নাকি আগের মতই বিতাড়ন আদেশ বহাল রাখে।

৩৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন রিয়াজ তালুকদার। কিন্তু বৈধভাবে থাকার অনুমতিপত্র না থাকায় ২০১০ সালে তাঁকে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় মার্কিন সরকার। আইনজীবীর ভুলে সেই আদেশের বিপরীতে পরবর্তী ব্যবস্থা না নিয়েই বসবাস এবং অন্য কাজকর্ম করতে থাকেন তিনি। এই দেশে তাঁর দুটি সন্তান জন্ম নেয়। জন্মসূত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বড় ছেলে রাফি তালুকদারের বয়স এখন ১৫ বছর এবং হিসাব অনুযায়ী তার বয়স ২১ বছর হলেই বাবার জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করবে সে। সে ভরসাতেই ছিলেন রিয়াজ তালুকদার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিতাড়ন আদেশ আছে এমন সবাইকে বাধ্যতামূলক দেশে ফেরত পাঠাতে কঠোর নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় হাজারো মানুষকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মাস দুয়েক আগে এমন ১১ জন বাংলাদেশিকে বাধ্যতামূলক দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০ নভেম্বর রিয়াজ তালুকদারকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই ডেকেছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ দপ্তর। এমনকি দপ্তরে হাজির হওয়ার সময় বিমানের টিকিট আর পাসপোর্ট নিয়ে যেতেও বলেছিল।

২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনটির আলোচিত ১০ চরিত্র বা ঘটনার মধ্যে ছিলেন রিয়াজ তালুকদার এবং তার ডিপোর্টেশন কেইস।

৪. এক মাসেই দুটি আত্বহত্যা: পুলিশ সদস্য হেমায়েত উদ্দীন আর নাদিয়া আফরোজ সুমি’র চলে যাওয়া

আগষ্ট মাসের ১৪ তারিখে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দীন তার নিজের গুলিতে নিহত হন। নিজ বাসার বেসমেন্ট থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে যখন পরিবারের সদস্যরা বাসায় ছিলেন। 
 
হেমায়েত হোসেন সরকার (৩২) নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রী ও চার বছরের একপুত্রসহ নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজে বসবাস করতেন। কয়েক মাস আগে তিনি এই বাড়িটি কিনেছিলেন। ২০০৫ সালে ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এনওয়াইপিডির অফিসার তিনি পদে যোগদান করেন।প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, হেমায়েত হোসেন মাথায় নিজের পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে আত্মহত্যার কারণ এখনো উন্মোচিত হয়নি। ধারণা করা হয় পারিবারিক বিরোধ, কর্মস্থলে অশান্তি এসব মিলিয়েই আত্বহত্যার পথ বেছে নেন পুলিশ সদস্য হেমায়েত উদ্দীন।

যেই মাসে, পুলিশসদস্য হেমায়েত উদ্দীন আত্বহত্যা করেন, তার এক সপ্তাহ আগে ৩২ বছরের নাদিয়া আফরোজ সুমি নামে একজন অভিবাসী আত্বহত্যা করেন। ২০১৭ সালের ৭ আগষ্ট, জ্যাকসন হাইটসের কাছে ইস্ট এলেমহার্স্টে এই আত্বহত্যার ঘটনা ঘটে। এই আত্বহত্যার স্পষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি তবে, তার লিখে যাওয়া চিরকুট এবং পারিপাশ্বিক ঘটনা বিশ্লেষন করলে, স্বামী অসুস্থ এবং পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর সংসারে ভার টেনে নিতে না পারার বেদনা থেকেই সুমি আত্বহত্যা করেন বলে মনে করা হয়। এর বাইরে, তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে, নানা অর্থনৈতিক প্রলোভন আর অশ্লীল সর্ম্পকের জন্য ঘুরতে থাকা কিছু মানুষও তার চলে যাওয়ার পেছনে দায়ী বলে মনে করেন, ঘনিষ্ট অনেকেই।

৫. কুটনীতিক হামিদুর রশীদ এর গ্রেফতার আর বছরান্তে মামলা থেকে অব্যহতি:

২০১৭ সালের জুন মাসে বেশ হইচই শুরু হয়েছিল জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশী কুটনীতিক হামিদুর রশিদ এর গ্রেফতার ঘটনা নিয়ে। বিগত বছরে আরো একজন কুটনীতিককে, গৃহভূত্যকে ঠকানোর মামলায় জেলে যাওয়া, আর তার বাধ্যতামূলক দেশে ফেরত যাওয়ার ঘটনার পর, হামিদুরের ঘটনায়, গনমাধ্যমে বাংলাদেশ এবং হামিদুরকে ঘিরে অনেক সংবাদ প্রচারিত হয়। গৃহস্থলির কাজে থাকা মানুষদের ঠকানো, শ্রমের মূল্য না দেয়া ইত্যাদি নিয়ে সে সময় বেশ আ্লাপ আলোচনা তৈরী হয়, এমনকি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী কুটনীতিকদের দেশ থেকে কাজের মানুষ না নিয়ে আসার উপরও মৌখিক নির্দেশনা জারি হয়। তবে, বছর শেষে, কুটনীতিক হামিদুরের পক্ষে গেছে ঐ মামলা।

গৃহভুত্য কর্তৃক ,পারিশ্রমিক এবং ওভারটাইমের বেতন না দেয়ার অভিযোগ আর নির্যাতন সংক্রান্ত মামলাটির, সত্যতা না পাওয়ায় নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক অ্যান্ড্র– জে প্যাক ২০ নভেম্বর মামলাটি খারিজ করে কূটনীতিক হামিদুর রশীদকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। বিদেশি কর্মী নিয়োগের চুক্তিতে জালিয়াতি এবং ভিসা ও পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগে হামিদুরকে ২০ জুন সকালে তার ম্যানহাটনের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারের সাত ঘণ্টা পর একইদিন শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছিলেন জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি অ্যানালাইসিস ইউনিটের প্রধান এই বাংলাদেশি।
ওই ঘটনার পাঁচ মাস পর নিউইয়র্কের সাদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল কোর্ট সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রায় দেয়।
অভিযোগকারী বাংলাদেশি গৃহকর্মীর ভাষ্য ছিল, ২০১৩ সালের শুরুতে তিনি হামিদুরের বাসায় কাজ শুরুর পর চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পাওয়ায় ওই বছরই বাসা ছেড়ে চলে যান। অবস্য, সেমময়, অনেকেই ধারণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের জন্য আইনী সুবিধা পেতেই এসব অভিযোগ করে বসেন অনেক সময় গৃহস্থলীর কাজে আসা অনেকেই।ভারতীয় এক কুটনীতিকের সাথে এমন ঘটনা ঘটার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যকার কুটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে।

৬. নির্বাচনী চরিত্র: ড. নীনা আহমেদ এবং অন্যন্যরা

যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত বড় দায়িত্ব পালন করা ফিলাডেলফিয়া শহরের ডেপুটি মেয়র ড. নীনা আহমেদ বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশ বড় আশাবাদের সৃষ্টি করেছেন, কংগ্রেসশান নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষনা করে। ‘পেনসিলভানিয়া কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১’ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছেন ড. নীনা আহমেদ। ওই আসনের বর্তমান কংগ্রেসম্যান (ডেমোক্র্যাট) রবার্ট ব্র্যাডির বিরুদ্ধে নির্বাচনী তহবিল তছরুপের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে এফবিআই। ইতিমধ্যেই ওই অপকর্মে জড়িত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়েছে। এ অবস্থায় সামনের বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ব্র্যাডির প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আর এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির বলিষ্ঠ সংগঠক ড. নীনা মাঠে নামলেন। তার জয় এলে নি:সন্দেহে বড় একটি ঘটনা ঘটবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের এগিয়ে চলার পথে। তবে, নিউইয়র্ক আর মিশিগান সহ আরো বেশ কয়েক জায়গায় চলতি বছর, মূলধারার নির্বাচনে এগিয়ে এসেছেন এবছরও।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশিদের বসবাস নিউইয়র্কে। সেই নিউইয়র্কের নগর পরিচালনায় বাংলাদেশিরা নাম লেখাতে চান দারুণভাবে। সেই প্রমাণ মিলেছে চলতি বছরের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনের প্রাইমারিতে। বাংলাদেশি-অধ্যুষিত জ্যামাইকা আর ব্রুকলিনের ওজোনপার্ক থেকে দুজন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে তাঁরা প্রাইমারির সীমারেখা পার হতে পারেননি।
জ্যামাইকা, জ্যামাইকা হিলস, পার্কওয়ে ভিলেজ, ব্রায়ারউড, জ্যামাইকা এস্টেট, হিলক্রেস্ট, ফ্রেশ মেডোজ, ইলেক্টচেস্টার, পমোনক এবং কিউ গার্ডেন্স এলাকা থেকে প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বাংলাদেশি টি রহমান। এখানকার মোট ভোটারের ২৫ শতাংশের মতো বাংলাদেশি। এশিয়ান ভোটারের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি। হারুন ছিলেন একমাত্র এশিয়ান প্রার্থী। তবুও জয়ী হতে পারেননি নির্বাচনে।
অপরদিকে প্রাইমারিতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ওজোনপার্ক থেকে জয়ী হতে পারেননি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত হেলাল আবু শেখ। মোট প্রদত্ত ভোটের প্রায় ১৬ শতাংশ তিনি পেয়েছিলেন। প্রাইমারিতে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। তবে তিনি দমে যাননি। ভোট-পরবর্তী শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপন পার্টি দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ভবিষ্যতে আবারও মাঠে থাকার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন।

মিশিগানের ডেট্রয়েটের পাশের শহর হ্যামট্রামিকে এরই মধ্যে দুজন দায়িত্ব পালন করছেন সিটি কাউন্সিলম্যান হিসেবে। আবু মুসা, আনাম মিয়া। কিন্তু শুরুতে তিনজন কাউন্সিলম্যানই ছিলেন বাংলাদেশি। এই শহরের মেয়র পদে প্রথমবারের মতো লড়েছিলেন সাবেক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মাদ কামরুল হাসান। নিজেদের মধ্যে সমঝোতার সংকটে হ্যামট্রমিক সিটি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও সেখানকার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের এই প্রভাব বলে দিচ্ছে, অচিরেই ওই হ্যামট্রমিকের পরিচালনার দায়িত্ব আসছে কোনো একজন বাংলাদেশির হাতেই।

৭. মুসলিম ব্যান আর কমিউনিটির প্রতিবাদ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফে জারি করা প্রথম এবং দ্বিত্বীয় দফার ট্রাভেল ব্যান সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে যদিও বাংলাদেশীদের নাম ছিল না তবে, নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর অচল করে দেয়ার আন্দোলনে, বেশ সক্রিয় ভুমিকা পালন করে বাংলাদেশী প্রবাসীরা। অনেক বছর ধরে বসবাস করা বাংলাদেশী প্রবাসীদের অনেকেই এরি মধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাথে কাজ করে শীর্ষস্থানে পৌছে গেছেন অনেকেই।

২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারীতে নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রেক্ষিতে চলা এক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। নিউ ইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে ‘নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশন, দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম) সহ একাধিক সংগঠনের হয়ে বাংলাদেশীরা প্রতিবাদেন নামেন।

৮. নিউইয়র্কে সিলেট সম্মেলন

২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ দিনের একটি মিলন মেলার ডাক দেয়া হয় যার নাম ছিল বিশ্ব সিলেট সম্মেলন। নিউইয়র্ক আর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সিলেট থেকে আগত অভিবাসীদের এই সম্মেলন বেশ জাকজমকপূর্ন ভাবে অনুষ্টিত হয়েছিল। ধারনা করা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সিংহভাগের পৈত্রিক নিবাস সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সিলেটবাসীর মধ্যকার নেটওয়ার্ক সরব রাখার মধ্য দিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির আলোকে প্রবাস প্রজন্মকে লালনের সংকল্প ব্যক্ত করা হয়নিউইয়র্কে ‘জালালাবাদ বিশ্ব সিলেট সম্মেলনে।’ 

দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ‘ব্র্যাক’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জেনারেল সি. আর. দত্ত বীর উত্তম। সম্মেলনের অতিথির মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশীদের বন্ধু কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, সাবেক এমপি ও আমেরিকায় জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এম এম শাহীন, বাংলাদেশ হাই কোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি ড. মো. আবু তারিক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন, সাবেক সচিব এনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি সি এম তোফায়েল সামী, বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান, আয়োজক সংগঠন ‘জালালাবাদ এসোসিয়েশন’র সভাপতি বদরুল খান, সেক্রেটারি জুয়েল চৌধুরী এবং সম্মেলনের আহবায়ক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।  এ উপলক্ষে সম্মেলন স্থল জ্যামাইকার ইয়র্ক কলেজ মাঠে বিভিন্ন পন্নের স্টল দেয়া হয়। সম্মেলনে নানা ইস্যুতে আলোচনার পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলের প্রখ্যাত শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদ্বোধনী দিবসে রাত ১০টা নাগাদ।  কলকাতা, বাংলাদেশ, কানাডা, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক সিলেটি সপরিবারে অংশ নেন এ সম্মেলনে।

৯. কানসাসে ছাত্র হত্যাকান্ড

২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর কানসাস অঙ্গরাজ্যের উচিটা শহরে দুর্বৃত্তের গুলিতে এক বাংলাদেশি ছাত্র নিহত হন। এম হাসান রহমান বাঁধনকে (২৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। সেখানে বাঁধন পিৎজাহাট ডেলিভারির কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চৌরাস্তার টেরিপাড়ায়। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আর তাদের পরিবারবর্গের মধ্যে বেশ উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।

উচিটা পুলিশ জানায়, শহরের ৭৮০০ পেজন্ট লাইভ ওক স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে একটি গাড়ির ট্যাংক থেকে ওই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, রাতে পিৎজা ডেলিভারি দিয়ে বাঁধন সঠিক সময়ে সেন্টারে না পৌঁছানোয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরদিন, বেলা ১১টায় পুলিশ ওই অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি ট্যাংক থেকে বাঁধনের লাশ উদ্ধার করে। সাত বছর আগে বাঁধন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বাটলার কমিউনিটি কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট শেষ করে আগামী সেশনে ক্যানসাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছিলেন তিনি। ডিসেম্বরেই কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তার।কিন্তু সন্ত্রাসীর নির্মম গুলিতে নিভে যায় তার জীবন, সাথে সাথে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার স্বপ্নটিও।

১০. ভালো স্বুলে ভর্তির ধারাবাহিক সাফল্য

নিউইয়র্কের স্পেশালাইজড হাইস্কুলে ২০১৭ সালেও প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী অভিবাসী পরিবারের সন্তানেরা ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাদের ভর্তির ব্যাপারে নেপথ্যে কাজ করছে বাংলাদেশীদের স্থাপিত বেশ কয়েকটি টিউটোরিয়াল। সাফল্যে এবারো শীর্ষ স্থান দখল করেছে খান’স টিউটোরিয়াল।

স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সুপরিচিত খানস টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থীরা ৪৬৪টি অফার পেয়েছে বিভিন্ন নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। এদিকে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি, ববি-তারিক লার্নিং সেন্টার থেকে ৭৫ জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া সেই সাথে প্রতিষ্ঠাটি আগের সকল রেকর্ডও ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি মামুনস ও স্কলাসটিকা টিউটোরিয়াল তাদের সাফল্য অব্যাহত রেখেছে। মামুনস থেকে ৪২জন আর স্কলাসটিকা টিউটোরিয়াল থেকে ১৬ জন স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। তবে এটা সম্পূর্ণ তালিকা নয়। এর বাইরেও স্পেশালাইজড স্কুল গুলোতে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় ২০১৭ সালটি অভিভাকদের জন্য ছিল বেশ আনান্দের।

সংকলন : সাহেদ আলম

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *