৯/১১ টুইন টাওয়ার হামলার আদ্যোপান্ত1 min read
Reading Time: 2 minutesপরম পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো টুইন টাওয়ার হামলা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী হামলা। এই হামলার দায় স্বীকারের মাধ্যমে আল-কায়েদা বিশ্ববাসীর সামনে তাদের অস্তিত্ব যেমন জানান দেয়, সেই সাথে এই হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রও নিজেদের সীমানা পেরিয়ে পুরো পৃথিবীর সন্ত্রাস দমনের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়।
আলোচিত ৯/১১
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার; প্রতিদিনের মতো মানুষ যখন সবে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠছে, ঠিক তখনই কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ারে পরপর দুটি বিমান হামলার মাধ্যমে এই হামলার সূত্রপাত হয় এবং পরবর্তীতে পেন্টাগন ও পেনসিলভেনিয়ায় আরও দুটি বিমান হামলা ঘটে।
সকাল ৮ টা ৪৫মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং–৭৬৭ বিমানটি প্রথম আঘাত হানে। এর প্রায় ১৮ মিনিট পরে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭৫–এর আরেকটি বোয়িং উড়োজাহাজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারে দ্বিতীয় আঘাত হানে। প্রথম উড়োজাহাজটি ১১০ তলা টুইন টাওয়ারের ৮০তম তলায় এবং দ্বিতীয় উড়োজাহাজটি ৬০ তম তলায় আঘাত হানে। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ভবনটি ধসে পড়ে। ধারণা করা হয় যে, এই দু’টি হামলার পর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার(টুইন টাওয়ার) থেকে মাত্র ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।
এমন ভয়াবহ দুটি বিমান হামলার খবর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে তৃতীয় বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৭৭–এর বোয়িং ৭৫৭ বিমানটি পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত করে। এতে ১২৫ সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এভাবে দুটি স্থানে তিনটি বিমান হামলার পর সন্ত্রাসীদের আরেক দল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাত্রা করা ইউনাইটেড ফ্লাইট- ৯৩ উড়োজাহাজটি ছিনতাই করে। তবে এই বিমান ছিনতাইকারীরা কোথায় হামলা করতে চেয়েছিল, তা জানার সুযোগ হয়ে ওঠেনি; কারণ পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন।
৯/১১ হামলার ক্ষয়ক্ষতি
৯/১১ এর বর্বরোচিত বিমান হামলায় অংশ নেয় মোট ১৯ জন সন্ত্রাসী। এই ভয়াবহ হামলায় মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন মানুষ নিহত হন; এদের মধ্যে শুধু টুইন টাওয়ারের দুটি হামলায় মারা যান ২ হাজার ৭৬৩ জন। হামলায় আক্রান্ত লোকজনদের উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন দমকল কর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন।
এছাড়া হামলার পর প্রথম দিনেই নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধ্বস নামে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের হামলায় প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছিল; ফলে নাইন ইলেভেনের আলোচিত ঘটনাটি “টুইন টাওয়ার হামলা” নামেও বিশ্বজুড়ে আলোচনায় স্থান পায়।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
নাইন-ইলেভেনের ঘটনাটি নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বেরও জন্ম দিয়েছে। এই হামলায় কোনো ইহুদি মারা যায়নি; কোনো বিমান প্রকৃতপক্ষে টুইন টাওয়ার বা পেন্টাগনে আঘাত করেনি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি টাওয়ার ধসে পড়েছিল বিমানের আঘাতে নয়, বরং ভবনটির ভেতরে রাখা বিস্ফোরক কোনো কিছুর কারণে; হামলায় ব্যবহৃত প্রত্যেকটি বিমানের শেয়ার মূল্য স্টক মার্কেটে হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল; কিন্তু কেন? এমন নানাবিধ ধারণা ও প্রশ্নের উদয় হয় এই হামলার পর। তবে আজও এইসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর উঠে আসেনি। এই আলোচিত ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা আমেরিকার কর্তৃপক্ষও দিতে পারিনি, ফলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো আরও জোরালো আকার ধারণ করেছে। অধ্যাপক ডগলাস বলেন, ” তারা(মানুষ) চায় ঘটনা যে মাপের ব্যাখাটাও সেই মাপের হতে হবে, সেটা না পেলে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম হয়।“
হামলার এই ঘটনার জন্য আমেরিকা এককভাবে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে দায়ী করলেও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা নাইন ইলেভেনের ঘটনার জন্য আমেরিকার সরকারকেই দায়ী করে থাকে। পাল্টাপাল্টি এই মন্তব্যের কোনো সুরাহা আজও হয়নি। তবে এ ঘটনা যারাই ঘটিয়ে থাকুক না কেনো; এই হামলা যে বৈশ্বিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে; তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
লেখক- আমিনুল ইসলাম
আরও পড়ুন- অপারেশন নেপচুন স্পেয়ার: ওসামা বিন লাদেন হত্যার ইতিবৃত্ত