বিশ্ব

হংকংয়ের রাজপথ আন্দোলনে উত্তাল কেন?1 min read

জুলাই ২, ২০১৯ 3 min read

author:

হংকংয়ের রাজপথ আন্দোলনে উত্তাল কেন?1 min read

Reading Time: 3 minutes

“আমাদের পেছনে ফিরে যাবার উপায় নেই”

“আমরা অতীতে অনেক ছাড় দিয়েছি, আর না!”

কথাগুলো হংকং এর রাস্তায় নেমে আসা লাখো মানুষের, যারা একটি সম্পূর্ণ বিবেকহীন বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছেবিলটি হংকংয়ের অবস্থান এবং হংকংয়ের উপর চায়নার প্রতিপত্তির ব্যাপার। কিন্তু হংকংয়ের সাধারণ মানুষের কাছে এটি তাদের স্বাধীনতার প্রশ্ন

স্ফুলিঙ্গের শুরু

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ এক তরুণ যুগল,  চ্যান টং কাই এবং পুন হিউ উইং, হংকং থেকে তাইওয়ানে ছুটি কাটাতে যায় কিন্তু ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ তাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র চ্যান ফিরে আসে ঘটনার এক মাস পর চ্যান স্বীকার করে যে, সে তার অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা পুনকে হত্যা করেছে তার শাস্তির দাবিতে পুনের পরিবার সোচ্চার হয়ে উঠলেও একটি সমস্যা দেখা দেয়চ্যানকে শাস্তি দেবার কোন অধিকার হংকংয়ের ছিল না, কারণ হত্যাকান্ড ঘটে তাইওয়ানেআবার চ্যানকে তাইওয়ানে ফেরত পাঠিয়েও আইনের আওতায় আনা সম্ভব ছিল না, কারণ হংকং এবং তাইওয়ানের মধ্যে কোন এক্সট্রাডিশন বা বহিঃসমর্পণ আইন ছিল না। 

২০১৯ সালে হংকং সরকার একটি এক্সট্রাডিশন আইন প্রস্তাব করে যেখানে হংকং কোন অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে তাইওয়ানে পাঠাতে পারবেকিন্তু সমস্যা হল সেই একই আইন মেইনল্যান্ড চায়নার ক্ষেত্রেও খাটেকিন্তু চীনের ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থা হংকংয়ের বিচার ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে আশংকা করে হংকং এই আন্দোলনে জড়িয়ে পরে। 

পেছন ফিরে দেখা

চীন এবং হংকং সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম শাসনব্যবস্থার দুটি দেশ যারা একটি খুবই জটিল রাজনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধআর এই এক্সট্রাডিশন বিল চায়নাকে হংকংয়ের উপর প্রভাব ফেলতে আরো শক্তিশালী করে তুলবে। 

যদিও বলা যেতে পারে হংকং চায়নারই একটি অংশ। এর শুরুটা হয় ১৮০০ শতকের শেষ দিকে যখন চীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হতে থাকে চীন হংকংকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয়১৯৯৭ সাল পর্যন্ত হংকং ব্রিটিশ কলোনির অংশ হয়ে থাকেপরবর্তীকালে একটি বিশেষ আইনের আওতায় ব্রিটেন চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করেএকে বলা হয়েছিলএক দেশ, দুই নীতি” আইন। এই আইনে বলা হয় হংকং চীনের অংশ হলেও এতে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার পূর্ণভাবে বজায় থাকবে, যেমন, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, প্রচার স্বাধীনতা ইত্যাদিযা হংকং কে মেইনল্যান্ড চায়না থেকে পুরোপুরি ভিন্ন করে তোলেকেননা চীনের বিচার ব্যবস্থায় প্রায়শই যারা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তাদের দমন করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ব্যবহার করা হয়সেখানে নাগরিকের কথা বলার অধিকার অনেকটাই রহিত। 

২০০৩ সালে, প্রায় লক্ষ হংকং বাসী একটি আইনের বিরুদ্ধে লড়ে যেখানে বলা হয় চীনের বিপক্ষে কথা বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ২০১৪ সালে লাখো হংকং বাসী তাদের নির্বাচনের ওপর চায়নার প্রভাবের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন আন্দোলনে লেগে থাকে। বর্তমানে হংকংবাসীর এই লড়াই চায়নার এক্সট্রাডিশন বিলের বিরুদ্ধে

বাধা যখন গণতন্ত্র 

এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা দেখে বোঝা যায় যে আসলে কত মানুষ এই আইনের বিপক্ষেকিন্তু এই বিল পাস করতে হংকং এর পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটই যথেষ্টকারণ হংকং এর গণতান্ত্রিক ধাচটাই একটু আলাদাচিফ এক্সিকিউটিভ অফ হংকং নির্বাচিত হন একটি ছোট কমিটির দ্বারা যা চায়না দ্বারা অনুমোদিত হতে হয় যদিও তারা সরকার প্রধান তবুও তাদের আইন প্রনয়ণ করার কোন অধিকার নেই। আইন প্রনয়ণের জন্য রয়েছে লেজিসলেটিভ কাউন্সিল সংক্ষেপে লেজকো

অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মত হংকংয়ের রয়েছে নির্বাচিত প্রতিনিধিরয়েছে ৭০ টি আসনহংকং এর সিস্টেমে যে কয়টি সক্রিয় রাজনৈতিক পার্টি আছে তারা হয় প্রো ডেমোক্রেটিক অথবা প্রো চায়নাপ্রতি নির্বাচনে প্রো ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলেও লেজকোতে অর্ধেকেরও কম সীট পায়কারণ হংকং বাসীরা ৭০ টি সীটের মাত্র ৪০ টির জন্য ভোট দিতে পারেবাকি ৩০ টি সীট বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিনিধির দখলে থাকে। আর এই বড় বড় ব্যবসা খাত স্বাভাবিকভাবেই চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রাখতে চায়তাই স্বভাবতই এই সীটগুলো প্রো চায়না দলের সমর্থক১৯৯৭ সালে যখন হংকং -চীনের চুক্তি হয় তখন বলা হয়েছিল এই ৭০ টি সীট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেকিন্তু দুঃখের বিষয় তা হয়নিবরং শুরু থেকেই প্রো চায়না দল লেজকো এর চালকের আসন নিয়ে নিয়েছেঅথচ তারা কোনদিনই ৫০% এর বেশি ভোট পেয়ে জেতেনি। 

শেষ কথা

এইসব কারণে এই এক্সট্রাডিশন বিল হংকং বাসীর মধ্যে ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছেলাখো মানুষকে টেনে এনেছে রাস্তায়যদিও এটি চীনের বিরুদ্ধে হংকং এর প্রথম আন্দোলন নয়, কিন্তু এটিই সবচেয়ে বড়অনেকের মতে এটি বেশ ভিন্নকেননা এতে রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণআইনজীবি থেকে শিক্ষকসবাই এতে অংশ নিচ্ছেনতবে সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়েছে তরুণ সমাজ- যারা এই এক্সট্রাডিশন বিলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেতারা বিশ্বাস করে এই আন্দোলন শুধু তাদের জন্য নয় বরং হংকংয়ের ভবিষ্যতের জন্যএই আন্দোলন হংকং সরকারকে কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছেফলে বিলটি সাসপেন্ড করা হয়েছেকিন্তু তাতে এই আন্দোলন দমে যায়নিবরং তারা এই বিলের সম্পূর্ণ রদ চেয়ে আন্দোলন কঠোর করছেএই আন্দোলন এখন আর এক্সট্রাডিশন বিল রদের আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নেই বরং হংকং বাসীর যে অধিকার রয়েছে তা রক্ষার আন্দোলন হয়ে উঠেছে। 

লেখক- ফারজানা লাবিবা 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *