অকুতোভয় ও নীতির সাথে আপোষহীন সাহসী ১০ সাংবাদিক1 min read
Reading Time: 7 minutesযে কোন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, দুর্ঘটনা, অর্জন, হতাশা – যাই ঘটুক না কেন; আমরা প্রথমেই সংবাদ মাধ্যমের দারস্থ হই। আমাদের সংবাদ প্রাপ্তির মাধ্যম একটা সময় পর্যন্ত টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন অন লাইন পোর্টাল, ইউটিউব এবং ফেসবুক-টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের নেপথ্যে সাহসী সাংবাদিকরা
আমরা যারা সংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত নই, তারা আসলে সাদা চোখে প্রকাশিত সংবাদগুলোর উপরই শুধুমাত্র দৃষ্টি দেই। এই সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে যে সাংবাদিকদেরকে অনেকক্ষেত্রেই প্রচুর ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এ সম্পর্কে তেমন ধারনা রাখি না কিংবা রাখার দরকার পড়ে না।
বিশেষ করে অপরাধ জগতের তদন্ত প্রতিবেদন, রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি, যুদ্ধ বিগ্রহ বা অভ্যুত্থানের মাঠ পর্যায় থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন সব ঝুঁকিপুর্ণ পরিস্থিতিতেও অকুতোভয় ও নীতির সাথে আপোষ না করা ১০জন অসম সাহসী সাংবাদিকদের কথা আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো, যাদের কাহিনী হয়তো আপনাকে সাংবাদিকতাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণে দেখতে সহায়তা করতে পারে।
নেলি ব্লাই (Nellie Bly)
নেলি ব্লাই আসলে আমেরিকান সাংবাদিক এলিজাবেথ কোচরান সিম্যান এর ছদ্মনাম। ছদ্মনাম হলেও তিনি নেলি ব্লাই নামেই বেশি পরিচিত। জুল ভার্নের কাল্পনিক চরিত্র ফিলিয়াস ফোগের অনুকরণে ৭২ দিনে বিশ্ব ভ্রমণের রেকর্ড করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান।
একবার তিনি ব্ল্যাকওয়েল দ্বীপের Women’s Lunatic Asylum-এর অভ্যন্তরের বর্বরতা, অবহেলা, জালিয়াতি ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ পান। তিনি সিদ্ধান্ত নেন বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক তথ্য পেতে হলে তাকে ঐ আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালকদের অগোচরে রোগী হয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে।
কিন্তু এটা ছিল প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। তিনি পাগলের অভিনয় করে সবার চোখে ধুলো দিতে পারেন কিনা তা পরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য একটি অস্থায়ী বোর্ডিং হাউসে ভর্তি হয়ে সারা রাত ভর পাগলামী করেন। অন্যান্য বোর্ডাররা ভয় পেয়ে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ অফিসার-বিচারক-একজন ডাক্তার পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা শেষে তাকে পাগল ঘোষণা দিয়ে পুনর্বাসনের জন্য ব্ল্যাকওয়েল দ্বীপের এ্যাসাইলামে পাঠান।
শুরু হয় ব্লাইর পর্যবেক্ষণ ও গোপন তদন্ত। Women’s Lunatic Asylum-এর দুর্দশা, নির্যাতনসহ কিছু জালিয়াতিও ধরা পরে তার কাছে। দশ দিন পর নিয়োগদাতার মদদে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মুক্তি পান ব্লাই। পরবর্তীতে ব্লাই এ্যাসাইলামে তার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ম্যাড-হাউসে দশ দিন নামে বই আকারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। বইটি ছিল খুবই সংবেদনশিল। ব্লাইয়ের প্রতিবেদনটির উপর ভিত্তি করে আশ্রয়কেন্দ্রটি অনেকগুলি ক্ষেত্রেই সংস্কার বাস্তবায়ন করেছিল।
মে চিডিয়াক (May Chidiac)
মে চিডিয়াক ছিলেন লেবানন ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের টেলিভিশন সাংবাদিক। সাংবাদিকতা পেশায় সত্য প্রকাশ তাকে বারবার বিপদে ফেলে।
লেবাননের গৃহযুদ্ধের পরেও লেবাননে সিরিয়ার সেনা মোতায়েন অব্যহত রাখার বিষয়ে মাত্র গুটি কয়েক ব্যক্তি সমালোচনা করেন। চিডিয়াক ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি প্রধান উপস্থাপক হিসেবে লেবাননে সিরিয়ীয়দের হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত বিষয়াদী কভার করেন। নিজের হোষ্ট করা টক শোতে তিনি তাইফ চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
এতে করে তিনি প্রতিক্রিয়াশীলদের আক্রোশের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হন। ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার উপরে গাড়ি বোমা হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। হাঁটুর নীচে থেকে তার বাম পা উড়ে যায়। ত্বক, চুল এবং কাপড় জ্বলে যায়। মারাত্মকভাবে আহত বাম হাতটি কেটে ফেলতে হয়। বৈরুত এবং প্যারিসে অসংখ্য অস্ত্রোপচারের পরে কয়েক মাসের চিকিৎসায় তিনি মোটামুটি স্থির হন। ২০০৬ সালের মে মাসে আবার তিনি হাস্যজ্বল মুখে টিভিতে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকতায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
আনাবেল হার্নান্দেজ (Anabel Hernandez)
আনাবেল একজন মেক্সিকান ক্রাইম রিপোর্টার এবং লেখিকা। ২০০০ সালে যখন তার বাবাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়, তখন পুলিশ বাহিনী বিনা টাকায় হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে অস্বীকার করে। এতে তিনি নিজেই তদন্তটি পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজ উদ্যোগেই তদন্ত চালিয়ে যান। তখন থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি সরকারের মধ্যেই সংগঠিত বিতর্কিত অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের তদন্ত করবেন এবং গোপন করা সত্য প্রকাশ করবেন।
তিনি মেক্সিকান ড্রাগ পাচার, রাজনৈতিক দুর্নীতি, সরকারী কর্মকর্তা এবং ড্রাগ লর্ডদের মধ্যে জোটবদ্ধতা নিয়ে কভারেজ করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি দাস শ্রম, যৌন শোষণ, এবং সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কেও লিখেছেন। হার্নান্দেজ মাদকচক্র নিয়ে লেখার পর থেকে অসংখ্য মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। তার প্রকাশিত প্রথম বই Narcoland: The Mexican Drug Lords and their Godfathers এর কারণে তাকে দেশ পর্যন্ত ছাড়তে হয় এক সময়।
বাসেল আল শাহাদে (Bassel Al Shahade)
বাসেল ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন সিরিয়ান ক্রিশ্চিয়ান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই পড়াশোনা শেষ করা একজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ আরামদায়ক জীবন যাপন করছিলেন। তার নিজ দেশ সিরিয়ার অভ্যুত্থানের সময় যখন সন্ত্রাসের ধাক্কায় চারিদিক উন্মাতাল, অনেকগুলি নিউজ আউটলেটকেই যখন এই খবর প্রকাশের দায়ে নিষিদ্ধ করা হল, তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে পারন নি বাসেল। একাকী স্বাধীনভাবে এই ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ প্রকাশ করতে বাসেল তার আরামদায়ক নিরাপদ জীবন পিছনে ফেলে চলে আসেন।
আরব বসন্তে সরকারের ক্র্যাকডাউনকে নিন্দা করে দামেস্কে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন তিনি। দামেস্কের আল-মিদানে আরও কিছু শিল্পীদের সাথে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তিনি হামস শহরে সিরিয়ান সরকারি বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত হামলা এবং বোমা হামলার ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হামসে আল-সাফসফার কাছে সরকারী হামলার সময় নিহত হন।
নাজিবা আইয়ুবি (Najiba Ayubi)
তালেবানদের কথা আমরা কে না শুনেছি। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নাম নিলে একটা সময় প্রথমেই তালেবান নামটাই নিতে হত, এটা পুরো বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত অন্যতম সন্ত্রাসী সংগঠন। এরা আফগানিস্তানকে রীতিমতো নিউজ ব্লাক আউট করে রেখেছিল। বহু সাংবাদিক এই তালেবানদের কর্মকান্ড কভার করতে গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু কোন বাধাই অদম্য নাজিবা আইয়ুবিকে গুটিয়ে রাখতে পারেনি। যে গুটি কয়েকজন সাহসী সাংবাদিক আফগানিস্তানে তালেবানদের জড়িত থাকার তদন্ত করেছেন, নাজিবা তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।
নুর কেলজে (Noure Kelze)
গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঘটনা, আর তা যদি হয় কোন অভ্যুত্থান; সেক্ষেত্রে আলোকচিত্র ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে ওঠে । তাই ফটো সাংবাদিকতা সংবাদ শিল্পের একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম বলে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে দক্ষ ও সাহসী ফটো সাংবাদিকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নুর কেলজে এমনই একজন ফটো সাংবাদিক। তিনি IWMF Courage in Journalism Award এর প্রথম সিরিয়ীয় বিজয়ী। তবে তিনি শুরুতেই সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন সিরিয়ার একজন স্কুল শিক্ষক। ২০১২ সালে সেলফোনে বিপ্লবী যোদ্ধাদের ছবি তোলার সময় একজন বিখ্যাত যুদ্ধের ফটোগ্রাফার তাকে দেখতে পান। সেই ফটো সাংবাদিকের অনুপ্রেরণায় কেলজে ফটো সাংবাদিকতায় পথ চলা শুরু করেন।
গণতন্ত্রের জন্য সিরিয়ার লড়াইয়ের মানবিক দিকগুলো ক্যামেরাবন্দী করায় এক সময় সিরিয়ীয় বিপ্লবের প্রথম সারিতে চলে আসেন তিনি। ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে স্নিপারের আগুন থেকে পিছপা হবার সময় তার উপর একটা দেয়াল ভেঙে পড়ে এবং তার গোড়ালি ভেঙে যায়। অস্ত্রোপচারের মাত্র চার দিন পরে, তিনি আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
কেলজেকে টার্গেট করে সরকার নিয়ন্ত্রিত ও সরকার সমর্থিত প্রচার মাধ্যমে অনেক অপপ্রচারণা চালানো হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক হুমকিও দেয়া হয়েছে। ছবি তোলার সময়ে এমনকি তাকে গুলি করা হয়েছে, বিস্ফোরণ হয়েছে। এভাবে বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
এডনা মাচিরোরি (Edna Machirori)
এডনা মাচিরোরি সংবাদ প্রতিবেদন শিল্পে একজন অভিজ্ঞ ও সুপরিচিত একটি নাম। বেশ কয়েক দশক ধরে তিনি জিম্বাবুয়ের নারীদের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বড় পত্রিকার জন্য লিখেছেন।
১৯৮৮ সালে, মাচিরোরির নেতৃত্বে দ্য বুলাওয়ে ক্রনিকলে ক্ষমতাসীন দল Zimbabwe African National Union (ZANU) এর অনেক উচ্চ পর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট “দ্য উইলোগেট কেলেঙ্কারী” প্রকাশিত হয়েছিল। দ্য ক্রনিকলের প্রতিবেদনের ফলস্বরূপ একজন প্রাদেশিক গভর্নর এবং মন্ত্রিপরিষদের পাঁচজন মন্ত্রী বরখাস্ত হন। এই প্রতিবেদনের ফলে যারা সরকার ও সরকারী অনুগত এবং দুর্নীতি প্রকাশে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিহিংসা পরায়ণ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
জিম্বাবুয়ের প্রচন্ড পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মাচিরোরিকে প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় ফেলতো এবং বার বার তাকে এই কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। কিন্তু তিনি ও সর্বদাই নিজের আদর্শে অবিচল থেকেছেন।
বোফা ফর্ন (Bopha Phorn)
বোফা ফর্ন একজন কম্বোডিয়ান সাংবাদিক। জঙ্গলে একটি অবৈধ অভিযানের তদন্ত করতে গেলে দুস্কৃতিকারীরা তাকে বন্দুক দিয়ে আক্রমণ করে। তার এক আহত সহকর্মী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি পালানোর কোন প্রচেষ্টাই করেননি। বন্দুকের নল থেকে বেঁচে ফেরার পরেও এই সাহসী সাংবাদিক সরকারী দুর্নীতির বিষয়গুলি কাভার করতে থাকেন।
বোফা ফর্ন “দ্য ডেইলি ইন নমপেন”- এর এডিটর-এট-লার্জ থাকা অবস্থায় IWMF Courage in Journalism Award in New York, October 23, 2013 পুরস্কার গ্রহণ করেন।
মৌরি কোনিগ (Mauri Konig)
মৌরি কোনিগ, একজন ক্রাইম রিপোর্টার। অনেকদিন ধরেই প্যারাগুয়ের সেনাবাহিনীতে যৌন দাস হিসাবে পাচারের জন্য ব্রাজিলিয়ান শিশুদের অপহরণ করছিল একটি সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র। তিনি ২০০০ এবং ২০০১ সালে এই নিয়ে একাধিক নিবন্ধ লেখেন। একাধিক বিতর্কিত বিষয় কভার করার পর প্যারাগুয়ান পুলিশ থেকে আসা তিনজন ব্যক্তি ১৯ ডিসেম্বর ২০০০ সালে তাকে লাঞ্ছিত করে। হামলাকারীরা তাকে নির্যাতন করে, শিকল দিয়ে পেটায় এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
তবে এ যাত্রা কনিগ বেঁচে ফেরেন এবং লেখা অব্যাহত রাখেন। এস্তাদো দে পানামায় প্রকাশিত এই সিরিজের একটি বিবরণের জন্য তিনি আন্তঃ-আমেরিকান প্রেস অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২০০২ সালের পুরষ্কার অর্জন করেন।
ব্রাজিল-প্যারাগুয়ে সীমান্ত নিয়ে তার গবেষণার জন্য ২০০৩ সালে স্থানীয় পুলিশ পুনরায় কনিগকে হুমকি দেয়। ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে তিনি সীমান্তে যৌন দাস হিসাবে শিশু পাচার সম্পর্কে লিখতে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত কনিগের এই গবেষণাধর্মী রিপোর্টিংএর কারনেই একজন শীর্ষস্থানীয় পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ সম্ভব হয়।
আজিমজহন আসকারভ (Azimzhan Askarov)
আজিমজাহান আসকারভ কিরগিজ বংশোদ্ভূত সাংবাদিক। তিনি ২০০২ সালে ভোজডাহ গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটির উদ্দেশ্য ছিল উজবেক কিরগিজস্তানি রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বর্বরতার তদন্ত করে তা প্রকাশ করা। ২০১০ সালে দক্ষিণ কিরগিজস্তানের জাতিগত সংঘর্ষের সময় উজবেকদের টার্গেট করে সহিংসতার বিবরণ নথিভুক্ত করার কাজ করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে তাকে গণ বিড়ম্বনা সৃষ্টি, জাতিগত বিদ্বেষ প্ররোচিত করা এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতিবাজ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিতর্কিত বিষয় কভার করে তিনি যাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন, সেইসব কর্মকর্তার হাতে এসময় তিনি বেশ মারধর খান।
তার প্রতি অনিয়মের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী প্রতিবাদ জানায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রিপোর্টার্স উইথ বর্ডারস, পিপল ইন নিড, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী তার পক্ষে কথা বলেছে। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসকারভকে ২০১৪ সালের মানবাধিকার ডিফেন্ডার পুরস্কার দিয়ে সন্মানিত করে। কিরগিজ সরকার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্বে ও চক্রান্তে আসকারভ এখনও পর্যন্ত সকলের চোখের আড়ালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু
আরও পড়ুন- এক বছরে নিহত ৯৫ সাংবাদিকঃ আইএফজে
আরও পড়ুন- জামাল খাসোগি হত্যার প্রহসনের বিচার