লুসি হোল্ট’র সহায়তায় এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা1 min read
Reading Time: 2 minutesবাবুল ডি’ নকরেক,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ মহীয়সী নারী লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হোল্টের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। লুসি হোল্ট ৫৭ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
প্রতি বছর ভিসা নবায়নের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার ১৫ বছরের মাল্টিপল বাংলাদেশি ভিসাসহ লুসি হেলেনের হাতে তাঁর পাসপোর্ট তুলে দেন। সেটি হাতে পেয়ে লুসি আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। প্রধান মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তিনি আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েন। আনন্দে উদ্বেলিত লুসি প্রধান মন্ত্রীর হাতে এঁকে দেন ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার চিহ্ন স্বরূপ হস্ত-চুম্বন। এতে প্রধান মন্ত্রী নিজেও আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে জানান, “প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকালে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভার আগে ১৫ বছরের মাল্টিপল ভিসাসহ লুসি হেলেনের হাতে তাঁর পাসপোর্টটি তুলে দেন।”
করিম বলেন, “পাসপোর্ট হস্তান্তরের সময় প্রধানমন্ত্রী ৮৭ বছর বয়সী মানবতাবাদী লুসি হেলেনের সঙ্গে কথা বলেন। লুসি হেলেন বর্তমানে বরিশাল শহরে অক্সফোর্ড মিশনে কর্মরত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় লুসি হেলেন অভিভূত হয়ে পড়েন।”
জন হোল্ট ও ফ্রান্সিস হোল্টের কন্যা লুসি ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হেলেন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। সে বছর তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে যোগ দেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের শিক্ষা দিতেন।
লুসি আর ইংল্যান্ড ফিরে যাননি। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার টানে এখানেই থেকে যান। এরপর তিনি যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা এবং গোপালগঞ্জে ৫৭ বছর ধরে কাজ করেন। ২০০৪ সালে অবসর নেয়ার পর তিনি বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে ফিরে আসেন। অবসর জীবনে তিনি ইংরেজি শিক্ষা দেন এবং দুস্থ শিশুদের মানসিক উৎসাহ দেন। পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের জন্য সামর্থ্যবানদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লুসি হেলেনের অসামান্য অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আহত মানুষের সেবা-শুশ্রূষা করেছেন। সে সময় তিনি যশোর ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের ইংরেজি শিক্ষা দিতেন। যুদ্ধ শুরু হলে লুসি ছাড়া অন্য সবাই স্কুল বন্ধ করে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে খুলনা চলে যায়। ভয়ঙ্কর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি পাশের ফাতেমা হাসপাতালে যান এবং যুদ্ধাহত বেসামরিক নাগরিকদের সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা একজন বিদেশি মহিলার এমন আগ্রহ দেখে অবাক হন এবং তাকে এ ব্যাপারে সম্মতি দেন। এরপর থেকে তিনি যুদ্ধাহত মানুষের সেবা দিতে শুরু করেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লুসিকে সম্মাননা প্রদান করে।
লুসির এখন শেষ ইচ্ছা, তিনি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাহিত হবেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তিনি এ দেশের নাগরিকত্ব কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক বছর তার ভিসা নবায়নের জন্য তাকে প্রচুর টাকা খরচ করতে হত বলে তিনি বেশ কয়েকবার এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাঁর আবেদন কখনও গৃহীত হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর যখন নিজে এসে তাঁর জন্য মাল্টিপল ভিসা সহ তাঁর পাসপোর্ট হাতে তুলে দিয়ে গেছেন, তখন তাঁর শেষ ইচ্ছাটিও প্রধানমন্ত্রী পূরণ করবেন বলে লুসি বিশ্বাস করেন।