রোমান সাম্রাজ্যের অজানা সব তথ্য1 min read
Reading Time: 4 minutes‘রোম একদিন গড়ে উঠেনি’ এই প্রবাদ বাক্য কম বেশি সবারই জানা। কিন্ত রোমের গোড়া পত্তন হয়েছিল আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগে।রোমান সাম্রাজ্যের শুরুটা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে এক সময় গোটা ইউরোপের সাথে সাথে এশিয়ার পশ্চিমাংশ ও আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল ও শাসন করে তাঁরা। রোমান সাম্রাজ্য কে বা কারা তা নিয়েও আছে মিথ আর প্রচলিত নানা গল্প। চলুন জেনে নিই সেই মিথ আর প্রাচীন রোমানদের টুকরো কিছু তথ্য।
গোড়া পত্তনের ইতিহাস
রোম ঘিরে অসংখ্য মিথ আর গল্প প্রচলিত। তবে এর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় কিংবদন্তি হচ্ছে, ‘রোমিউলাস ও রেমাস’।রিয়া সিল্ভিয়া ও যুদ্ধদেবতা মার্স অথবা ডেমি গড হারকিউলিসের দুই পুত্র ছিলেন রোমিউলাস ও রেমাস। জন্মের সময়ই এক জ্যোতিষ জানান, ‘বড় হয়ে এই দুই ভাই এক রাজাকে পরাজিত করবে।’ ফলশ্রুতিতে দুই শিশু পুত্রকে ফেলে দেয়া হয় টাইবার নদীর তীরে।
সেখানেই এক নেকড়ে মায়ের সান্নিধ্যে বড় হয় তাঁরা আর পরাজিত করে সে অঞ্চলের রাজাকে। কিন্ত রাজ্যশাসনের প্রশ্নে বিরোধ বাঁধে দুই ভাইয়ের। রেমাসকে হত্যার মধ্য দিয়ে রোমিউলাস সূত্রপাত করে আধুনিক রোমের।
গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ
গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় ছিল প্রাচীন রোমে। কিন্ত এর বাইরেও ‘ঘোড়ার গাড়ি দৌড় প্রতিযোগিতা’, নৃত্যকলা ও মঞ্চনাটকও ছিল বিনোদনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। এজন্য পৃথক পৃথক মঞ্চ ও মাঠ নির্মিতও হয়েছিল। তবে এটাও ঠিক গ্ল্যাডিয়েটরদের সম্মান ছিল অনন্য।রোমান নারীরা গ্ল্যাডিয়েটরদের দেহের ঘামকে প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করতেন।
কলোসিয়ামের পূর্বাপর
রোমের কলোসিয়াম নির্মিত হয় ৭২ থেকে ৮০ সালের মধ্যে। এটি বিশ্বের সবচাইতে বড় এম্পিথিয়েটার। গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ, বুনোজন্তুদের সাথে লড়াই ও মঞ্চনাটক পরিবেশিত হতো এখানে। এর ধারণ ক্ষমতা ছিল আনুমানিক ৬৫, ০০০ ।অনেকের মতে ৮৭,০০০ দর্শক একসাথে উপভোগ করতে পারতো যেকোনো অনুষ্ঠান। বর্তমানে এই কলোসিয়াম নির্মাণ করতে গেলে শুধু জমির মূল্যবাদেই খরচ হবে ৩৮০ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়াও প্রাচীন রোমে ‘ট্রোজেন মার্কেট’ নামে ৪তলা এক শপিংমলও ছিল। এতে প্রায় ১৫০টি দোকান ও অফিস নিয়মিত কার্যক্রম চালাতো এখানে। এটি নির্মিত হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ সালের মধ্যে।
কংক্রিটের ইতিহাস
রোমানরাই প্রথম কংক্রিট তৈরির ফর্মুলা বের করেন। তাঁদের বেশিরভাগ স্থাপনাই শক্ত ও মজবুত কংক্রিট দ্বারা নির্মিত।তবে রোমান সাম্রাজ্য পতনের ফলে এই টেকনোলজি হারিয়ে যায় প্রায় এক হাজার বছরের জন্য।
যুদ্ধ জাহাজে নিয়ন্ত্রণে ছিলনা ক্রীতদাসেরা
প্রাচীন রোমে সাধারণত ক্রীতদাসদের কোন রাষ্ট্রীয় অধিকার ছিলনা। এর প্রভাব থাকতো যুদ্ধ ক্ষেত্রেও।যুদ্ধ জাহাজ পরিচালনা বা চালানোর এখতিয়ার ছিলনা তাদের। কারণ, এর অর্থযুদ্ধে তারা অংশগ্রহণ করছে। আর যোদ্ধ মাত্রেই রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী।
মাতৃভাষা ল্যাটিন নয়
রোমান সাম্রাজ্যে অধিবাসীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৫ মিলিয়ন। প্রত্যেক অঞ্চলের অধিবাসীরা। তাদের মাতৃভাষাতেই কথা বলতো। সেনাবাহিনী ও আইন সম্পর্কিত দাপ্তরিক ভাষা ছিল ল্যাটিন। সেল্টিক, সিরিয়াক, থ্রাসিয়ান, ক্যাপাডোসিয়ান প্রভৃতি ছিল আঞ্চলিকের অন্তর্গত।গ্রিককে ভাবা হতো আভিজাত্যের প্রতীক।
দর্শনে অরুচি
সেনেকা ও মার্কাস অরেলিসের মতো প্রবাদতুল্য দার্শনিক থাকলেও রোমানরা দর্শনকে খুব একটা পছন্দ করতোনা। এর পেছনে কারণ ছিল, দর্শন শাস্ত্রের উত্থানে পরাজিত গ্রিকজাতির অবদান এবং আর কর্মব্যস্ত জীবনে দর্শনের বুলি একেবারেই গুরুত্বহীন মনে করা।
বিষবধ না বিষে বধ?
খ্রিস্টজন্মের প্রথম শতক থেকে রোমান সম্রাটদের মধ্যে চালু হয় এক অদ্ভুত বিশ্বাসের।রোগ প্রতিরোধের ওষুধ হিসেবে তাঁরা প্রতিদিন অল্প করে মিথ্রিডেটিয়াম সেবন করতেন। আদতে এই মিথ্রিডেটিয়াম ছিল যাবতীয় বিষসহ ৬৫ রকমের নির্যাসের মিশ্রণ।পন্টুশের রাজা মিথ্রিডেট ছিলেন এর জনক।
ভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রতি মনোভাব
রোমান সাম্রাজ্য কালের খ্রিস্টধর্মের সূত্রপাত। সেই সময় রোমানরা পাগান দেবতাদের পূজা করতো। কিন্ত খ্রিস্টধর্মালম্বীগ্ণ সরাসরি এর বিরোধিতা করে এবং দেবতা পূজায় অস্বীকৃতি জানায়। তাই মূর্তি পূজারী রোমানদের ভীষণ দুর্ব্যবহার ও হেনস্থার শিকার হয় নব্য খ্রিস্টানরা।কোন কোন স্থানে জোরপূর্বক ধর্ম চাপিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করে তারা।
বাম হাতি মানে অশুভ
রোমানদের মধ্যে ৯০ ভাগই ছিল ডানহাতি। ফলে বাকি ১০ ভাগ বাম হাতি ব্যক্তিদের জন্য পৃথক যন্ত্রাদি বা সুবিধা একদমই ছিলনা।এর উপর তাঁদের মনে করা হতো অশুভও অবিশ্বাসী।
আয়ুষ্কালে বিকেল
প্রাচীন রোমানদের গড় আয়ু ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে এর মানে এই নয় যে এর বেশি কেউ বাঁচতো না।মূলত প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুর আধিক্যের ফলে গড় আয়ু কমে আসে।
উৎসবের কথা
রোমানদের মূল উৎসব ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। নানা রকম দেবতার পূজা আর্চনাই ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। তবে এর মধ্যে শনি দেবতার প্রতি ‘ স্যাটার্নালিয়া’ ছিল প্রধান। ছয় দিন ব্যাপি এই উৎসবে মহাভোজের পাশাপাশি উপহার বিনিময়, জুয়াখেলা, নাচ-গান সবই হতো ।তবে ক্রীতদাসদের জন্য এই উৎসব ছিল বাড়তি আনন্দের। মালিকেরা তাঁদের নানা রকম উপহার ও বিনোদনের সুযোগ দিতেন এই সময়ে। প্রাচীন মিশরের ইতিহাস ও ছিলো বিস্ময়কর।