যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য কি? 1 min read
Reading Time: 4 minutesযুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইংল্যান্ড কি একই দেশ? নাকি আলাদা? আলাদা হলে এদের মধ্যে পার্থক্যই বা কি? এমন কিছু প্রশ্ন আপনাদের অনেকের মনেই হয়তো লুকিয়ে আছে। এই লেখায় আপনাদের মনের সকল জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার চেস্টা করবো।
বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ
ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিম অংশে রয়েছে বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ। গ্রেট বৃটেন, আয়ারল্যান্ড, দ্য আইল অফ ম্যান, দ্য আইলস অফ স্কিলি, দ্য চ্যানেল আইল্যান্ডসহ ৬,০০০ এর বেশি দ্বীপ নিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। যুক্তরাজ্য, গ্রেট বৃটেন, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড সব বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জেরই অংশ।
দ্য ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে/ যুক্তরাজ্য)
দ্য ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন এন্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল ‘ইউকে’ বা যুক্তরাজ্য। শুনতে অনেক গালভরা এই নামটির পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্য বা দেশ। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে যুক্তরাজ্য।
তবে একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে আর সেটি হল কখন গঠিত হয়েছিল এই ইউকে? এই নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও অনেকের মতে “অ্যাক্ট অফ ইউনিয়ন” এর মাধ্যমে ১৭০৭ সালে এটি গঠিত হলেও ১৮০১ সালের দিকে যখন আয়ারল্যান্ড এর সাথে সংযুক্ত হয়েছিল তখন এটাকে ইউনাইটেড কিংডম নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
দ্য গ্রেট ব্রিটেন
মজার ব্যাপার হল গ্রেট ব্রিটেন কোন দেশ নয় বরং বিশাল আয়তনের একটি দ্বীপ। বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় অখণ্ড দ্বীপ এটি। এই অখণ্ড দ্বীপটি ভাগাভাগি করে নিয়েছে যুক্তরাজ্যের উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে বাকি তিনটি দেশ- ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড। ধারণা করা হয় সবচেয়ে বড় দ্বীপ বলেই কিনা এর নামের আগে “গ্রেট” শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।
ব্রিটেন নামটি রোমান শব্দ ব্রিটানিয়া থেকে উৎপন্ন হলেও এর সাথে গ্রেট শব্দটি কেন জুড়ে দেয়া হয়েছিল সে নিয়ে বিভিন্ন মতানৈক্য দেখা যায়। প্রাথমিক যে মতটি প্রাধান্য পায় সেটি হল পাশের ব্রিটানি নামক একটি ফ্রেঞ্চ প্রতিবেশী রাজ্যের থেকে আলাদা শব্দ হিসেবে জোর দেয়ার জন্যই হয়ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল এই গ্রেট শব্দটি।
দ্বিতীয়ত যে মতটি পাওয়া গিয়েছিল সেটা হল, কিং জেমস চাচ্ছিলেন না তাকে শুধুমাত্র ব্রিটেনের রাজা হিসেবে বলা হয়। কেননা ব্রিটেন বলতে তখন বুঝানো হত রোমান ব্রিটেনকে, যেটা গঠিত হয়েছিল শুধুমাত্র ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে নিয়ে। কিন্তু তিনি ছিলেন পুরো দ্বিপটির রাজা অর্থাৎ এরমধ্যে স্কটল্যান্ডও ছিল। আর তাই তার রাজা হিসেবে নিজেকে অনেক বড় করে বলার জন্যই তিনি এই ব্রিটেনের সাথে গ্রেট শব্দটি জুড়ে দিয়েছিলেন।
গ্রেট বৃটেনের বাইরে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপ
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস আবার পুরোপুরিভাবে গ্রেট ব্রিটেন নামক দ্বীপখন্ডের মধ্যে পড়েনি। আমরা আগেই বলেছি যে গ্রেট বৃটেন বলতে একটি অখণ্ড দ্বীপকে বোঝায়। তাই গ্রেট বৃটেনের বাইরের থাকা ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের ছোট ছোট দ্বীপগুলো গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হতে পারেনি।
ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইংল্যান্ডের Isle of Wight, ওয়েলসের Isle of Anglesey, স্কটল্যান্ডের Island of the Clyde এবং স্কটল্যান্ডের Hebrides, Orkney Island, Shetland Islands নামের বেশ কয়টি ছোট ছোট দ্বীপ যারা গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। তবে এই ছোট ছোট দ্বীপগুলো কিন্তু যুক্তরাজ্যের অংশ।
ইংল্যান্ড
আমরা অনেকেই ইউনাইটেড কিংডম বলতে কেবলমাত্র ইংল্যান্ডকেই বুঝে থাকি। ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের মতই ইংল্যান্ড একটি দেশ। এটা কেবলমাত্র ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক থেকে সবচাইতে বড় দেশ। এছাড়া ইউনাইটেড কিংডম গঠনের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড দেশটিরই সবচাইতে বড় ভূমিকা ছিল। আর তাই বলেই হয়ত ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনকে ইউনাইটেড কিংডমের রাজধানী হিসেবেও গণ্য করা হয়।
আসুন এক নজরে আরেকবার দেখে নেই যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইংল্যান্ড সম্পর্কেঃ
দ্য ইউনাইটেড কিংডমঃ ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড নামক চারটি দেশ নিয়ে গঠিত একটি সার্বভৌম দেশ।
দ্য গ্রেট ব্রিটেনঃ ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি বৃহৎ দ্বীপ। যার মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস নামক তিনটি দেশ রয়েছে।
ইংল্যান্ডঃ ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে আয়তন এবং জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় দেশ।
যুক্তরাজ্য গঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
দ্য ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন এন্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এক দিনেই মানচিত্রে জায়গা করে নেয় নি। পুরো অঞ্চলটি গঠনের পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। আসুন সেই সুদীর্ঘ ইতিহাসে একটু নজর বুলিয়ে নেই…
- ৯২৫ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ড নামক রাজ্যটি গঠিত হয়েছিল এংলো-স্যাক্সোন উপজাতি নিয়ে।
- পরবর্তীতে ১৫৩৬ সালের দিকে ‘কিং হেনরি ৭’ একটি বিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে একই রাজ্যের মধ্যে নিয়ে আসেন। পূর্বে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস দুটি আলাদা দেশ থাকলেও ১৫৩৬ সালের পর থেকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে একটি দেশ হিসেবে এবং একই আইনের মধ্যে শাসন করা শুরু হয়েছিল।
- ১৭০৭ সালের দিকে গঠিত হয়েছিল দ্য গ্রেট ব্রিটেন! পূর্বে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস নিয়ে গঠিত হওয়া ইংল্যান্ড দেশটি স্কটল্যান্ডের সাথে একত্রিত হয়ে গঠন করা হয়েছিল “দ্য গ্রেট ব্রিটেন” নামক রাজ্যটি।
- ১৮০১ সালে এই গ্রেট ব্রিটেন নামক এই ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল আয়ারল্যান্ড।
- ১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড দেশটি এই ইউনিয়ন থেকে নিজেদের নাম উহ্য করলেও এর উত্তর ভাগটি অর্থাৎ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে যায় গ্রেট ব্রিটেনের সাথে। এখন পর্যন্ত ইউনাইটেড কিংডম এভাবেই অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
আশা করছি আগ্রহী পাঠকরা এতক্ষণে যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য ভালোমতো বুঝতে পেরেছেন। তারপরও আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আরেকটি বার পুরো বৃটিশ দীপপুঞ্জটির মানচিত্র তুলে ধরছি –
Rabbi
ভাই যুক্তরাজ্যর বিষয়টা ভালো করে বুঝলাম না।