বিশ্ব

মুর্তাজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে না সৌদি আরব1 min read

জুন ১৬, ২০১৯ 3 min read

author:

মুর্তাজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে না সৌদি আরব1 min read

Reading Time: 3 minutes

১৩ বছর বয়সে আটক মুর্তাজা কুরেইরিসকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সৌদি আরব। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা।

মুর্তজা কুরেইরিসের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্তে বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীরা নড়েচড়ে বসেছিল। অনেক মানবাধিকার সংগঠন থেকেই সৌদি আরবের কাছে অনুরোধ জানানো হচ্ছিল এই ধরনের একটি অমানবিক সাজা যেন না দেয়া হয়। কিন্তু কে এই মুর্তজা এবং কি ছিল তার অপরাধ যার জন্য এমন কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছিল সে?

বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি এর তথ্য অনুসারে আরব বসন্ত আন্দোলনের একটি মিছিল নেতৃত্ব দেয়ার সময় গ্রেফতার করা হয় এই সৌদি শিশুকে, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। তারপর থেকেই এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে জেলেই পরে থাকতে হয়েছে তাকে আর অপেক্ষা করতে হয়েছে কঠিন সাজার। 

সৌদি আরবের কোর্টে সরকার পক্ষ মৃত্যুদণ্ড কামনা করেছে, কেননা তাদের ভাষ্যমতে মুর্তজা দেশদ্রোহ মূলক কাজে লিপ্ত ছিল এবং দেশদ্রোহের একমাত্র সাজা মৃত্যুদণ্ড। সিএনএন থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজে মুর্তজাকে দেখা গেছে আন্দোলনরত একটি তরুণ দলের নেতৃত্ব প্রদান করা অবস্থায়। উল্লেখ্য যে মুর্তজার বড় ভাই আলীও এই ধরনের আন্দোলনে সামিল ছিল এবং ২০১১ সালে আন্দোলনরত অবস্থাতেই তাকে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়।

বর্তমানে  মুর্তজাকে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে অবস্থিত একটি কিশোর কারাগারে রাখা হয়েছে। এছাড়া চাঞ্চ্যল্যকর তথ্য এই যে আটকের পর থেকে বিগত চার বছরের মধ্যে মুর্তজার সঙ্গে কোন আইনজীবীর সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি এর ভাষ্যমতে এই দীর্ঘ সময়ে মুর্তজার উপরে চালানো হয়েছে নির্মম  অত্যাচার। এমনকি তাকে বলা হয়েছিল যে মুর্তজা যদি তার অপরাধ স্বীকার করে নেয় তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে এই ধরনের অভিযোগের পর সৌদি আরব সরকার থেকে কোন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

এই ঘটনার সূত্রপাতের সময়টা ছিল ২০১১ সাল, তৎকালীন সময়ে সৌদি রাজতন্ত্রের বিভিন্ন অন্যায় ও অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য চলছিল আরব বসন্ত নামক এক আন্দোলন। পুরো দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং এরই এক ক্ষুদ্র অংশের সাথে জড়িত ছিল তখনকার সময়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছোট্ট মর্তুজা, যে কি না তার ভাইকে হারিয়েছিল ঠিক একই আন্দোলনে। কিশোর মুর্তজা তার বন্ধুদের নিয়ে সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতীকী আন্দোলন স্বরূপ একটি সাইকেলের র‍্যালি নিয়ে হাজির হয়েছিল রাজপথে। তখন ছোট্ট মর্তুজার সঙ্গে ছিল প্রায় ৩০ জনের মত কিশোর। সেই র‍্যালিতে মুর্তজা সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জোরে জোরে চিৎকার করে প্রতিবাদ করছিল এবং সৌদি রাজতন্ত্রের পতনের ডাক দিচ্ছিল। ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে পড়ে যায় এবং তাকে গ্রেফতার করার জন্য খোঁজা শুরু হয়ে যায়। এর পর এভাবেই প্রায় দীর্ঘ তিন বছর পার হয়ে যায় এবং মুর্তজা যখন তার পরিবার নিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনে পালিয়ে যাচ্ছিল সেই অবস্থায় আরব-বাহরাইন সীমান্তে সৌদি প্রশাসন মুর্তজাকে গ্রেফতার করে নেয়।

এছাড়া মর্তুজার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি অভিযোগের মধ্যে পুলিশ বাহিনীর উপর পেট্রোল বোমা হামলায় সহযোগিতা এবং ভাইয়ের জানাজা নিয়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে পদযাত্রা করা অন্যতম।

বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি এর মতে এর আগেও বিদ্রোহ দমন করার জন্য সৌদি সরকার আরো অনেক জনকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং বিদ্রোহ দমনের অন্যতম একটি হাতিয়ার হিসেবে তারা এই মৃত্যুদণ্ডকে কাজে লাগাচ্ছে। এমনেস্টি এর মধ্যপ্রাচ্য ডিরেক্টর লীন মালো-উফ বলেন, এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য সৌদি সরকার যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বদ্ধ পরিকর, হোক সেটা অনেক কঠিন এবং মানবাধিকার পরিপন্থী। কিশোর অথবা শিশু বয়সে করা অপরাধের সাজা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পর পরিণত বয়স হলে কার্যকর করা কতটা যুক্তিগত এবং অমানবিক সেটা বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে সহজেই অনুমেয়।

বিগত এপ্রিল মাসে সৌদি আরব এই ধরনের আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে প্রায় ৩৭ জনকে জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। আদতে এগুলো ছিল বিদ্রোহীদের জন্য এক ধরনের হুমকি যে বিদ্রোহ বন্ধ না করলে যে কারো যে কোন সময়ে এই ধরনের পরিণতি হতে পারে। 

যদি মুর্তজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তাহলে সৌদি আরবের ইতিহাসের সবচাইতে কম বয়সী হিসেবে মুর্তজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। তবে সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মুর্তাজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে না। ২০২২ সালেই তাঁকে মুক্তি দিতে পারে সৌদি আরব। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে আমাদের আরও কিছু সময় হয়ত অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ

আরও পড়ুন- অস্ত্র বাণিজ্যের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান—প্রধান ক্রেতা সৌদি আরব

আরও পড়ুন- সৌদি আরবের হাতে পারমাণবিক প্রযুক্তি তুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *