কোন পথে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন 1 min read
Reading Time: 3 minutesশঙ্কিত ট্রাম্প আর আশাবাদী বাইডেন
নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে এরই মাঝে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে জয়ী বলে ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে দেয়া ভাষণে এমন দাবী করেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। সেই সাথে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ভোট গণনা বন্ধের জন্য সুপ্রিমকোর্টে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তার দাবী ভোটগ্রহণের দিনের বাইরে কোন প্রকার ভোট গণনা করা অনৈতিক। যদিও বাস্তবিক অর্থে সেটি প্রায় অসম্ভব।
মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে ট্রাম্প নিজের ভাষণে বলেন, ‘একদল বাজে লোক, আমাকে যারা ভোট দিয়েছে তাদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে যাব। আর আমরা সবরকম ভোটগণনা বন্ধ রাখতে চাই।”
ট্রাম্প আরো বলেন, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, অ্যারিজোনাসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে দল এগিয়ে আছে। ট্রাম্পের দাবী, ভোটের দিনের পরে ডাকযোগে ভোট নেয়া ও ভোট গণনা অবৈধ। ভোট গণনা বন্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবেন। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে যেকোন ধরনের আইনি লড়াইয়ে নামতে তারাও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। মার্কিন হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ এর স্পিকার ও ডেমোক্র্যাটিক দলের নেত্রী ন্যান্সি পোলেসিও সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে সুপ্রিমকোর্ট এর চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্যের খানিক আগেই ডেলওয়্যার থেকে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন অপর প্রার্থী জো বাইডেন। নিজ বক্তব্যে তিনিও জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে ট্রাম্পের তুলনায় বেশ স্বাভাবিক উত্তর দিয়েছেন বাইডেন। সমর্থকদের তিনি বলেন, “আমরা জয়ের পথেই আছি। প্রতিটা ব্যালট গোণার আগ পর্যন্ত নির্বাচন শেষ হচ্ছেনা। আমি বা ট্রাম্পের ঘোষণায় নির্বাচন শেষ হবেনা।” এ সময় বিপুল সমর্থনের জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
দোদুল্যমান জর্জিয়া, পেনসেলভানিয়া সহ অন্যান্য রাজ্যে ফলাফল অনুকূলে থাকার আশা প্রকাশ করে বাইডেন বলেন, আমরা আগামীকাল সকাল নাগাদ পুরো ফলাফল পেতে পারি। তবে এটা বলা আমার বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নয় যে কে বিজয়ী হবে। এটা আমেরিকান জনগণের সিদ্ধান্ত।
সহিংসতার আভাস
আগে থেকেই যার শঙ্কা ছিল, সেটাই সত্যি হতে চলেছে। নির্বাচন শেষ হতে না হতেই সহিংসতার আভাস মিলেছে পুরো দেশে। মধ্যরাতেই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করতে শুরু করেছেন। শহরের অনেক এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
মূলত একতরফাভাবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি অভিযোগ করার কারণেই এমন বিক্ষোভের শুরু বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। বিবিসি জানায়, এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের রাতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় নেমে এসেছে।
ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, পোর্টল্যান্ড, ওরেগন এবং নিউ ইয়র্ক শহরেও বিক্ষোভ চলছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকেই এসব শহরের ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্ত কার্যক্রম গুটিয়ে রেখেছেন। তবে এসব স্থানে বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। অন্যদিকে সহিংস বিক্ষোভের জেরে হোয়াইট হাউজের সামনে থেকে অনেককেই আটক করা হয়েছে।
কংগ্রেসেও চলছে তুমুল লড়াই
কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নয়, একইসাথে দেশটির সংসদ কংগ্রেসের জন্যেও প্রতিনিধি যাচাই চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে ডেমক্র্যাটরা। ১৮০ আসন পেয়েছে তারা। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের ঝুলিতে গিয়েছে ১৭১ টি আসন। হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে দরকার পড়বে ২১৮ ভোটের। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় পদ্ধতির নিম্নকক্ষ নামে পরিচিত হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে মোট আসন সংখ্যা ৪৩৮ টি।
এছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষ নামে পরিচিত সিনেটে অবশ্য লড়াইটা আরো বেশি জমে উঠেছে। এখানে মোট আসন ১০০ টি। যার মাঝে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ৫১ টি আসন। এখন পর্যন্ত এখানে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ৪৭ টি আসনে জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা। ঠিক এক আসন কম নিয়ে অর্থাৎ ৪৬ আসন নিয়ে কিছুটা চাপে আছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
কেন এত বিলম্ব?
বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরিস্থিতির কারণে এখনো পর্যন্ত ফলাফল জানা সম্ভব হয়নি। কোভিড এর কারণে চলতি নির্বাচনে অতীতের চেয়ে অনেক বেশি আগাম ভোট জমা পড়েছে। আর এই আগাম ভোটের বেশিরভাগেরই গনণা কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। যেহেতু মার্কিন নির্বাচনে জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না, তাই বর্তমানে ভোট গণনা কাজেই বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ভোট গণনা কাজের পর সেটি কেন্দ্রের কাছে চলে যাবে। এবং সেখান থেকেই আসবে ইলেকটোরাল কলেজ ফলাফল।
সিএনএন এর একাধিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো তার বেশিরভাগ সমর্থক কোভিডকে বড় ইস্যু হিসেবে দেখতে চাননা। যার কারণে ঘর থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার ব্যাপারে রিপাবলিকানদের আগ্রহ ছিল বেশি। অন্যদিকে বাইডেন সমর্থকদের একটি বড় অংশই ডাকযোগে ভোট দানের কাজ সম্পন্ন করেছেন। যার ফলাফল হিসেবে নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপেও বাইডেনকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল প্রায় সব ক্ষেত্রে। এ কারণেই শেষ মুহুর্তে উইনকনসিন, মিশিগান এবং পেনসেলভানিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যে বাইডেনের নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
নাটক জমে উঠেছে মিশিগানে
অবশেষে মিশিগানেও এগিয়ে গেলেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের ৪৯ দশমিক ১ শতাংশের বিপরীতে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। উইসকনসিনে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এই রাজ্যে ট্রাম্পের পক্ষে আছে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত মিশিগান ও উইনকনসিনে নিজের যাত্রা ধরে রাখতে পারলে প্রায় ২৬ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাবেন ট্রাম্প। সেই সাথে যুক্ত হতে পারে নেভাদার আরো ৬ ভোট। সেক্ষেত্রে পেনসেলভানিয়ার ২০ ভোট পেলেও অনেকটাই পিছিয়ে থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২৭০ আসন না পেলে
এখন পর্যন্ত দুই পক্ষেই তুমুল লড়াই চলছে। কেউই নিশ্চিত না কে হবেন পরের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু যদি সবশেষ ফলাফলে কেউই ২৭০ আসন না পান? অর্থাৎ যদি ২৬৯ হিসেবে ফলাফল টাই হয়? এক্ষেত্রেও আছে জটিল সমাধান। যদি ফলাফল সমান হয়, সেক্ষেত্রে অন্য এক ব্যবস্থার দিকে চলে যেতে হবে। এর মধ্যস্ততা তখন চলে যাবে সিনেটের কাছে। হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। তবে তারা আলাদা ভোট না দিয়ে রাজ্য হিসেবে একটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করবেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ২৭ ভোট দরকার হবে। অন্যদিকে সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এর অর্থ প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট দুইজন দুই পক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে পারেন। তবে সবকিছু শেষে আশ্বাসের কথা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুবিশাল ইতিহাসে এতটা জটিলতা কেবল একবারই দেখা গিয়েছিল। সেটা ১৯৩৩ সালে।
লেখক- জুবায়ের আহম্মেদ