ভ্লাদিমির পুতিন: স্পাই থেকে প্রেসিডেন্ট1 min read
Reading Time: 3 minutesরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা এই পৃথিবীতে খুবই কম। তবে মিডিয়ার কল্যাণে “ভ্লাদিমির পুতিন“ নামটি কানে চলে আসলেও তার বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। যদিও পুতিনের প্রাথমিক জীবন ও বর্তমান জীবনের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাৎ। প্রাথমিক জীবনে পুতিনের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না বললেই চলে, অথচ রাজনীতির কারণেই আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অতি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই প্রভাবশালী নেতা প্রাথমিক জীবনে ছিলেন একজন স্পাই তথা গোয়েন্দা কর্মকর্তা। পুতিনের স্পাই থেকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসার রোমাঞ্চকর এই যাত্রা সম্পর্কে আজ আপনাদের জানাবো।
ভ্লাদিমির পুতিন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনগ্রাদের (বর্তমানের সেন্ট পিটার্সবার্গে) একটি সাধারণ পরিবারে ১৯৫২ সালের ৭ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কারখানায় কাজ করতেন এবং দাদা ছিলেন একজন বাবুর্চি। লেলিনগ্রাদেই তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়; বাল্যকালে বেশ দুষ্ট ও অলস প্রকৃতির ছাত্র ছিলেন পুতিন। তবে পরবর্তীতে তিনি লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী হয়ে ওঠেন। খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ থেকে বাল্যকালেই তিনি জুডো খেলা রপ্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শৈশব থেকেই গোয়েন্দা সিনেমা দেখার প্রতি পুতিনের বিশেষ আগ্রহ ছিল; আর এই সিনেমা দেখতে দেখতেই তিনি গোয়েন্দা বিভাগের প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করেন। স্কুল জীবন শেষ করার আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন বিশ্ব বিখ্যাত সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি–তে (KGB) গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। এই আগ্রহ ও স্বপ্ন থেকেই তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা হতে হলে হয় সোভিয়েত আর্মিতে যোগদান করতে হবে নতুবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। তাই ১৯৭০ সালে তিনি তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে লেলিনগ্রাদ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
আইনশাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করেই তিনি কেজিবিতে পরিচালকের দপ্তর সচিব হিসেবে যোগদান করেন। তারপর তিনি কাজ শুরু করেন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগে। এই বিভাগে কাজ করার বেশ কিছুদিন পর ভ্লাদিমির পুতিন কেজিবির স্টেট সিকিউরিটির লেলিনগ্রাদ শাখায় কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে আরো অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তিনি পূর্ব জার্মানিতে কেজিবির হয়ে কাজ করার সুযোগ পান। বাল্যকালেই তিনি জার্মান ভাষা অর্জন করেছিলেন ফলে এখানে কাজ করা তার জন্য অনেক সহজ হয়ে ওঠে। তবে ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতন হলে দুই জার্মানি একত্রিত হয় ; ফলে ভ্লাদিমির পুতিন বেশি ঝুঁকি ও হুমকির মুখে পড়ে যান। তবে নিজের মেধা ও যোগ্যতার বলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তিনি দেশে ফিরতে সক্ষম হন। এরপর তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে লেলিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের সহকারি হিসেবে যোগদান করেন এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও যাত্রা শুরু করেন।
লেলিনগ্রাদ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি লেলিনগ্রাদ সিটি কাউন্সিলের মেয়রের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯৪ সাল থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ সিটি গভর্মেন্টের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালে রাশিয়ার জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের সহকারী প্রধান হিসেবে যোগ দিতে ভ্লাদিমির পুতিন তার পরিবার সহ মস্কোতে আসেন। তারপর থেকে তিনি সরকারি বিভিন্ন পদে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।
বরিস ইয়েলেৎসিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিন ক্রেমলিনে আসেন। তখন বরিস তাকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরও রাশিয়ার জনগণের মধ্যে পুতিনের জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি তেমন ছিল না বললেই চলে। তবে ১৯৯৯ সালে যখন বরিস তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন, তখনই পুতিন সম্পর্কে মানুষ জানতে শুরু করে এবং তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
১৯৯৯ সালে যখন বরিস ইয়েলেৎসিন প্রেসিডেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন তখন ভ্লাদিমির পুতিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০০ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করে তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা দখল করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে তিনি রাশিয়ার দারিদ্র বিমোচন এবং ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে চলেন। পুতিন তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও কাজের দ্বারা সহজেই রাশিয়ার জনগনের মন জয় করতে সক্ষম হন। ফলে ২০০৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভ করেন। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন; কারণ রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী টানা তিনবার রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই মেয়াদে দিমিত্রি মেদভেদেভ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সালের নির্বাচনে পুতিন আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে দেশের বিভিন্ন খাতে চরম সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন; বিশেষ করে সামরিক খাতে রাশিয়ার প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। রাশিয়ার এই চরম ও অভূতপূর্ব উন্নতি মানুষের মাঝে তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুলেছে। চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় লাভ করে বর্তমানে পুতিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলছেন।