ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের হুকুমদাতাদের শাস্তি কে দিবে?1 min read
Reading Time: 2 minutesকরোনাকালে চারপাশে শতশত মৃত্যু আর রোগাক্রান্ত মানুষের অসহায়ত্ব দেখে সবার মুখে নীতি নৈতিকতার ফোয়ারা ঝরছিল। কিন্তু এসবই যে সাময়িক সেটি এতদিনে সবার বোঝা হয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই মানুষ পশুর চেয়েও অধম হয়েছে বহুবার, বহুকাল ধরে। এই যেমন করোনা প্রতিরোধ ও লকডাউনের কারণে মার্চ-এপ্রিল মাসে মিটার রিডাররা বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বাসায় গিয়ে মিটারের রিডিং নিতে পারেন নি। তাই পূর্ববর্তী কয়েক মাসের বিল গড় করে এই দুই মাসের বিল নির্ধারিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠতে হয়েছে গ্রাহকদের।
সেই ভূতুড়ে বিল নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার পর জানা গেল, শর্ষের মধ্যেই ছিল এই ভুত! অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিভাগের অস্বাভাবিক সাফল্য এবং পারফরম্যান্স বোনাস পাওয়ার জন্যই এই অতিরিক্ত বিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই নির্দেশনাটি দিয়েছিলেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) আইসিটি বিভাগের পরিচালক এসএম শহিদুল ইসলাম। একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার এই ধরণের নির্দেশনার মধ্যেই এই প্রহসনের শেষ হয়নি বরং এই অভিযোগের কারণে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটির প্রধান করা হয় এই শহিদুল ইসলামকেই।
মার্চ এবং এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ-এর এই অতিরিক্ত বিলের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহকদের এই ক্ষোভের তীব্র বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। তবে গ্রাহকদের জন্য সবচাইতে দুঃখের বিষয়টি হল, এত অভিযোগ এবং তদন্ত কমিটি গঠন করার পরেও এই বাড়তি বিল তাদের প্রদান করতে হয়েছে, তারা এই অন্যায়ের কোন সুষ্ঠু প্রতিকার পায়নি।
তদন্ত কমিটি এবং টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, তারা দায়ীদের চিহ্নিত করেছে এবং যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত অল্প কয়েকজন নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তার শাস্তি ছাড়া আর তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। হুকুমদাতারা এখনো রয়েছেন প্রশ্নের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
টাস্কফোর্সের তদন্ত অনুযায়ী ৬২ হাজার ৯৬ জন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের মধ্যে অসঙ্গতি দেখা গেছে। তাদের তদন্ত পরবর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী শাস্তি স্বরূপ একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চারজনকে সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও আরো ৩৬টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রকৌশলীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কারণ দর্শানোর জবাবে সকল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত বিল আদায়ের নির্দেশ আইসিটি পরিচালকের কাছ থেকে তারা পেয়েছিলেন। এমনকি কোন এলাকায় কত ভাগ বেশি বিল করতে হবে সেটিও নাকি এই পরিচালকের নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
এই সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা থেকে বিভিন্ন বক্তব্য আসলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার একটি প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমনকি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী দাবী করেছেন, এই ধরণের বাড়তি বিল আদায়ের কোন অফিশিয়াল নির্দেশনা কারো কাছে দেয়া হয়নি। কেউ যদি এমনটা করে থাকেন তাহলে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত দায়ভার। আর এই সমস্যা নিয়ে গ্রাহকরাও চাইলে আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন।
এদিকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, এমনকি তাদের একটি প্রতিনিধিদল ডিপিডিসে অফিসে গিয়েছিল এবং বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের আলোকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।
করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিকভাবে সবাই যেভাবে বিপর্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, সেখানে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ ধরণের এমন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের কারণে জনগণকে আদতেই বাড়তি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যেখানে আর্থিক দৈন্য দশা এবং চাকরি হারিয়ে হাজারো মানুষ ঢাকা ত্যাগ করেছেন, সেখানে এমন একটি অমানবিক বিষয়ের শাস্তি কি আদৌ দেয়া হবে কি না সেটা নিয়েও অনেকে সন্দিহান। এছাড়া সবাই যেখানে ইতোমধ্যেই এই ভূতুড়ে বিল প্রদান করে ফেলেছে, তাদের টাকা কি ফেরত দেয়া হবে কি না আর হলেও সেটা কীভাবে এই বিষয়ে জানতে হলে আপাতত আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু