অর্থনীতি

বিজয় মালিয়া: বিলিয়নিয়ার থেকে পলাতক ঋণ খেলাপি1 min read

জুন ২৭, ২০১৯ 3 min read

author:

বিজয় মালিয়া: বিলিয়নিয়ার থেকে পলাতক ঋণ খেলাপি1 min read

Reading Time: 3 minutes

ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নয় হাজার কোটি রুপি ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান  ভারতের এক সময়ের ধনকুবের বিজয় মালিয়া। ২০১৭ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটেন পুলিশ। একই বছরের ডিসেম্বরে লন্ডনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিচার শুরু হয়। ইতিমধ্যে ভারতের “প্রথম পলাতক আর্থিক অপরাধী” এর খেতাব পেয়ে গেছেন তিনি

কয়েক বছর আগেও বিজয় মালিয়ার জীবন এমন ছিল নাএক সময় তিনি “কিং অফ গুড টাইমস” হিসেবে খ্যাত ছিলেন। বিজয় মালিয়া খুবই বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন। তার ছিল নিজস্ব আইল্যান্ড, বিলাসবহুল বাংলো, ব্যক্তিগত বিমান, দামি গাড়ি।

বিজয় মালিয়া ভারতের কর্ণাটকে এক ধনাঢ্য পরিবারে ১৯৫৫ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তার বাবা ছিলেন ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান। বাবার মৃত্যুর পর বিজয় মালিয়া এই গ্রুপের ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান পদে স্থলাভিষিক্ত হন। মালিয়ার প্রাথমিক জীবন কেটেছে কর্ণাটকের বান্তাল শহরেমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন লা মার্টিনিয়া স্কুলে এবং ব্যাচেলর অ কমার্স ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকেপড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকেই তিনি ব্যবসায়িক কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন

তিনি মূলত মদ তৈরির ব্যবসা করে ধনকুবেরে পরিণত হয়েছিলেন১৯৭৩ সালে ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ গ্রুপের ডিরেক্টর এবং ১০ বছর পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তিনি১৯৮৩ সালে তিনি বিয়ার ব্যারন ম্যাক ডুয়েলস (mcdowell’s) চালু করেন এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি ক্রমাগত সফলতা লাভ করতে থাকেন২০০৫ সালে এসে বিজয় মালিয়া ভারতীয় অন্যতম পুরাতন মদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েলস কিনে নেন।  

বিজয় মালিয়া ব্যবসায়ী হিসেবে কতটা ঝানু ছিলেন সেটার প্রমাণ দেয় বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে তার পাওয়া কিছু স্বীকৃতি। ২০০৭ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে ভারতের ৪০তম ধনী ব্যক্তি ছিলেন মালিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সন্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয় তাকে।

২০০৫ সালে বিজয় মালিয়া তার ছেলে সিদ্ধার্থ মালোত্রার ১৮তম জন্মদিনে কিংফিশার নামে একটি বিমান পরিবহণ সংস্থা চালু করেন। এখান থেকেই মুলত মালিয়ার পতনের শুরু হয়। যদিও শুরুতে কিংফিশারের অসাধারণ যাত্রী সেবার কারণে খুবই জনপ্রিয় একটি ডোমেস্টিক এয়ার সার্ভিস হিসেবে পরিচিতি পায়। শুরুর দিকে কিংফিশার ছিল ভারতের দ্বিতীয় জনপ্রিয় এয়ার সার্ভিস। ভারতের ২৫% ডোমেস্টিক যাত্রী কিংফিশার বেঁচে নিয়েছিল আকাশ পথে তাদের যাত্রার জন্য।

বিজয় মালিয়া গড়পড়তা কিছুই পছন্দ করতেন না। আন্তর্জাতিকভাবে কিংফিশারকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি এয়ার ডেকান নামে আরেকটি এয়ার লাইনস কিনে নেন। এয়ার ডেকান কিংফিশার রেড নামে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এটি ছিল বিজয় মালিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। একটি এয়ার লাইনস চালাতে প্রচুর অর্থের দরকার হয়। কিন্তু লাভের কথা চিন্তা না করে মালিয়া শুধু কিংফিশারের সম্প্রসারণের কথা ভেবেছিলেন। যদিও আরেক আন্তর্জাতিক এয়ার লাইন্স ইতিহাদ কিংফিশারে বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তখন পর্যন্ত ভারতের সিভিল এভিয়েশন সার্ভিসে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট(FDI) এর কোন নিয়ম ছিল না।    

তাই উপায় না পেয়ে কিংফিশারের কার্যক্রম চালু রাখতে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নেন কিন্তু ঋণের বোঝার বিপরীতে লাভ না আসায় তিনি প্রথমে কিংফিশার রেড বন্ধ করতে বাধ্য হন, পরবর্তীতে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মীদের বেতন সময়মতো না দেওয়ার কারণে ২০১২ সালে কিংফিশারের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়।

সব সময় নারী বেষ্টিত হয়েই থাকতে পছন্দ করতেন মালিয়া।

যদিও ঋণের পাহাড় মাথায় নিয়েও তিনি ২০০৮ সালে আইপিএলের রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ফ্র্যাঞ্চাইজটি কিনে নেন। এমনকি তিনি বিলাসিতা থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে পারেননি। এছাড়া নারী কেলেঙ্কারিতে একাধিকবার তার নাম এসেছিল। কথিত আছে যে নিজের এয়ার লাইন্স কোম্পানির এয়ার হোষ্টেজদের ইন্টারভিউ একা একটি কক্ষে নিতেন।  

বিজয় মালিয়া ব্যাংকের মোট ঋণ ৯০০০ কোটির মধ্যে আসল ৬৬০০ কোটি রুপি ফেরত দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যাংক তাতে রাজি হয়নি। এসবের মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বিজয় মালিয়া ব্রিটেনে চলে যান। ভারত সরকার মালিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তোরজোড় শুরু করলে মালিয়া জানান ভারতীয় ব্যাংকগুলো থেকে তিনি যে ঋণ নিয়েছিলেন, তার আসলের পুরোটাই তিনি ফিরিয়ে দিতে চান। কিন্তু এসব কথায় মন গলেনি ভারত সরকারের। ভারত-ব্রিটেন বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, কিন্তু ব্রিটিশ আইন অনেক বেশি কড়া হওয়ায় মালিয়াকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত আনতে ভারত সরকার হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তবে এর নিশ্চিত শেষ পরিণতি দেখার জন্য আমারা অপেক্ষা করতেই পারি।

লেখক- আমিনুল ইসলাম 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *