প্রতিবন্ধীদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতে কাজ করেন শরীফ রহমান1 min read
Reading Time: 2 minutesবাংলা ইনফোটিউ, নিউইয়র্ক: শরীফ রহমানের সাথে ম্যানহাটানের ৫ পেন প্লাজায় যখন দেখা তখনও তিনি ২ জন কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ঐ কর্মীরা মূলত ল্যাটিনো কমিউনিটিতে কিভাবে প্রতিবন্ধীত্বের সুযোগ ছড়াতে পারেন সেটার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের নোয়াখালিতে জন্ম নেয়া শরীফ রহমান, এখন পুরোদস্তুর একজন প্রতিবন্ধীদের আইনী সহায়তাকারীর ভুমিকায়।
১৯৯৫ সালে শরীফ রহমান নিউজার্সিতে থাকার সময় একটি গাড়ী দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।সেখান থেকে মাথা ফেটে গিয়ে তার ব্রেন ইনজুরি হয়। সে সময় নিজের চিকিৎসার সময়েই বিভিন্ন হাসপাতালে ডিসএবল বা প্রতিবন্ধী মানুষদের সাথে থেকে, পাশে থেকে জানা-শোনার সুযোগ তৈরী হয় তার। শরীফ দেখতে পান প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় একটি বড় বিবেচ্য হিসেবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র খ্রিষ্ট্রান ধর্মের অনুসারীদের কল্যানে কাজ করে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান শুধু মুসলিমদের জন্য নিবেদিত, আবার কোন প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য বা ইহুদি ধর্মের মানুষদের নিয়ে কাজ করে।শরীফ রহমান ভাবতে থাকেন, সবার আগে মানুষ হিসেবেই, প্রতিজন শারীরিক বা মানুষিক প্রতিবন্ধীর চিকিৎসাপ্রাপ্তি-ই তার অধিকার। ধর্মীয় পরিচয় সেখানে বিবেচ্য নয় হওয়া উচিৎ নয়। সেই থেকেই নিজে প্রতিষ্ঠা করেন,সেকুলার ডিসাবিলিটি সেন্টার।
ডিসাবিলিটি সম্পর্কে সচেতন করতে শরীফ রহমানের বিভিন্ন পদক্ষেপ এর একটি অংশ।
এর আগে, তিনি এই বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন ।২০০০ সালে সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্ক থেকে ডিসাবিলিটি স্টাডিজে ডিগ্রি নিয়েছেন শরীফ রহমান।তার আগে, ১৯৯৯ সালে ডিসাবিলিটি কনসাল্টেন্ট ইনক নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।গত ১৮ বছরে সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি এখন বেশ বড়। প্রতিবন্ধী বা ডিসএবল মানুষদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা, সরকারী ভাতা, নাগরিকত্ব ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে আইনী সহায়তার জন্য কাজ করে তার প্রতিষ্ঠান। নিউইয়র্কের ডাঙ্কয়ার্ড সহ ৮ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন তার সেকুলার ডিসাবিলিটির আইনী সহায়তা কার্যক্রম।১০ হাজারের বেশি মানুষকে তাদের সেবার আওতায় নিয়ে এসেছেন বলে দাবী করেছেন তিনি। স্টেট ডিসাবিলিটি, ফেডারেল ডিসাবিলিটি, পরিক্ষা ছাড়াই নাগরিকত্ব নিয়ে দেয়া এসব ক্ষেত্রে। সেকুলার ডিসাবিলিটি’র মাধ্যমে মুলত প্রতিবন্ধীদেরকে আইনী সহায়তা দেবার কাজটি করেন তিনি। তবে, আইনী সহায়াতার বাইরে, প্রতিবন্ধাদের চিকিৎসাসেবাতেও অনেকদুর এগিয়েছেন শরীর রহমান।
এটির ই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ইউএমএ ডিসাবিলিটি ইনক নামে আরেকটি উদ্যোগ গ্রহন করেন শরীফ রহমান।এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা কাজটি করা হয়। এ্যাডাল্ট সোস্যাল ডে কেয়ার সেন্টার, ডায়গনস্টিক এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার, এডিকশন কাউন্সিলিং সেন্টার, এগুলো প্রতিষ্ঠার দিকেই মনোযোগী হচ্ছেন এখন শরীর রহমান।
‘আমাদের অনেকেই আছেন, যারা অনেক ভাবেই রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী সঙ্গার মধ্যে পড়েন। অথচ, সে বিষয়ে খুব কমই ধারনা আছে তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রতিবন্ধীদের কল্যানের জন্য সেবার অনেক দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। শুধু শারীরিক ভাবে পঙ্গুত্ব নয় বরং অন্য অনেক ভাবেই নিজেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে আবিষ্কার করতে পারেন অনেক মানুষ। শুধুমাত্র পর্যাপ্ত আইনী কাঠামো এবং জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে বিপর্যস্ত জীবন পার করছেন প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে। তারা কিন্তু নিজেদের কে ডিসাবল বা প্রতিবন্ধী প্রমান করতে পারলে সারাজীবন রাষ্ট্রীয় বেতানাদি আর সুবিধার মধ্যে স্বাচ্ছন্দেই কাটাতে পারেন। আমরা কেবল, সেই সুবিধাটুকু যেন প্রাপ্যরা পেতে পারে, সেটার আইনী সুবিধা দিতেই কাজ করছি’-বলছিলেন শরীফ রহমান।
তিনি আরো জানান, ১৯৯৫ সালে তার দূর্ঘটনার পর অন্তত ৫ বছর রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী কোটায় চালিয়ে নিয়েছিলেন নিজের চিকিৎসা আর জীবন ধারনের যত কর্মযজ্ঞ। নিজে সুস্থ হওয়ার পর সেই কোট ভিত্তিক সুবিধা থেকে নিজের নাম প্রত্যহার-ই করে নেননি , বরং অন্যরা যেন সেই সুবিধা পায় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন দিন রাত্রি।