নির্বাচন দেশে, প্রস্তুতি নিউইয়র্ক আওয়ামীলিগ-বিএনপির1 min read
Reading Time: 4 minutesসাহেদ আলম,
দেশে নির্বাচনের মৃদু যে আলোচনা উঠেছে সেটাকে সামনে নিয়েই নির্বাচনী প্রস্তুতি সারতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামীলীগ বিএনপি’র। গত সপ্তাহে অঘোষিত ভাবে বিএনপির সিনিয়র বেশ কিছু নেতারা নিজেরা বসে, আগামী নির্বাচনে দলকে জেতাতে ঢাকায় গিয়ে অবস্থান করা, প্রবাসীদের কিভাবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহন নিশ্চিত করানো দরকার সেসব নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন প্রাথমিক ভাবে। আর আওয়ামীলিগ ঘোষনা দিয়েই ২৮ জানুয়ারী বসছে কার্য নির্বাহী কমিটির সভায়। নির্বাচনী বছরে প্রবাসের দলীয় নেতাকর্মীদের কিভাবে দেশে পাঠিয়ে সরকারকে আরেক মেয়াদে জয়ী করে আনা যায় সেই লক্ষে দিক নির্দেশনা দিতেই এই মিটিং ডেকেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লিগের সভাপতি।
‘২০১৮ সালকে আমরা নির্বাচনী বছর হিসেবেই দেখছি। প্রবাসে তো বিএনপিকে মোকাবেলা করার কিছুই নেই। তারা ৪/৫ ভাগে দ্বিধাবিভক্ত এবং নিজেরা নিজেদের শত্রুতায় লিপ্ত।আমাদের এখানে দল ঐক্যবদ্ধ। সেই ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মটিকে কিভাবে দেশের আগামী নির্বাচনে কাজে লাগানো যায় সেটি আমাদের বৈঠকের মূল এজেন্ডা।’ -বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলিগের সভাপতি ডা সিদ্দীকুর রহমান।
অন্যদিকে, আওয়ামীলিগের মত এত হাক ডাক করে না হলেও, নির্বাচনী ছক কষছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপির নেতাকর্মীর। কয়েকভাবে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশের নেতা আব্দুল লতিফ সম্রাট প্রথম আলোর সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, ‘ আমরা অতি সম্প্রতি বসেছিলাম নিজেরা। প্রায় সব পক্ষের লোকজন ছিল সেখানে। আমরা আলাপ করেছি কিভাবে আগামি নির্বাচনে আমরা ভুমিকা রাখতে পারি সেটা নিয়ে। আমরা চাই দেশে সুষ্ট নির্বাচন হলে বিএনপিকে জিতিয়ে আনতে আমরা যেন কাজ করতে পারি।সেই সাথে নির্বাচনে প্রবাসীদের মধ্যে থেকে কাউকে কাউকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয় সেটা নিয়েও আমরা কেন্দ্রের সাথে দেন দরবারের কথা আলোচনা হয়েছে’।
বিএনপির সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের ঘনিষ্ট ব্রুকলিনের বিএনপির একটি অংশের সংগঠক মিজানুর রহমান মিল্টন ভুইয়া জানিয়েছেন প্রায় একই কথা।’ নির্বাচন সুষ্ট হওয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা সেটা আমরা দেখব।যদি সুষ্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরী হয় আর তাতে দেশনেত্রী এবং তারেক রহমান অংশ নিতে পারেন, তাহলে আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। তবে নির্বাচন সুষ্ট করার পদক্ষেপ কতটুকু নেয়া হচ্ছে সেটা আগে বিবেচনা করবো আমরা’ -বলছিলেন মিল্টন ভুইয়া।
প্রবাসে আওয়ামী বিএনপির রাজনীতির পাওয়া -না পাওয়ার বেদনা:
প্রবাসে আওয়ামী এবং বিএনপির উভয় বড় দলের ব্যাপক জনসমর্থন এবং কর্মী সমর্থক থাকা স্বত্বেও নেতৃত্ব এবং অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে উভয় দলে নাজুক অবস্থা বিরাজমান। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা সিদ্দিকুর রহমানের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামীলীগের একটা বড় অংশ। তবে সিদ্দিকুর রহমানের শক্ত নিয়ন্ত্রনে এই কয় বছরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ অনেক বড় বড় কর্মসুচি পালন করেছে। তবে উল্টো একদম বিএনপির রাজনীতির ক্ষেত্রে। এই দলে যেন সবাই নেতা। অন্তত ৪/৫টি বড় বড় গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা। সেই কারেন তারেক রহমানের জন্মদিন, বিএনপির প্রতিষ্টাবার্ষিকীও পর্যন্ত একই ব্যানারে পালন করতে পারেনি নেতারা। প্রায়শই তারা নিজেরা অভ্যন্তরীন দ্বন্দে লিপ্ত হয়েছে। সেই অবস্থা এখনও বলবৎ আছে। এর কারণ হিসেবে অনেকেই অভিযোগ করেন, একটি সার্বজনীন কমিটি উপহার দিতে ব্যার্থ হয়েছে ঢাকার কেন্দ্রিয় বিএনপির নের্তৃবৃন্দ। এর বাইরে, ক্ষমতার বাইরে থাকার নানান উপসর্গ তো আছেই।
প্রবাসে রাজনীতি করার সুফল আওয়ামী পরিবারের লোকজন পেলেও বিএনপির ক্ষেত্রে অনেকেই হতাশ। রাজনৈতিক কারণে শেখ হাসিনা বেশ ক’জন প্রবাসীকে ব্যাংক, বীমা, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ব্যবসা, ইত্যাদি সুযোগ করে দিয়েছেন দলীয় কর্মীদের। প্রশাসনেও ঠাঁই পেয়েছেন অনেকেই। ঢাকায় অবস্থানকালে প্রবাসের প্রায় প্রত্যেকেই গণভবনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। এলাকায় অবস্থানকালেও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অতিথির আসন লাভে সক্ষম হচ্ছেন আওয়ামী পরিবারের প্রবাসী নেতারা। সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনেও প্রবাসী নেতাদের বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা। পদ্মাসেতু প্রকল্পের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে শতশত প্রবাসী নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ঐ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ, জামাত-শিবিরের নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সাংগঠনিক প্রতিরোধ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদারে ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের যথাযথ ভ’মিকার কথাও স্বীকৃত হচ্ছে হাই কমান্ডে।
মার্কিন মুল্লুকে দলীয় কর্মকান্ড চাঙ্গা রাখতে অর্থ-মেধা এবং সময় প্রদানে সবচেয়ে বেশী তৎপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, অন্যতম সহ-সভাপতি আকতার হোসেন, মাহবুবুর রহমান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার (সম্প্রতি তিনি স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে গেছেন), ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়া, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মোর্শেদা জামান, যুক্তরাষ্ট্র পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সেক্রেটারি আশরাফুজ্জামান, মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ শাহনাজ, ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতা ড. মনসুর খন্দকার এবং মাহমুদুন্নবী বাকি, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক নূরল আমিন বাবু, বস্টনের যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী এবং ইকবাল ইউসুফ অন্যতম।
অন্যদিকে, বিএনপির ক্ষেত্রে, ফখরুদ্দিন-মঈনের আমলে বেগম খালেদা জিয়ার সংকটেও দলীয় সমর্থক প্রবাসী কর্মীরা বেশ সোচ্চার ছিলেন। বিশ্বব্যাপী জাগরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট এবং সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বে টেলি-কনফারেন্স, জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের সার্বিক সমন্বয়ে তদানিন্তন যুগ্ম সম্পাদক কাজী আজমের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের মে মাসে হিলারি ক্লিন্টনসহ ১৫ ইউএস সিনেটর চিঠি দেন ঐ তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্যে এবং সিনেটরদের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী তপসিল ঘোষণা করা হয়। তদানিন্তন যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন বাদল কর্তৃক ‘তারেক রহমান মুক্তি পরিষদ’ গঠন করে মার্কিন কংগ্রেসসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থায় দেন-দরবার ইত্যাদি কর্মকান্ডের প্রশংসাসূচক কোন স্বীকৃতি আজ অবধি বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানের কাছে থেকে প্রকাশ্যে আসেনি।
জাসাস নেতা গোলাম ফারুক শাহীন, স্টেট বিএনপি নেতা মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, পারভেজ সাজ্জাদ, ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসরত বিএনপির সহ-সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সেক্রেটারী জিল্লুর রহমান ও মোস্তফা কামাল পাশা বাবুলও ছিলেন রাজপথে। কয়েক বছর আগে নিউইয়র্ক সফরকালেও বেগম জিয়া উপরোক্ত নেতাদের কাছে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির ডজনখানেক নেতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা সফর করেছেন। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেন বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাতের। গত ঈদে লন্ডনে গিয়েও সাক্ষাৎ পাননি বেগম জিয়া অথবা তারেক রহমানের।
তবে এসব বন্চনার কথা প্রকাশ্যে বলেন না অনেকেই। যেটা তারা প্রকাশ্যে বলেন, সেটা হলো একটি পূনাঙ্গ কমিটি দিতে কেন্দ্রের একটু স নজর , যেখানে সবাই মানতে পারেন একটি কমিটিকে। এ নিয়ে অনেক বার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের নেতাকর্মীরা। এমনকি প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমান আপাতত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন্দলে- ‘চুপচাপ’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলন।
অন্যদিকে, আওয়ামীলিগের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অভিযোগ হলো, সব ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক লেনদেনকে কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোড়। ডা সিদ্দিকুরকে সরিয়ে কাউন্সিল ডেকে কমিটি পরিবর্তনের দাবী করে আসছেন নেতাদের অনেকেই।এমনকি দলীয় নেতা কর্মীদের সাক্ষর নিয়ে তলবী সভা ডেকে সিদ্দিকুর কে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টাও হয়েছে, তবে তা সফল হয়নি।
এই দলের নেতারা এখন নিজেদের কোন্দলকে পরিহার করে, ভাবছেন কিভাবে আগামী নির্বাচনের ফসল তারা নিজেদের ঘরে আনবেন সেটা নিয়ে।