নিজের শিক্ষকের জন্য ‘লাল গালিচা’ ছেড়ে মাটির উপর দিয়ে হাটলেন প্রধানমন্ত্রী!1 min read
Reading Time: 2 minutesবিশেষ সংবাদদাতা
নিজের শিক্ষকের প্রতি সীমাহীন সম্মান, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দেখিয়ে শিক্ষকের জন্য ‘লাল গালিচা’ ছেড়ে মাটির উপর দিয়ে হাটার বিরল নজির স্থাপন করলেন প্রধাননমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন করতে এসে এমন প্রধানমন্ত্রীর এমন দৃষ্টান্ত দেখে সকলে আনন্দে, আশ্চর্যে হত বিহবল হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। অনেকেই এটিকে নজির বিহীন, যুগান্তকারী এবং অনুকরনীয় অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য বরাদ্ধ লাল গালিচা ছেড়ে মাটির উপর দিয়ে হেটে গেলেও, লাল গালিচা ছাড়েন নি সিনিয়র মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদ্দুজ্জামান নূর! এ নিয়েও অনেকে সমালোচনা করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে!
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার ৩ টি ছবি ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে লিখেছেন, “নিজের শিক্ষকের জন্য লাল গালিচা ছেড়ে হাঁটলেন বঙ্গকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
ছবিগুলো এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে বলা হলেও তাঁর ফেইসবুকে গিয়ে দেখা যায় ১৬২ টি শেয়ার, ৯৬২ লাইক এবং মাত্র কমেন্ট করেছেন ৩৩ টি!
ভিডিওটি ২০১৭ সালের ২১ শে বই মেলা উদ্ভোধনের
বৃহস্পতিবার একুশে বই মেলা উদ্বোধনকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীকে বেশ সপ্রতিভ, প্রাণোচ্ছল দেখা যায়। তিনি একইসঙ্গে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনও ঘোষণা করেন।
শিক্ষকের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন সম্মান প্রদর্শনে অনেকেই স্মরণ করেছেন কাজী কাদের নেওয়াজ এর লেখা “শিক্ষকের মর্যাদা” কবিতাটিও! কবিতাটি এমন …
বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।
শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”
মেলা উদ্ধোধন শেষে অতিথিদের নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় সরকারের মন্ত্রী এবং আমলাগণও উপস্থিত ছিলেন।