featured বিশ্ব

ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ1 min read

ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ 2 min read

author:

ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ1 min read

Reading Time: 2 minutes

ভারতের লোকসভায় পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন, যে আইনটি এখন সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা থেকে এই বিলটির সংশোধিত আকার পাশ হয়েছে। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পাশ হয়ে যাওয়া এই বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩১১টি আর অপরদিকে বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৮০টি। 

এক নজরে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল 

ইতোপূর্বে যে আইনটি বিদ্যমান ছিল সেটি ১৯৫৫ সালের তৈরি নাগরিকত্ব আইন। মূলত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বহিরাগতরা কিভাবে ভারতের নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবেন সেটাই ছিল এই বিলের মূল বিষয়। একটু সহজ করে বলতে গেলে, ভারতের আশেপাশের মুসলিম দেশগুলোতে যদি কোন অমুসলিম নির্যাতিত হয়ে ভারতে প্রবেশ করে তাহলে কীভাবে সে ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক হতে পারবেন সেটাই ছিল এই বিলের নির্দেশনা। 

ইতোপূর্বের আইনে বলা ছিল ভারতীয় নাগরিক হতে হলে উক্ত ব্যক্তিকেঃ 

  • বিগত চৌদ্দ বছরের মধ্যে বারো বছর ভারতে অবস্থান করতে হবে 
  • আবেদনের পূর্বের বারো মাস একটানা ভারতে অবস্থান করতে হবে। 

আর এই আইনের সময়সীমা নতুন সংশোধনে কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ছয় বছর। অর্থাৎ আশেপাশের দেশ থেকে নির্যাতিত অমুসলিমরা এখন মাত্র ছয় বছর ভারতে অবস্থান করলেই পেয়ে যাবেন নাগরিকত্ব। আর এই বিল পাশের মাধ্যমেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে চলে আশা অনেক অমুসলিমরাই পেয়ে যাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব। 

এ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আশেপাশের দেশ থেকে যে অমুসলিমরা নির্যাতিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। 

তবে নতুন আই আইনের আওতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক রাজ্যকেই রাখা হয়নি। নতুন এই আইনে বলা হয়েছে যে রাজ্যগুলোতে “ইনার লাইন পারমিট” (আইএলপি) রয়েছে সেই রাজ্যগুলো উক্ত আইনের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। উল্লেখ্য যে ইতোপূর্বে ভারতের মণিপুর অঞ্চলটি ইনার লাইন পারমিটের অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও এই সম্পর্কে অমিত শাহ জানান এই অঞ্চলকে ইনার লাইন পারমিটের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। 

বিল নিয়ে সাংবিধানিক যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে

ভারতের সংবিধানের ১৪ নাম্বার অনুচ্ছেদে মূলত যে সমতার কথা বলা হয়েছে সেই সমতা এই আইনের মাধ্যমে লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। 

তবে এই নিয়ে ভারতীয় সরকারের বক্তব্য হল, আশেপাশের মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তাদের সুরক্ষার জন্যই করা হয়েছে এই আইন। মূলত দেশভাগের কারণে অনেক সংখ্যালঘুরাই অসহায় জীবন যাপন করছিল আশেপাশের দেশগুলোতে। আর এই বিলের মাধ্যমে ঐতিহাসিক একটি ভুল সংশোধন করা হচ্ছে। 

তবে অনেকেই মনে করছেন এই আইনের ফলে অনেক অবৈধ অধিবাসীরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ কমে যাবে এবং ভারতীয় বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব স্বকীয়তা এবং সংস্কৃতি অবক্ষয়ের শিকার হবে। 

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, আশেপাশের মুসলিম দেশগুলোতে বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা দিন দিন কমেই আসছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ছিল প্রায় ২২ শতাংশ আর ২০১১ সালের করা জরীপ অনুযায়ী সেই সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র ৭.৮ শতাংশ। 

অমিত শাহ নিজের শঙ্কার কথা জানান যে, এদের হয়ত ধর্মান্তর করা হয়েছে জোর করে নাহলে করা হয়েছে খুন! আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ নির্যাতনে টিকতে না পেরে চলে এসেছে ভারতে। আর এই নতুন সংশোধিত আইনের মাধ্যমে এই নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের ভারতীয় সরকার আশ্রয় দিতে চায়। 

এদিকে আসামে করা এনআরসি অনুযায়ী প্রায় উনিশ লক্ষ মানুষ নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষদের মধ্যে বারো লাখেরও বেশি হিন্দু থাকার কারণে এই এনআরসি হয়ে উঠেছে প্রশ্নবিদ্ধ! 

তবে ২০২৪ সালের মধ্যেই এই এনআরসি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। আর ভারতীয় সরকার তার আগেই নতুন আইনের সংশোধন করছে যাতে করে যে সকল হিন্দুরা এনআরসিতে নাম তুলতে পারেনি তাদেরকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হয়।

লেখক- ইকবাল মাহমুদ ইকু 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *